বৃহস্পতিবারই মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ সুযোগ ছিল।
Published : 30 Nov 2023, 08:24 PM
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে স্থানীয় সরকারের পদে থাকা ৬১ জন পদত্যাগ করেছেন।
এদের মধ্যে ৫২ জনই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, চারজন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও একজন সদস্য এবং চারজন পৌর মেয়র।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
এ বিভাগের যুগ্মসচিব মাসুম পাটওয়ারী বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ৬১ জন জনপ্রতিনিধির পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পদ শূন্য দেখিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
যারা ভোটে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, কেউ কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন।
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, সরকারের লাভজনক পদে থেকে সংসদ সদস্য পদে প্রার্থী হওয়া যায় না। আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধির পদগুলো লাভজনক। ফলে পদত্যাগ না করে কারও পক্ষে ভোটে দাঁড়ানো সম্ভব নয়।
আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট ধরে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের যে তফসিল ঘোষণা হয়েছে, তাতে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ ছিল।
বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বিভাগে সবচেয়ে বেশি ১৫ জন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, ঢাকা বিভাগে ১০ জন, রাজশাহী বিভাগের ৭ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৭, খুলনা ও রংপুর বিভাগে ৫ জন করে, সিলেট বিভাগে ২ জন এবং বরিশাল বিভাগে একজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন।
কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, হবিগঞ্জ ও সিরাজগঞ্জের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবং যশোর জেলা পরিষদের একজন সদস্যও পদ ছেড়েছেন।
এর বাইরে রাজশাহীর তাহেরপুর পৌরসভা, মুন্সীগঞ্জের মুন্সীগঞ্জ, ময়মনসিংহের ত্রিশাল এবং বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র পদত্যাগ করেছেন।
পদত্যাগ করলেন যারা
ঢাকা বিভাগের যেসব উপজেলা চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন, তাদের মধ্যে আছেন ঢাকার ধামরাই উপজেলার মোহাদ্দেছ হোসেন, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার শাহজাহান ভূঁইয়া, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার মহিউদ্দিন আহমেদ, মানিকগঞ্জের সিংগাইর উপজেলার মুশফিকুর রহমান খান।
তাদের মধ্যে সিরাজদিখানের মহিউদ্দিন মুন্সীগঞ্জ-১ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমর্থনে সেখান থেকে জেতেন বিকল্পধারার মাহী বি চৌধুরী।
গোপালগঞ্জের মকসুদপুর উপজেলার কাবির মিয়া, রাজবাড়ীর সদর উপজেলার ইমদাদুল হক বিশ্বাস, নরসিংদীর মনোহরদী উপজেলার সাইফুল ইসলাম খান বীরু, কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার নাসিরুল ইসলাম খানও পদত্যাগ করেছেন।
করিমগঞ্জ উপজেলাটি কিশোরগঞ্জ-৩ আসনে পড়েছে। এটি জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুল হক চুন্নুর আসন। গত তিনটি নির্বাচনে সেখানে আওয়ামী লীগ তাকে সমর্থন দিয়েছে। এবার সেখানে প্রার্থী করা হয়েছে নাসিরুলকে।
ঢাকা বিভাগে পদত্যাগী অন্য দুই উপজেলা চেয়ারম্যান হলেন টাঙ্গাইলের গোপালপুরের ইউনুস ইসলাম তালুকদার ও মির্জাপুরের মীর এনায়েত হোসেন মন্টু।
চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে চট্টগ্রামের জেলার আছেন ছয়জন। এরা হলেন সীতাকুণ্ড উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম আল মামুন, সাতকানিয়ার আব্দুল মোতালেব, পটিয়ার মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, চন্দনাইশের মোহাম্মদ আবদুল জব্বার চৌধুরী, ফটিকছড়ির হোসাইন মো. আবু তৈয়ব ও বাঁশখালীর চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী।
এদের মধ্যে এস এম আল মামুন চট্টগ্রাম-৪ আসনে এবার নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়বেন।
পদত্যাগীদের মধ্যে কুমিল্লার তিনজন এবং চাঁদপুর ও কক্সবাজারের দুইজন করে উপজেলা চেয়ারম্যান আছেন। যার মধ্যে আছেন কুমিল্লার দেবিদ্বারের আবুল কালাম আজাদ, চৌদ্দগ্রামের আবদুস ছোবহান ভূঁইয়া ও ব্রাহ্মণপাড়ার এম এ জাহের; চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম ও হাজিগঞ্জের গাজী মাঈনুদ্দিন; কক্সবাজারের মহেশখালীর মোহাম্মদ শরীফ বাদশা ও রামুর সোহেল সরওয়ার কাজল এবং নোয়াখালীর সোনাইমুড়ী উপজেলার খন্দকার আর আমিন।
