‘‘এখন না যাইতে পারতেছি সামনের দিকে, না যাইতে পারছি উল্টা দিকে,” কাকরাইলে বলছিলেন এক রিকশা চালক।
Published : 25 Jul 2024, 01:23 PM
“আমি প্রতিবন্ধী মানুষ। স্বামী-সন্তান নাই। এক বড় কর্তা প্রতি মাসে আমারে টাকা দেয়। কিন্তু মাস শেষ হয়ে যাচ্ছে, আমি নিতে পারি নাই। আজ যাচ্ছি সেখানে।”
ঘর ছেড়ে বাইরে বের হতে পেরে স্বস্তি প্রকাশ করছিলেন ষাটোর্ধ্ব বিবি হাজেরা। কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে নৈরাজ্যের মধ্যে ঘরবন্দি হয়ে পড়েছিলেন তিনি।
মিরপুর থেকে মহাখালী ডিওএইচএস যাওয়ার পথে হাজেরা বললেন, “আমার ম্যালা কষ্ট হইছে। একবার (কর্তা) বলছিল, ‘বিকাশে পাঠিয়ে দেই’।
“কিন্তু আমার জন্য কোরবানির গোস্ত রেখে দিছে। গোস্ত তো আর বিকাশে পাঠান যায় না।”
কোটা সংস্কার আন্দোলনে ব্যাপক সহিংসতা ও কারফিউয়ের মধ্যে তিন দিন সাধারণ ছুটির পর বুধবার খুলেছে অফিস-আদালত, দোকান-পাট। সেদিন ও বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকছে। এ সময়ের মধ্যে সরকারি অফিস চলছে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত।
ঢাকায় নজিরবিহীন নৈরাজ্যের মধ্যে সপ্তাহখানেক ঘরে আটকে থাকা অনেকেই প্রয়োজনীয় কাজ সারতে বাইরে বের হয়েছেন। তাতে করে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে যানজট দেখা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে অনেকেই গন্তব্যে ছুটছেন হেঁটে।
রামপুরা থেকে ছেলেকে নিয়ে মালিবাগের হোসাফ টাওয়ারে কোচিংয়ে যেতে এক ঘণ্টা সময় লেগেছে গৃহিণী শাহিদা কামালের।
ভোগান্তির বর্ণনায় তিনি বললেন, “চৌধুরী পাড়া, আবুল হোটেল মোড়- এই দুই জায়গায় এমন যানজট যে, রিকশা সামনে যায় না। উপায়ান্ত না দেখে রিকশা ছেড়ে ছেলেকে নিয়ে হেঁটে এসেছি।”
শাহিদার ভাষ্য, “ট্রাফিক পুলিশ কম থাকার কারণে এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে। এভাবে তো স্বাভাবিক জীবন আরও দুর্বিষহ হওয়ার মতো।”
বিজয়নগর, পুরানা পল্টনের সড়কেও এতো যানজট যে- ঢিমে ঢিমে চলছে যানবাহন। মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা হওয়ায় এই সড়কে যানবাহন বেশি বলে মনে করেন সাধারণ বীমা করপোরেশনের কর্মচারী সুবিদ আলী।
তিনি বললেন, “সপ্তাহের শেষ দিন মতিঝিলে অনেকের কাজ-কর্ম আছে। সেজন্য আজকে একটু চাপটা বেশি।”
কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল রেস্তোরাঁর মোড়ে পান-সিগেটার বিক্রেতা করিম মিয়া বলেন, ‘‘এখন বাজে ১১টা। দেখেন আধা ঘণ্টা ধরে নয়াপল্টন সড়কে সব গাড়ি থমকে আছে। ফকিরেরপুল মোড়ে প্রচণ্ড জ্যাম।
“গত দুই দিন আগের কথা চিন্তা করেন ঢাকার রাস্তায় রিকশা ছাড়া, অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া কিছুই দেখা যায়নি। আর আজকে পুরো উল্টা।”
রিকশা চালক হোসেন আলী বলেন, ‘‘আমি গুলবাগ থেকে মতিঝিল যাব। দুই-তিনটা গলি দিয়া কাকরাইলে এসে আটকে আছি। পরে আমার যাত্রী নেমে গেছেন। ১০০ টাকার খ্যাপ আর হইল না, চল্লিশ টাকা দিচ্ছে।
‘‘এখন না যাইতে পারতেছি সামনের দিকে, না যাইতে পারছি উল্টা দিকে।”
কোটাবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে নাশকতায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মেট্রোরেলের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। সেই কারণে মিরপুর, আগারগাঁও, ফার্মগেট হয়ে কারওয়ান বাজার, গুলিস্তান ও মতিঝিলগামী অফিসযাত্রীদের বেশ বেগ পেতে হচ্ছে।
“আগারগাঁওয়ে বড় সিগন্যাল পেয়েছি। এছাড়া বাসে ভিড় ছিল,” বলেন এক সরকারি চাকুরে।
মিরপুরে কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, তালতলাসহ প্রতিটি মোড়ে যানবাহনের জন্য লোকজনকে দীর্ঘসময় ধরে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বৃহস্পতিবার ঢাকার সড়কে গণপরিবহনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা দেখা গেছে। তবে গণপরিবহনের সংখ্যা তুলনামূলক কম হওয়ায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় যাত্রীদের।
বাস চালক সুমন বলেন, “এখনও সব বাস ছাড়ে নাই। রাস্তায় বাস কম। তিন-চারদিন গেলে সব স্বাভাবিক হইয়া যাইবো।”
রাস্তা কোথাও বন্ধ দেখেছেন কি না, এমন প্রশ্নের উত্তরে বেসরকারি চাকুরে সৌরভ বলেন, “ব্লক নাই, জ্যাম আছে।”
তবে সাম্প্রতিক সহিংসতায় আলোচিত এলাকা যাত্রাবাড়ীতে বৃহস্পতিবার আগের দিনের চাইতে কম যানবাহন দেখা গেছে। পথচারী ও যাত্রীর সংখ্যাও তুলনামূলক কম; জরুরি প্রয়োজন ও অফিসগামী ছাড়া কেউ বের হননি। সড়কের ফুটপাতের দোকান এখনো খোলেনি।