সরকারের পতনের পর থেকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত মামলা হয়েছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে ঢাকায়।
Published : 25 Aug 2024, 09:52 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলার মধ্যে তার বিরুদ্ধে হত্যার আরও দুটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
ঢাকার মহানগর হাকিম সাদ্দাম হোসেনের আদালতে রোববার দুটি অভিযোগ আসে, যার একটিকে মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অপর অভিযোগে এর আগে থানায় মামলা হয়েছে কি না, তা খুঁজে দেখার নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
টিসিবি পণ্য বিক্রেতা হত্যা
কোটা আন্দোলন চলাকালে যাত্রাবাড়ীর শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গুলিতে প্রাণ যায় টিসিবির পণ্য বিক্রেতা মো. ইউসুফ সানোয়ারের।
এ ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ২৮ জনের বিরুদ্ধে রোববার ঢাকার মহানগর হাকিম সাদ্দাম হোসেনের আদালতে মামলা করেছেন নিহতের শ্যালক মামুনুর রশীদ।
আদালত বাদীর জবানবন্দি নিয়ে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে।
শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী তাজুল ইসলাম ও কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাব্বত আলীকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, গত ২০ জুলাই দুর্ঘটনায় ইউসুফের ছোট ভাইয়ের হাত কেটে যায়। ঢাকা মেডিকেলে ভাইয়ের চিকিৎসা শেষে ইউসুফ শনির আখড়া বাসস্ট্যান্ডে আসেন। আন্দোলনের মধ্যে সেখানে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা তাকে ধাওয়া করে। এরপর পুলিশ ও আওয়ামী লীগের কর্মীদের গুলিতে তিনি আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে।
সাংবাদিক মেহেদী হত্যা
কোটা আন্দোলনকালে গুলিতে প্রাণ যায় ঢাকা টাইমস পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেদী হাসানের। এ ঘটনায় রোববার মেহেদীর খানা রিজিয়া বেগম ঢাকার মহানগর হাকিম সাদ্দাম হোসেনের আদালতে মামলার আবেদন করেন।
শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলার আবেদন করেছেন তিনি। পরে তার জবানবন্দি নিয়ে একই ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়েছে কি না, তা যাত্রাবাড়ী থানাকে খুঁজে দেখতে বলেছে আদালত। বিষয়টি নিয়ে এ থানার ওসিকে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
মামলার আবেদনে আসামির তালিকায় শেখ হাসিনা ছাড়াও রয়েছেন- সাবেক সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনু, সাবেক শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন, পুলিশের সাবেক আইজিপি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ।
মামলার আবেদনে উত্তর যাত্রাবাড়ীর বাসিন্দা রিজিয়া বেগম বলেন, গত ১৮ জুলাই বিকালে কোটা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করছিলেন মেহেদী হাসান। মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের ওপর কাজলা টোল প্লাজার পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেসময় পুলিশ ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে তিনি আহত হন। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঢাকা টাইমসের সাংবাদিক মেহেদী দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বিটে কাজ করতেন। কেরাণীগঞ্জ এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার সাত মাস ও চার বছর বয়সী দুটি মেয়ে আছে। গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার হোসনাবাদে।
ছাত্রজনতার প্রবল আন্দোলনে গত ৫ অগাস্ট শেষ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে তার বিরুদ্ধে প্রায় অর্ধশত মামলা হয়েছে, যার বেশিরভাগই হয়েছে ঢাকায়।