“নিবন্ধন বিধিমালা সহজ করার সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এর আগেই গণবিজ্ঞপ্তি দেওয়া ঠিক হয়নি”, মনে করেন রিটকারী আইনজীবী।
Published : 17 Mar 2025, 07:20 PM
রাজনৈতিক দল নিবন্ধনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) জারি করা গণবিজ্ঞপ্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন হয়েছে।
বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরী ও বিচারপতি কেএম রাশেদুজ্জামান রাজার দ্বৈত হাই কোর্ট বেঞ্চে চলতি সপ্তাহে এ আবেদনের শুনানি হতে পারে।
রিট আবেদনে নির্বাচন কমিশন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবকে বিবাদী করা হয়েছে।
রিট আবেদনটি করেছেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসনাত কাইয়ুম।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “কেন গণবিজ্ঞপ্তি বাতিল করা হবে না, এ মর্মে রুল জারির আর্জি জানানো হয়েছে।”
হাসনাত কাইয়ুম বলেন, “রাজনৈতিক দল নিবন্ধন বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী ইসি এ গণবিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। এটি করা হয় বিগত সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে, যা সংশোধন করে আরও কঠোর করে বিগত আওয়ামী লীগ সরকার।
“নির্বাচনসংক্রান্ত সংস্কার কমিশন এ বিধিমালা সংশোধন করে সহজ করার সুপারিশ করেছে। কিন্তু তার আগেই গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে; এটা ঠিক হয়নি। এছাড়া গণবিজ্ঞপ্তিতে ২২ জেলা ও ১০০ উপজেলায় কমিটি থাকার কথা বলা হয়েছে। এ ধরনের শর্তের কারণে আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে রাজনীতির বাইরে থাকতে হবে।”
গত ১০ মার্চ এ গণবিজ্ঞপ্তি দেয় নির্বাচন কমিশন।
সেদিন আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইসির জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, “নতুন দল নিবন্ধনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। নতুন যারা রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধিত হতে চান, তারা আগামী ২০ এপ্রিল পর্যন্ত নির্ধারিত শর্ত পূরণ করে আমাদের কাছে আবেদন করতে পারবেন।”
যেভাবে নিবন্ধন
ইসি কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান আইন-বিধি অনুযায়ী ১০টি তথ্য আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে। নিবন্ধন ফি হিসেবে দিতে হবে ৫ হাজার টাকা, যা অফেরতযোগ্য।
দলীয় প্যাডে দরখাস্তের সঙ্গে দলের গঠনতন্ত্র, নির্বাচনী ইশতেহার (যদি থাকে), দলের বিধিমালা (যদি থাকে), দলের লোগো ও দলীয় পতাকার ছবি, দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সব সদস্যের নামের তালিকা, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও সর্বশেষ স্থিতি, তহবিলের উৎস, দল নিবন্ধনের আবেদনকারীর ক্ষমতাপত্র, নিবন্ধন ফি বাবদ অফেরতযোগ্য ট্রেজারি চালানের কপি এবং নিবন্ধনের তিনটি শর্তের মধ্যে যে কোনো একটি পূরণের প্রমাণ জমা দিতে হবে।
নিবন্ধনের শর্ত
গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুযায়ী, কমিশনের তিনটি শর্তের মধ্যে একটি পূরণ হলে একটি দল নিবন্ধনের যোগ্য বিবেচিত হয়।
১. দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যে কোনো জাতীয় নির্বাচনের আগ্রহী দলটি যদি অন্তত একজন সংসদ সদস্য থাকেন।
২. যে কোনো একটি নির্বাচনে দলের প্রার্থী অংশ নেওয়া আসনগুলোতে মোট প্রদত্ত ভোটের ৫ শতাংশ পায়।
৩. দলটির যদি একটি সক্রিয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়, দেশের কমপক্ষে এক তৃতীয়াংশ [২১টি] প্রশাসনিক জেলায় কার্যকর কমিটি এবং সদস্য হিসেবে অন্তত ১০০টি উপজেলা/মেট্রোপলিটন থানায় প্রত্যেকটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটারের সমর্থন সম্বলিত দলিল থাকে।
নতুন দলের নিবন্ধন পেতে তৃতীয় শর্তটি পূর্ণ করতে হবে। ১ ও ২ নম্বর শর্ত নতুন দলের পূরণের সুযোগও নেই।
২০০৮ সালে এটিএম শামসুল হুদা কমিশন আইনি সংস্কার এনে নিবন্ধন প্রথা চালু করে। তাতে তিনটি নিবন্ধন শর্ত দেওয়া হয়। ভোটে নিবন্ধিত দলগুলোকেই অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়।
সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক। সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বাইরে অন্যদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হয়।
ক্ষমতার পালাবদলের পর এক ডজনের বেশি নতুন দলের আবির্ভাব হয়েছে রাজনীতির মাঠে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় রয়েছে অভ্যুত্থানের ছাত্রনেতাদের সামনে রেখে আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
নবম সংসদ নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালে নিবন্ধন প্রথা চালু হয়। এ পর্যন্ত ৫৪টি দল ইসির নিবন্ধন পেলেও পরে শর্ত পূরণ না হওয়া, শর্ত প্রতিপালনে ব্যর্থতা এবং আদালতের নির্দেশে পাঁচটি দলের (জামায়াতে ইসলামী, ফ্রিডম পার্টি, ঐক্যবদ্ধ নাগরিক আন্দোলন, পিডিপি ও জাগপা) নিবন্ধন বাতিল করা হয়।