দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ মামলাটি করা হয়েছে।
Published : 09 Jan 2025, 07:38 PM
ইসলামী ব্যাংকের প্রায় ৯৯৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল আলমসহ ৫৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক।
বৃহস্পতিবার দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মুস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্রগ্রাম-১ এ মামলাটি করেছেন।
দুদকের উপপরিচালক ও জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. আকতারুল ইসলাম মামলা করার বিষয়টি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।
ইসলামী ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসানুল হক ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় সুবিধা পাওয়া চট্টগ্রামভিত্তিক শিল্পগোষ্ঠী এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলমের (এস আলম) ছেলে।
আহসানুল আলমের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ৯২ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-১ এ আরেকটি মামলা হয়েছে। সে মামলায় তার সঙ্গে আসামি করা হয়েছে ৫৭ জনকে।
মুরাদ এন্টারপ্রাইজের নামে ঋণ নিয়ে এই অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গত ১৯ ডিসেম্বর মামলাটি করা হয়েছে।
ইসলামী ব্যাংকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে ব্যাপক ঋণ জালিয়াতির ঘটনা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ পায়।
নিয়ম না মেনে ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নামে বেনামে ব্যাংকটির চট্টগ্রামের তিন শাখা থেকে ৩ হাজার ৩০০ কোটি ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এর মধ্যে বৃহস্পতিবার ইউনাইটেড সুপার ট্রের্ডাসের স্বত্বাধিকারীর নামে ৯৯৩ কোটি ৭০ লাখ ২৩ হাজার ৪৭৮ টাকা আত্মসাতের মামলাটি হল। বুধবার এ মামলার অনুমোদন দেওয়ার তথ্য দিয়েছিল দুদক।
মামলার এজাহারে বলা হয়, অর্থের প্রকৃত উৎস ও প্রকৃতি গোপন করার জন্য আত্মসাৎ করা এই অর্থ স্থানান্তর, হস্তান্তর ও রূপান্তরের মাধ্যমে মানিলন্ডারিং ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন আসামিরা।
এজাহারে ঘটনার সময়কাল বলা হয়েছে, ২০২১ সালের ৩০ নভেম্বর থেকে ২০২৪ সালের ২ অক্টোবর পর্যন্ত।
আসামির তালিকায় অন্য যারা আছেন তাদের মধ্যে আছেন- ইউনাইটেড সুপার ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী; ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির সাবেক পরিচালক ও ইসি কমিটির চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, সাবেক নমিনী পরিচালক সৈয়দ আবু আসাদ, সাবেক ভাইস চেয়ারমান ডা. তানভীর আহমদ; সাবেক পরিচালক মো. কামরুল হাসান; সাবেক স্বতন্ত্র পরিচালক ড. মোহাম্মদ সালেহ জহুর; সাবেক পরিচালক ড. মো. ফসিউল আলম; ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মোহাম্মদ মনিরুল মাওলা; সাবেক পরিচালক জামাল মোস্তফা চৌধুরী; নির্বাহী কমিটির সাবেক সদস্য আবু সাইদ মোহাম্মদ কাশেম; সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক জে কিউ এম হাবিবুল্লাহ; সাবেক অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ কায়সার আলী।
ব্যাংকটির সাবেক ডিএমডি (সিআরও) মোহাম্মদ আলী; সাবেক ডিএমডি (সিএইচআরও) মো. মোস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী; সাবেক এসইভিপি ও বর্তমানে এএমডি মো. আলতাফ হোসেন; সাবেক ডিএমডি মোহাম্মদ সাব্বির; এসইভিপি, জি এম মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন কাদের; সাবেক ডিএমডি মিফতাহ উদ্দিন; সাবেক এসইভিপি মোহাম্মদ উল্লাহ; সাবেক ডিএমডি আবুল ফাইয়াজ মোহাম্মদ কামাল উদ্দিন; সাবেক এসইভিপি এবং বর্তমানে উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম; এক্সিকিউটিভ ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. ফরিদ উদ্দিন; সাবেক উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চুক্তি ভিত্তিক) কাজী মো. রেজাউল করিম; জুবিলী রোড শাখার সাবেক শাখা প্রধান ও বর্তমানে বংশাল শাখার ম্যানেজার এসভিপি সোহেল আমান; জুবিলী রোড শাখার সাবেক প্রধান ও বর্তমানে আগ্রাবাদে ইসলামি ব্যাংক ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শাহাদাৎ হোসেন।
