“থানা পুলিশ, আনসার সদস্যসহ আমাদের নিরাপত্তায় কেউ এগিয়ে আসেনি,” বলেন সুব্রত চৌধুরী।
Published : 09 Aug 2024, 06:40 PM
ক্ষমতার পালাবদলের মধ্যে দেশের ৫২ জেলায় ‘সাম্প্রদায়িক হামলায়’ কয়েক হাজার হিন্দু পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে বলে ভাষ্য বাংলাদেশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের।
অবিলম্বে এই অবস্থার অবসান ঘটাতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের প্রতি খোলা চিঠি দিয়েছে এই মোর্চা।
শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলন করে ঐক্য পরিষদের সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, “গণঅভ্যুত্থানকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিতে যারা অকাতরে প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়েছেন, নির্যাতিত হয়েছেন- আমরা তাদের গভীরভাবে স্মরণ করি। নিহতদের পরিবার-পরিজনের প্রতি সমবেদনা জানাই, আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি। ছাত্র-জনতার এই আত্মদান, ত্যাগ ও সংগ্রাম বাংলাদেশে জাগরণের যে চেতনা প্রজ্জ্বলিত করেছে, তা যেন কখনো কেউ নিভিয়ে দিতে না পারে, মুক্তিযুদ্ধ যেন পথ না হারায়।”
খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, “জনতার এই বিজয় যখন চূড়ান্ত লক্ষ্য অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছে, অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার সঙ্গে লক্ষ করছি যে, একটি বিশেষ গোষ্ঠী সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে তুলনাহীন সহিংসতা ছড়িয়ে এই অর্জনকে কালিমালিপ্ত করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে।
“প্রাপ্ত সাংগঠনিক বিবরণ এবং গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে অন্তত ৫২টি জেলায় এই সাম্প্রদায়িক সহিংসতায় হাজার হাজার হিন্দু পরিবার সর্বস্ব হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক মন্দির হামলার পর পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। অনেক নারী নিগৃহীত হয়েছেন। কয়েকটি স্থানে হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। আক্রান্ত হয়েছে অন্য সংখ্যালঘুরাও।”
নির্মল রোজারিও বলেন, “মূলত ৫ অগাস্ট থেকে এই সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। সারা দেশের সংখ্যালঘুদের মধ্যে গভীর শঙ্কা, উদ্বেগ ও অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়েছে। এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিকভাবেও বাংলাদেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। আমরা অবিলম্বে এই অবস্থার অবসান চাই।
“এই পরিস্থিতি আমরা মহামান্য রাষ্ট্রপতি, সম্মানিত সেনাপ্রধান, সংগ্রামী ছাত্র নেতৃত্ব এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্মানিত নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের বর্তমান সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও জানানোর চেষ্টা করেছি। তারাও তাদের বক্তব্য-ভাষণে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা বন্ধের আহবান জানিয়েছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি গত তিন দিন ধরে গভীর শূন্যতার মধ্যে পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। আর্তনাদ প্রলম্বিত হচ্ছে।”
হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সুব্রত চৌধুরী বলেন, “আমাদের রক্তক্ষরণ হচ্ছে। বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার বিজয়কে আমরা স্বাগত জানাই। আমরা আজকে নির্যাতিত-নিপীড়িত হচ্ছি। সেনাপ্রধান বলেছেন, ‘আমরা সব দায়িত্ব নেব।’ কিন্তু গত ৯ দিনে সে রকম কিছু আমরা দেখতে পাইনি। থানা পুলিশ, আনসার সদস্যসহ আমাদের নিরাপত্তায় কেউ এগিয়ে আসেনি।”
দুর্বৃত্তদের রুখে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “প্রত্যেকটি সাম্প্রদায়িক হামলার তদন্ত হতে হবে এবং দোষীদের বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।”
বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। আর সঞ্চালনা করেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নিমচন্দ্র ভৌমিক, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রঞ্জন কর্মকার ও জে এল ভৌমিক, বুড্ডিস্ট ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ভিক্ষু সুনন্দপ্রিয়।