“দুষ্কৃতকারীরা নানা কূটচালে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তা হতে দেওয়া যাবে না, আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে”, বলেন উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
Published : 03 Oct 2024, 08:07 PM
বাঙালি হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবে বিশৃঙ্খলা রোধে এবার স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের ঘোষণা দিল মহিলা ও শিশু বিষয়ক এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়। দুটি মন্ত্রণালয়ে যৌথভাবে ৮৪ হাজার জনকে দায়িত্ব দেবে বলে জানানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এ কথা জানান।
তিনি বলেন, “আমরা মুসলমান, হিন্দু, খ্রিষ্টান বা বৌদ্ধ বলে আর বিভেদ সৃষ্টি করতে দিতে পারি না। আমরা পূজা মণ্ডপগুলো নজরদারি করব, যদিও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যাপক নজরদারি করছে।
“আসন্ন শারদীয় দুর্গা পূজা আনন্দঘন পরিবেশে নিরাপদে উদ্যাপনের লক্ষ্যে সারা দেশে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৮৪ হাজার কর্মী বাহিনী ৩২ হাজার পূজা মণ্ডপে শুক্রবার থেকে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করবে।”
শারমীন মুরশিদ সমাজকল্যাণের পাশাপাশি মহিলা ও শিশু বিষয় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বেও আছেন।
দুই মন্ত্রণালয়ের কর্মীরা মণ্ডপগুলোতে ২৪ ঘণ্টাই দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানান উপদেষ্টা। বলেন, ৮ ঘণ্টা করে ৩ শিফটে কর্মীদের মোতায়েন করা হবে। এ জন্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সব দপ্তর ও সংস্থাকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
পুরো বিষয়টি তদারকির জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে একটি নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। ১০৯৮ নম্বরে ফোন করে তথ্য দেওয়া যাবে বলেও জানানো হয় সংবাদ সম্মেলনে।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিভিন্ন স্থানে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদের বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলার মধ্যে দুর্গাপূজার প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে। বিভিন্ন এলাকায় মণ্ডপে হামলা ও প্রতিমা ভাঙচুরের খবরও আসছে।
বুধবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে র্যাবের মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেছেন, “পূজাকে ঘিরে একটু উসকানি আছে। কেউ কেউ বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু আমরা অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে বলতে চাই, আমরা প্রত্যেকটি বিষয়কে অত্যন্ত সচেতনভাবে দেখব যাতে কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে।”
এর মধ্যেই আগামী ৯ অক্টোবর থেকে পূজার প্রস্তুতি এগিয়ে চলেছে। বিএনপিও মণ্ডপে স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েনের জন্য তাদের বিভাগীয় কমিটিকে নির্দেশ দিয়েছে।
সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, দুই মন্ত্রণালয়ের সব দপ্তর ও সংস্থার সদর কার্যালয়েও নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যা ৪ থেকে ১৩ অক্টোবর ২০২৪ পর্যন্ত চালু থাকবে।
“এছাড়া সব কর্মকর্তা-কর্মচারীর পূজাকালীন সময়ে ছুটি বাতিল করার জন্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল দপ্তর-সংস্থাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।”
পূজা মণ্ডপে হামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে উপদেষ্টা বলেন, “ঢাকাসহ কিছু জায়গায় মণ্ডপে হামলা হয়েছে, যারা এর সঙ্গে জড়িত ছিল, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের আটক করেছে। আমাদের এ ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। দুষ্কৃতকারীরা নানা কূটচালে আমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। তা হতে দেওয়া যাবে না, আমাদের সবাইকে সচেষ্ট হতে হবে।”
মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমা মোবারেক জানান, এরই মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে ২৭ হাজার ৮২৮ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সালেহ্ মোস্তফা কামাল বলেন, সারা দেশে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ১ হাজার ৮৯টি অফিস রয়েছে। আরও ৭০ হাজার স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রয়েছে। তারা স্বপ্রণোদিত হয়ে পূজা মণ্ডপে দায়িত্ব পালন করবে।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রেখা রানী বালো বলেন, “এবার সরকার পূজায় যে পদক্ষেপ নিচ্ছ তা সত্যি সুখকর। তবে নিরাপত্তা যেন না দিতে হয়, আমরা সেই বাংলাদেশ চাই। সেই শান্তি যেন আসে।”