আদালতে দুই কিশার জবানবন্দি দিয়েছে, আরেকজনকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
Published : 21 Dec 2024, 12:37 AM
কেরাণীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিঞ্জিরায় শাখায় তিন কিশোর-তরুণের হানা দেওয়ার ঘটনায় প্রাথমিক পর্যায়ে কিডনি রোগীরা টাকা যোগাড়ের জন্য ডাকাতির করতে যাওয়ার যে তথ্য পুলিশকে তারা দিয়েছিল তা যাচাই করে প্রমাণ পায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এখন পুলিশ বলছে, ‘নকল পিস্তল’ হাতে ব্যাংকে ঢুকে পড়া এই কিশোর-তরুণেরা ‘আইফোন কেনার টাকা যোগাড়’ করতে এক মাস আগে পরিকল্পনা করে ব্যাংকে ডাকাতি করতে যায়।
দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানার ওসি মাজহারুল ইসলাম শুক্রবার এসব তথ্য দিয়েছে।
এদিন তাদের তিনজনকে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাদের মধ্যে দুই কিশোর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। অন্যজনকে রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।
বৃহস্পতিবার দুপুর ২টার দিকে কেরাণীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকায় রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় একদল সশস্ত্র ডাকাতের হানা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। তারা ব্যাংকের ১০ জন কর্মী ও একটি শিশুসহ ছয়জন গ্রাহককে ভেতরে ‘জিম্মি’ করে। পরে সন্ধ্যায় ডাকাতরা আত্মসমর্পণ করলে তাদের হেফাজতে নেয় নিরাপত্তা বাহিনী। অক্ষত অবস্থায় বের করে আনা হয় ‘জিম্মিদের’।
পরে দেখা যায় গ্রেপ্তার ডাকাতদের মধ্যে দুজন ১৬ বছরের কিশোর। আর নীরব নামের একজনের বয়স ২২, তিনি পেশায় গাড়িচালক।
এ ঘটনায় রাতেই ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা দস্যুতার (৩৯৪ ধারা) অভিযোগে তিনজনকে আসামি করে দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করার তথ্য দিয়েছেন ওসি মাজহারুল।
এক প্রশ্নে তিনি বলেন, “ডাকাতি ও দস্যুতার মধ্যে বেসিক পার্থক্য হচ্ছে আসামির সংখ্যা। আসামির সংখ্যা পাঁচজন হলে ডাকাতি মামলা হতো।”
কেন তারা সেখানে ডাকাতি করতে গিয়েছিল জানতে চাইলে ওসি বলেন, “আসলে তারা বিভিন্ন ফ্যান্টাসির কারণে ও আইফোন কিনতে হবে এজন্য টাকা প্রয়োজন সে কারণে তারা সেখানে দস্যুতা করতে যায়। আনুমানিক এক মাস আগে থেকে তারা এই পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়েছে। কয়েক দফায় বিভিন্ন জায়গায় মিটিং করেছে।”
বৃহস্পতিবার তারা পুলিশকে বলেছিল একজন দুস্থ কিডনি রোগীর জন্য অর্থ সংগ্রহে তারা ব্যাংকে ডাকাতি করতে গিয়েছে। এর সত্যতা পাওয়া গেছে কী না জানতে চাইলে ওসি বলেন, “এই তথ্যের সত্যতা এখনো পাওয়া যায়নি। তবে আইফোন কিনতে তাদের টাকার প্রয়োজন ছিল, সেটার সত্যতা পাওয়া গেছে।”
ওইদিন সন্ধ্যায় কেরাণীগঞ্জ মডেল থানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার আহম্মেদ মুঈদ বলেছিলেন, “তাদের অনেকক্ষণ ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। মনে হয়েছে বিভিন্ন মুভি-টুভি এসব দেখে বা ফেইসবুক দেখে ওরা অ্যাডভেঞ্চারের মত করতে গিয়েছিল।”
তিনি বলেছিলেন, “একজন দুস্থ কিডনি রোগীর চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহে তারা সেখানে যাওয়ার দাবি করেছে। পরে অবশ্য তারা বলেছে, তাদের আইফোন পছন্দ।
