অফিস চলাকালীন একদিনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে, বলেছেন প্রধান কৌঁসুলি।
Published : 12 Dec 2024, 05:18 PM
জুলাই-অগাস্টে গণহত্যা মামলায় যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার বিচারপতি গোলাম মোর্তজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে তাকে হাজির করা হয়।
শুনানি শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “আমরা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তথ্য উদঘাটন করতে চাই। যেসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন, কীভাবে কার নির্দেশে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হলো, কোন কোন অফিসারের মাধ্যমে এসব হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে, গোলাবারুদ কোত্থেকে আসলো, কারা নির্দেশ দিল, এসব বিষয়ে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করতে অনুমতি চেয়েছি।
“অফিস চলাকালীন একদিনের জন্য জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আগামী ১৫ ডিসেম্বর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আমাদের তদন্ত সংস্থার কাছে দেওয়া হবে।”
প্রধান কৌঁসুলি তাজুল ইসলাম বলেন, “তদন্ত প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানানোর জন্য আমরা আদালতের কাছে দুই মাস সময় চেয়েছিলাম, আদালত এক মাস সময় দিয়েছেন।”
ঘটনা জানিয়ে তিনি বলেন, “জুলাই-অগাস্টে সবচেয়ে বড় গণহত্যা হয়েছিল রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায়। আহত অবস্থায় পড়ে থাকার পরেও ব্রাশ ফায়ার করা হয়।
“প্রায় ৪ শতাধিক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে যাত্রাবাড়ী এলাকায়। সেই হত্যাকাণ্ডে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি আবুল হাসান।”
হাসানের সঙ্গে আরো বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার জড়িত থাকার বিষয়টি তলে ধরে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলি বলেন, “এর মধ্যে ওসি (তদন্ত) জাকির একজন। তাঈম নামে একজন যুবককে আহত অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার সময় ঠাণ্ডা মাথায় গুলি করা হয়। পরবর্তীতে তাকে আবারও নির্যাতন করে হত্যা নিশ্চিত করা হয়।”
এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে আগেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছিল উল্লেখ করে তাজুল বলেন, সাবেক ওসি আবুল হাসানকে আগে গ্রেপ্তার করা হয়; আজ তাকে ট্রাইব্যুনালে উপস্থিত করা হয়।
গত ৪ ডিসেম্বর শিক্ষার্থী ইমাম হাসান তাইম হত্যা মামলায় সাবেক ওসি হাসানকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। পাশাপাশি তাকে এদিন ট্রাইব্যুনালে হাজির করারও নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত ২০ জুলাই তিনি যাত্রাবাড়ী এলাকায় ‘গুলিতে নিহত হন’ তাইম; নারায়ণগঞ্জ সরকারি আদমজী নগর এম ডব্লিউ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন তাইম।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, “বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মধ্যে গত ২০ জুলাই দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ওই সময় তাইম তার দুই বন্ধুর সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় চা খেতে যান। আন্দোলনকারীরা তখন সেখানে বিক্ষোভ করছিল। তখন ডিসি ইকবাল হোসেনের নির্দেশে বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও গুলি চালানো হয়।
“ওই সময় আন্দোলনকারীরা প্রাণভয়ে ছুটোছুটি শুরু করেন। তাইম ও তার দুই বন্ধু চায়ের দোকানে ঢুকে শাটার টেনে দেয়। কিন্তু শাটারের নিচের দিকে আধা হাত খোলা ছিল। সেখানে অবস্থানকারীদের পুলিশ টেনে বের করে। তখন সবার আগে দৌঁড় দিলে তাইমকে গুলি করা হয়। বিনা চিকিৎসায় তাইম সেখানেই মারা যান।”
সরকার পতনের পর গত ২০ অগাস্ট তাইমের মা পারভীন আক্তার এ মামলা দায়ের করেন।
সেখানে পুলিশের ওয়ারী বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, যাত্রাবাড়ী থানার ওসি আবুল হাসানসহ পাঁচজনকে আসামি করা হয়।
এই মামলায় সাবেক ওসি হাসনাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করা হয় গত ১৬ সেপ্টেম্বর।
আরো পড়ুন:
গণহত্যা মামলা: যাত্রাবাড়ী থানার সাবেক ওসি হাসান ট্রাইব্যুনালে
'গণহত্যা': ট্রাইব্যুনালে তোলা হচ্ছে মামুন-জিয়াউলসহ আরও ৮ আসামিকে