চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করেন।
Published : 28 Aug 2024, 09:57 PM
দীর্ঘমেয়াদী জনকল্যাণে পুলিশসহ সব বেসামরিক নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার সংস্কারকে ‘জরুরি’ হিসেবে দেখছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটির সঙ্গে অস্ট্রেলিয়াও এই সংস্কারকাজে সরকারকে সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে বুধবার বিকালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফ্যাভ ও অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) নারদিয়া সিম্পসন সাক্ষাৎ করেন।
পৃথক দুটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য তুলে ধরেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
সাক্ষাৎকালে উভয় কূটনীতিকই পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কারের বিষয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা করেন।
এ ছাড়া বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও কৃষি খাতে সহযোগিতা, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনসহ নানা বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, সাক্ষাৎকালে উপদেষ্টা বলেন- বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম অংশীদার যুক্তরাষ্ট্র। তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা করে যাচ্ছে। প্রশিক্ষণ ও আনুষঙ্গিক সহায়তাসহ চলমান পুলিশ সংস্কারেও তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।
এ সময় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফ্যাভ বলেন, “আমেরিকান দূতাবাসসহ দূতাবাস পাড়ার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। তবে পুলিশসহ নিরাপত্তা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সংস্কার ‘জরুরি’।
আনসারের বিষয়েও জানতে চান হেলেন লাফ্যাভ। তখন উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তারা তাদের চাকরি জাতীয়করণের জন্য আন্দোলন করছিল। বাংলাদেশের বিদ্যমান আর্থিক সক্ষমতায় যে দাবি মেনে নেওয়া দুরূহ।
“তবে সমস্যার সমাধান হয়েছে। ৩ বছর পরপর আনসাররা যে ৬ মাসের জন্য বিশ্রামে যেত, সরকার তা বাতিলের উদ্যোগ নিয়েছে। এর ফলে তাদের বিশ্রামে যাওয়ার প্রয়োজন হবে না এবং ওই সময়েও তারা বেতন-ভাতাদি প্রাপ্য হবেন।”
আমেরিকান দূতাবাসের নিরাপত্তার স্বার্থে রেডি ফ্রিকোয়েন্সিতে প্রবেশগম্যতার বিষয়টি উপদেষ্টার কাছে তুলে ধরেন হেলেন লাফ্যাভ। উপদেষ্টা বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বিটিআরসি ও সংশ্লিষ্ট দপ্তর-সংস্থার সমন্বয়ে আন্তঃমন্ত্রণালয়ের বৈঠকের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানান।
চার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স এ সময় যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি দলের আসন্ন বাংলাদেশ সফরে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা কামনা করেন।
উপদেষ্টা চলমান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারের আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেন। তিনি এ সময় কৃষি পুনর্বাসনের লক্ষ্যে বীজ, সারসহ অন্যান্য কৃষি উপকরণের চাহিদার কথা বলেন।
হেলেন লাফ্যাভ বলেন, বাংলাদেশের ৯টি সরকারি দপ্তরের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। তারা এ ক্ষেত্রে উপকরণ সরবরাহসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে।
উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্রের পাশপাশি কৃষি মন্ত্রণালয়েরও দায়িত্বে আছেন।
পুলিশের সংস্কারে সহায়তার প্রস্তাব অস্ট্রেলিয়ারও
বিকালে পৃথকভাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন অস্ট্রেলিয়ার হাই কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) নারদিয়া সিম্পসন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এ সময় সন্ত্রাস দমন, মানবপাচার প্রতিরোধ, পুলিশ সংস্কার, বন্যা-পরবর্তী কৃষি পুনর্বাসনসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, চলমান বন্যায় বাংলাদেশের ২২টি জেলায় কৃষিখাত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি কৃষি পুনর্বাসনে অস্ট্রেলিয়ার সহযোগিতা কামনা করেন।
নারদিয়া সিম্পসন বলেন, “বাংলাদেশের বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাক অস্ট্রেলিয়ার দীর্ঘদিনের অংশীদার। বন্যা পুনর্বাসনে আমরা ব্র্যাককে প্রয়োজনীয় তহবিল দিয়েছি।”
অস্ট্রেলীয় হাই কমিশনার বলেন, অস্ট্রেলিয়া মানবাধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী। তার দেশ কাউন্টার-টেররিজম, ট্রান্সন্যাশানাল ক্রাইম, মানবপাচার প্রতিরোধসহ বিভিন্ন বিষয়ে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সাথে আরও নিবিড়ভাবে কাজ করতে আগ্রহী।
“পুলিশ সংস্কারের অংশ হিসেবে পুলিশের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতা দিতে আমরা প্রস্তুত। অস্ট্রেলিয়া সাইবার সিকিউরিটি, ইমিগ্রেশন সেক্টরে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আনুষঙ্গিক সহায়তা দিতে রাজি আছে।”
“অস্ট্রেলিয়া আশা করে, মানবাধিকার সুরক্ষায় বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে,” বলেন সিম্পসন।
উপদেষ্টা এসব ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন তাদের।
১ জুলাই কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলনটি শুরু হয়েছিল, সেটি ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনার পতনের মধ্য দিয়ে পরিণতি পায়। এই সময়ে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ সারা দেশে কয়েকশ শিশু, কিশোর, তরুণ ও সাধারণ মানুষ নিহত ও কয়েক হাজার আহত হয়। এর জন্য আন্দোলনকারীরা বিশেষ করে সরকার ও পুলিশ বাহিনীকে দায়ী করে আসছে।
অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের শুরুতেই এই পুলিশ বাহিনী নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়। প্রায় তিন সপ্তাহ পার হতে চললেও এখনও স্বাভাবিক কার্যক্রমে দেখা যায়নি পুলিশ সদস্যদের। তাদের বিরুদ্ধে যেমন হত্যাকাণ্ডের গুরুতর অভিযোগ, তেমনি পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা চালিয়ে হত্যার ঘটনাও আলোচনায় রয়েছে।
এ অবস্থায় পুলিশ ও এর অধীন সব নিরাপত্তা বাহিনী সংস্কারের জোর দাবি রয়েছে।