পিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা বলেন, “শিক্ষকরা যে রিট করেছেন, সেটি এখানে এসে পৌঁছেছে। এটা নিয়ে কার্যক্রম চলমান আছে।”
Published : 05 Sep 2024, 12:49 AM
সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পরও গেজেটেড কর্মকর্তা হতে না পেরে পিএসসির সুপারিশে নিয়োগ পাওয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২২৫ জন প্রধান শিক্ষক নিজেদের ‘বঞ্চিত’ ভাবছেন।
এসব শিক্ষক ৩৪তম বিসিএসের নন-ক্যাডার হিসেবে ২০১৭ সালে নিয়োগ পেয়েছিলেন। তবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন (পিএসসি) এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘ঠেলাঠেলির কারণে’ এখনও তারা গেজেটভুক্ত হতে পারেননি।
গত সাত বছর ধরে তারা গেজেটভুক্ত হতে সংশ্লিষ্ট দফতরগুলোতে ঘুরছেন। অনেকেই আশ্বাস দিলেও এখনও তারা অধিকার থেকে ‘বঞ্চিত’। তারা দ্রুত এ অবস্থার অবসান চান।
শিক্ষকরা বলছেন, ক্যাডার পদের স্বল্পতার কারণে ৩৪তম বিসিএস থেকে ২০১৬ সালে নন-ক্যাডার পদে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিয়োগের সুপারিশ করে পিএসসি। এ ক্ষেত্রে নিয়োগবিধি ২০১০ (সংশোধিত ২০১৪) অনুযায়ী, প্রথম অথবা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদে পদায়নের সুপারিশ করার কথা ছিল।
কিন্তু নিয়ম ভেঙে সরাসরি তৃতীয় শ্রেণি ও নন-গেজেটেড পদে প্রধান শিক্ষকদের পদায়নের সুপারিশ করা হয়। নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন।
তবে পরে একই বিসিএসের ওই মেধা তালিকার পরের উত্তীর্ণদের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। তারা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (১০ গ্রেডের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ) এবং বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কেমিস্ট ও পরিদর্শক (১০ গ্রেডের দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ) হিসেবে নিয়োগ পান।
নিয়োগের নয় বছরের মধ্যে এসব কর্মকর্তা নবম গ্রেডে প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা হবেন। বিপরীতে নামে দ্বিতীয় শ্রেণি হলেও প্রধান শিক্ষকরা ১২তম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন এবং পরে তাদের সরাসরি পদোন্নতির আর কোনো সুযোগ নেই।
এ বৈষম্য দূর করে নিজেদের অধিকার আদায়ে আদালতে যাওয়ার কথা তুলে ধরেন ৩৪তম বিসিএস নন-ক্যাডার প্রধান শিক্ষক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও নওগাঁ সদরের খাস নওগাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মেজবাউল হক।
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে হাই কোর্টে ২২৫ শিক্ষক একটি রিট আবেদন করেন। ওই বছর ডিসেম্বরে রিটকারীদের মন্ত্রণালয়ের অধীনে দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদমর্যাদার সহকারী উপজেলা শিক্ষা কমর্কর্তা (বর্তমানে সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা) বা সমমানের অন্য পদে পদায়নের নির্দেশ দেয় আদালত।
সরকার ও পিএসসি রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ হাই কোর্টের রায় বহাল রেখে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এরপরও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং পিএসসি বিভিন্ন অজুহাতে রায় বাস্তবায়নে গড়িমসি করে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন রিটকারী ওই প্রধান শিক্ষক।
তিনি বলেন, অথচ সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বা সমমর্যাদার পদে ২২৫ জনের বিপরীতে এক হাজার পদ শূন্য রয়েছে। ফলে রায় বাস্তবায়নে পিএসসি বা মন্ত্রণালয়ের কারও সমস্যা থাকার কথা নয়।
“যেহেতু ১২তম গ্রেডে যোগদান করে গত সাত বছরে মোট সাতটি ইনক্রিমেন্ট পেয়েছেন প্রধান শিক্ষকরা, তাই তাদের বর্তমান বেতন গ্রেড সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা পদে যোগদানের সমান হয়ে গেছে।”
তিনি বলেন, “তাই নতুন পদে পদায়নের কারণে অতিরিক্ত আর্থিক বিষয় সংশ্লিষ্ট বা অর্থ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত কোনো জটিলতাও হবে না।”
এ বিষয়ে বুধবার দুপুরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিদ্যালয় অনুবিভাগের সহকারী সচিব জাকির হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পেয়েছি আমরা, সে মোতাবেক তাদের তো গেজেটেড হওয়ার কথা না। তারা নিয়োগ পেয়েছেন নন-গেজেটেড হিসেবে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী তারা দ্বিতীয় শ্রেণির পদমর্যাদার; কিন্তু নন-গেজেটেড।”
যদিও রিটকারী একজন শিক্ষক বলছেন, “এ বৈষম্যের অবসানে সমাধানে কেউ এগিয়ে আসছেন না। এক প্রতিষ্ঠান অন্য প্রতিষ্ঠানের ওপর দায় চাপিয়ে দায়িত্ব এড়িয়ে যায়। সর্বশেষ আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ বৈষম্য নিরসনে একটি নির্দেশনা দেন। তবুও তা দীর্ঘদিন আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে আছে। বিসিএসে উত্তীর্ণ হওয়ার পরও আমরা নন-ক্যাডার ২০১৪ নিয়োগবিধি অনুযায়ী শুধু সাংবিধানিক প্রাপ্যতা দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ চেয়েছি, এর বেশি কিছু নয়। এটা সুস্পষ্ট, আমরা যারা কর্মরত, তার চেয়ে প্রায় চারগুণ দ্বিতীয় শ্রেণির গেজেটেড পদ শূন্য রয়েছে।”
ভুক্তভোগী আরেক প্রধান শিক্ষক মো. সজিবুল হাসান বলেন, “আমাদের সঙ্গে চরম বৈষম্য করা হয়েছে। একই বিসিএসে মেধা তালিকায় আমাদের পরে থেকেও দশম গ্রেড গেজেটেড পদে পদায়ন করা হয়েছে। অথচ আমাদের নন-গেজেটেড ১২তম গ্রেডে রাখা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “উচ্চ আদালতের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের রায় থাকা সত্ত্বেও বৈষম্য নিরসন করে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের-বিপিএসসির জনসংযোগ কর্মকর্তা এস এম মতিউর রহমান বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষকরা যে রিট করেছেন, সেটি এখানে (দপ্তরে) এসে পৌঁছেছে। এটা নিয়ে কার্যক্রম চলমান আছে। তবে, এখনও গেজেটেড হওয়ার বা এ সংক্রান্ত কোনো নির্দেশনা আসেনি। আসলে জানাতে পারব।”