গুম সংক্রান্ত ঘটনা তদন্তে সরকার গঠিত কমিশনের চেয়ারম্যান বলেছেন, ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তারা প্রায় ১,৬০০ অভিযোগ পেয়েছেন।
Published : 10 Nov 2024, 12:28 AM
ক্ষমতাচ্যূত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ‘গুমের‘ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে এবং তাদের বিচারের আওতায় আনতে গুম সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনকে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতির দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস।
শনিবার গুম সংক্রান্ত ঘটনা তদন্তে সরকার গঠিত কমিশনের বৈঠকে তিনি কমিশনের সদস্যদের উদ্দেশ্যে বলেন, “আপনার যা কিছু প্রয়োজন, আমরা তা নিশ্চিত করব এবং সব ধরনের সহায়তা প্রদান করব।”
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক শেষে প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, কমিশনের সদস্যরা বলেন, তারা ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী সময়ে সরকারের কাছে একটি অন্তর্বর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেবেন এবং তারপর আরও কাজ চালিয়ে যাবেন।
আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, প্রয়োজনে সরকার কমিশনের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়াবে এবং ভুক্তভোগীদের সুরক্ষার জন্য একটি আইনি বিধান তৈরিসহ প্রয়োজনীয় আদেশ জারি করবে।
কমিশনের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরী বৈঠকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ১,৬০০ অভিযোগ পাওয়ার তথ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখেছেন এবং ১৪০ জন অভিযোগকারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
বৈঠকে এক কমিশন সদস্য বলেন, “অভিযোগের সংখ্যায় আমরা অভিভূত। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের প্রতিশোধের ভয়ে অনেকে এখনও কমিশনে আসছে না। এর থেকে আমরা বুঝতে পারি যে ঘটনার সংখ্যা এখন পর্যন্ত যা রিপোর্ট করা হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি।
আরেক কমিশন সদস্য বলেন, তারা সন্দেহ করছেন যে গুমের ঘটনা অন্তত ৩,৫০০ হতে পারে এবং এই অপরাধগুলো কারা করেছে এবং কার নির্দেশে হয়েছে তা চিহ্নিত করার জন্য তারা কাজ করছেন।
বৈঠকে বলা হয়, ভুক্তভোগীদের মধ্যে অনেকেই কারাগারে রয়েছেন, কেউ কেউ এমনকি মৃত্যুদণ্ডের মুখোমুখি হয়েছেন, কারণ তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হওয়ার পরে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। নিখোঁজ হওয়া কিছু ভুক্তভোগী প্রতিবেশী ভারতের কারাগারে বন্দি রয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
কমিশনের সদস্যরা এমন কিছু গোপন স্থানের প্রমাণ সংরক্ষণে সরকারের সহায়তা চেয়েছেন যেখানে ভুক্তভোগীদের লুকিয়ে রাখা হয়েছিল।
আরেক কমিশন সদস্য বলেন, “অনেক ভুক্তভোগী আমাদের বলেছেন যে তারা বছরের পর বছর সূর্যের আলো দেখেননি। তারা শুধু নতুন দিন বুঝতে পারতেন যখন সকালের নাস্তা দেওয়া হত।”
কমিশনের এই সদস্য অভিযুক্ত ব্যক্তির বিদেশ ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি এবং সম্ভব হলে তাদের পাসপোর্ট বাতিল করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান।
বৈঠকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, কমিশন অভিযুক্তদের তালিকা সরবরাহ কররে তারা অবিলম্বে তা করবেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মাহফুজ আলম কমিশনের অনুসন্ধান জনসমুক্ষে প্রকাশ করার এবং গুমের ঘটনাগুলোর তত্ত্বাবধায়নে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় প্রকাশের ওপর জোর দেন।
বৈঠকে উপদেষ্টাদের মধ্যে সালেহউদ্দিন আহমেদ, নূরজাহান বেগম, আদিলুর রহমান খান, এম সাখাওয়াত হোসেন ও নাহিদ ইসলাম, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আবদুল হাফিজ, মন্ত্রিপরিষদ সচিব শেখ আব্দুর রশিদ ও প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিব মো. সিরাজ উদ্দিন মিয়া উপস্থিত ছিলেন।