“যদি আমাকেও গালমন্দ করে এতে কিছু যায় আসে না। আমরা কোনো মতপ্রকাশে সেন্সরশিপে বিশ্বাস করি না।”
Published : 01 Feb 2025, 04:32 PM
বইমেলায় প্রকাশের আগে বইয়ের পাণ্ডুলিপি বাংলা একাডেমিকে দিয়ে যাচাই করিয়ে নেওয়ার যে পরামর্শ পুলিশের এক কর্মকর্তা দিয়েছেন, তাকে ‘হাস্যকর’ বলেছেন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
তিনি বলেছেন, বইমেলার নীতিমালায় এরকম কোনো বিষয় নেই। আর গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ‘মত প্রকাশের স্বাধীনতায় বিশ্বাসী’।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার চত্বরে জাতীয় কবিতা পরিষদ আয়োজিত জাতীয় কবিতা উৎসবে কথা বলছিলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা। ‘স্বাধীনতা সাম্য সম্প্রীতির জন্য কবিতা’– প্রতিপাদ্য নিয়ে দুই দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত আবু সাঈদের মা মনোয়ারা বেগম।
আগের দিন শুক্রবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এবারের বইমেলার নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গিয়ে নিজেদের ভাবনার কথা তুলে ধরেন ডিএমপির কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী ও অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম।
এক সাংবাদিক প্রশ্ন রেখেছিলেন- এর আগে বইয়ের কন্টেন্ট নিয়ে মেলায় সমস্যা হয়েছে, এমন পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশের কোনো উদ্যোগ আছে কি না?
উত্তরে ডিএমপির কমিশনারে শেখ মো. সাজ্জাত আলী বলেন, “আমরা একটা সমন্বয় সভা করেছিলাম; সেখানে বাংলা একাডেমির কর্মকর্তারা ছিলেন। তাদের আমরা রিকুয়েস্ট করেছি- এরকম কোনো বই যেন মেলায় না আসে, যেখানে উসকানিমূলক কথা বা লেখা আছে।
“এটা যেন ওনারা স্ক্যানিং করে, ভেটিং করে স্টলে উপস্থাপন করেন। আমি আশা করি, তারা তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবেন।”
এসময় পাশ থেকে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন নজরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এবার বাংলা একাডেমিকে সাজেস্ট করছি, আগামীতে নতুন যে বইগুলো প্রকাশিত হবে- তার পাণ্ডুলিপি আগেই যেন বাংলা একাডেমিকে জমা দেওয়া হয়।
“তারা এটা যাচাই-বাছাই করবে, পড়ে দেখবে যে এমন কোনো কন্টেন্ট যেন ছাপানো না হয়, যেটা আমাদের সোশাল লাইফকে ডিজরাপ্ট করে, আমাদের কমিউনাল হারমনিকে ডিজরাপ্ট করে, আমাদের দেশদ্রোহী কোনো বক্তব্য বা প্রকাশনা বা সরকারকে ডিস্টাবিলাইজ (অস্থির) করে- এরকম কোনো ধরনের প্রকাশনা যেন মেলায় না আসে। এটা আমরা রিকোয়েস্ট করেছি বাংলা একাডেমিকে।”
পুলিশ কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম বলেন, “আশা করি, আগামী বছর থেকে এটা আমরা করাইতে পারব বাংলা একাডেমিকে দিয়ে যে- বই প্রকাশনার আগে পাণ্ডুলিপি তাদেরকে দিতে হবে। তারা অনুমতি দিলেই সেটা শুধু প্রকাশ হবে।”
এ বিষয়ে জাতীয় কবিতা উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, “একজন পুলিশ কর্মকর্তার বরাত দিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে যে বই ছাপানোর আগে বাংলা একাডেমি অথবা পুলিশকে পড়তে দেওয়া উচিত। এবার না পারা গেলেও আগামীবার দেওয়া উচিত।
“এটা অবিশ্বাস্য, এটা হাস্যকর। এটা আমাদের সরকারের নীতিমালার আশপাশেই নাই। আমাদের সরকার স্পষ্ট বিশ্বাস করে মত প্রকাশের স্বাধীনতাতে। এবং সেটা যদি আমাকেও গালমন্দ করে এতে কিছু যায় আসে না। আমরা কোনো মতপ্রকাশে সেন্সরশিপে বিশ্বাস করি না।”
উপদেষ্টা বলেন, “আজকে এই অনুষ্ঠানের উদ্বোধক শহীদ আবু সাইদের মা। এই উদ্বোধক নির্বাচনটাই বলে দেয় আমরা কোন বাংলাদেশে আছি এবং কোন পথে হাঁটছি।"
গণঅভ্যুত্থানে কবিতার ভূমিকা তুলে ধরে তিনি বলেন, “আপনি দেখবেন যে এবারের আন্দোলনে কবি নজরুল নতুনভাবে আবিষ্কৃত হয়েছেন। তার কবিতা বিভিন্ন জায়গায় দেয়ালে লেখা হয়েছে, গানে এসেছে, স্লোগানে এসেছে। এবারের আন্দোলনে কবিতা, গ্রাফিতি, এগুলো কার্যকরভাবে মানুষকে অনুপ্রেরণা দিয়েছে।”
“অর্থাৎ, আমরা শিল্পের শক্তির কাছে আবারও ফিরে গেছি। এবং শিল্পই আমাদের শক্তি দিয়েছে ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে বাংলাদেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে। আমি বিশ্বাস করতে চাই যে আমাদের শিল্প-সাহিত্য অঙ্গনের মানুষ সবাই জনগণের পক্ষেই থাকবেন।”
অন্যদের মধ্যে গণঅভ্যুত্থানে নিহত নাফিসের বাবা গোলাম রহমান, জাতীয় কবিতা পরিষদের আহ্বায়ক কবি মোহন রায়হান, সদস্য সচিব রেজাউদ্দিন স্টালিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
পুরনো খবর