জ্যোৎস্না বেগম বলেন, “ভোর রাতে মুক্তির খবর পেয়ে কী যে আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। মনে হচ্ছে আজকেই আমাদের ঈদ। ঈদের দিনতো আমাদের ঘরে কোনো আনন্দেই ছিল না।”
Published : 14 Apr 2024, 11:41 AM
তিনদিন আগে ঈদ গেলেও এমভি আবদুল্লাহর জিম্মি নাবিকদের ঘরে ছিল না কোনো আনন্দ। তাদের দিন কাটছিল অজানা শঙ্কায়।
নাবিকরা সবাই সোমালি জলদস্যুদের কবল থেকে মুক্ত হওয়ায় নাবিকদের পরিবারে বইছে আনন্দের হাওয়া।
শুক্রবার এমভি আবদুল্লাহ আর নাবিকরা মুক্ত হওয়ার পর এভাবেই তাদের স্বজনরা জানিয়েছেন তাদের আনন্দানুভূতির কথা।
টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নাবিক আইনুল হকের মা লুৎফে আরা বেগম বলেন, “আমার ছেলেরা মুক্ত হয়েছে, কেমন ভালো লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না।
“ঈদ গেলেও আমাদের ঘরে কোনো আনন্দ ছিল না। ঈদের দিন আইনুলের সাথে কথা হয়েছিল। তারপর দুই দিন আর কথা হয়নি। খুব শঙ্কায় ছিলাম ছেলের মুক্তি নিয়ে।”
দ্রুত সময়ের মধ্যে ছেলে ও তার সহকর্মীরা মুক্ত হওয়া উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে লুৎফে আরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, “আমরা জাহাজ মালিকপক্ষ, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও সাংবাদিকদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তারা সবসময় বিষয়টি নজরে রেখেছে বলে ছেলেরা মুক্তি পেয়েছে।”
গত ১২ মার্চ দুপুরে ভারত মহাসাগরে সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে বাংলাদেশের কবির গ্রুপের এসআর শিপিংয়ের মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ। জিম্মি করা হয় জাহাজটিতে থাকা ২৩ জন বাংলাদেশি নাবিককে।
মোজাম্বিক থেকে ৫৫ হাজার টন কয়লা নিয়ে কয়লা নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাচ্ছিল জাহাজটি।
অস্ত্রের মুখে জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যায় জলদস্যুরা। সেখানে পৌঁছানোর পর বারবার জাহাজের অবস্থান পরিবর্তন করা হয়। ছিনতাইয়ের ৯ দিনের মাথায় জলদস্যুদের সাথে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে যোগাযোগ হয় জাহাজের মালিকপক্ষের।
দেন দরবারের পর অবশেষে জাহাজটি দস্যুমুক্ত হয়েছে।
শনিবার বাংলাদেশ সময় ভোর রাত ৩টার দিকে জাহাজটি সোমালিয়া থেকে দুবাই রওনা হয়েছে বলে জাহাজটির মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের মিডিয়া ফোকাল পার্সন মিজানুল ইসলাম জানিয়েছেন।
৩৩ দিন পর জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হওয়া ২৩ নাবিকের একজন নুরুদ্দিন।
স্বামীর মুক্তির খবর পেয়ে তার স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, “বৃহস্পতিবার ঈদ গেলেও আমাদের ঘরে কোন আনন্দ ছিল না। গতরাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার স্বামী যখন টেলিফোনে তাদের মুক্ত হওয়ার খবর জানাল তখনই মনে হলো আজকে আমাদের ঘরে ঈদ।
“ঈদের দিন দস্যুরা সবাইকে পরিবারের সাথে কথা বলার সুযোগ দিয়েছিল। পরে দুইদিন কোনো কথা হয়নি। রাতে কথা হয়েছে। তখন বলল, বিদেশি জাহাজের পাহারায় তারা দুবাইয়ের দিকে রওনা করেছেন। কবে নাগাদ ঘরে আসবে সেটা কিছু জানায়নি।”
এমভি আব্দুল্লাহর ফোর্থ ইঞ্জিনিয়ার মো. তানভীরের মা জ্যোৎস্না বেগম বলেন, “ঈদের দিন কথা বলার পর ছেলের সাথে আর কথা হয়নি। ভোর রাত পৌনে চারটার দিকে সে ফোন করে মুক্তি পাওয়ার কথা জানিয়েছে।”
জিম্মিদশায় থাকাবস্থায় কয়েকবার ছেলের সাথে কথা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ঈদের দিন নামাজের পর দস্যুদের সাথে তোলা ছবি মিডিয়াতে আসায় তারা (দস্যুরা) খুব ক্ষুব্ধ হয়েছিল বলে তানভীর জানিয়েছে।
“এ কারণে দস্যুরা মানসিক নির্যাতন করেছে। দুইদিন কারো সাথে যোগাযোগ করতে দেয়নি।”
জ্যোৎস্না বেগম বলেন, “ভোর রাতে মুক্তির খবর পেয়ে কী যে আনন্দ লাগছে তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারব না। মনে হচ্ছে আজকেই আমাদের ঈদ। ঈদের দিনতো আমাদের ঘরে কোনো আনন্দেই ছিল না।”