ইসলামী ব্যাংকের জুবিলী রোড শাখার সাবেক প্রধান ও বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক ট্রেইনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমির এভিপি মো. মাইন উদ্দিন; জুবিলী রোড শাখার এফএভিপি মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম; সাবেক এসইভিপি ও চট্টগ্রাম উত্তর জোনের প্রধান (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) মো. নাইয়ার আজম; বর্তমানে ঢাকার মোহাম্মদপুরে ইসলামী ব্যাংক ট্রেনিং অ্যান্ড রিসার্চ একাডেমিতে কর্মরত সাবেক ইভিপি ও চট্টগ্রাম উত্তর জোনের প্রধান মুহাম্মদ নূরুল হোসাইন কাওসার; এসএভিপি মোহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন চৌধুরী।
বাণিজ্য বিতান কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী মো. তৌফিকুল ইসলাম চৌধুরী; অ্যাপার্চার ট্রেডিং হাউজ স্বত্বাধিকারী এস এম নেছার উল্লাহ; ড্রিমস্কেপ বিজনেস সেন্টারের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মহসিন মিয়াজী; এক্সিসটেন্স ট্রেড এজেন্সির স্বত্বাধিকারী মো. সালাহ উদ্দিন (সাকিব); ফেন্সিফেয়ার কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী আব্দুল মজিদ খোকন; এপিক অ্যাবল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মো. ইকবাল হোসেন; ফেমাস ট্রেডিং কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী আরশাদুর রহমান চৌধুরী; জিনিয়াস ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আবুল কালাম; গ্লোবাল ট্রেডিং কর্পোরেশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. রাশেদুল আলম এবং পরিচালক মোহাম্মদ আব্দুস সবুর; ইনফিনিটি সিআর স্ট্রিপস লিমিটেডের চেয়ারম্যান ফারজানা বেগম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুল ওয়াহিদ ও হিসাব পরিচালনাকারী আশরাফুল আলম; চেমন ইস্পাত লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম; আনছার এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আনছারুল আলম চৌধুরী; রেইনবো কর্পোরেশনের স্বত্বাধিকারী রায়হান মাহমুদ চৌধুরী; গ্রিন এক্সপোজ চট্টগ্রামের স্বত্বাধিকারী এম এ মোনায়েম, সাফরান ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী মাহাফুজুল ইসলাম, মেসার্স শাহ আমানত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ গোলাম রাব্বানী চৌধুরী, সোনালী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী সহিদুল আলম এবং মেসার্স মুরাদ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ গোলাম সরওয়ার চৌধুরী।
২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় এস আলম গ্রুপ। এরপর বিভিন্ন সময় ব্যাংকটির ঋণ জালিয়াতি ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর গত অগাস্টে গতি পায় ইসলামী ব্যাংকের ঋণ জালিয়াতির অনুসন্ধান। এরপর গত নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে ব্যাংকটির অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে বিরুদ্ধে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক।
গত ২১ অগাস্ট এস আলম গ্রুপের মালিক সাইফুল আলম বা এস আলমের বিরুদ্ধে অর্থ পাচারের অভিযোগের তদন্ত শুরু করে দুদক।
পুরনো খবর:
ইসলামী ব্যাংকের অর্থ 'আত্মসাৎ', এস আলমের ছেলের বিরুদ্ধে আরেকটি মা
'ঋণ জালিয়াতি': এস আলমের ছেলেসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা