এর আগে তারা কলকাতা গিয়েছিলেন।
Published : 01 Jun 2024, 03:41 PM
সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার তদন্তে নেপালের রাজধানী কাঠমাণ্ডু গেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল।
শনিবার সকালে ডিএমপির ডিবি প্রধান হারুন অর রশীদের নেতৃত্বে তিন সদস্যের দলটি ঢাকা ছাড়ে।
রওনা হওয়ার আগে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, “ইদানীং বাংলাদেশের অনেক সন্ত্রাসী কাঠমাণ্ডুকে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে (আনার হত্যার) যে মদদদাতা শাহীন- সেও আমরা দেখেছি যে, কাঠমাণ্ডুর মাটিকে ব্যবহার করে সে অন্য দেশে চলে গেছে। আরও অন্যান্য আসামি সম্পর্কে কিন্তু আমরা এইরকম তথ্য পাচ্ছি। এছাড়া আগেও অনেক শীর্ষ সন্ত্রাসীকে আমরা দেখেছি ওইখানে থাকে। তদন্তের কাজেই মূলত আমরা কাঠমাণ্ডু যাচ্ছি। তদন্তের আমরা নেপাল পুলিশের সহযোগিতা চাই।
“এরকম অনেক আসামি তারা কাঠমাণ্ডুকে রুট হিসেবে ব্যবহার করে, সেখানে থাকে। এসকল তথ্য কালেকশন করা, তারপরে কাঠমাণ্ডু পুলিশের সাথে যোগসূত্র এবং ইন্টারেকশন করা, যাতে ভবিষতে কোনো আসামি বাংলাদেশে অপরাধ করে সেখানে ঠাঁই না পায়।”
ঝিনাইদহ-৪ আসনের তিনবারের সংসদ সদস্য আনার কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। গত ১১ মে তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যান। প্রথমে কলকাতার বরাহনগরে তার বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে ওঠেন। কিন্তু সেখান থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন।
এরপর স্থানীয় থানায় জিডি করেন গোপাল বিশ্বাস। তদন্ত শুরু হয় দুই দেশে। ২২ মে সকালে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে খবর আসে, নিউ টাউনের এক বাড়িতে খুন হয়েছেন এমপি আনার। এর পরেই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ভারতের পুলিশের বরাত দিয়ে হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
কাঠমাণ্ডু যাওয়ার আগে ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, “ঝিনাইদহের মাননীয় সংসদ সদস্য- ওনার হত্যাকাণ্ডের কয়েকজন আসামি কাণ্ডমন্ডুতে গিয়ে কেউ চলে গেছে, কেউ থাকতে পারে। সেই বিশ্বাসে আমরা সেখানে যাচ্ছি। ইন্টারপোলকে আমরা চিঠি দিয়েছি, ইন্টারপোলের মাধ্যমে আমরা কাঠমন্ডু পুলিশকে আমরা জানিয়েছি, এখানে সিয়ামসহ বেশ কয়েকজন আসামি-তারা কেউ চলে গেছে, কেউ আছে।
আনার হত্যা: গ্রেপ্তাররা আরও ৫ দিনের রিমান্ডে
“এই বিষয়গুলি তাদেরকে আমরা অবহিত করেছি এবং তারা যদি থাকে- তাদেরকে যেন তারা গ্রেপ্তার করে; এটা আমরা অনুরোধ করছি। তারই ধারাবাহিকতায় মামলাটার তদন্তের অগ্রগতি করার জন্যই মূলত আমরা সেখানে যাচ্ছি।”
আনার হত্যার ঘটনাস্থল হিসেবে কলকাতার নিউটাউনের যে ভাড়া বাড়ির কথা বলা হচ্ছে, এর আগে সেই সঞ্জিভা গার্ডেনসেও তদন্তের কাজে গিয়েছিল অতিরিক্ত কমিশনার হারুনের নেতৃত্বে ডিবির একটি দল।
পুলিশ বলছে, এমপি আনার হত্যার ‘হোতা’ তার বাল্যবন্ধু ও ঝিনাইদহের যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আখতারুজ্জামান ওরফে শাহীন মিয়া। আর হত্যাকাণ্ডটি বাস্তবায়ন করেছেন চরমপন্থি নেতা আমানুল্লা ওরফে শিমুল। আনার কলকাতায় যাওয়ার পরদিন বৈঠক করার জন্য শাহীনের ভাড়া বাসায় যান। সেখানেই আসামিরা তাকে হত্যা করে।
আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন ২২ মে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন, যেখানে তার বাবাকে ‘হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণের’ অভিযোগ আনা হয়। তবে আসামি হিসেবে সেখানে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।
ওই মামলায় গ্রেপ্তার আমানুল্লা ওরফে শিমুল ভুঁইয়া, তানভীর ভুঁইয়া ও সেলেস্টি রহমানকে দুই দফায় ১৩ দিনের রিমান্ডে পেয়েছে ডিবি পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর ডিবি কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ গত ২৪ মে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, সংসদ সদস্যকে হত্যার পর শরীরের বিভিন্ন অংশ টুকরো করে হলুদ লাগিয়ে ছিটিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে তারা জানতে পেরেছেন। ফলে লাশ উদ্ধার করা কঠিন।
তদন্তের এক পর্যায়ে জিহাদ হাওলাদার নামের এক কসাইকে গ্রেপ্তার করে পশ্চিমবঙ্গের সিআইডি। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী তাকে নিয়ে কয়েকটি খাল, জঙ্গলে ব্যপক তল্লাশি চালিয়েও আনারের লাশের হদিস মেলাতে পারেনি কলকাতা পুলিশ।
জিজ্ঞাসাবাদে সিআইডিকে জিহাদ বলেছেন, শাহীনের নির্দেশেই তিনি ‘সব কাজ’ করেছেন। আরও চার জন বাংলাদেশি এই কাজে সাহায্য করেছেন।
ভারতীয় গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল বাংলাদেশে এসে ২৪ মে ঢাকায় গ্রেপ্তার তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে যান। এরপর ২৫ মে কলকাতায় যান হারুন অর রশীদসহ ডিবির তিন কর্মকর্তা।
তারাও কসাই জিহাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন এবং তাকে নিয়ে সঞ্জিভা গার্ডেনসে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
গত মঙ্গলবার ঢাকার পুলিশ কমিশনার হাবিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, ভারতে অবস্থানরত ডিবির কর্মকর্তাদের সঙ্গে সঞ্জিভা গার্ডেনসে সেফটিক ট্যাংকে মাংসের টুকরা উদ্ধারের বিষয়ে কথা হয়েছে।
“সেখানে সঞ্জিভা গার্ডেনসের সেপটিক ট্যাংকের মধ্যে কিছু মাংস পাওয়া গেছে। সেটা সংসদ সদস্য আনারের না অন্য কিছু, তা ডিএনএ পরীক্ষা না করে তা নিশ্চিত হওয়া যাবে না।”
বৃহস্পতিবার কলকাতা থেকে ফিরে ডিবির হারুনও ডিএনএ পরীক্ষা পর্যন্ত অপেক্ষা করার কথা বলেন।
খুঁজে পাওয়া মাংসের টুকরাগুলোর সঙ্গে ডিএনএ মিলিয়ে দেখতে আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিনকে ভারত নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ভিসার অপেক্ষায় রয়েছেন তিনি।
শাহীন যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, বৃহস্পতিবার বিমানবন্দরে জানতে চাইলে ডিবির হারুন বলেছিলেন, “শাহীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরাতে ভারতের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্দিবিনিময় চুক্তি না থাকায় ভারতের মাধ্যমে তাকে ফেরানোর চেষ্টা হচ্ছে।”
ওই দিনই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রানধির জেসওয়াল সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বলেছিলেন, এ তদন্তে বাংলাদেশকে ‘পূর্ণ সহায়তা’ দেওয়া হবে।
“ভারত উভয় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এক্ষেত্রে সমন্বয় করছে এবং প্রয়োজনীয় তথ্য আদানপ্রদান করছে। চলমান তদন্তের অংশ হিসাবে আমাদের দিক থেকে সরকার বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষকে পূর্ণ সহায়তা দিচ্ছে।”
আরও পড়ুন: