‘চুপ্পু যদি অপসারণ না হয়, তাহলেই সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে,” বলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক।
Published : 23 Oct 2024, 11:18 PM
দেশে ‘ফ্যাসিবাদের দোসরদের নির্মূল করার’ আগ পর্যন্ত জাতীয় সংসদ নির্বাচন ‘অপ্রাসঙ্গিক’ বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী।
বাহাত্তরের সংবিধান বাতিল এবং রাষ্ট্রপতির অপসারণের দাবিতে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়ে বুধবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এমন মন্তব্য করেন।
নির্বাচন কবে হবে এমন প্রশ্নের জবাবে নাসীরুদ্দীন বলেন, “এখনো দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ নির্মূল করা হয়নি। যতদিন পর্যন্ত দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ সমূলে নিশ্চিহ্ন না হবে, ততদিন পর্যন্ত নির্বাচনের প্রশ্ন অপ্রাসঙ্গিক।”
নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক বলেন, “আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মিটিং ছিল। আমরা দেখেছি সেখানে তারা হাসিনার ফ্যাসিস্ট রেজিমের যে অংশগুলো রয়েছে, সেগুলো তারা এখনো রাখা বা বাস্তবায়নের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছে।
“আমরা বিএনপির বিবৃতিতে দেখেছি যে তারা বলেছে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হবে এবং রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে। আমরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি স্পষ্ট করে বলতে চাই, চুপ্পু (রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন) যদি অপসারণ না হয়, তাহলেই সাংবিধানিক এবং রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হবে।”
রাষ্ট্রপতির পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনরতদের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে নাসীরুদ্দীন বলেন, “বাংলাদেশের বিরাজমান পরিস্থিতিতে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, জাতীয় পার্টি এবং অপ্রাসঙ্গিক দল বাদে প্রাসঙ্গিকভাবে যে দলগুলো রয়েছে আমরা গণঅভ্যুত্থানে যে শক্তিটা রয়েছে, তাদেরকে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিচ্ছি।”
তিনি বলেন, “ফ্যাসিস্ট রেজিমের কোনো অংশ বাংলাদেশ আমরা বিরাজমান দেখতে চাই না। এর ফয়সালা রাজনৈতিকভাবে করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আমরা তাদের নিকট আহ্বান রাখছি যে আপনারা বাংলাদেশকে রক্ষার জন্য কোনো হঠকারী সিদ্ধান্ত নেবেন না, ছলচাতুরির আশ্রয় নেবেন না।
“কোনো রাজনৈতিক দল যদি ফ্যাসিস্ট রেজিমের অংশ চুপ্পুকে অপসারণের আন্দোলনে না আসে, আমরা তাদেরকে ত্যাগ করে একসাথে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে আহবান জানাচ্ছি। আমরা তাদেরকে বাদ দিয়ে জনগণকে সাথে নিয়ে ঐক্য গড়ে তুলে ফ্যসিবাদের বিরুদ্ধে রাজপথে তার সমাধান করব।”
রাষ্ট্রপতি কে হবে জানতে চাইলে নাসির উদ্দিন পাটোয়ারী বলেন, “এ নিয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এটা একটা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, সুতরাং তা রাজনৈতিকভাবেই সমাধান হোক। যাকে সবাই পছন্দ করবে, গণ অভ্যুত্থানের স্পিরিট অনুযায়ী যে কাজ করবে, সে-ই রাষ্ট্রপতি হবে।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “প্রধান উপদেষ্টার সাথে আলোচনার পর বিভিন্ন রাজনৈতিক দল সংবিধানের দোহাই দিয়ে রাষ্ট্রপতিকে টিকিয়ে রাখতে চায়। তাদের কাছে আহ্বান থাকবে, ৭২ এর সংবিধান প্রশ্ন এবং আমাদের অভ্যুত্থান প্রশ্নে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে। কারণ যারা গণভ্যুত্থানের পক্ষে, এক দফায় একাত্মতা পোষণ করেছে, তারা ৭২ এর সংবিধান সমর্থন করতে পারে না।”
তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে, যে সংবিধানে গণমানুষের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে, নতুন ফ্যাসিবাদের পথ রুদ্ধ থাকবে।
“সংবিধান বাতিল হলে রাষ্ট্রপতির সাংবিধানিক ধারাবাহিকতার প্রয়োজন হবে না। গণতন্ত্রকামী প্রত্যকটি রাজনৈতিক দলের ঐক্য চাচ্ছি, তবে মুজিববাদী ও জাতীয় পার্টির কোনো সংস্পর্শ থাকবে না৷ গণতন্ত্রকামী সকল রাজনৈতিক দলকে আহ্বান করে বলতে চাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন যে ৫দফা দিয়েছি, এই ৫ দফাই গণভ্যুত্থানকে বিপ্লবে রূপান্তর করার চূড়ান্ত দফা। ৫ দফার মধ্য দিয়ে গণভ্যুত্থান বিপ্লবে রূপান্তরিত হবে।”
অন্যদের মধ্যে জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখপাত্র সামান্তা শারমিন, সদস্য মনজুর আল মতিন, আরিফুল ইসলাম আদিব, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সারজিস আলম, উমামা ফাতেমা, আব্দুল হান্নান মাসউদ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।