সাবেক এ দম্পতি গত কয়েকবছর ধরে পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলাসহ নানা অভিযোগ করে আসছেন, পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলাও করেছেন।
Published : 03 Dec 2024, 12:50 AM
ভূমি উপদেষ্টা এএফ হাসান আরিফের ছেলে মোয়াজ আরিফের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করেছেন তার সাবেক স্ত্রী নীলা ইসরাফিল।
সোমবার রাজধানীর রমনা থানায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে, যাতে মোয়াজ আয়াজকে আসামি করার কথা জানিয়েছেন ডিএমপির রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম।
তিনি বলেন, “আসামি মোয়াজ আরিফ গত ২৯ নভেম্বর ঢাকা ক্লাবের ভেতরে নীলাকে মারধর করেছেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে। আমরা তদন্ত করে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।“
তবে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে আইনজীবি মোয়াজ আরিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট্কমকে বলেন, ঢাকা ক্লাবের রেস্তোরাঁয় বাগবিতণ্ডার এক পর্যায়ে আরও অনেকের সামনেই নিজেকে নিজেই আঘাত করে আহত হন নীলা।
সাবেক এ দম্পতি গত কয়েকবছর ধরে পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলাসহ নানা অভিযোগ করে আসছেন। দুপক্ষ একাধিক মামলাও করেছেন। নানা ঘটনার মধ্যে ২০২১ সালের এপ্রিলে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। তাদের পাঁচ বছর ও চার বছরের দুটো কন্যা সন্তান রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, এর আগে পরস্পরের বিরুদ্ধে মামলা করলেও সপ্তাহ শেষে তারা আবার একসঙ্গে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতেও বের হন।
পারিবারিক জটিলতার জেরে ২০২১ সালের জুনে মোয়াজ আরিফকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে নয় মাসের অন্তসত্ত্বা অবস্থায় নীলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। কারাগারে নিজের দ্বিতীয় সন্তানের জন্ম দেন তিনি।
সন্তান জন্ম দেওয়ার একদিন পর জামিনে বেরিয়ে ১৯ জুন রাজধানীর নিউ মার্কেট থানায় মোয়াজ আরিফের বিরুদ্ধে নির্যাতন, ভ্রুণ হত্যা ও তার দুই বছরের কন্যা সন্তানকে আটকে রাখার অভিযোগে মামলা করেন।
পরে ২০২১ সালের এপ্রিলে বিচ্ছেদ হয় তাদের। পরের বছর মার্চে প্রীতি সাঈদকে বিয়ে করেন মোয়াজ। এরপর নীলা তার বন্ধুদের নিয়ে প্রীতি সাঈদের হাত ভেঙে দেন বলে সেসময় মামলা হয়। ওই মামলায় নীলাকে আসামি করা হয়েছিল।
সম্প্রতি আবার নীলা তার সাবেক স্বামী মোয়াজের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে ফেইসবুকে একাধিক পোস্ট দিয়ে আসছিলেন। সোমবার রমনা থানায় গিয়ে মামলা দায়েরের আগে ফেইসবুক লাইভও করেন, যা সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমে আলোচনায় আসে।
মামলার এজাহারে নীলা ইসরাফিলের অভিযোগ, গত ২৯ এপ্রিল বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি তার দুই সন্তান ও গৃহকর্মীসহ গাড়িতে মোয়াজের বাসায় এসে তাকে নিয়ে ঢাকা ক্লাবে যান। সেখানেই মোয়াজ তাকে মারধর ও নির্যাতন করেন। এক পর্যায়ে ক্লাবের ডেস্কে থাকা ধারালো ছুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেন। পরে ক্লাবের কর্মী ও তার গৃহকর্মী এসে তাকে উঠিয়ে চিকিৎসার জন্য পাঠায়।
এ সুযোগে মোয়াজ তার বাসা থেকে চারটি ল্যাপটপ, ১৭০০ সুইস ফ্রাঙ্কসহ বেশ কিছু জিনিসপত্র নিয়ে যায় বলেও এজাহারে অভিযোগ করা হয়।
এসব অভিযোগের বিষয়ে মোয়াজ আরিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, নীলা ইসরাফিল নিজেকে নিজে আঘাত করে আহত হয়েছেন। তিনি মানসিক রোগে আক্রান্ত, যার চিকিৎসাও এর আগে তিনি নিয়েছেন। সে কারণে তার মধ্যে এরকম প্রবণতা রয়েছে।
ওই দিনের (২৯ নভেম্বর-শুক্রবার) ঘটনা বর্ণনা করে মোয়াজ বলেন, “২০২১ সালের ২৮ এপ্রিল আমাদের ডিভোর্স হয়। বাবুদের কারণে কিছু যোগাযোগ তো থাকেই। বাচ্চাদের সঙ্গে দেখা করা ও তাদের বিনোদনের জন্য তিনি শুক্রবার বের হওয়ার পরিকল্পনা করেন। তাদের পাঁচ বছরের বড় সন্তানটিকে আনার জন্য তিনি ওই দিন নীলার বাসায় গাড়ি পাঠান। তিনি নিজের বাসায় গাড়িতে ওঠার সময় দেখেন গাড়িতে তার মাও (নীলা) রয়েছে। এরপর তারা ঢাকা ক্লাবে যান।“
সেখানে অবস্থানের এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে কিঞ্চিত কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বিষয়টি বাগবিতণ্ডায় গড়ায়।
মোয়াজের অভিযোগ, নীলা তখন খাবার খাওয়ার কাটলারির ছুরিটি নিয়ে নিজেকে আঘাত করে আহত করেন।
তার ভাষ্য, “পুরো ঘটনাটি আমি আমার মোবাইল দিয়ে ভিডিও করছিলাম। পরে নীলা আমার সেই মোবাইলটি ভেঙে ফেলে। আমাকে আঘাত করে, আমার শার্টও ছিড়ে ফেলে। পরে রেস্তোঁরার লোকেরা এসে তাকে থামানোর চেষ্টা করে।“
ওই রাতে মোয়াজ ঢাকা মেডিকেলে চিকিৎসা নিয়ে মোবাইল ভাঙার বিষয়ে রমনা থানায় জিডি করেন বলেও জানান।
মোবাইলে ভিডিওগুলো কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, “মোবাইলটা একেবারে ভেঙে ফেলেছে। ওটা একটা সার্ভিস সেন্টারে দিয়েছি ভিডিওগুলো রিকোভারি করার জন্য। ওরা সেটা করতে পারলেই পুরো ঘটনাটি পরিষ্কার হয়ে যাবে।”