সিদ্দিক বাজারের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ‘ঠেকনা’ দিয়ে তারপর তল্লাশি

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে ধ্বংসস্তূপ থেকে কংক্রিটের আবর্জনা সরানোর কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 March 2023, 03:19 PM
Updated : 8 March 2023, 03:19 PM

ঢাকার সিদ্দিক বাজারে বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনটিতে ‘আয়রন শোরিং’ বা ঠেকনা দিয়ে ধসে পড়ার ঝুঁকি কমিয়ে আনার পর সেখানে পুরোদমে তল্লাশি অভিযান শুরু করতে চায় ফায়ার সার্ভিস।

এ বাহিনীর পরিচালক (অপারেশন ও মেনটেইনেন্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সেনাবাহিনীর বিশেষাজ্ঞ দল ভবনটি ঘুরে দেখে শোরিং করাসহ কয়েকটি পরামর্শ দিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপ থেকে কংক্রিটের আবর্জনা সরানোর কাজ আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছেন তারা।

“তাদের পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে ফায়ার সার্ভিস প্রস্তুত রয়েছে। চলমান কিছু কাজ আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে।”

নর্থ সাউথ রোডের ১৮০/১ হোল্ডিংয়ের সাত তলা ক্যাফে কুইন ভবনে মঙ্গলবার বিকালে বিকট বিস্ফোরণ ঘটে। ভবনে থাকা বিভিন্ন দোকানের কর্মচারীদের পাশাপাশি সামনে রাস্তায় থাকা যানবাহনের যাত্রী ও পথচারীরাও হতাহত হন।

বিস্ফোরণে ওই ভবনের নিচের দুটি ফ্লোরের ছাদের একাংশ ধসে বেজমেন্টে পড়ে। ভবনটির কলাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নিচে নেমে তল্লাশি চালানো কঠিন হয়ে যায়। ফলে মঙ্গলবার রাত ১১টার দিকে সেখানে উদ্ধারকাজ স্থগিত করে ফায়ার সার্ভিস।

বুধবার সকাল থেকে ভবনের চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা ইট-কংক্রিট সরানোর কাজ শুরু হলেও নিচে নেমে উদ্ধার কাজ চালানো সম্ভব হচ্ছিল না। সে কারণে ডগ স্কোয়াড এনে মৃতদেহ খুঁজে বের করার চেষ্টা শুরু হয়। বিকালে বেজমেন্ট থেকে দুজনের মরদেহ উদ্ধার করা হলে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৯ জনে।

ফায়ার সার্ভিস অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান সে সময় বলেন, “উদ্ধার কাজে কোনো ভারী যন্ত্র আরা ব্যবহার করতে পারছি না। লক কাটার যন্ত্র ব্যবহার করে যতটা পারা যায় সেই চেষ্টা করছি। এদিকে বেজমেন্টে পানি জমে আছে। মেশিনের মাধ্যমে সেচে পানি কমানোর চেষ্টা হচ্ছে। এভাবে যতটা পারা যায় আমরা তল্লাশি চালিয়ে যাচ্ছি।”

বড় ধরনের এই বিস্ফোরণকে দুর্ঘটনা বলেই মনে করছেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো.মাইন উদ্দীন। ঢাকার পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকও বলেছেন, বিস্ফোরকের কোনো আলামত ঘটনাস্থলে তারা পাননি।

সেক্ষেত্রে আলোচনায় আসছে গ্যাস জমে বিস্ফোরণ ঘটার সম্ভাবনার কথা। তবে তদন্ত শেষ করার আগে এ বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে রাজি নন কেউ।

ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক মাইন উদ্দিন বুধবার সকালে বলেছিলেন, বেজমেন্টে তল্লাশি শুরুর আগে তারা সেনাবাহিনী এবং রাজউকের বিশেষজ্ঞদের মতামতের অপেক্ষায় আছেন। তাদের পরামর্শ পাওয়ার পর সে অনুযায়ী করণীয় নির্ধারণ করা হবে।   

এরপর দুপুরে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষাজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে মতামত দিয়েছেন বলে জানান ফায়ার সার্ভিসের গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।

তিনি বলেন, “আমরা পরবর্তী উদ্ধার অভিযান চালাতে প্রস্তত আছি। কিন্তু সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা পরবর্তী অভিযান চালানোর আগে বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। যেহেতু ভবনটি সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, সেজন্য নিচতলা বা বেজমেন্টে অভিযান চালাতে হলে স্টিলের শোরিং বা ঠেকনা দিতে হবে। এই ঠেকনা দেওয়ার পর আমরা কাজ শুরু করব।”

এই ঠেকনা দেওয়ার কাজটি ফায়ার সার্ভিস করবে না জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা সিটি কর্পোরেশনের কাজ। তাদের বলা হয়েছে। আমরা এখনো সিটি কর্পোরেশন থেকে কোনো সাড়া পাইনি।”

বিস্ফোরণের কারণে ছড়িয়ে থাকা কংক্রিটের আবর্জনা সরাতে সকালে কাজ শুরু হলেও সেনাবাহিনীর বিশেষাজ্ঞদের পরামর্শে পরে তা বন্ধ রেখেছে ফায়ার সার্ভিস।

তাজুল ইসলাম বলেন, “তারা জানিয়েছেন, এগুলো সরানো এ মুহূর্তে ঠিক হবে না। কংক্রিটের স্তূপগুলো সরাতে গেলে এখন ভবনের ভারসম্য নষ্ট হতে পারে, তাতে আরো বড় ধরনের বিপদ হতে পারে। সেজন্য এগুলো সরানোর কাজ আমরা বন্ধ রেখেছি।”

তিনি জানান, উদ্ধার অভিযানের বিষয়ে রাজউকের মতামতও চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে ঘটনার একদিন পরেও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।