বন্যার মূল কারণ ভারি বৃষ্টিপাত, বলেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব।
Published : 22 Aug 2024, 07:53 PM
দেশের অন্তত ১০টি জেলা জুড়ে চলমান ভয়াবহ বন্যায় দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য সকল উপদেষ্টাকে আহ্বান জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মোহাম্মদ ইউনূস।
বৃহস্পতিবার বিকালে সাংবাদিকদের এ কথা জানান প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
তিনি বলেন, “কেবিনেট মিটিং হয়েছে বন্যা নিয়ে। আমি সেখানে ছিলাম। সেখানে এক্সটেনসিভ ডিসকাশন হয়েছে। সেখানে স্যার সবাইকে বলেছেন যে, বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান।
“অলরেডি আপনারা সবাই জানবেন যে, ত্রাণ এবং দুর্যোগ মন্ত্রণালয় যিনি দেখেন, ফারুক-ই-আজম, উনি উনার সেক্রেটারিসহ অলরেডি ফেনীর উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। উনারা সেখান থেকে দেখবেন। আরও অনেক অ্যাডভাইজার যাবেন।”
প্রেস সচিব বলেন, “আমরা জেনেছি ১০টি জেলায় ৩৬ লাখের বেশি মানুষ বন্যা কবলিত। এই ৩৬ লক্ষ লোকের কাছে ত্রাণ পৌঁছানোর চ্যালেঞ্জ আমরা নিয়েছি।
“আমাদের প্রধান উপদেষ্টা সার্বক্ষণিক মনিটরিং করছেন যে কোথায় কী হচ্ছে, কোথায় কী করা যায়। এখন পর্যন্ত দুইজন মারা গেছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। এখনও আমাদের কাছে মিসিংয়ের কোনো ফিগার নাই।”
বন্যার মূল কারণ ভারি বৃষ্টিপাত উল্লেখ করে শফিকুল আলম বলেন, “বন্যা নিয়ে অনেকগুলো রিপোর্ট এসেছে। আমি বলব, এটার মূল যে জিনিসটা, আমি ওয়েদার অফিস এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা বলেছি, মূল জিনিসটা হচ্ছে কয়েক দশকের মধ্যে এটা সবচেয়ে সাসটেইনেবল রেইনফল ছিল।
“যেটা ১৬ তারিখে শুরু হয়েছে, আজকেও আছে, কালকেও হবে এবং আবহাওয়া কর্মকর্তাদের কথা অনুযায়ী, পরশু দিন থেকে একটু বৃষ্টি কমবে। ২৬ তারিখের মধ্যে বৃষ্টিটা কমে যাওয়ার কথা।"
তিনি বলেন, “অনেকগুলো কারণ উঠে এসেছে বন্যা হওয়ার। তার মধ্যে আরেকটি কারণ হচ্ছে, ওই এলাকায় (ফেনী) বন্যা কিন্তু খুব কম হয়। ফলে, ওই এলাকায় নদীগুলো একদম সিল্টেড (ভরাট) হয়ে গেছে। পুকুর-টুকুর যেগুলো আছে, সেগুলোও সিল্টেড। পুরো পানিটা দ্রুত নেমে অনেকগুলো জায়গা কবলিত হয়েছে।"
উপদেষ্টা পরিষদের সভা
এর আগে সকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে চলমান বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলা নিয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠক শেষে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণায় সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, “এটার ব্যাপারে সরকারের কী করণীয় এবং এ বন্যা পরিস্থিতিতে যারা ভুক্তভোগী তাদের জন্য কী করব এবং সরকারের মধ্যে কী করে সমন্বয় করব, একই সাথে এ বন্যার কারণ কী, ভবিষ্যতে এ রকম বন্যা বলা হচ্ছে ফেনীতে নজিরবিহীন সেটা এড়িয়ে চলতে আমরা কী করতে পারি- এসব নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
“আমাদের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বন্যা উপদ্রুত সবকটি জেলাতেই উপদেষ্টা মণ্ডলীর সদস্যরা যাবেন। ইতোমধ্যে ত্রাণ উপদেষ্টা আজকেই যাচ্ছেন ফেনীতে। ঠিক দুর্যোগ আক্রান্ত জায়গায় এখনও পৌঁছানো যাচ্ছে না। যত নিকটে সম্ভব তত নিকটে পৌঁছে ত্রাণ কাজে সমন্বয় করার চেষ্টা করবেন।“
রিজওয়ানা বলেন, “আমাদের মধ্যেও সমন্বয় রাখতে হবে। ত্রাণ, পানি, কৃষি, মৎস্য-এসব বিষয়ে সর্বোচ্চ আলোচনা করা হয়েছে।“
যেসব সিদ্ধান্ত
রিজওয়ানা হাসান জানান, যতক্ষণ পর্যন্ত বন্যা উপদ্রুত মানুষের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করা না হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এটার পুনর্বাসনের পূর্ণ ব্যবস্থা না হবে-ততক্ষণ পর্যন্ত এটা নজরদারিতে থাকবে।
আন্দোলনে যারা আহত-নিহত হয়েছেন তাদের ব্যাপারে একটা ফাউন্ডেশন হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এর প্রধান থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা। সদস্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকবেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা।
“ফাংশন হবে মূলত আহত নিহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও এ গণঅভ্যুত্থানের স্মৃতি ধরে রাখা, যাতে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম জানতে পারে আসলে কী হয়েছিল।”
একটা নামকরণের নীতিমালা করার সিদ্ধান্তও হয় বৈঠকে।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা বলেন, “জনগণের টাকা ব্যয় করে কোনো প্রকল্প হয় বা কোনো স্থাপনা হয়-এটার নাকরণটা কী নীতি অনুসরণ করে করা সম্ভব সেটার ব্যাপারে কাজ করব। এক পর্যায়ে এটা আইনি কাঠামোর মধ্যে আনতে হবে।
“জনগণের টাকায় যেটা হয়, সেটার এমন কোনো নামকরণ হয়, যেটা কোনোভাবে ফ্যাসিবাদকে উসকে দিতে না পারে এবং জনমতের প্রতিফলন সেখানে যেন ঘটে।”
নিখোঁজ মানুষদের বিষয়ে একটি কমিশন করার সিদ্ধান্ত হওয়ার কথাও জানান উপদেষ্টা। এর সম্ভাব্য নাম ঠিক করা হয়েছে ‘কমিশন অন এনফোর্স ডিসঅ্যাপিয়ারেন্স’।
যারা বিভিন্ন সময়ে ‘গুম’ হয়েছে, সে গুমের জন্য কারা দায়ী, সে জিনিসগুলো তদন্ত করে দেখবে এ কমিশন।
অপরাধীদের বিচারে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত এবং মানবাধিকার সমুন্নত রেখে আইনগত প্রক্রিয়া চালানোর জন্য কী কী করা যেতে পারে, সে জন্য আইন ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বসবেন বলেও জানান রিজওয়ানা।
নানা দাবিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতিবাদের বিষয়ে রিজওয়ানা বলেন, প্রতিবাদের কারণে যাতে জনজীবনের যেন অসুবিধার সৃষ্টি না হয় সেটা নিশ্চিতের চেষ্টা করবেন তারা। প্রতিবাদটা কোথায় ও কেমন করে হলে ভালো হয়, তাদের মুখপাত্রের সঙ্গে সরকারের মুখপাত্র বসে আলোচনা করে যেন একটা সমাধানেও যাওয়া যায়, তার একটা উপায় বের করা হবে।
উপকূলীয় এলাকায় কোনো বিদেশি যেন মাছ ধরতে আসতে না পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে কোস্টগার্ডকে বলে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।