এর আগেও তাদের বিভিন্ন মামলায় জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ।
Published : 16 Apr 2025, 12:55 PM
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকেন্দ্রিক পৃথক তিন মামলায় ভোলা-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব, ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজ, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং যাত্রাবাড়ি থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
ঢাকার মহানগর হাকিম মিনহাজুর রহমান বুধবার শুনানি শেষে তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
জ্যাকবের তিন দিনের রিমান্ড
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর ভাটারা থানাধীন নতুন বাজার এলাকায় হোটেল কর্মচারী রোহান হত্যাচেষ্টা মামলায় আব্দুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকবকে তিন দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাটারা থানার এসআই হাফিজুর রহমান তাকে সাত দিনের রিমান্ডে চেয়ে আবেদন করেন। বুধবার শুনানির সময় তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগরের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে শুনানি করেন।
জ্যাকবের পক্ষে তার আইনজীবী রিমান্ডের বিরোধিতা করে জামিনের আবেদন করেন।
তিনি বলেন, “জ্যাকব ২০০৯ সাল থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। তিনি আগেও রিমান্ডে ছিলেন। ৫ অগাস্টের পর তার নির্বাচনী এলাকায় তার বিরুদ্ধে কোনো মামলা হয়নি।”
পরে আদালত জ্যাকবকে তিন দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন।
নবী নেওয়াজের ৫ দিনের রিমান্ড
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর রমনা এলাকায় গৃহকর্মী লিজা আক্তারকে গুলি করে হত্যার মামলায় ঝিনাইদহ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য নবী নেওয়াজকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছে আদালত।
১২ এপ্রিল মামলার তদন্ত সংস্থা সিআইডি তাকে আদালতে হাজির করে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করে। তবে মামলার মূল নথি না থাকায় আদালত সেদিন তাকে কারাগারে পাঠিয়ে ১৬ এপ্রিল রিমান্ড শুনানির তারিখ রাখে।
সে অনুযায়ী বুধবার শুনানিকালে তাকে আদালতে হাজির করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলেন, “অবৈধ ও ফ্যাসিস্টের এমপি। বিনা ভোটে নিজেকে এমপি ঘোষণা করেন। ঘটনার সাথে তার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তার রিমান্ড মঞ্জুরের প্রার্থণা করছি।”
অন্যদিকে নবী নেওয়াজের পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, “তিনি সাত বছর আগে এমপি ছিলেন। আওয়ামী লীগের ভাইটাল পোস্টে ছিলেন না। তিনি একজন শিক্ষাবিদ। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ নেই। রিমান্ডে নিলে টর্চার করে জোরপূর্বক স্বীকারোক্তি আদায় করা হবে। তিনি অসুস্থ। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত। বর্তমান বা অতীতে কোনো পোস্টে ছিলেন না। আওয়ামী লীগের ডিশিসন মেকারও না। ঢাকায় থাকেন না, থাকেন ঝিনাইদহে। প্রয়োজনে তাকে জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।”
শুনানি শেষে বিচারক নবী নেওয়াজকে পাঁচ দিন রিমান্ডে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন।
গত ১১ এপ্রিল নবী নেওয়াজকে রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
মামলার অভিযোগে জানা যায়, বৈষমবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই রাজধানীর রমনা থানা এলাকায় গৃহকর্মী লিজা আক্তার গুলিতে আহত হন। পরে ২২ জুলাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
এ ঘটনায় ৫ সেপ্টেম্বর লিজা আক্তারের বাবা মো. জয়নাল শিকদার বাদী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১৭৪ জনের নামে উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা করেন। মামলায় নবী নেওয়াজ ১৭০ নম্বর এজহারনামীয় আসামি।
মামুন ও আবুল হাসান রিমান্ডে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে শাওন তালুকদার নামে এক ব্যক্তি গুলিতে নিহতের মামলায় পুলিশের সাবেক আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনের তিন দিন এবং যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানকে পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যাত্রাবাড়ী থানার এসআই মেহেদী হাসান তাদের ৫ দিন করে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছিলেন। রাষ্ট্রপক্ষে ওমর ফারুক ফারুকী রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন।
তিনি বলেন, “সবচেয়ে বেশি হত্যার শিকার হয় যাত্রাবাড়ীতে। নেতৃত্বে ছিলেন আবুল হাসান। শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর তারাও পালিয়ে যায়। পরে যাত্রাবাড়ী থানায় ১৮টি লাশের স্তূপ পাওয়া যাই। আর দুই হাজার লোক হত্যা এবং ৩০ হাজার লোক আহত হয়।
“এর মাস্টারমাইন্ড চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন। অফিসে বসে ষড়যন্ত্র করেন আন্দোলন দমানোর। কীভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছেন সবাই দেখেছেন।'
মামুনের পক্ষে তার আইনজীবী বলেন, “তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ। এরআগে ৮০/৮৫ দিন রিমান্ডে নেওয়া হয়। প্রয়োজন মনে করলে জেলগেইটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন।”
তখন ফারুক ফারুক ফারুকী বলেন,“দুই হাজার হত্যার ঘটনা ঘটেছে। প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা হবে। অর্ধেক মামলাও হয়নি। বড় ধরনের আসামি। প্রত্যেক মামলায় তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন।”
তবে আবুল হাসানের পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। আদালত জানতে চান, আবুল হাসান কিছু বলবেন কি না।
তখন আবুল হাসান বলেন, “না, স্যার কিছু বলব না।”
পরে আদালত চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে তিন দিন এবং আবুল হাসানকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে পাঠানোর আদেশ দেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ৫ আগস্ট বিকেলে পুলিশের চালানো গুলিতে নিহত হন শাওন তালুকদার। পরে এ ঘটনায় মামলা করা হয়।