“আমরা শুধু আজকে অতীতের স্মৃতি মনে করছি না। একইসঙ্গে আগামী দিনগুলোতে আরও সম্ভাবনাময় করে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি”, বলেন ভারতীয় হাই কমিশনার।
Published : 19 Aug 2023, 08:33 PM
বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশ-ভারত দুই দেশের সম্পর্কের প্রাণ পুরুষ হিসেবে চিহ্নিত করে ঢাকায় ভারতের হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেছেন, তার হাত ধরে ১৯৭১ সালে রক্তের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া দুই দেশের সম্পর্ক এগিয়ে চলেছে।
সেই বন্ধন প্রতিবেশী দেশ দুটির ‘শক্তিশালী সম্পর্ককে’ এগিয়ে নিচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেছেন, যুদ্ধের ময়দানে পারস্পরিক সম্মান থেকে আবদ্ধ প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্ক ইতিহাসের বাকি সময়েও অটুট থাকবে।
শনিবার বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতি আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকায় জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এ সভায় প্রধান অতিথি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে হাই কমিশনার প্রণয় ভার্মা বলেন, “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গণতন্ত্র, মানবাধিকার, সামাজিক ন্যায় বিচার, অমায়িক আত্মা এবং দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব এবং সাধারণ মানুষের কল্যাণে অসাধারণ আত্মনিবেদন এই অঞ্চলের সকল প্রজন্মের মানুষকে অনুপ্রেরণা যোগাবে।“
তিনি বলেন, “বাংলাদেশ এখন উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির পথে যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে ভারত বাংলাদেশের মানুষের এই উন্নয়ন শান্তি ও অন্তর্ভূক্তিমুলক করার মাধ্যমে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে পাশে থাকতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
হাই কমিশনার বলেন, প্রতিবেশী দুই দেশের মধ্যে সীমান্ত সংযোগ, নিরাপত্তা এবং দুই দেশের মানুষের বন্ধন প্রতিনিয়ত শক্তিশালী হচ্ছে।
“আমরা শুধু আজকে অতীতের স্মৃতি মনে করছি না। একইসঙ্গে আগামী দিনগুলোতে আরও সম্ভাবনাময় করে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি।
“দু্ই দেশের একসঙ্গে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি রয়েছে। একইভাবে সাম্যতা, ন্যায় বিচার ও সততা নিয়ে এগুচ্ছে।“
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করার ‘সব পথ সুকৌশলে’ যুক্তরাষ্ট্র তৈরি করেছিল বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী মোজাম্মেল হক।
তিনি বলেছেন, “আজকে তাদের সাধের পাকিস্তান একটা ব্যর্থ-অকার্যকর রাষ্ট্র, আর বাংলাদেশ পৃথিবীর মধ্যে উন্নয়নের রোল মডেল হবে এটা তারা মেনে নিতে পারছে না।”
এ কারণেই বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপের চেষ্টা করছে দেশটি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকার প্রসঙ্গ তুলে ধরে মোজাম্মেল হক বলেন, “যারা আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে বানচাল করার জন্য সপ্তম নৌবহর পাঠিয়েছিল…পারে নাই, পরবর্তীকালে (১৯৭১ সালের) চৌদ্দই ডিসেম্বর তারা যুদ্ধে স্থিতিবস্থার প্রস্তাব করেছিল। তাহলে পাকিস্তান বাহিনীকে আত্মসমর্পন করতে হত না। তাদের কথামত কাজ হলে পাকিস্তান টিকে জেত। আমাদের স্বাধীন বাংলাদেশ পেতাম না “
তিনি বলেন, এরপর বঙ্গবন্ধুকে হত্যা ও বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র করার ষড়যন্ত্র শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। ওই সময়ে দেশে দুর্ভিক্ষের পেছনেও দেশটির হাত রয়েছে বলে অভিযোগ তার।
মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রী বলেন, “১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু নগদ পয়সায় আমেরিকার কাছ থেকে চাল ও গম কিনেছিলেন। কিন্তু তা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে এসে পৌঁছায়নি। এতেই দুর্ভিক্ষের সৃষ্টি হয়েছিল।
“এভাবেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার জন্য সমস্ত পথ খুব সুকৌশলে তারা তৈরি করেছিল।”
এসময় তিনি আগামী নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ও নানান পদক্ষেপকে ‘প্রচ্ছন্ন হুমকি’ হিসেবে বর্ণনা করেন। এগুলো কোনও সাময়িক ঘটনা নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “নির্বাচন নিয়ে যদি কারও মাথাব্যথা থাকে তাহলে শুধু বাংলাদেশে কেন। এই বছর পৃথিবীর প্রায় ২১টি রাষ্ট্রে নির্বাচন হবে। কিন্তু সেসব দেশে কোনও কথা নেই। পাকিস্তানে কোনও কথা নেই, আফগানিস্তানে কোনও কথা নেই।“
তিনি বলেন, “আজকে আমেরিকা মানবাধিকারের কথা বলছে। কিন্তু ১৯৭০ সালের নির্বাচনে ইয়াহিয়া খানের অধীনে নির্বাচনে জয়ী হয়ে যখন ক্ষমতা হস্তান্তর করল না, তখনতো আপনাদের মানবতাবোধ ছিল না।
“বরঞ্চ সেই সামরিক জান্তার পক্ষে অবস্থান নিয়ে আপনারা আজকে মানবতার পক্ষে কথা বলেন।”
“জিয়াউর রহমানের সময় ভোটের নামে যা হয়েছে সেদিনতো বলেন নাই” যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী এসময় শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যার পর মানবতার পক্ষে কোনো কিছু না করে উল্টো তার আত্মস্বীকৃত খুনীদের আশ্রয় দেওয়ার সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, “এতেই তো প্রমাণ হচ্ছে ১৫ অগাস্টের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আপনাদের সম্পর্ক।”
আলোচনায় অন্যান্য বক্তা বাংলাদেশের স্বাধীনতায় সহযোগিতাকারী ভারতের সঙ্গে নিরাপদ সীমান্ত, দুই দেশের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, রাজনৈতিক ঘনিষ্ট সম্পর্ক বজায় রেখে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সভাপতি ও যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. রশিদুল আলমের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নারায়ন সাহা মনি।
এছাড়া সাংসদ অ্যারোমা দত্ত, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আবেদ খান ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরীসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।