ভারতের সঙ্গে বৈঠকে অগ্রাধিকার ইস্যুগুলো নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানান তিনি।
Published : 22 Nov 2023, 10:42 PM
দিল্লিতে অবস্থান করে বাংলাদেশের জন্যও দায়িত্বপ্রাপ্ত এমন ৯০টি দেশের মিশনপ্রধানদের কাছে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে অবহিত করবেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন; সফরকালে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গেও নির্বাচনসহ দ্বিপক্ষীয় বিষয়ে আলোচনা হবে তার।
বুধবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সচিব মাসুদ বিন মোমেন সাংবাদিকদের এ সফরের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। প্রশ্নোত্তরে বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে এ সফরের নানান বিষয় উঠে আসে।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশে কনকারেন্টলি অ্যাক্রেডিটেড প্রায় ৯০টা দূতাবাস আছে দিল্লিতে। তাদের সাথে আমি মিলিত হব একটা ইন্টার্যাক্টিভ সেশনে এবং সেখানে আমরা এই সমস্ত মিশন প্রধানদেরকে আমাদের উন্নয়নের যে অগ্রগতি সেগুলো আমরা ব্রিফ করব।
“পাশাপাশি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি, আসন্ন জাতীয় নির্বাচন, বিশেষ করে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সরকারের প্রতিশ্রুতি এবং নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতি নিয়ে তাদেরকে ব্রিফ করব।”
শুক্রবার নয়া দিল্লিতে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব বিনয় মোহন কোয়াত্রার সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় ‘ফরেন অফিস কনসালটেশন’ (এফওসি) করবেন মাসুদ বিন মোমেন।
ওই বৈঠকের আগের দিন বৃহস্পতিবার দিল্লি যাবেন পররাষ্ট্র সচিব। এদিন সেখানে ৯০ দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাই কমিশনারদের সঙ্গে তার ব্রিফিংয়ের সূচি ঠিক করা রয়েছে।
পররাষ্ট্র সচিব জানান, পর্যবেক্ষক পাঠানোর বিষয়ে কোনো প্রশ্ন থাকলে, সেটার উত্তর দেওয়ারও সুযোগ সেখানে থাকবে। সরকারের কার্যক্রম ও বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রকাশনাও কূটনীতিকদের হাতে তুলে দেওয়া হবে
রাষ্ট্রদূতদের ব্রিফ করার বিষয়ে তিনি বলেন, তারা হয়ত সংবাদমাধ্যম, নিউজ পোর্টাল বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক খবর পান। কিন্তু বাংলাদেশের সরকারের প্রতিনিধি হিসেবে বা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বৈঠকে বিভিন্ন বিষয়ে তুলে ধরা হবে।
ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অর্গানাইজেশনে (আইএমও) বাংলাদেশের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারও সেখানে চালানো হবে বলে জানান মাসুদ বিন মোমেন।
ভারতের সঙ্গে আলোচনায় কী
এফওসির বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “এটা আমাদের রুটিন ম্যাকানিজম, যেটা আমরা সবসময় করে থাকি। এবং সেখানে দুদেশের সমস্ত বিষয় নিয়েই আমরা আলোচনা করি। এবং ভারতের সাথেও আমাদের এই বৈঠকে আমাদের অগ্রাধিকার ইস্যু যেগুলো আছে, সেগুলো নিয়ে কথা হবে।”
তিনি বলেন, অগ্রাধিকার ইস্যু হিসেবে রাজনৈতিক, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, যোগাযোগ, জ্বালানি, বিদ্যুৎ, অভিন্ন নদী, উন্নয়ন সহায়তা, প্রকল্প, কনস্যুলার, সংস্কৃতি সহযোগিতাসহ আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক এবং বহুপক্ষীয় বিষয় নিয়ে বৈঠকে আলোচনা হবে।
বৈঠকের এজেন্ডার প্রথমটি রাজনীতি, সেটাতে কী আছে-এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, “সেই পার্টটা, ওই যে বললাম, ওদেরও ইলেকশন আছে সামনে। সুতরাং আমাদের ইলেকশন আছে এবং ইলেকশন পূরবর্তী এবং ইলেকশন পরবর্তী আমাদের দুদেশের মধ্যে যে সম্পর্ক, এটাতো খুব বহুমুখী সম্পর্ক ভারতের সাথে, বাণিজ্য-বিনিয়োগ আছে, জনগণের মধ্যে যোগাযোগ, ভিসা সংক্রান্ত বিষয় আছে…
“তো, এগুলোর যাতে যাতে সাবলীলভাবে, এখানে ইলেকশন যাতে কোনোভাবে ইয়ে না করতে পারে, সেটাই হয়ত আমাদের আলোচনায় আসবে।”
নির্বাচনের আগ মুহূর্তে প্রতিবার পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের একটি বৈঠক হয়, সে রকম কোনো বৈঠক কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “নির্বাচনের এখনও দেরি আছে, এই বছর না আগামী বছর।”
সাধারণত প্রতিবছর একবার ফরেন অফিস কনসালটেশন বা এফওসি হলেও চলতি বছর দ্বিতীয়বার হচ্ছে। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় সর্বশেষ এফওসি অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো হওয়ার বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “অগ্রগতি পর্যালোচনার করার জন্য যেতেই পারি। যদিও বছরে একবার হতে পারে। তবে এমন কোথাও কোনো বলাও নাই, একাধিকবার হবে না। বছরের প্রথমে হয়েছে, এখন আবার বছরের শেষ হচ্ছে। এবং এর মধ্যে প্রচুর অগ্রগতি হয়েছে।”
শ্রম অধিকার নিয়ে বিশ্বব্যাপী কাজ করার যে ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্র দিয়েছে, তা নিয়ে দিল্লিতে আলোচনা হবে কি না, জানতে চাইলে মাসুদ বিন মোমেন বলেন, সাধারণত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তৃতীয় দেশের বিষয়ে আলোচনার সুযোগ কমই আছে। তবে অনানুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি যদি উনারা আলোচনার জন্য তোলেন, সেক্ষেত্রে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু তৃতীয় দেশ নিয়ে সাধারণত আলোচনা হয় না।”
সফরে প্রধানমন্ত্রীর কোনো রাজনৈতিক বার্তা ভারতে নিয়ে যাচ্ছেন কি না এ প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, “স্বাভাবিকভাবে যেহেতু সামনে নির্বাচন আছে, সুতরাং তাদের পক্ষ থেকে যদি কোনো কিছু জানার থাকে, আমি অবশ্যই সেটা তাদেরকে অবহিত করতে পারব।
“আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর থেকে আলাদা করে কোনো বার্তা নিয়ে যাওয়া বা এগুলার কিছু আমাদের এজেন্ডাতে নাই।”
নির্বাচনে যেহেতু ক্ষমতা পরিবর্তন সুযোগ থাকে, তাহলে নীতিগত পরিবর্তন হয়ত হতে পারে, সেক্ষেত্রে সফরটি আগাম ও সাহসী হয়ে যাচ্ছে কি না-এমন প্রশ্নে সচিব বলেন, “দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক তো ধারাবাহিক অবস্থায় রয়েছে। সুতরাং এটার সঙ্গে সরকার পরিবর্তনের আমি সম্পর্ক দেখছি না।”
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব নির্বাচনের আগে ঢাকা সফর করতে পারেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এটা বলতে পারছি না।”
রাজনৈতিক সফর বলা যায় কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “পলিটিক্যাল ব্যাখ্যা কীভাবে দেবেন, জানি না। তবে, আমি মনে করি, এটা আমাদের যে রেগুলার মিটিং হয়, এটাও সেভাবে হবে।”