টিকেটে দাম কমানো ও বুকিংয়ের ক্ষেত্রে কড়া তদারকি ও কঠোর নিয়ম বেঁধে দেওয়ার সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সংগঠনটি।
Published : 23 Mar 2025, 10:17 PM
উড়োজাহাজের টিকেটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধির লাগাম টানতে সরকারের ১০ দফা নির্দেশনার পর সৌদি আরবের ভাড়া ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত কমার তথ্য দিয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব)।
কড়া তদারকি ও কঠোর নিয়ম বেঁধে দেওয়ায় আসনও সহজলভ্য হয়েছে তুলে ধরে সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে সংগঠনটি।
রোববার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে তার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সরকারি এই পদেক্ষেপের প্রশংসা করেছে আটাবের একটি প্রতিনিধি দল।
পরে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে দেওয়া এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকালে আটাব মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ বিমানের টিকিট সহজলভ্য ও কম দামে সরবরাহ নিশ্চিত করতে সরকারের কাছে বেশ কিছু প্রস্তাব তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের আইনে এয়ারলাইন্সগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) রাখার যে বিধান রাখা হয়েছে তাতে এই খাতে ‘সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ’ সৃষ্টি হয়েছে।
এর ফলে যাত্রীরা যেমন বেশি দামে টিকিট কিনতে বাধ্য হচ্ছেন তেমনই ভোগান্তিও বাড়ছে।
আটাবের সভাপতি আব্দুস সালাম আরেফ পাঁচ সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
তিনি বলেন, সম্প্রতি যাত্রীদের পাসপোর্টের তথ্য ছাড়া টিকিট বুকিং পদ্ধতি বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্তের ফলে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ও যাত্রী হয়রানি বন্ধ হয়েছে।
সালাম আরেফ বলেন, এখন সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে কোনো প্রতিষ্ঠান যেন এই আইনের ব্যত্যয় ঘটাতে না পারে।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী বলেন, “আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের নেতৃত্বে বৈঠকে সকল সমস্যা শুনে সেগুলো সমাধানের পথ খুঁজে বের করে নতুন সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল। এখন এই সিদ্ধান্ত যাতে কেউ উপেক্ষা করতে না পারে তার জন্য আমরা কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করছি।”
তিনি বলেন, ২০১৭ সালের আইন পরিবর্তনের পক্ষে তার মত রয়েছে এবং আইন ও বিধি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনের জন্য আটাবকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠকের পরামর্শ দেন।
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় গত ১১ ফেব্রুয়ারি আকাশপথে টিকেটের মূল্য কমাতে ১০ দফা নির্দেশনা জারি করে। এতে টিকেট বুকিংয়ের পর ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তা বরাদ্দ করা না হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বুকিং বাতিল করতে বলা হয়।
পাশাপাশি গ্রুপ বুকিংয়ের নামে কোনো এয়ারলাইন্সের অনেকগুলো টিকেট একসঙ্গে ব্লক করা হলে পরের সাত দিনের মধ্যে যাত্রীর নাম, পাসপোর্ট নম্বরসহ তা বিক্রি নিশ্চিত করার তথ্য দিতে বলা হয়। তা না হলে পরের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে সেসব টিকেট স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল করতে হবে এয়ারলাইন্সকে।
যাত্রীর নাম, পাসপোর্টের বিবরণ ও পাসপোর্টের ফটোকপি দিয়ে টিকেট বুকিংয়ের নির্দেশনার ফলে যেসব টিকেট নাম ছাড়া ‘ব্লক’ করে রাখা হত সেগুলো এয়ারলাইন্সগুলো ‘ওপেন’ করে দেয়।
ফলে কম্পিউটার রিজারভেশন সিস্টেমে আসন সহজলভ্য হয়ে যায়। এতে এখন ট্রাভেল এজেন্সি ও যাত্রীরা ফ্লাইটে আসন খালি আছে কি না এবং কত ভাড়া তা অনলাইনে দেখতে পারছেন। সব দেখেশুনে চাহিদা মত টিকেট বুকিং করতে পারছেন যাত্রী ও এজেন্সিগুলো।
এই পরিবর্তনের ফলে বাজারে টিকেটের যে কৃত্রিম সংকট ছিল তা কমে গেছে, ফ্লাইটের আসন সহজলভ্য হয়েছে এবং এয়ারলাইন্সগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা বাড়ায় টিকেটের দাম কমে এসেছে।
আটাবের হিসাব অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে ঢাকা থেকে জেদ্দা, মদিনা, দাম্মাম রুটে টিকেটের মূল্য গ্রুপ নামেই প্রায় ১ লাখ টাকায় বিক্রি হত এবং কম্পিউটার সিস্টেমে এটা প্রায় ১ লাখ ৭০ থেকে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকায় ঠেকেছিল।
সৌদি এয়ারলাইন্সে ১ লাখ ৯০ হাজার টাকা পর্যন্ত উচ্চমূল্যের রেকর্ড ছাড়িয়েছিল। সরকারের জারি করা নির্দেশনার ফলে বর্তমানে এসব টিকেট কম্পিউটার রিজার্ভেশন সিস্টেমে ৪৮ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে।
কোনো কোনো এয়ারলাইন্স ঢাকা-দাম্মাম, ঢাকা-রিয়াদ এর টিকেট ৩৫ হাজার টাকাতেও বিক্রি করছে।