‘নাগরিক সমাজ’ এর নামে পাঠানো বিবৃতিতে দুই শতাধিক ব্যক্তি এ দাবি করেন।
Published : 11 Mar 2025, 12:04 AM
শরিয়া আদালতে ‘মুরতাদদের’ ফাঁসি ‘নিজ হাতে’ কার্যকরের কথা বলা ইসলামী বক্তা এনায়েতুল্লাহ আব্বাসীকে ‘হত্যার প্ররোচনাকারী’ আখ্যা দিয়ে গ্রেপ্তারের দাবি করে বিবৃতি দিয়েছেন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার দুই শতাধিক ব্যক্তি।
সোমবার ‘নাগরিক সমাজ’ এর নামে পাঠানো এ বিবৃতিতে তার বিচারের দাবিও করা হয়।
'ভাববৈঠকির’ প্রধান সমন্বয়ক, 'বানান' এর সংগঠক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা মোহাম্মদ রোমেলের পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, “এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী ‘শাতিমে রসুল (নবী (সা.) অবমাননাকারী)’ ও ‘মুরতাদের (ধর্মাদ্রোহী) শাস্তির নামে নিজ হাতে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ বুদ্ধিজীবী, লেখক ও কবি-সাহিত্যিকদের হত্যার অধিকার দাবি করেছেন। ধর্মদ্রোহী ও নবী অবমাননাকারীদের হত্যার ঘোষণা ইসলামের সহনশীলতা, কুরআনের শিক্ষা ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি।
“তার এই ঘোষণা গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ অস্থিরতা, সন্ত্রাস ও অরাজকতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখতে পারে বলে আমরা সাধারণ নাগরিক হিসেবে আশঙ্কা করছি, যা আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ন করবে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “গত ২১ ফেব্রুয়ারি বায়তুল মোকাররমে ‘তাওহিদি ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশে এনায়েতুল্লাহ বলেন, আর মিছিল নয়, এবার শরিয়া আদালতে মুরতাদের শাস্তি ফাঁসি আমরা নিজ হাতে কার্যকর করব। আল্লাহ ও তার হাবিব (সা.) এর বিরুদ্ধে বেয়াদবি করে যারা, নাস্তিকদের মধ্যে সেটা যদি বাকস্বাধীনতা হয়, তাদের কল্লা কেটে দেব-এটা আমাদের হাতের স্বাধীনতা।”
‘নাগরিক সমাজের’ বিবৃতিতে বলা হয়, জৈনপুরী দরবারের পীর এনায়েতুল্লাহ আব্বাসী বক্তব্যে কবি ও রাষ্ট্র চিন্তক ফরহাদ মজহার, লেখক-শিক্ষক সলিমুল্লাহ খান, লেখক ও গবেষক রাখাল রাহা এবং কবি ও সাহিত্যিক সোহেল হাসান গালিবের প্রতি ইঙ্গিত করে এমন কথা বলেছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আব্বাসী ইসলামের নামে ধর্মীয় অনুভূতি ব্যবহার করে বিচারহীনতা ও মানবাধিকার পরিপন্থি কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষকে উস্কে দিচ্ছেন। অথচ ইসলামে মানুষের জীবন, সম্পদ এবং প্রাকৃতিক অধিকার ও সম্মানের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছে।”
এসব বিবেচনায় এনায়েতুল্লাহর বক্তব্য ‘হত্যার প্ররোচনা ও সন্ত্রাসের উসকানি’ হিসেবে বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে ‘শাস্তিযোগ্য অপরাধ’ বিবেচনায় এনে তাকে ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনের আওতায়’ আনার দাবি জানানো হয়েছে।
‘নাগরিক সমাজের’ পক্ষে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করা ২১৭ জনের মধ্যে রয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল্লাহ মহিউদ্দিন, জুলাই সংগ্রাম পরিষদের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মো. দেলোয়ার হোসাইন, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সুমন সাজ্জাদ, জুলাই সংগ্রাম পরিষদের মুখপাত্র আজহারুল হক লিংকন, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য কনক রহমান, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের শিক্ষক টিনা নন্দী, সাংবাদিক আফসার বিপুল, কথাসাহিত্যিক জিয়া হাশান, লেখক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ, সমাজ ও মানবাধিকারকর্মী এলিজা খান, লেখক ও চিত্রনির্মাতা জাহিন ফারুক আমিন, সাংবাদিক কাজী জেসিন, উন্নয়ন কর্মী ও ব্যবসায়ী আবুল কাশেম, প্রকৌশলী মো. আরিফুল হক, লেখক ও শিক্ষক ফাহমিদুল হক, লেখক ও গবেষক সহুল আহমদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রায়হান রাইন, চলচ্চিত্র নির্মাতা অমিতাভ রেজা চৌধুরী, বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক জুবায়ের হোসাইন।
আরও সই করেছেন খানকাহ্ ফকীর জহুর আল ক্বদরী পীরসাহেব ফকীর শাহ্ সাঈদ আনওয়ার মোবারকী আল ক্বাদরী, বিশ্ব সুফিবাদ সার্বজনীন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান শাহ্ সুফি শামসুজ্জামান চৌধুরী (সজিব), ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সাবেক গভর্ণর আল্লামা খন্দকার গোলাম মওলা নকসেবন্দী, বিশ্ব সুফিবাদ সার্বজনীন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব আনিসুর রহমান জাফরী বা-ঈমান আল ওয়ার্সী, শাহ সুফি মাওলানা সোহরাব হোসেন আতিকী, মাওলানা মুজিবুর রহমান আল মাদানী, মুফতী আলামীন নুরী আল ক্বাদরী, মুফতী আর এফ রাসেল হামেদ ওয়ার্সী, অধ্যাপক মাওলানা সুফি গোলাম মোস্তফা আল কাদরী, মুফতী আব্দুস সালাম বিপ্লবী, মুফতী শেখ সেলিম আল কাদরী, মুফতী ওবায়দুল্লাহ আল কাদরী, মুফতি আসাদুজ্জামান সুফিবাদী।