Published : 24 Dec 2024, 11:50 AM
লোকোমোটিভ, কোচ ও লোকবলের সংকটের পাশাপাশি অপব্যয়কে বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্দশার বড় কারণ হিসেবে তুলে ধরেছেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান।
তিনি বলেছেন, “রেলের আজকে যে অবস্থা, এ অবস্থায় আসার একটি বড় কারণ হচ্ছে অপব্যয়। আমাদের যে কোনো প্রকল্পের ব্যয় ভারত কিংবা আশপাশের দেশের তুলনায় অনেক বেশি।”
পদ্মা সেতু হয়ে দেশের দক্ষিণে ট্রেন চলাচলে নির্মিত নতুন রেলপথে ঢাকা থেকে খুলনা ও বেনাপোল রুটে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন সেবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথা বলছিলেন তিনি।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় রাজধানীর কমলাপুরে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে দুই ট্রেন সেবার উদ্বোধন করেন তিনি।
ট্রেন দুটির মধ্যে ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী জংশন হয়ে খুলনা যাবে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’। আর বেনাপোল যাবে ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’। এই দুই পথে যেতে পৌনে চার ঘণ্টার মতো সময় লাগবে। দুই পথে সেবা দেওয়া হবে একই ট্রেন দিয়ে।
উপদেষ্টা বলেন, “আজকে আমাদের জন্য অত্যন্ত আনন্দের দিন যে পদ্মা রেল সেতু সংযোগের মাধ্যমে খুলনা এবং ঢাকার মধ্যে একটা দ্রুত যাতায়াতের ব্যবস্থা হয়েছে।”
রেলে যে নানা রকম সংকট আছে, সে কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকেই অসন্তোষ ব্যক্ত করে থাকেন, কিন্তু আপনাদের জানতে হবে রেল কেন আপনাদের প্রার্থিত সুবিধা দিতে পারে না। আমাদের লোকোমেটিভের সংকট আছে, আমাদের কোচের সংকট আছে; ওয়াগনের সংকট আছে; লোকবলের সংকটে আছে।”
সংকটের পেছনে অপব্যয়ের পাশাপাশি সঠিক পরিকল্পনার অভাবকে দায়ী করে উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যত্রতত্র স্টেশন স্থাপন করেছি, যত্রতত্র রেল লাইনের বিস্তার করা হয়েছে; কিন্তু লোকোমোটিভ আছে কিনা, জনবল আছে কিনা, সেগুলোর ব্যবস্থা না করেই এগুলোর বিস্তার করা হয়েছে।”
রেলের যাত্রীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “সবাই আশা করেন যে রেল গাড়িটি তাদের বাড়ির পাশে থামবে। আবার তারা এটাও চান যে তারা দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছবেন। এটা সম্ভব না। আপনি যতই স্টপেজের সংখ্যা বাড়াবেন, যাতায়াতের সময় বাড়বে। আপনি অন্য একটা যানবাহনে রেলস্টেশনে যাবেন। এটা একটা সেকেন্ডারি ট্রান্সপোর্টেশন। যেখানে যাত্রী বেশি হবে, রাজস্ব বেশি পাওয়া যাবে, সেখানেই গাড়ি থামবে।”
বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনার পথে দুটি আন্তঃনগর ট্রেন ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও ‘চিত্রা এক্সপ্রেস’ চলাচল করে। এর মধ্যে ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ পদ্মা সেতু হয়ে এবং ‘চিত্রা এক্সপ্রেস’ বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে চলাচল করছে।
২০২৩ সালের ১ নভেম্বর থেকে ঢাকা-খুলনা রুটে নকশীকাঁথা নামে একটি কমিউটার ট্রেন চলছে।
এর আগে ঢাকা থেকে বেনাপোল রুটে ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ চলাচল করত বঙ্গবন্ধু সেতু হয়ে। এটি এখন পদ্মা সেতু হয়ে ভাঙ্গা, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, দর্শনা ও যশোর হয়ে বেনাপোলে যায়।
নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবে। ঢাকায় পৌঁছাবে সকাল পৌনে ১০টায়।
ওই একই ট্রেন ‘রূপসী বাংলা’ নাম নিয়ে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে কমলাপুর থেকে রওনা দিয়ে বেনাপোল পৌঁছাবে দুপুর আড়াইটায়।
আবার বেনাপোল থেকে বেলা ৩টা ৩০ মিনিটে রওনা হয়ে ঢাকায় পৌঁছাবে সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে। তারপর ফের ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’ খুলনার উদ্দেশ্যে ঢাকা ছাড়বে রাত ৮টায়; খুলনায় পৌঁছাবে রাত ১১টা ৪০ মিনিটে।
ঢাকা-খুলনা রুটে ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেস’নোয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী জংশন ও ভাঙ্গা জংশন স্টেশনে থামবে।
আর ঢাকা-বেনাপোল রুটে যশোর, নড়াইল, কাশিয়ানী ও ভাঙ্গা স্টেশনে থামবে ‘রূপসী বাংলা’ এক্সপ্রেস।
রেলওয়ে বলেছে, শুরুর দিকে দুটি ট্রেনেই ১১টি করে কোচ থাকবে। একেক ট্রেনে আসন সংখ্যা ৭৬৮টি।
দুটি ট্রেনের আগাম টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে গত শনিবার। অনলাইনের পাশাপাশি নির্ধারিত স্টেশনের কাউন্টার থেকে টিকেট কেনা যাচ্ছে। দুটি ট্রেনেরই সাপ্তাহিক বিরতি সোমবার।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ করেছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।
এ প্রকল্পের আওতায় ১৪টি নতুন স্টেশন ভবন ও ছয়টি স্টেশন পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। এই রেলপথে ৬৬টি বড় ও ২৪৪টি ছোট সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।
নতুন এ রেলপথ হওয়ায় ঢাকা ও খুলনার মধ্যে যাতায়াতের সময় কমবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘণ্টা; যশোর ও বেনাপোলের মধ্যে কমবে চার ঘণ্টার মত।
অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব ফাহিমুল ইসলাম উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।