ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘‘পুরো ঈদগাহকে নিরাপত্তা নিশ্চিতে পাঁচ স্তুরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।”
Published : 16 Jun 2024, 02:23 PM
একসঙ্গে ৩৫ হাজার মানুষের অংশগ্রহণে ঈদুল আজহার প্রধান জামাতের জন্য প্রস্তুত রাজধানীর জাতীয় ঈদগাহ।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সোমবার সকাল সাড়ে ৭টায় হবে ঈদের প্রধান জামাত। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে সব প্রস্তুতি এরই মধ্যে শেষ হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য, সংসদ সদস্য, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এ জামাতে নামাজ পড়বেন ঈদের সকালে। সেজন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রস্তুতিও নেওয়া হয়েছে।
রোববার সকাল ১০টায় প্রথমে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান এবং পরে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ানের মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ জাতীয় ঈদগাহ পরিদর্শন করেন।
ঈদের জামাতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ‘নিশ্চিত করা হয়েছে’ জানিয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘পুরো ঈদগাহকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে, পাঁচ স্তুরের নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে।
“এখানে রাষ্ট্রপতিসহ গণমান্য ব্যক্তিরা নামাজ আদায় করবেন। সেজন্য আমাদের সাধারণ ইউনিফর্ম পুলিশ পেট্রোলিং, চেকপোস্ট, সাইবার পেট্রোলিং, সিসিটিভি ক্যামেরা থাকছে। এবং পুলিশ, র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ছাড়াও স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্স- এসএসএফ এবং ভিভিআইপির নিরাপত্তার বাহিনীর সদস্যরা সেখানে দায়িত্ব পালন করবেন। আমরা আশা করি, ঈদের এই জামাত সুষ্ঠুভাবে সুন্দরভাবে অনুষ্ঠিত হবে।”
জঙ্গি হামলার কোনো শঙ্কা না থাকলেও ঈদুল আজহা ঘিরে সব ধরনের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার কথা বলেন ঢাকার পুলিশ কমিশনার।
সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, “সুনির্দিষ্ট কোনো হুমকি না থাকলেও জঙ্গির বিষয়ে কোনো ছাড় নয়। আমরা সব কিছু বিষয়ে মাথায় রেখে কঠোর অবস্থানে রয়েছি।”
শুধু জাতীয় ঈদগাহ ময়দান নয়, রাজধানীর প্রতিটি ঈদ জামাতকে ঘিরে আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়েছে বলে জানান পুলিশ কমিশনার।
ঢাকার পুলিশ প্রধান বলেন, ঈদের প্রধান জামাত ঘিরে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, কিছু কিছু জায়গায় রাস্তায় ডাইভারশনও দেওয়া হয়েছে।
ঈদের সকালে যারা জামাতে অংশ নিতে আসবেন, তাদের জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে না রাখতে অনুরোধ করেন কমিশনার হাবিবুর রহমান।
তিনি বলেন, “নগরবাসীর প্রতি আমাদের বিনীত অনুরোধ থাকবে জাতীয় ঈদগাহসহ সকল জামাতের আপনারা জায়নামাজ ছাড়া অন্য কোনো দাহ্যবস্তু, বিস্ফোরক জাতীয় বস্ত, কোনো ধারালো বস্তু নিয়ে আসবেন না।’’
এর আগে গত বুধবার জাতীয় ঈদগাহের প্রস্তুতি দেখে গেছেন ঢাকার দক্ষিণ সিটি মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস।
তিনি বলেন, “সকাল সাড়ে ৭টায় জাতীয় ঈদগাহ ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এই জামাতে সব রকম ব্যবস্থা ও সুযোগ-সুবিধা থাকবে। প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ এই জামাতে অংশ নেবেন।
“আমি ঢাকাবাসীর সবাইকে আমন্ত্রণ জানাতে চাই, আপনাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে জাতীয় ঈদগাহে এসে এই জামাতে অংশগ্রহণ করুন, ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিন।”
‘চামড়া নিয়ে কারসাজি হলে ছাড় নয়’
ঈদুল আজহা ঘিরে সারা দেশে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন র্যাবের মহাপরিচালক হারুন অর রশিদ।
রোববার জাতীয় ঈদগাহর নিরাপত্তা ব্যবস্থা পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, “দেশের বিভিন্ন জায়গায় বড়বড় ঈদের জামাত হয়। এসব জামাতকে ঘিরে সব ধরনের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা র্যাবের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে।
“তাছাড়া এলাকা ভিত্তিক ঈদের জামাত ঘিরেও আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে।”
ডগ স্কোয়াড, সিসি ক্যমেরা, মেটাল ডিটেকটর, ওয়াচ টাওয়ার ব্যবহারসহ সব ধরনের প্রস্তুতির কথা জানিয়ে র্যাব মহাপরিচালক বলেন, “আমাদের গোয়েন্দারা যেমন মাঠে থেকে কাজ করছে, তেমনি সাইবার ওয়ার্ল্ডে সার্বক্ষণিক নজরদারি হচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে কেউ উসকানিমূল বক্তব্য দিলে তাকে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে।”
এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব প্রধান বলেন, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে কোনো জঙ্গি হুমকির তথ্য তাদের কাছে এখনও নেই।
“তারপরও আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে এবং সব কিছু চিন্তা করেই আমরা প্রস্তুতি নিয়েছি।”
কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে কারসাজির বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে হারুন অর রশিদ বলেন, “এসব নিয়ে কেউ কিছু করলে ছাড় দেওয়া হবে না।”
মনোরম সাজে ঈদগাহ
জাতীয় ঈদগাহের প্রধান ফটকের সামনে নান্দনিকভাবে সাজানো হয়েছে তোরণ। সেখানে লেখা রয়েছে ‘চারিদিকে আজ খুশির জোয়ার, সবাই গাইছে গীত, এসেছে ধরায় মুসলিম জাহানের কোরবানির ঈদ। ঈদ মোবারক।”
ঈদগাহ প্রাঙ্গণে রয়েছে অজুর ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওজুর জন্য সারি সারি পানির ট্যাপগুলো নতুনভাবে লাগানো হয়েছে।
ঈদগাহের মাঠ প্রায় পুরোটাই ত্রিপল দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়েছে। প্যান্ডেলের নিচে মাঠে ম্যাট বিছানো। এছাড়াও রয়েছে সিলিং ফ্যান, লাইট ও মাইকের ব্যবস্থা।
জাতীয় ঈদগাহে পুলিশ ও র্যাবের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ, স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া ফায়ার ব্রিগেডের একটি টিমও জাতীয় ঈদগাহের কাছে থাকছে।
ঈদগাহে মূল প্রবেশ পথ করা হয়েছে চারটি। জামাত শেষে বের হওয়ার জন্য উত্তরের দিকে আরও তিনটি গেইট খোলা থাকবে।
এছাড়া নারীদের জন্য আলাদা প্রবেশপথ করা হয়েছে।