বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও বুধবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি হতে পারে।
Published : 02 Oct 2024, 01:10 AM
আশ্বিনের মাঝামাঝিতে সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে দেশের তিন বিভাগে দুই দিন ভারি বৃষ্টি হতে পারে বলে সতর্ক থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবহাওয়ার এক সতর্কবার্তায় বলা হয়, সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও বুধবার সকাল ৬টা থেকে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হতে পারে।
ভারি বৃষ্টির ফলে চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধস হতে পারে বলে ওই বার্তায় সতর্ক করা হয়েছে।
দিনের আবহওয়া পরিস্থিতি
আবহাওয়ার নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহ বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।
সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারি থেকে ভারি বৃষ্টি হতে পারে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৬৪ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে সিলেটে। মাদারীপুরে ২৯, সিরাজগঞ্জের বাড়াবাড়িতে ২৬ মিলিমিটারসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কম-বেশি বৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ ৩৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় বাগেরহাটের মোংলায়। এ দিন ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৩৫ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে।
পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াম কমার আভাস এসেছে আবহাওয়ার পূর্বাভাসে।
সাধারণত ২৪ ঘণ্টায় ১ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে তাকে হালকা, ১১ থেকে ২২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে তাকে মাঝারি, ২৩ থেকে ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে তাকে মাঝারি ধরনের ভারি, ৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হলে তাকে ভারি এবং ৮৮ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত রেকর্ড হলে তাকে বলা হয় অতিভারি বৃষ্টিপাত।
অক্টোবরেও ঝড়-বন্যা
দেশের প্রধান নদ-নদীতে স্বাভাবিক প্রবাহ থাকলেও অক্টোবরে ভারি বৃষ্টির কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কিছু জায়গায় স্বল্পমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর মাসের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে এই সতর্কতার সঙ্গে বলা হয়েছে, অক্টোবরে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে দুই-চার দিন মাঝারি থেকে তীব্র বজ্রঝড় হতে পারে। সারাদেশে তিন থেকে পাঁচ দিন হালকা থেকে মাঝারি বজ্রঝড়ও হতে পারে।
ষড় ঋতুর বাংলাদেশে আষাঢ় ও শ্রাবণকে বর্ষাকাল বলা হলেও মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে অন্তত চার মাস বৃষ্টি হয়, যা সাধারণত সেপ্টেম্বরের শেষে বিদায় নেয়।
তবে মঙ্গলবারের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এবার অক্টোবরের প্রথমার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু, যার প্রভাবে বৃষ্টি হয়; সেই বায়ু ধীরে ধীরে বিদায় নেবে।
সেইসঙ্গে এই মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে তিনটি লঘুচাপ তৈরি হতে পারে, যার মধ্যে একটি নিম্নচাপ বা ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়া অফিস বলছে, অক্টোবরে ‘স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা’ আছে।
এর মধ্যে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে পারে। তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে কিছুটা বেশি থাকতে পারে।
এ বছর বর্ষার শুরুতে জুনের দ্বিতীয়ার্ধে দেশে ভারি বর্ষণ ও উজানের ঢলে বন্যার কবলে পড়ে উত্তর-পূর্বাঞ্চল। ঈদের উৎসবের আগে ও পরে দুই সপ্তাহ ধরে দুর্ভোগে কাটে সিলেট, সুনামগঞ্জসহ আশপাশের জেলার বাসিন্দাদের। সে সময় উত্তরাঞ্চলেও পানি বেড়ে নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়।
উজানের ঢলে জুলাইয়ের শুরুতেও দেশের উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বন্যা দেখা দেয়। এর ফলে প্লাবিত হয় অনেক গ্রাম।
আর অতি ভারি বৃষ্টির মধ্যে ভারত থেকে নেমে আসা তীব্র ঢলের কারণে গত ২০ অগাস্ট থেকে দেশের দক্ষিণ ও উত্তর-পূর্বাংশের কয়েক জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়। অল্প সময়ের মধ্যে তা বিস্তৃত হয় ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, লক্ষ্মীপুর ও কক্সবাজারে।
সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহেও দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তার কিছু নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।