মোট ৯২ হাজার ৫৯৫ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ৮.৬৭ শতাংশ।
Published : 26 Nov 2023, 12:23 PM
কোভিড মহামারীর পর প্রথমবারের মত পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাস করেছে ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ শিক্ষার্থী।
দ্বাদশ শ্রেণির গণ্ডি পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার পর্যায়ে পা রাখতে যাওয়া এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৯২ হাজার ৫৯৫ জন জিপিএ ৫ পেয়েছে, যা উত্তীর্ণের মোট সংখ্যার ৮.৬৭ শতাংশ।
এর আগে ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষা কোভিড মহামারী আর বন্যার কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে হওয়া সেই পরীক্ষায় ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করে। জিপিএ-৫ পায় ১ লাখ ৭৬ হাজার ২৮২ জন।
এই হিসাবে ২০২৩ সালের পরীক্ষায় পাসের হার কমেছে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ পয়েন্ট। আর জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৮৩ হাজার ৬৮৭ জন।
২০২১ সালের এইচএসসি পরীক্ষাও মহামারীর কারণে বিলম্বিত হয়েছিল। কম বিষয়ে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসের পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৯৫ দশমিক ২৬ শতাংশ; এক লাখ ১ লাখ ৮৯ হাজার ১৬৯ জন পায় জিপিএ-৫।
আর ২০২০ সালে মহামারীর কারণে পরীক্ষা হয়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে মূল্যায়নে সবাই পাস করে, জিপিএ-৫ পায় এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
মহামারী শুরুর আগে ২০১৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক ও সমমানের পরীক্ষায় সার্বিকভাবে পাস করে ৭৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে মোট ৪৭ হাজার ২৮৬ জন শিক্ষার্থী পাঁচে পাঁচ জিপিএ পায়।
শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি রোববার সকালে সব শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠান সরকারপ্রধানের হাতে ২০২৩ সালের এইচএসসি পরীক্ষার ফলের সারসংক্ষেপ হাতে তুলে দেন। পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাউস চেপে উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের আনুষ্ঠানিকতা সারেন।
বেলা ২টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে সংবাদ সম্মেলন করে এবারের ফলাফলের বিস্তারিত তুলে ধরবেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইট থেকে ফল জানতে পারছেন শিক্ষার্থীরা। এছাড়া বরাবরের মত এসএমএসের মাধ্যমেও ফলাফল জানা যাচ্ছে।
২০২০ সালে দেশে মহামারীর প্রকোপে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে এইচএসসি পরীক্ষা নেওয়া যায়নি। জেএসসি ও এসএসসির ফলের ভিত্তিতে ২০২১ সালের জানুয়ারিতে তাদের মূল্যায়ন ফল প্রকাশ করা হয়। তাতে ১৩ লাখ ৬৭ হাজার ৩৭৭ জন শিক্ষার্থীর সবাই পাস করে, জিপিএ-৫ পান এক লাখ ৬১ হাজার ৮০৭ জন।
২০২১ সালের পরীক্ষা শুরুই হয় ডিসেম্বরে, যেখানে মহামারীর আগে স্বাভাবিক সময়ে এপ্রিলে এ পরীক্ষা হত নিয়মিতভাবে। বিশেষ পরিস্থিতিতে সেবার সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে গ্রুপভিত্তিক তিনটি নৈর্বাচনিক বিষয়ে ছয়টি পত্রে এইচএসসি পরীক্ষা হয়। সময় কমিয়ে আনা হয় দেড় ঘণ্টায়।
২০২২ সালের পরীক্ষা এগিয়ে আনার পরিকল্পনা থাকলেও বন্যার কারণে তা আবার পিছিয়ে শুরু হয় ৬ নভেম্বর থেকে। নয়টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা বোর্ড ও কারিগরি বোর্ড মিলিয়ে ১১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৮৭ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। পরীক্ষা নেওয়া হয় বিষয়, নম্বর ও সময় কমিয়ে। ফল প্রকাশ করা হয় ২০২৩ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি।
