“সরকার যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা আয়োজনের অনুমতি না দেয়, তাহলে সবাই মিলে সরকারকে বোঝাতে হবে যে বইমেলা এখানে না হলে গুরুত্ব হারাবে।”
Published : 12 Nov 2024, 05:01 PM
আসছে ফেব্রুয়ারি মাসে অমর একুশে বইমেলা আয়োজনের জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বরাদ্দ পায়নি বাংলা একাডেমি। সেক্ষেত্রে আগামী মেলার আয়োজন কোথায় কীভাবে হবে, সে প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় গত ৬ নভেম্বর বাংলা একাডেমিকে চিঠি দিয়ে বলেছে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিবর্তে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণেই 'অমর একুশে বইমেলা, ২০২৫' আয়োজন করতে হবে।
তবে একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বলছেন, তারা আবারও চেষ্টা করবেন যেন বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই করা যায়।
১৯৭২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে বাংলা একাডেমির গেইটে চট বিছিয়ে বই বিক্রি শুরু করেন প্রকাশনা সংস্থা মুক্তধারা’র প্রতিষ্ঠাতা চিত্তরঞ্জন সাহা।
১৯৭৪ সালে বাংলা একাডেমির একুশের অনুষ্ঠানমালার সাথে সঙ্গতি রেখে একাডেমির ভেতরে ছোট একটি স্টল স্থাপন করে বই বেচে মুক্তধারা। ১৯৭৭ সালে মুক্তধারার সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দেয়, সেই থেকে একুশে বইমেলার সূচনা।
১৯৭৮ সালে বাংলা একাডেমির তৎকালীন মহাপরিচালক আশরাফ সিদ্দিকী একাডেমিকে এ বইমেলার সঙ্গে সম্পৃক্ত করেন। এর পরের বছরই বাংলাদেশ পুস্তক বিক্রেতা ও প্রকাশক সমিতি মেলার সঙ্গে যুক্ত হয়।
মনজুরে মওলা বাংলা একাডেমির মহাপরিচালকের দায়িত্বে থাকার সময় ১৯৮৩ সালে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নামে এ মেলা আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হলেও তা করা যায়নি। পরের বছর থেকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সূচনা হয় ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা।
১৯৮৪ সাল থেকে বাংলা একাডেমি সুনির্দিষ্ট নীতিমালার আলোকে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা’ নাম দিয়ে ধারাবাহিকভাবে মেলা পরিচালনা করছে। ২০২১ সাল থেকে মেলার প্রাতিষ্ঠানিক নামকরণ করা হয় ‘অমর একুশে বইমেলা’।
মেলা শুরু থেকেই একাডেমি প্রাঙ্গণে হয়ে এলেও ধীরে ধীরে পরিসর বাড়তে থাকায় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে আর জায়গা সংকুলান হচ্ছিল না। পরে একাডেমির সামনের সড়কেও বইমেলার স্টল বরাদ্দ দেওয়া হয়।
২০১৪ সালে সৃজনশীল প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বরাদ্দ দেওয়া হয় এবং সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থাকে বরাদ্দ দেওয়া হয় বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। তবে মেলার মূল মঞ্চ এবং তথ্যকেন্দ্র রাখা হয় একাডেমি প্রাঙ্গণেই।
বিগত এক দশক ধরে বাংলা একাডেমি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হচ্ছে বইমেলা। চলতি বছর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্রায় সাড়ে ১১ লাখ বর্গফুট জায়গাজুড়ে বসে বইমেলার আয়োজন।
তবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল গত মেলার সময়ই। উদ্যান ঘিরে সাংস্কৃতিক বলয় তৈরির অংশ হিসেবে মার্চ মাস থেকে কিছু প্রকল্পের কাজ শুরুর পরিকল্পনা করেছিল গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। সে কারণে ২০২৫ সালের বইমেলার জন্য তারা উদ্যানের জায়গা বরাদ্দ দেবে না বলে প্রাথমিকভাবে জানিয়ে দিয়েছিল। বইমেলা বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে পূর্বাচলে নিয়ে যাওয়া হবে বলেও গুঞ্জন রটে।
গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরেনি; গত ৬ নভেম্বরের চিঠিতে সে কথাই স্পষ্ট করা হয়েছে।
তাহলে আগামী মেলার আয়োজন কীভাবে হবে জানতে চাইলে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক মোহাম্মদ আজম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অবশ্যই চাইব বইমেলা যেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানেই হয়। সেজন্য আমরা আবারও চেষ্টা করব।”
বাংলা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক আবুল কাসেম ফজলুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তো জানি না এরকম কোনো সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা। তবে সরকার যদি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বইমেলা আয়োজনের অনুমতি না দেয়, তাহলে সবাই মিলে সরকারকে বোঝাতে হবে যে বইমেলা এখানে না হলে গুরুত্ব হারাবে।
“বইমেলা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজন করলেই ভালো। এটা লেখক, প্রকাশকসহ বইমেলা সংশ্লিষ্ট যারা আছেন, তারা সবাই মিলে সরকার বোঝালে আশা করি সিদ্ধান্ত পাল্টাবে।”
পুরনো খবর