জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে গত সরকার যে গতিপথ তৈরি করেছিল তা পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
Published : 05 Feb 2025, 06:44 PM
অন্তর্বর্তী সরকারে তিনটি ‘ভুল পদক্ষেপ’ তুলে ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেছেন, বর্তমানে পুরনো সময়েরই ধারবাহিকতা চলছে।
তিনি বলেছেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের তিনটা ভুল পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে। এ তিনটা থেকে যে বার্তা পাচ্ছি, বাংলাদেশের জন্য তা মোটেও শুভকর না। পুরনো সময়েরই একটা ধারবাহিকতা চলছে।”
বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) আয়োজিত ‘কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র: অভিজ্ঞতা কি বলে?’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তব্য দিচ্ছিলেন আনু মুহাম্মদ।
কুইক রেন্টাল আইন বাতিলের গেজেটের একটি শর্ত, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাতিলের বিপক্ষে সরকারে অবস্থান এবং দরপত্র ছাড়াই সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের একটি কোম্পানি সঙ্গে এলএনজি আমদানির চুক্তিকে সরকারের তিনটি ‘ভুল পদক্ষেপ’ হিসেবে তুলে ধরেন তিনি।
গত ২৮ নভেম্বর ‘বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (কুইক রেন্টাল) আইন, ২০১০’ বাতিল করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার।
তবে আইনটি বাতিল হলেও এর আওতায় সম্পাদিত চুক্তি বা চুক্তির অধীনে গৃহীত কোনো ব্যবস্থা বৈধভাবে সম্পাদিত বা গৃহীত হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
আনু মুহাম্মদ বলেন, “এটা আমরা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য মনে করি না। ওই চুক্তি অবশ্যই বাতিল করতে হবে।
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সরকারের অবস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “তারা (সরকার) পরিষ্কারভাবে বলছে, এ সমস্ত প্রকল্প বাতিল করা খুবই কঠিন। তার মানে তারা এগুলো বাতিল করবে না। উদ্যোগ নেওয়ার অনেক রকম উপায় আছে। সরকার কোনো চেষ্টা না করেই বলে দিচ্ছে, এটা বাতিল করা যাবে না। গত সরকারেরই ধারাবাহিকতা মনে হচ্ছে।”
বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গ বড় ধরনের একটি নন-বাইন্ডিং চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্রের আর্জেন্ট এলএনজি, যার আওতায় বছরে ৫০ লাখ টন তরলীকৃত গ্যাস সরবরাহ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
এ প্রসঙ্গ টেনে আনু মুহাম্মদ বলেন, “এটাতে গত সরকারের কার্বন কপি দেখতে পাচ্ছি। এলএনজির যেসব প্রকল্প বাংলাদেশে আছে, এমনিতেই আর্থিক বোঝা ভয়াবহ। নতুন একটা কোম্পানির সঙ্গে এ সরকারের প্রতিনিধি চুক্তি করেছে এলএনজি আমদানির জন্য, তাতে ওই কোম্পানির লাভ হবে। এলএনজি থেকে বের হতে হবে।
“এই চুক্তির জন্য কি কোনো টেন্ডার হলো? এ কোম্পানিকে কে বাছাই করল? কোম্পানি যে বাছাই করা হচ্ছে পুরাটাই শেখ হাসিনা আমলের ধরন। প্রথমে আমি ঠিক করব, তারপর চুক্তি করব, টেন্ডার হবে না। প্রার্থক্যটা কী হইল? ”
জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খাতে গত সরকার যে গতিপথ তৈরি করেছিল তা পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ অন্তর্বর্তী সরকারের মধ্যে দেখা যাচ্ছে না বলে মন্তব্য করেন তিনি।
“জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলার জন্য উপকূলটাকে আরও সুরক্ষিত রাখতে হবে। নদীর প্রবাহ বাড়াতে হবে। উন্নয়ন প্রকল্প এমনভাবে নিতে হবে যাতে নিজেদের শক্তি বাড়ে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তন বাড়াতে উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পানি, মাছ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। মানুষের শ্বাসের, লিভারের, স্নায়ুগত সমস্যা হচ্ছে, চর্মরোগ হচ্ছে।”
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “অর্থনৈতিক খরচের বিষয়টি বিশ্লেষণ করেও দেখা গেছে; স্থানীয় গ্যাস তুলে এনে সেটা দিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা…। কয়লা আমদানি করেও এটা করা উচিত না, এলএনজি আমদানি করেও এটা করা উচিত না। চেষ্টা করা উচিত অন্তত।
“আমাদের দরকার শুধু বিদ্যুৎ না, সাশ্রয়ী দামে বিদ্যুৎ দরকার এবং পরিবেশ বন্ধব বিদ্যুৎ।”
বাংলাদেশ পরিবেশ নেটওয়ার্কের (বেন) প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, “পায়রাতে কলাপাতাগুলো সব বিবর্ণ হয়ে গেছে, নারিকেল গাছে নারিকেল ধরে না, কৃষি কাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মহেশখালীতে পুরো দ্বীপ শঙ্কটের মুখে।”
এসব অভিজ্ঞতার আলোকে আগামীতে বাংলাদেশের জ্বালানি নীতিকে ঢেলে সাজাতে, কয়লা থকে সরে আসা, নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে গুরুত্ব দেওয়া, দেশের ভেতর জাতীয় সক্ষমতার অধীনে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান বাড়ানো, সারা দেশজুড়ে বিস্তৃত মাঝারি আকারের সরকারি এবং বেসরকারি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মাধ্যমে স্থায়িত্বশীল জ্বালানি ও বিদ্যুতের নিশ্চয়তার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এলএনজি সরবরাহে বাংলাদেশের সঙ্গে বড় চুক্তি মার্কিন প্রতিষ্ঠানের