তিন বছর পর ২০২৩ সালে এসে পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা দেন শিক্ষার্থীরা। কেবল তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে পরীক্ষা হয় ৭৫ নম্বরে। তবে এবারও বাগড়া দিয়েছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
এমনিতে প্রতিবছর সব বোর্ডের পরীক্ষা একসঙ্গে হলেও এবার প্রবল বৃষ্টি আর ঢলের কারণে তিন বোর্ডের পরীক্ষা শুরু হয় দেরিতে। তবে ফল প্রকাশ করা হল একসঙ্গেই।
আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে এইচএসসি পরীক্ষা শুরু হয় ১৭ অগাস্ট, শেষ হয় ২৫ সেপ্টেম্বর। আর চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা ১০ দিন পিছিয়ে ২৭ অগাস্ট শুরু হয়।
এগারোটি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১৩ লাখ ৫৭ হাজার ৯১৫ জন শিক্ষার্থী এবার পরীক্ষায় অংশ নেয়।
তাদের মধ্যে ১০ লাখ ৬৭ হাজার ৮৫২ জন পাস করেছে। সার্বিক পাসের হার ৭৮.৬৪%
নয় সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫.৯০%, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭৮ হাজার ৫২১ জন।
মাদ্রাসা বোর্ডে পাসের হার ৯০.৭৫ %, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭ হাজার ৯৭ জন।
কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৯১.২৫%, জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৯৭৭ জন।
ছাত্রদের মধ্যে পাসের হার ৭৬.৭৬%, ছাত্রীদের মধ্যে পাস করেছে ৮০.৫৭%
জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪৩ হাজার ২৩০ জন ছাত্র এবং ৪৯ হাজার ৩৬৫ জন ছাত্রী।
বোর্ড | পাসের হার (%) | জিপিএ-৫ (জন) | পাসের হার (%) | জিপিএ-৫ (জন) | পাসের হার (%) | জিপিএ-৫ (জন) | পাসের হার (%) | জিপিএ-৫ (জন) |
২০২২৩ | ২০২২ | ২০২১ | ২০২০ | |||||
ঢাকা | ৭৯.৪৪ | ৩১,৭৫২ | ৮৭.৮৩ | ৬২,৪২১ | ৯৬.২০ | ৫৯,২৩৩ | ১০০ | ৫৭,৯২৬ |
রাজশাহী | ৭৮.৪৬ | ১১,২৫৮ | ৮১.৬০ | ২১,৮৫৫ | ৯৭.২৯ | ৩২,৮০০ | ১০০ | ২৬,৫৬৮ |
কুমিল্লা | ৭৫.৩৯ | ৫,৬৫৫ | ৯০.৭২ | ১৪,৯৯১ | ৯৭.৪৯ | ১৪,১৫৩ | ১০০ | ৯,৩৬৪ |
যশোর | ৬৯.৮৮ | ৮,১২২ | ৮৩.৯৫ | ১৮,৭০৩ | ৯৮.১১ | ২০,৮৭৮ | ১০০ | ১২,৮৯২ |
চট্টগ্রাম | ৭৪.৪৫ | ৬,৩৩৯ | ৮০.৫০ | ১২,৬৭০ | ৮৯.৩৯ | ১৩,৭২০ | ১০০ | ১২,১৪৩ |
বরিশাল | ৮০.৬৫ | ৩,৯৯৩ | ৮৬.৯৫ | ৭,৩৮৬ | ৯৫.৭৬ | ৯,৯৭১ | ১০০ | ৫,৫৬৮ |
সিলেট | ৭১.৬২ | ১,৬৯৯ | ৮১.৪০ | ৪,৮৭১ | ৯৪.৮০ | ৪,৭৩১ | ১০০ | ৪,২৪২ |
দিনাজপুর | ৭৪.৪৮ | ৬,৪৫৯ | ৭৯.০৮ | ১১,৮৩০ | ৯২.৪৩ | ১৫,৩৪৯ | ১০০ | ১৪,৮৭১ |
ময়মনসিংহ | ৭০.৪৪ | ৩,২৪৪ | ৮০.৩২ | ৫,০২৮ | ৯৫.৭১ | ৭,৬৮৭ | ১০০ | ১০,০৪০ |
মাদ্রাসা | ৯০.৭৫ | ৭,০৯৭ | ৯২.৫৬ | ৯,৪২৩ | ৯৫.৪৯ | ৪,৮৭২ | ১০০ | ৪,০৪৮ |
কারিগরি | ৯১.২৫ | ৬,৯৭৭ | ৯৪.৪১ | ৭,১০৪ | ৯২.৮৫ | ৫,৭৭৫ | ১০০ | ৪,১৪৫ |
মোট | ৭৮.৬৪ | ৯২,৫৯৫ | ৮৫.৯৫ | ১,৭৬,২৮২ | ৯৫.২৬ | ১,৮৯,১৬৯ | ১০০ | ১,৬১,৮০৭ |
ফলাফল জানা যাবে যেভাবে
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, বোর্ডগুলোর সমন্বিত ওয়েবসাইটে (www.educationboardresults.gov.bd) ঢুকে পরীক্ষার্থীর রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর টাইপ করতে হবে। এরপর পরীক্ষার্থীর ফল পাওয়া যাবে।
শিক্ষার্থীরা রেজাল্ট শিট ডাউনলোড করতে পারবেন এই ওয়েবসাইট থেকে। তা করতে চাইলে সমন্বিত ওয়েবসাইটের রেজাল্ট কর্নারে ক্লিক করে থেকে ফলাফল ডাউনলোড করা যাবে।
মোবাইল ফোনে এসএমএসের মাধ্যমেও ফল জানা সম্ভব।
এইচএসসির ফল জানতে HSC লিখে স্পেস দিয়ে শিক্ষা বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2023 লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে। ফিরতি এসএমএসে আসবে ফল।
একইভাবে আলিমের ফল পেতে Alim লিখে স্পেস দিয়ে Mad লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2023 লিখে 16222 নম্বরে পাঠাতে হবে।
আর কারিগরি বোর্ডের ক্ষেত্রে HSC লিখে স্পেস দিয়ে Tec লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে 2023 লিখে 16222 নম্বরে পাঠালে ফিরতি এসএমএসে ফলাফল জানানো হবে।