“তাদের তিনজনের কাছে থাকা একটি ব্যাগ থেকে ১৫ লাখ ও প্রত্যেকের পকেট থেকে এক লাখ করে টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। তারা যে চারটা আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে ব্যাংকে ঢুকেছিল এগুলোর সবই নকল। এর মধ্যে তিনটি খেলনা আর একটি লাইটার। তবে তাদের সঙ্গে দুটো ছুরিও ছিল।”
ডাকাতি করতে ব্যাংকে ঢোকার পর তিনজন ব্যাংকের ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরার ফুটেজ সংরক্ষণের ডিভিআর বক্সটি ভেঙে ফেলেছিল জানিয়ে ওসি বলছেন, “আমরা এখনো সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পাইনি। ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, ডাকাতেরা সিসি ক্যামেরার ডিভিআর বক্সটা ভেঙে ফেলেছেন। আমরা সেটা এখনো পাইনি। জিজ্ঞাসাবাদেও তিনজন স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি যে তারা ডিভিআর ভেঙে কী করেছে।”
তারা কোথা থেকে ‘অস্ত্র’ কিনেছে এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানান ওসি।
দুই কিশোরের স্বীকারোক্তি, একজন রিমান্ডে
শুক্রবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক হিরন কুমার বিশ্বাস তিন কিশোর-তরুণকে ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে। এরপর দুই কিশোর ঘটনার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিতে সম্মত হয়।
পরে তদন্ত কর্মকর্তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারক মো. জুনাইদ তাদের জবানবন্দি নথিবদ্ধ করেন। এরপর দুজনকে গাজীপুরের কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানোর নির্দেশ দেয় আদালত।
অপর দিকে আরো তথ্য জানার কথা বলে লিয়ন মোল্লা ওরফে নীরবের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। শুনানি শেষে একই আদালত তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানায় করা মামলার অভিযোগে বলা হয়, বৃহস্পতিবার দুপুর ১ টা ৪৫ মিনিটে আসামি নীরব রুপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় প্রবেশ করে নিরাপত্তা রক্ষীকে চুপচাপ পিছনে হাত দিয়া হাঁটু গেড়ে বসে পড়তে বলেন। এসময় দুই কিশোর ব্যাংকে প্রবেশ করে। ব্যাংকে থাকা অন্যান্য গ্রাহক ও কর্মীদের ‘পিস্তল’ দেখিয়ে তারা বলে, কেউ বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে বা চালাকি করলে তাকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে। ‘কাজ’ শেষ হলেই তারা চলে যাবে।
অভিযোগে বলা হয়, হানা দেওয়া তিনজনের হুমকি শুনে ব্যাংকের অন্যান্য কর্মী ও গ্রাহকরা তাদের সামনে এসে পিছনে হাত দিয়া হাঁটু গেড়ে বসে পড়েন। তবে ব্যাংকের কর্মকর্তা মোহাব্বত হোসেন কৌশলে পিছনের নিরাপত্তা রক্ষীদের কক্ষে ঢুকে পড়ে ব্যাংকের ম্যানেজার ও বাসার কেয়ারটেকারকে ডাকাতের হানা দেওয়ার বিষয়টি জানান।
এজাহারে বলা হয়, আসামিরা প্রথমে ব্যাংকের সিসি টিভি ক্যামেরার তার কেটে ফেলে। স্টিলের পাইপ দিয়ে ব্যাংকের সার্ভার হাব ভেঙে ফেলে। ব্যাংকের সকলের মোবাইল ফোন সেট নিয়ে নেয় এবং ব্যাংকের ক্যাশে থাকা ১৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। পরে তারা ভল্টের চাবি চায়। ম্যানেজার না থাকায় চাবি পায়নি তারা। এ অবস্থায় তারা ১৮ লাখ টাকাসহ পালিয়ে যেতে চাইলে তাদের আটক করা হয়।
পুরনো খবর:
কেরাণীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকে সশস্ত্র ডাকাত, কর্মী-গ্রাহকরা 'জিম্মি'
সাড়ে ৩ ঘণ্টা পর ব্যাংক ডাকাতদের আত্মসমর্পণ, জিম্মিরা অক্ষত
ব্যাংক ডাকাতি: আটকদের দুজন কিশোর, 'অ্যাডভেঞ্চারে গিয়েছিল তারা'