“আমি যে দলহীন, গোত্রহীন একজন লেখক তা প্রমাণিত হয়েছে,” বলেন তিনি।
Published : 30 Jan 2025, 09:28 PM
কিছু লোকের আপত্তি ও সমালোচনার মুখে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ায় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোহাম্মদ হাননান।
মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে এবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারের জন্য তার নাম মনোনীত হয়েছিল।
বুধবার মধ্যরাতে বাংলা একাডেমি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পুরস্কারের জন্য সাতজনের নতুন তালিকা ঘোষণা করে। সেখানে আগের দশ জনের তালিকা থেকে কথাসাহিত্যে সেলিম মোরশেদ, মুক্তিযুদ্ধে মোহাম্মদ হান্নান ও শিশুসাহিত্যে ফারুক নওয়াজের নাম বাদ দেওয়া হয়।
নতুন তালিকা অনুযায়ী, এবার কবিতায় মাসুদ খান, নাটক ও নাট্যসাহিত্যে শুভাশিস সিনহা, প্রবন্ধ/গদ্যে সলিমুল্লাহ খান, অনুবাদে জি এইচ হাবীব, গবেষণায় মুহম্মদ শাহজাহান মিয়া, বিজ্ঞানে রেজাউর রহমান, ফোকলোরে সৈয়দ জামিল আহমেদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন।
ঘোষণা করার পর পুরস্কার বাতিলের এই ঘটনা তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। এ বিষয়ে এবার নিজের অভিমত জানালেন মোহাম্মদ হাননান।
বৃহস্পতিবার হোয়াটস অ্যাপে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে পাঠানো এক বিবৃতিতে মোহাম্মদ হাননান বলেন, “আমার নাম বাদ দেওয়ায় কোনো খেদ নেই, অভিযোগ নেই। তবু সবাই শান্ত থাকুক।”
“দীর্ঘসময় ধরে লিখলেও রাষ্ট্রীয় কোন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হইনি, গত ১৬ বছরেও না। এ বছর আমার জন্য বাংলা একাডেমি পুরস্কার ঘোষণার পর আমার নাম বাদ দেওয়ায় আমি যে দলহীন, গোত্রহীন একজন লেখক তা প্রমাণিত হয়েছে। আমি এজন্য স্বস্তি অনুভব করছি।”
দীর্ঘ ৪০ বছর ধরে লেখালেখির তথ্যও তিনি বিবৃতিতে তুলে ধরেছেন।
হাননান বলেন, “বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের ইতিহাস নামক গ্রন্থের ১৪টি খণ্ডসহ আমার মোট গবেষণা প্রন্থের সংখ্যা ৫৮টি, শিশু-কিশোর সাহিত্য ২০টিসহ সম্পাদিত ও অন্যান্য গ্রন্থ মিলে আমার প্রকাশনা সংখ্যা এখন ১৩৪টি।”
“১৯৯১ সালে আমার লেখা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস প্রকাশিত হয়। পরবর্তীকালে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আরো কাজ করি। ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয় ব্যালাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে আলেম সমাজের ভূমিকা শীর্ষক গ্রন্থ। তথ্যগুলো দিলাম এ জন্য যে আমার সম্পর্কে মানুষ খুব কমই জানে।”
গত বৃহস্পতিবার বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ঘোষণার পর শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন তোলেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী।
পুরস্কারের জন্য মনোনীত লেখকদের তালিকায় কোনো ‘নারী লেখক’ না থাকাকে ‘বিস্ময়কর’ বলে মন্তব্য করেন উপদেষ্টা। এ পুরস্কারের জন্য ‘মনোনয়ন প্রক্রিয়া সংস্কারের সময় এসেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এর পরদিন শনিবার ঘোষিত পুরস্কার স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানায় বাংলা একাডেমি। সংস্কৃতি উপদেষ্টা নিজেই পুরস্কার স্থগিতের খবর ফেইসবুকে দেওয়া পোস্টে জানান। পুরস্কার স্থগিতে উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ রয়েছে বলে ফেইসবুকে লেখেন কেউ কেউ।
বিষয়টি নিয়ে পুরস্কারের জুরি সদস্যরাও বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন। জুরি সদস্য মোরশেদ শফিউল হাসান দায়িত্ব থেকে নিজেকে সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দেন মঙ্গলবার রাতে।
তিনি বলেন, সংস্কৃতি উপদেষ্টার পর পর দুটি ফেইসবুক পোস্ট পড়ার পর তিনি ‘আত্মসম্মান বোধ থেকে এবং নিজের বিচারবুদ্ধির ওপর আস্থা রেখে’ এই প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে পুরোপুরি সরিয়ে নিয়েছেন।
পুরস্কার স্থগিতের বিষয়ে বাংলা একাডেমির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল- ‘উদ্ভূত সামাজিক-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং পুরস্কার-তালিকাভুক্ত কারও কারও সম্পর্কে কিছু অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ায় পূর্বঘোষিত বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০২৪ পুনর্বিবেচনার প্রয়োজন’ মনে করেছে একাডেমি।
বুধবার বাংলা একাডেমির নির্বাহী কমিটি থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন কবি সাজ্জাদ শরিফ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নে বৃহস্পতিবার সকালে সাজ্জাদ শরিফ বলেন, “প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলা একাডেমি এবং একাডেমির মহাপরিচালক, নির্বাহী পরিষদের পদগুলোর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হওয়ায় নৈতিক কারণে আমার পক্ষে এই পদে দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়। আমি পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছি।”
গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাজ্জাদ শরিফ বাংলা একাডেমির নবগঠিত নির্বাহী পরিষদে যুক্ত হয়েছিলেন। বুধবার তিনি একাডেমির মহাপরিচালকের কাছে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন।
এর আগে রোববার রাতে কথাসাহিত্যিক সেলিম মোরশেদও পুরস্কার প্রত্যাখানের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
পুরনো খবর:
তিনজন বাদ, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পাচ্ছেন বাকি ৭ জন
বাংলা একাডেমি পুরস্কারের খবর নেই, এবার সরে গেলেন জুরি সদস্য
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার স্থগিত
সৈয়দ জামিল, সলিমুল্লাহ খানসহ ১০ জন পাচ্ছেন বাংলা একাডেমি পুরস্কার
বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার: নারী লেখক না থাকাকে 'বিস্ময়কর'
পুরস্কার বিতর্ক: শাস্তির দাবিতে বাংলা একাডেমি 'ঘেরাও কর্মসূচি'
স্থগিত হওয়া বাংলা একাডেমি পুরস্কার, প্রত্যাখ্যান সেলিম মোরশেদের