সম্প্রতি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদের ‘বিপুল অর্থ-সম্পদের’ বিবরণ তুলে ধরা হয়।
Published : 23 Apr 2024, 07:32 PM
পুলিশের সাবেক মহাপদির্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে দুই মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট।
এ বিষয়ে একটি রিট আবেদেনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কাজী এবাদাত হোসেনের বেঞ্চ মঙ্গলবার দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) এ নির্দেশ দেয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. সালাহ উদ্দিন রিগ্যান এ রিট আবেদন করেন; আবেদনে বেনজীর আহমেদকেও বিবাদী করা হয়েছে।
বেনজীর আহমেদের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট শাহ মঞ্জুরুল হক ও সাঈদ আহমেদ রাজা।
পরে শাহ মঞ্জুরুল হক সাংবাদিকদের বলেন, “পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পরও ব্যবস্থা না নেওয়া কেন দুদকের ব্যর্থতা বলে ঘোষণা করা হবে না তা রিট আবেদনে জানতে চাওয়া হয়। রিটে বেনজির আহমেদকে ৫ নম্বর বিবাদী করা হয়।
“তার পক্ষে আমি এবং সাঈদ আহমেদ রাজা আইনজীবী ছিলাম। আমরা বলেছি, যেহেতু গত ১৮ এপ্রিল দুদক একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে এবং আজ দুদকের আইনজীবী মি. খুরশীদ আলম খান সেই রিপোর্ট আদালতে উপস্থাপন করেছেন, তাই রিটে চাওয়া ‘ইনঅ্যাকশন‘ এবং ‘ফেইলিওর‘ অব দুদক – এর অস্তিত্ব নেই।
“তাই আদালত কোনো রুল ইস্যু করেননি, ডাইরেকশনও দেননি। তবে সুয়োমটো একটা আদেশ দিয়েছেন। যেহেতু দুদক ইনকয়ারি শুরু করেছে, দুই মাস পর দুদক যেন একটা প্রগ্রেস রিপোর্ট দেয়।“
২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৫৯ বছর পূর্ণ হওয়ায় সরকারি চাকরি আইন অনুযায়ী অবসরে যান বেনজীর। আইজিপি হওয়ার আগে তিনি র্যাবের প্রধান এবং ডিএমপি কমিশনারের দায়িত্বও পালন করেন।
গত ৩১ মার্চ 'বেনজীরের ঘরে আলাদীনের চেরাগ' ও ৩ এপ্রিল 'বনের জমিতে বেনজীরের রিসোর্ট' শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বসুন্ধরা গ্রুপের মালিকানাধীন দৈনিক কালের কণ্ঠ। সেখানে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গোপালগঞ্জে প্রায় ১৪০০ বিঘা জমিতে একটি ইকো রিসোর্ট গড়ে তুলেছেন বেনজীর পরিবার। এছাড়া ঢাকা ও পূর্বাচলে সাবেক এ আইজিপির একাধিক ফ্ল্যাট ও বাড়ি আছে।
বনের জমি দখল করে গাজীপুরে রিসোর্ট বানানোর অভিযোগও আনা হয়েছে দৈনিকটির প্রতিবেদনে। ওই রিসোর্টের এক-চতুর্থাংশের মালিকানা বেনজীর পরিবারের বলে পত্রিকাটি দাবি করেছে।
বিষয়টি নিয়ে আলোচনার মধ্যে হবিগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন রোববার বেনজীর এবং তার পরিবারের সদস্যদের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদকে আবেদন করেন।
এরপর গত ১৮ এপ্রিল কমিশন সভায় অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেয় দুর্নীতি দমন কমিশন। সেজন্য তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।
অনুসন্ধান কমিটির সদস্যরা হলেন- উপপরিচালক হাফিজুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক নিয়ামুল হাসান গাজী এবং জয়নাল আবেদীন।
বিষয়গুলো নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা না বললেও গত ২০ এপ্রিল ফেইসবুক লাইভে এসে নিজের অবস্থান তুলে ধরেন বেনজীর আহমেদ।
তিনি দাবি করেন, যেসব অভিযোগ তার এবং পরিবারের বিরুদ্ধে উত্থাপন করা হয়েছে, তার বেশিরভাগই ‘মিথ্যা’।
যেসব সম্পত্তি অর্জনের তথ্যকে ‘মিথ্যা’ বলছেন, কেউ যদি সেই তথ্যকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তবে সেই সম্পত্তি সেই ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নামে হাসিমুখে লিখে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দেন সাবেক পুলিশ প্রধান।
এদিকে বেনজীর আহমেদের সম্পদের বিষয়ে অনুসন্ধানের নির্দেশনা চেয়ে সোমবার হাই কোর্টে রিট আবেদন করেন আইনজীবী সালাহ উদ্দিন রিগ্যান ।
দুদক চেয়ারম্যান, সচিবসহ সংশ্লিষ্ট চারজন এবং বেনজির আহমেদকে বিবাদী করা হয় সেখানে।
পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেনজীর আহমেদের বিপুল অর্থ-সম্পদের বিবরণ তুলে ধরা হয়।
সেখান বলা হয়, বেনজীরের বিপুল সম্পদের মধ্যে রয়েছে গোপালগঞ্জের সাহাপুর ইউনিয়নে সাভানা ইকো রিসোর্ট নামের এক অভিজাত ও দৃষ্টিনন্দন পর্যটন কেন্দ্র। এছাড়াও তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অন্তত ছয়টি কোম্পানির খোঁজ পাওয়া গেছে। পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকার বেশি হতে পারে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ঢাকার অভিজাত এলাকাগুলোতে বেনজীর আহমেদের দামি ফ্ল্যাট, বাড়ি আর ঢাকার পাশে বিঘার পর বিঘা জমি রয়েছে। দুই মেয়ের নামে বেস্ট হোল্ডিংস ও পাঁচতারা হোটেল লা মেরিডিয়ানের রয়েছে দুই লাখ শেয়ার। পূর্বাচলে রয়েছে ৪০ কাঠার সুবিশাল জায়গাজুড়ে ডুপ্লেক্স বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কমপক্ষে ৪৫ কোটি টাকা। একই এলাকায় আছে ২২ কোটি টাকা মূল্যের আরও ১০ বিঘা জমি। অথচ গত ৩৪ বছর সাত মাসের দীর্ঘ চাকরিজীবনে বেনজীর আহমেদের বেতন-ভাতা বাবদ মোট আয় এক কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ২০০ টাকার মত হওয়ার কথা।