বিচারক বলেছেন, ছয়জনের ক্ষেত্রে অভিযোগের প্রমাণ না মেলায় তাদের মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
Published : 02 Sep 2024, 08:22 PM
আলোচিত ইসলামী বক্তা মো. আমির হামজাসহ ছয়জনকে শেরেবাংলা নগর থানার সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়েছে আদালত।
তবে এ মামলার অপর আসামি মো. আল সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে তার বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান। সেই সঙ্গে সাকিবকে জামিনও দেওয়া হয়েছে।
সোমবার ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে এই মামলার মামলার অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। এ মামলার সাত আসামির মধ্যে জামিনে থাকা মো. আমির হামজা, হারুন ইজাহার চৌধুরী, মো. আব্দুল্লাহ, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আনোয়ার হোসেন এবং আলী হাসান উসামা আদালতে উপস্থিত হয়ে অব্যাহতির আবেদন জানান।
তাদের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, সাকিব ছাড়া অন্য কোনো আসামি ঘটনাস্থল থেকে গ্রেপ্তার হননি এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘প্রমাণিতও হয়নি’।
কারাগারে থাকা সাকিবকেও এদিন আদালতে হাজির করা হয়। তার পক্ষে আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন।
শুনানিতে সাকিবের আইনজীবী বলেন, তার মক্কেলের কাছ থেকে একটি মোবাইল, একটি ছোরা, কালো পতাকা এবং একটি রুমাল উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি ইতোমধ্যে তিন বছর চার মাসের বেশি সময় ধরে কারাগারে আছেন। দীর্ঘ হাজতবাস বিবেচনায় তাকে জামিন দেওয়া হোক।
শুনানি শেষে জামিনে থাকা ছয় আসামিকে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন বিচারক। সেই সঙ্গে তিনি সাকিবের জামিন মঞ্জুর করেন।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ২০২১ সালের ৫ মে ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে’ সাকিবকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার দেহ তল্লাশি করে অস্ত্র ও অন্যান্য আলামত উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আল সাকিব বলেন, তিনি বিভিন্ন উগ্রবাদী ভিডিও দেখে আকৃষ্ট হন এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত আনসার আল ইসলামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর হামলার পরিকল্পনা করেন।
সাকিব ফেইসবুকে ‘শহীদি মৃত্যুর অপেক্ষায় (জিহাদী তামান্না)’ নামে একটি আইডি ব্যবহার করতেন, যেখানে তিনি উগ্রবাদী বক্তব্য প্রচার ও অন্যদের হামলায় অংশগ্রহণের আহ্বান জানাতেন। তার মোবাইল ফোনের ফরেনসিক পরীক্ষায় উগ্রবাদী বার্তা আদান-প্রদানের প্রমাণ পাওয়ার কথা সে সময় পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
মামলার তদন্ত শেষে ২০২৩ সালের ২১ সেপ্টেম্বর ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইনভেস্টিগেশন বিভাগের পরিদর্শক কাজী মিজানুর রহমান আদালতে সাকিবের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
সেখানে বলা হয়, ঘটনার দিন সাকিব জাতীয় সংসদ ভবনের পাশে পুলিশের ওপর হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।
সোমবার অভিযোগ গঠনের শুনানিতে আদালত অভিযোগ পড়ে শোনালে সাকিব নিজেকে নির্দোষ দাবি করে ন্যায়বিচার চান।
শুনানি শেষে বিচারক তার আদেশে বলেন, আসামি আলী হাসান উসামার কাছ থেকে ল্যাপটপ, আইপ্যাড, ক্যামেরা, মোবাইল, এবং বইসহ বিভিন্ন ডিজিটাল ডিভাইস উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু ফরেনসিক পরীক্ষার প্রতিবেদনে সন্ত্রাস বিরোধী আইনে কোনো অপরাধের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। আসামি আমির হামজা এবং আব্দুল্লাহর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও কোনো অপরাধের স্বীকারোক্তি পাওয়া যায়নি।
“সবকিছু বিবেচনা করে আসামি আমির হামজা, হারুন ইজাহার চৌধুরী, মো. আব্দুল্লাহ, মাহমুদুল হাসান গুনবী, আনোয়ার হোসেন এবং আলী হাসান উসামাকে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের আওতায় থাকা অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হল।
“অন্যদিকে মো. আল সাকিবের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস বিরোধী আইনের ৬(২)(আ), ৮ ধারার অধীনে অভিযোগের উপাদান বিদ্যমান থাকায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হল।”
এ মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২০ অক্টোবর দিন রেখেছেন বিচারক। সেদিন থেকে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হবে।
পুরনো খবর