“এই ১৬ বছরে আমি জেল খেটেছি, আদালতে এসেছি; কিন্তু যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তা প্রমাণ করতে পারেনি,” বলেন তিনি।
Published : 28 Nov 2024, 04:45 PM
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের করা মামলায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেনসহ তিনজনকে খালাস দিয়েছে আদালত।
বৃহস্পতিবার এ রায় ঘোষণা করেন ঢাকার প্রথম বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবুল কাশেম।
খালাস পাওয়া অন্যরা হলেন- খন্দকার মোশাররফের ছেলে খন্দকার মাহবুব হোসেন ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সাবেক লাইন ডিরেক্টর মাহবুবুর রহমান।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “মিথ্যা ও বানোয়াট একটি মামলা দায়ের করা হয়েছিল। এর কোনো ভিত্তি নেই। এই মামলা ১/১১ এর সময় করা হয়েছিল।
“এই ১৬ বছরে আমি জেল খেটেছি, আদালতে এসেছি; কিন্তু যে অভিযোগ আনা হয়েছিল তা প্রমাণ করতে পারেনি। যার কারণ আদালত আজ খালাস দিয়েছে।”
সাবেক এ স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাকে রাজনীতি থেকে সরাতে চেয়েছিল শেখ হাসিনা; যার কারণে আমাকে হয়রানি করার জন্য এসব মামলা করেছে।
“বিগত সময়ে বিভিন্ন মামলা দিয়ে হয়রানি করেছে। এখন তারাই দেশ থেকে পালিয়েছে।”
বিএনপি নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, “শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়েছে। এদেশে কোনো স্বৈরাচার দেশ থেকে পালায়নি।
“এরশাদও স্বৈরাচার ছিল, কিন্তু তাকে দেশ থেকে পালাতে হয়নি। কিন্তু তারা দেশ থেকে পালিয়েছে। তারা কত দুর্বল।”
২০০৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর গুলশান থানায় মামলাটি করেন দুদকের তৎকালীন উপ-সহকারী পরিচালক লুৎফর রহমান।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, আসামিরা ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন ও বিশ্ব ব্যাংকের প্রকল্পভুক্ত বিদেশে গমনেচ্ছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে উড়োজাহাজের টিকেট সরবরাহের বিষয়ে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টেন্ডারের মাধ্যমে সরকারের ৪৮ লাখ ৫১ হাজার ৮০ টাকা ক্ষতি করে নিজেরা লাভবান হন।
এই মামলার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আসামিরা হাই কোর্টে রিট আবেদন করলে শুনানি শেষে রুল ও মামলার কার্যক্রমে স্থগিতাদেশ দেয় আদালত। দীর্ঘদিন পর ২০১৬ সালের ১৮ জুলাই উচ্চ আদালত থেকে রুল খারিজ করে আদেশ দিলে মামলার কার্যক্রম ফের শুরু করে দুদক।
২০১৭ সালের ১২ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেয় আদালত।
তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে একটি কর্মসূচির আওতায় ২০০৫-০৬ অর্থবছরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশ ভ্রমণের অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিশ্ব ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, কর্মকর্তা-কর্মচারী টিকেট কিনে চেকের মাধ্যমে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে অর্থ গ্রহণ করার কথা ছিল। কিন্তু তৎকালীন লাইন ডিরেক্টর মাহবুবুর রহমান ওই নির্দেশনা ও পিপিআর ভঙ্গ করে রিটার্ন টিকেট কিনতে দরপত্র আহ্বান করেন।
পরবর্তীতে সাজানো প্রক্রিয়ায় ১৪টি রুটের মধ্যে মেসার্স কম্বাইন্ড ট্রাভেলন্স ইন্টারন্যাশনালকে ১ থেকে ৭ নম্বর রুট ও খন্দকার মাহবুব হোসেনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানকে ৮ থেকে ১৪ নম্বর রুটের টিকেটের কার্যাদেশ দেওয়া হয়।
এরপর খন্দকার মাহবুব হোসেন মেসার্স কম্বাইন্ড ট্রাভেলসের মালিক সোহরাব উদ্দিনকে দিয়ে জনতা ব্যাংকের তোপখানা শাখায় একটি হিসাব খোলেন, যার আবেদনপত্রে খন্দকার মাহবুব হোসেন স্বাক্ষর করেন বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে।
তদন্তের সময় ব্যাংক হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ২০০৬ সালের ২৩ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে টিকেটের জন্য কম্বাইন্ড ট্রাভেলসের ব্যাংক হিসাবে ৩১ লাখ ২৬ হাজার ৪০০ টাকা জমা দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিন সেই অর্থ খন্দকার মাহবুব হোসেনের স্বজন ট্রাভেলসের হিসাবে সরিয়ে নেওয়া হয়।
পরে ১৪ রুটে ৩৬৪টি টিকেট সরবরাহের জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে দেওয়া মোট এক কোটি ৭৬ লাখ ৪২১ হাজার ৫০৭ টাকার পুরোটাই খন্দকার মাহবুব হোসেন গ্রহণ করেন বলে তদন্ত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল।
কিন্তু বিভিন্ন এয়ারলাইন্স থেকে সংগ্রহ করা তথ্য অনুযায়ী, সে সময় টিকেটের মূল্য হওয়ার কথা এক কোটি ২৭ লাখ ৩৩ হাজার ৬৯৯ টাকা। অবৈধভাবে কার্যাদেশ দেওয়ার মাধ্যমে এতে সরকারের ৪৯ লাখ ৭ হাজার ৮০৮ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল।