Published : 27 Mar 2025, 11:41 PM
ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসের বিকালে ভিড় দেখা গেল রাজধানীর কল্যাণপুর, মাজার রোড আর গাবতলীর বিভিন্ন বাস কাউন্টারে; আগাম টিকেটধারীরা সানন্দে বাসে উঠলেও বিপাকে পড়েন কাউন্টারে এসে টিকেট খোঁজা ব্যক্তিরা।
ভিড়ের মধ্যেই বিভিন্ন বাস কাউন্টারে তারা ঘুরছিলেন। চাহিদা ও পছন্দমত টিকেট পাচ্ছিলেন না। কিছু কাউন্টার টিকেট দিলেও ভাড়া চায় প্রায় দ্বিগুণ।
দিনাজপুরের রানীবন্দর যেতে বৃহস্পতিবার বিকালে কল্যাণপুরে বাসের টিকেট খুঁজছিলেন আসাদুজ্জামান জীবন ও তার বন্ধু জীবন রায়। বাসে আসন খালি থাকলেও টিকেটের দাম বেশি চাওয়ার কথা বলেন তিনি।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে আসাদুজ্জামান বলেন, “আমি একটি পরিবহনের কাউন্টারে গিয়েছিলাম, সেখানে একজনের ১৫০০ টাকা করে ভাড়া চাচ্ছে। আর কিছু কোম্পানি ভাড়া চাচ্ছে বারোশ টাকা। অন্য সময় আমরা ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকায় যেতে পারি।”
পেশায় রাজমিস্ত্রী রাশিদুল ইসলাম তার কয়েক সহকর্মীর সঙ্গে যাচ্ছিলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জে। তবে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে কাউন্টার থেকে টিকেটের দাম বেশি চাওয়ার কথা বললেন তিনিও।
রাশিদুল বলেন, “এখানে টিকিট কাটার জন্য বসে আছি। কিন্তু দাম বেশি চাচ্ছে, বারোশ। অন্য সময় ভাড়া নেয় ৮০০ টাকা। অনলাইনেও ৮০০ টাকা করে টিকিট বিক্রি হইছে।”
আগামী ৩১ মার্চ (সোমবার) ঈদুল ফিতর ধরে আগেই ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এর আগে-পরের ছুটি ও নির্বাহী আদেশের ছুটি মিলিয়ে এবার ২৮ মার্চ থেকে ৫ এপ্রিল পর্যন্ত টানা নয় দিনের ছুটিতে থাকবেন সরকারি চাকরিজীবীরা।
লম্বা ছুটি শুরুর আগেই ঈদযাত্রা শুরু হয়ে গেছে মানুষের। আর বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবস হওয়ায় বিকালে বাস কাউন্টারগুলোতে চাপ বাড়ে।
কল্যাণপুরে হানিফ পরিবহনের কাউন্টারের কর্মী খালিদ ইবনুল সজীব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে (বৃহস্পতিবার) দুপুরের পর থেকে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। প্রতিটি গাড়ি যাত্রীতে পূর্ণ। আজ যারা যাচ্ছেন, তাদের বেশিরভাগই আগের টিকেট কিনে রেখেছিলেন। কেউ কেউ কাউন্টার থেকেও টিকিট কাটছেন, তবে তা খুব কম।”
কল্যাণপুর, মাজার রোড আর গাবতলী এলাকায় কিছু কাউন্টার ডেকে ডেকেও টিকেট বিক্রি করে বৃহস্পতিবার।
ঢাকা থেকে রাজশাহীর ভাড়া জানতে চাইলে জমজম পরিবহনের টিকেট বিক্রয় কর্মী আনোয়ার হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঢাকা থেকে রাজশাহীর টিকেট হবে, তবে সেটা রাতের গাড়ি। টিকেট একদাম ১১০০ টাকা। কোনো মুলামুলি নাই।”
আমিনুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, “মানিক পরিবহনে বৃহস্পতিবার বিকালের গাড়িতে টিকেট কিনেছি সতেরোশ টাকা করে। অন্য সময় এই ভাড়া বারোশ টাকা। আমি অবশ্য আরেকজনের কাছ থেকে কিনেছি, এজন্য পাঁচশ টাকা বেশি দিতে হয়েছে।”
বৃহস্পতিবার গাবতলী বাস টার্মিনালে দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রী দেখা গেছে কম। বিভিন্ন পরিবহনের কর্মীরা বলছেন, পদ্মা সেতু হওয়ার পর দক্ষিণের বেশিরভাগ যাত্রী ওইদিকে চলে যায়। এতে গাবতলীতে চাপ কমে গেছে।
গাবতলীতে সোহাগ পরিবহনের টিকেট বিক্রয় কর্মী মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, “পদ্মা ব্রিজ হওয়ার পর বরিশাল,খুলনার যাত্রীরা আর এদিকে আসে না। মিরপুর, মোহাম্মদপুর যারা থাকে এই যাত্রীরা গাবতলী হয়ে যায়। এ কারণে এখন এই টার্মিনালে ভিড় কম।”
গাবতলী টার্মিনাল থেকে অনেকে পাটুরিয়া পর্যন্ত বাসে গিয়ে লঞ্চে পদ্মা পার হন। ওই পাড়ে গিয়ে আবার বাসে করে গন্তব্যে যান। এবার পাটুরিয়াগামী বাসেও যাত্রী কম। ঈদের আগে পাটুরিয়ার ভাড়া ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়ার অভিযোগ আসে। তবে বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, বাস কর্মীরা ভাড়া হাঁকছে ২০০ টাকা।
একটি বাসের হেল্পার ইব্রাহিম খলিল বলেন, “যাত্রী নাই, গাড়ি বেশি এজন্য ভাড়া কম। যাত্রী বেশি থাকলে ভাড়া এমনিতেই বাইড়া যাইত।”
ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগের বিষয়ে ‘বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের’ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষ রাকেশ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বাসের অগ্রিম টিকেট ছেড়ে দিয়েছি ১৪ মার্চ থেকে। বিআরটিএর নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
“কারও সঙ্গে এমন হলে দয়া করে যাত্রীরা যেন আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। আর এসি বাসের ভাড়া মালিকরা নির্ধারণ করে। এটায় সরকার মালিক সমিতির কিছু করার থাকে না।”