শতকরা হিসেবে শহরের চেয়ে গ্রামে নারী প্রধান পরিবার বেশি।
Published : 13 Apr 2023, 10:13 PM
নারী-পুরুষের ব্যবধান কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে গত দুই বছর বছর ধরে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের অধোগতির মধ্যে এবার দেশে নারী প্রধান পরিবারের সংখ্যা আরও কমে আসার তথ্য পাওয়া গেল।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপের ফলাফল বলছে, ২০১০ সালে দেশে প্রায় ১৩ দশমিক ৯ শতাংশ পরিবারের প্রধান ছিলেন নারী। ধারাবাহিকভাবে কমতে কমতে এখন তা ঠেকেছে ১২ দশমিক ৬০ শতাংশে।
পরিবারের আয়, ব্যয়সহ সামগ্রিক বিষয়ের তথ্য জানতে চালানো সবশেষ খানা জরিপের যে তথ্য বিবিএস বুধবার প্রকাশ করেছে, তাতে এই বিষয়টির উল্লেখ আছে।
এর আগের সবশেষ জরিপ ২০১৬ সালেও আগের বারের তুলনায় নারী প্রধান পরিবারের সংখ্যা কমেছিল ০.৮ শতাংশ। সে বছর মোট পরিবারের ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশের প্রধান ছিল নারী।
এই জরিপ অনুযায়ী শতকরা হিসেবে শহরের চেয়ে গ্রামে নারী প্রধান পরিবার বেশি।
শহরে ১২ দশমিক ২০ শতাংশ পরিবারের প্রধান নারী, গ্রামে এই হার ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ।
২০১৬ সালে শহরে নারী প্রধান পরিবার ছিল ১২ দশমিক ৭০ শতাংশ, গ্রামে তা ছিল ১৩ দশমিক ৩০ শতাংশ।
২০১০ সালে শহরের পরিবারগুলোর ১১ দশমিক ২০ শতাংশের সিদ্ধান্ত গ্রহণের কেন্দ্রে ছিলেন নারী। গ্রাম এলাকায় তা ছিল ১৪ দশমিক ৯০ শতাংশ।
নারী-পুরুষ ব্যবধান: ডব্লিউইএফ সূচকে পিছিয়েছে বাংলাদেশ
এই প্রবণতাটি লিঙ্গ সমতার দিক দিয়ে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের বড় অবনমনের ধারাবাহিকতা পাওয়া গেল।
২০২২ সালের জুলাইয়ে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম প্রকাশিত ‘গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ৬ ধাপ পিছিয়ে বিশ্বের ১৪৬টি দেশের মধ্যে ৭১ নম্বরে নেমে যায়।
আগের বছর তালিকায় বাংলাদেশ ছিল ৬৫ নম্বরে। তারও আগের বছর বাংলাদেশের অবস্থান ছিল ৫০ নম্বরে।
বৈশ্বিক অধোগতির মধ্যেও দক্ষিণ এশিয়ায় এখনও সামনেই রয়েছে বাংলাদেশ। এই তালিকায় নেপালের অবস্থান ৯৬তম, মিয়ানমারের ১০৬, শ্রীলঙ্কার ১১০, মালদ্বীপের ১১৭, ভুটানের ১২৬, ভারতের ১৩৫, পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৫ এবং আফগানিস্তানের ১৪৬।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম তাদের এই লিঙ্গ সমতা সূচক প্রকাশ করে আসছে ২০০৬ সাল থেকে। অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ, শিক্ষার সুযোগ, স্বাস্থ্য সেবাপ্রাপ্তি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতায়ন- এই চার মাপকাঠিতে নারী-পুরুষের বৈষম্য বিবেচনা করে এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়।
নারী প্রধান পরিবার কেন কমল?
২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৪ হাজার ৪০০ পরিবারের উপর জরিপ করে পরিসংখ্যান ব্যুরো ফলাফল প্রকাশ করেছে।
নারী প্রধান খানার সংখ্যা কেন কমছে, তার কোনো তথ্য তাদের জরিপে আসেনি বলে জানান ‘খানা আয় এবং ব্যয় জরিপ-২০২২’ নামে এই প্রকল্পের পরিচালক মহিউদ্দিন আহমেদ।
তবে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তবে দেশের সাম্প্রতিক অর্থনীতির গতিবিধি দেখে আমাদের মনে হচ্ছে, গ্রাম থেকে আয় করতে শহরে আসা অনেক পুরুষ কোভিড-১৯ এর সময় গ্রামে ফিরে গেছেন। এই সময়ে অনেক প্রবাসী দেশে ফিরে এসে স্থায়ীভাবে দেশে থাকছেন, হয়ত তার সন্তানকে আবার বিদেশ পাঠাচ্ছেন। এভাবেই হয়ত পরিবারের প্রধান হিসেবে নারীর সংখ্যা কমে আসছে।”
এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উইম্যান অ্যান্ড জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগের অধ্যাপক সৈয়দ মো. শেখ ইমতিয়াজ মনে করেন, এই বিষয়টি নিয়ে বিশ্লেষণধর্মী একটি কাজ করা দরকার।
তিনি ব্যক্তিগত ধারণা তুলে ধরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কয়েক বছর ধরে দেশের অনেক নারী শ্রমিক বিদেশ যাচ্ছে। হয়ত এ কারণে এবারের জরিপে নারী প্রধান খানার সংখ্যা কিছুটা কমেছে।”
বিবিএসের জরিপের নমুনা সংখ্যাকে ‘কম’ উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের অধ্যাপক আবু ইউসুফ বলেন, “আমাদের এত বিপুল জনসংখ্যার দেশে মাত্র ১৪ হাজার ৪০০ নমুনা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এটা খুবই অপ্রতুল। তাই এই জরিপ থেকে প্রাপ্ত তথ্য নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে আসা সহজ হবে না।”
২০১০ সালের জরিপেও প্রায় ৪৫ হাজার নমুনা নেওয়া হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, “নমুনা এবং তথ্য সংগ্রহের অঞ্চল বাড়ালে আরও সঠিক তথ্য পাওয়া যেতে পারে।”