পদ ছেড়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার ফিরোজুর রহমানও।
রাজশাহী বিভাগে যেসব উপজেলা চেয়ারম্যান পদ ছেড়েছেন, তাদের মধ্যে দুইজন করে আছেন সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার।
তারা হলেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার শফিকুল ইসলাম ও বেলকুচির নুরুল ইসলাম সাজেদুল এবং বগুড়ার শেরপুরের মজিবুর রহমান মজনু ও আদমদীঘির সিরাজুল ইসলাম খান রাজু।
উল্লাপাড়ার পদত্যাগী চেয়ারম্যান সিরাজগঞ্জ-৪ আসনে পেয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন। শেরপুরের মজিবুর রহমান মজনু বগুড়া-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী হচ্ছেন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের সৈয়দ নজরুল ইসলাম, নাটোরের সিংড়া উপজেলার শফিকুল ইসলাম এবং পাবনার চাটমোহরের আব্দুল হামিদও সংসদ নির্বাচনে দাঁড়াতে ছেড়েছেন উপজেলা চেয়ারম্যানের পদ।
সর্বউত্তরের রংপুর বিভাগে ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার আলী আসলাম, নীলফামারীর সৈয়দপুরের মোখলেছেদুল মোমিন, রংপুরের মিঠাপুকুরের জাকির হোসেন সরকার, গাইবান্ধার সদর উপজেলার শাহ সারোয়ার কবীর ও রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার জাকির হোসেন সরকারও পদ ছেড়েছেন।
ময়মনসিংহ বিভাগে ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছার আব্দুল হাই আকন্দ, ঈশ্বরগঞ্জের মাহমুদ হাসান সুমন, হালুয়াঘাটের মাহমুদুল হক সায়েম ও ফুলবাড়িয়ার আব্দুল মালেক সরকার ছেড়েছেন পদ।
ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলাটি ময়মনসিংহ-৮ সংসদীয় আসনে পড়েছে। সেখানে গত তিনটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থন দিয়েছে জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামকে। এবার আওয়ামী লীগ সেখানে প্রার্থী করেছে আবদুস সাত্তারকে। তবে মাহমুদ হাসান সুমন সেখানে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। গত নির্বাচনেও তিনি নৌকা চেয়েছিলেন।
শেরপুরের শ্রীবরদীর এ ডি এম শহিদুল ইসলাম ও ঝিনাইগাতীর এস এম আব্দুল্লাহেল ওয়ারেজ নাইম ও নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার জান্নাতুল ফেরদৌসের পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পদ শূন্য ঘোষণা করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
শ্রীবরদীর এ ডি এম শহিদুল ইসলাম এবার শেরপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
খুলনা বিভাগে মেহেরপুর সদর উপজেলার ইয়ারুল ইসলাম, সাতক্ষীরা সদরের আসাদুজ্জামান বাবু ও শ্যামনগর উপজেলার এস এম আতাউল হক, কুষ্টিয়ার মিরপুরের কামারুল আরেফিন, খুলনার ফুলতলার শেখ আকরাম হোসেন পদত্যাগ করেছেন।
আসাদুজ্জামান বাবু এবার সাতক্ষীরা-২ আসনে এবং আতাউল হক সাতক্ষীরা-৪ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন।
সিলেট বিভাগে সুনামগঞ্জের শাল্লার চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার এ কে এম সফি আহমদ (সলমান) পদত্যাগ করেছেন।
বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শামসূল আলমও পদ ছেড়ে সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
এছাড়া কুড়িগ্রামের জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আলী, লালমনিরহাট জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান, হবিগঞ্জ জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুশফিক হুসেন চৌধুরী, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস এবং যশোর জেলা পরিষদের সদস্য আজিজুল ইসলাম পদত্যাগপত্র গ্রহণ করে পদ শূন্য দেখিয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
তাদের মধ্যে জাফর আলী কুড়িগ্রাম-২ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন, লালমনিরহাট-৩ আসনে পেয়েছেন মতিয়ার রহমান, হবিগঞ্জ-১ আসনে পেয়েছেন মুশফিক হুসেন চৌধুরী।
এর বাইরে রাজশাহীর তাহেরপুর পৌরসভার মেয়র আবুল কালাম আজাদ, মুন্সীগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মোহাম্মদ ফয়সাল, ময়মনসিংহের ত্রিশাল পৌরসভার মেয়র এ বি এম আনিছুজ্জামান এবং বগুড়ার শিবগঞ্জ পৌরসভার মেয়র তৌহিদুর রহমান মানিক পদত্যাগ করেছেন।
তাদের মধ্যে আবুল কালাম আজাদকে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনে মনোনয়ন দিয়েছে আওয়ামী লীগ।