“অন্ধকারে রেখে আমরা কাজ করতে চাই না, সবকিছু জাতির সামনে তুলে ধরতে চাই,” বলেন কমিশন প্রধান।
Published : 26 Dec 2024, 03:25 PM
দেড় দশক আগে ঢাকার পিলখানায় বিডিআর সদর দপ্তরে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে গঠিত স্বাধীন কমিশন পলাতক ব্যক্তিদের প্রয়োজনে দেশের বাইরে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।
বৃহস্পতিবার পিলখানায় ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান কমিশনের সভাপতি বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আ ল ম ফজলুর রহমান।
কমিশনের প্রথম বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “তারা কোথায় আছেন, কোন দেশে আছেন- খোঁজ নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সেসব দেশের সাথে যোগাযোগ করব।
“প্রয়োজন হলে ওই দেশের সাথে আলোচনা করে যদি ফেরত আনা সম্ভব না হয়- তাহলে টিম পাঠিয়ে তাদের স্টেটমেন্ট নেওয়া হবে।"
২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সদরদপ্তরে বিদ্রোহের ঘটনায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জন নিহত হন। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোড়ন তোলে ওই ঘটনা।
ক্ষমতার পালাবদলে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ওই ঘটনা পুনঃতদন্তের দাবি জোরাল হয়। এর মধ্যে মঙ্গলবার জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন করে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেওয়া হয়।
ফজলুর রহমান বলেন, “আমাদের বুদ্ধি, বিবেচনা এবং প্রজ্ঞার উপর নির্ভর করে নিরপেক্ষভাবে আমরা এই তদন্ত যে সময় দেওয়া হয়েছে, সেই সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ করার চেষ্টা করব।
“আমরা কোনো রকম বায়াসড হব না, কোনো কিছুর দ্বারা আমরা প্রভাবিত হব না।"
তিনি বলেন, “হাজার বছরে এই ধরনের ঘটনা পৃথিবীতে ঘটেনি যে- একটু সামান্য সময়ে এত অফিসার, এত মানুষ নিহত হয়েছেন। এই বিডিআর বিদ্রোহের পরবর্তী সময় যারা নিপীড়িত হয়েছেন, নিহত হয়েছেন, বঞ্চিত হয়েছেন- সবকিছুতেই নজরে নেওয়া হবে।
“অতীব সহমর্মিতার সাথে এবং আন্তরিকতার সাথে আমরা তাদের ক্ষতকে নিরাময় করার চেষ্টা করব। যখন আমাদের কাজ শেষ হয়ে যাবে, তখন যেন এই প্রশ্ন না ওঠে যে আমাদের কাজ আমরা সম্পন্ন করতে পারিনি।”
পিলখানা হত্যার তদন্তে জাতীয় স্বাধীন কমিশন গঠনের একদিনে বাদে বৃহস্পতিবার যে সভা হয়েছে তা মূলত সবাই নিজেদের মধ্যে পরিচিত হয়েছে বলে জানান কমিশন প্রধান ফজলুর।
তিনি বলেন, “কিছু চিঠি আমাদের লিখতে হচ্ছে, প্রধান উপদেষ্টা বরাবরও লিখব। আমি নিজেও কথা বলেছি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জয়েন্ট সেক্রেটারি নিরাপত্তার সাথে।
“অবহিত করেছি আমাদের সাচিবিক সুবিধা দিতে হবে, অফিস দিতে হবে। এই চিঠিগুলো লেখার পরে আমরা পরবর্তী কার্যক্রম শুরু করব।"
ফজলুর রহমান বলেন, “আমরা কিছু বিষয় চিহ্নিত করেছি। …দেশি-বিদেশি শক্তি- ষড়যন্ত্র চিহ্নিত করতে আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।”
এজন্য বাড়তি কিছু বিষয় চিঠির মাধ্যমে সরকারের কাছে চাওয়া হবে জানিয়ে তিনি বলেন, "নিজের এবং পারিবারিক নিরাপত্তা, পরিবহন সুবিধা, সাচিবিক সুবিধাগুলোর বিষয়ে চিঠিতে তুলে ধরা হবে।"
বিডিআর বিদ্রোহের পর সীমান্ত রক্ষা বাহিনী বিডিআরের নাম বদলে যায়, পরিবর্তন আসে পোশাকেও। এ বাহিনীর নাম এখন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবি।
কমিশনের মর্যাদা প্রসঙ্গে বিজিবির সাবেক ডিজি ফজলুর বলেন, “এই কমিশনের যিনি সভাপতি, তার মর্যাদা হতে হবে উপদেষ্টার সমান। কারণ আমাদের দেশে বিদেশিদের নিয়ে কাজ করতে হবে।
“যারা সদস্য রয়েছেন, তাদের সুপ্রিম কোর্টের অ্যাপিলেট ডিভিশনের বিচারকের মর্যাদায় অভিষিক্ত করার জন্য আমরা আবেদন জানাব।"
এসব হওয়ার পরেই পরবর্তী সভা হবে এবং সাক্ষ্য নেওয়া শুরু হবে বলে জানান কমিশন সভাপতি।
তিনি বলেন, “অন্ধকারে রেখে আমরা কাজ করতে চাই না, সবকিছু জাতির সামনে তুলে ধরতে চাই।”
এসময় উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাইদুর রহমান, অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব মুন্সী আলাউদ্দিন আল আজাদ, পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত ডিআইজি এম আকবর আলী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শরীফুল ইসলাম।
কমিটির বাকি সদস্য জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শাহনেওয়াজ খান চন্দন দেশের বাইরে থাকায় তিনি সভায় অংশ নিতে পারেননি।