সন্দ্বীপের লোকজন ‘সিএস ও আরএস জরিপের’ ভিত্তিতে আর হাতিয়ার লোকজন ‘দিয়ারা জরিপের’ ভিত্তিতে ভাসানচরকে নিজেদের সীমানার মধ্যে দাবি করছেন।
Published : 17 Apr 2025, 08:43 PM
বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা ভাসানচর দ্বীপ সন্দ্বীপের বলে চট্টগ্রাম জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয় যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, সেটি বাতিল চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিস পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার ‘নিরাপদ নোয়াখালী চাই’ সংগঠনের সভাপতি সাংবাদিক সাইফুর রহমান রাসেলের পক্ষে আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নীলু এ নোটিস পাঠান।
এতে বলা হয়, ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের অনুমোদনে ২০১৬-১৭ সালের দিয়ারা জরিপে নবসৃষ্ট ভাসানচর অংশটি সঠিকভাবে হাতিয়া উপজেলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল প্রকাশিত গেজেটে ভাসানচর অংশের ছয়টি মৌজা নোয়াখালীর হাতিয়ার অন্তর্ভুক্ত। আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তি করেই এই কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, যা মীমাংসিত।
“অতএব গত ২৩ মার্চ চট্টগ্রাম জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয় ভাসানচরকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপলোর অন্তর্ভুক্ত করে যে প্রতিবেদন দিয়েছে, তা ‘পক্ষপাতদুষ্টু ও ষড়যন্ত্রমূলক কার্যক্রম’।
নোটিস পাওয়ার পর ওই প্রতিবেদেনের সিদ্ধান্ত বাতিল করা নাহলে হাই কোর্টে রিট আবেদন করার কথাও বলা হয়েছে।
২০১৬-১৭ সালের দিয়ারা জরিপ অনুসারে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরে জেগে ওঠা চর ‘ভাসানচরকে’ নোয়াখালী জেলার ভাসানচরের অধিভুক্ত করা হয়। ওই চরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের রাখা হয়েছে।
জেগে ওঠা ওই চরকে সন্দ্বীপের বলে দাবি করেন সেখানকার লোকজন। তারা আরএস ও সিএস জরিপের ভিত্তিতে ভাসানচরের বেশিরভাগ অংশ অতীতে দ্বীপটির ভেঙ্গে যাওয়া অংশ বলে দাবি করেন। ফলে ভাসানচর নিয়ে তৈরি হয়েছে বিরোধ।
এ নিয়ে এর আগে চট্টগ্রাম জোনাল সেটেলমেন্ট অফিসারের কার্যালয়ের একটি প্রতিবেদনে দ্বীপটিকে সন্দ্বীপের বলে তুলে ধরে হয়। ওই প্রতিবেদন পর্যালোচনার বরাতে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. সাদি উর রহিম জাদিদের দেওয়া প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধপূর্ণ ভাসানচরে (স্থানীয় ভাষায় ঠেঙ্গার চর) সিএস, আরএস এর মৌজা ম্যাপ জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে ‘পেন্টাগ্রাফ’ করে দেখা যায়, চরটি চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্ভুক্ত। প্রকৃতপক্ষে বিরোধপূর্ণ ভাসানচর সন্দ্বীপ উপজেলার অন্তর্ভুক্ত।
জেগে ওঠা দ্বীপটি নিয়ে বিরোধে এর আগে উচ্চ আদালতে একটি রিট আবেদনও করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর দুই পক্ষের বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে দায়িত্ব দেয়।
এরপর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নুরীকে প্রধান করে ১৯ সদস্যের একটি কমিটি করা হয়। আন্তঃজেলা সীমানা বিরোধ নিষ্পত্তির এই কমিটিতে নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম জেলার সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্তাব্যক্তি ছাড়াও উভয় উপজেলার তিনজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়।
ইতোমধ্যে উভয়পক্ষের যুক্তি ও দাবিদাওয়া শুনেছে বিরোধ নিষ্পত্তির কমিটি। গত ১০ এপ্রিল চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত সভায় উভয়পক্ষের কথা শুনে কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. নুরুল্লাহ নুরী বলেন, আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যেই বিরোধের ফয়সালা হতে পারে।
চট্টগ্রামে ওই সভায় সন্দ্বীপের পক্ষে কথা বলেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সালেহ নোমান। আর নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার পক্ষে এনসিপি নেতা আবদুল হান্নান মাসউদসহ অন্যরা যুক্তি তুলে ধরেন।
সভার পর চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার নুরুল্লাহ নুরী বলেন, “আর কোনো সভা হবে না। জেলা প্রশাসকদ্বয়ের পাঠানো প্রতিবেদন ও অন্যান্য জরিপের তথ্য পর্যালোচনা করে আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে আমাদের প্রতিবেদন দাখিল করব। এ প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভাসানচর কাদের হবে, সে সিদ্ধান্ত হতে পারে।”
তবে ভাসানচর নিয়ে সেই আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। এর মধ্যেই আগের একটি প্রতিবেদন বাতিলে আইনি নোটিস পাঠানো হল।
আরও পড়ুন-