Published : 04 May 2025, 05:18 PM
সংবাদমাধ্যমের নীতিনির্ধারণী পর্যায়, যেখানে খবর বা মতামত তৈরি হয় সেখানে অবশ্যই প্রশ্ন করার সুযোগ থাকা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম।
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস উপলক্ষে রোববার টিআইবি আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “সংসদ সদস্যদের প্রশ্ন করা যাবে, বিচার বিভাগকে প্রশ্ন করা যাবে, নিরাপত্তা সংস্থাকে প্রশ্ন করা যাবে কিন্তু সাংবাদিকদের প্রশ্ন করা যাবে না। আমি চাই না জিনিসটা থাকুক।”
‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোড ম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখছিলেন মাহফুজ আলম।
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ। তিনি গণমাধ্যম সংস্কারে দীর্ঘমেয়াদী এবং তাৎক্ষণিক বাস্তবায়নযোগ্য কিছু সুপারিশ তুলে ধরেন।
ক্ষমতার পালাবদলের পর সাংবাদিকদের নামে ঢালাও হত্যা মামলা করার বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “মূল যে অভিযোগ সেটা দিয়ে মামলা হয় না। করা হয় হত্যা মামলা। বিষয়টি নিয়ে সরকারও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছে।”
গত ৫ অগাস্ট অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলায় কয়েকজন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কয়েকজন সাংবাদিক গ্রেপ্তার হয়েছেন।
এ নিয়ে মাহফুজ আলম বলেন, “বিষয়টি আমরাও বলার চেষ্টা করছি, আইন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে কথা বলছি, বিষয়গুলোকে একটা জায়গায় নিয়ে আসার জন্য। মামলা হওয়া আর লিগ্যাল প্রডিসিং শুরু হওয়া আলাদা।
“মামলা যে কেউ করতে পারে, প্রশ্ন হচ্ছে সরকার কাউকে আটকে রাখছে কি না। রাখলে সেটা আইন অনুযায়ী হচ্ছে কি না, না হলে সেটা নিয়ে আপনারা কথা বলতে পারেন।”
বাংলাদেশে গত ১৫ বছরে বিজ্ঞাপনের নামে সরকারের টাকা লুটপাট এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কিভাবে রাজনীতিকরণ হয়েছে তা জানতে কমিটি করা হবে বলেও জানিয়েছেন তথ্য উপদেষ্টা।
মাহফুজ আলম বলেন, গত কয়েক বছর সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা দেখিয়ে সরকারি বিজ্ঞাপনের টাকা লুটপাট করা হয়েছে। মন্ত্রীকে বা মন্ত্রীর উপরের লোককে দিয়ে কল করিয়ে সংবাদপত্রের প্রচার সংখ্যা লিখিয়ে নেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, সে সময় লুটপাটের একটা ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি’ গড়ে উঠেছিল।
তথ্য উপদেষ্টা বলেন, পত্রিকায় বিজ্ঞাপনের হার নিয়ে অনেক কথা আছে। বর্তমানে সার্কুলেশন দেড় লাখের বেশি হলে বিজ্ঞাপনের হার ৯৫০ টাকা ধরা হয়। মূল্যস্ফীতির তুলনায় এটা এখন অন্যায্য। পাশাপাশি যারা নিজেদের পত্রিকার প্রচার সংখ্যা দুই হাজারও না সেটাকে দেড় লাখ, দুই লাখ বানিয়ে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাট করেছে সেগুলো তদন্ত করা হবে।
“রাষ্ট্রের টাকায় বিজ্ঞাপনের নামে বিভিন্ন নেতা, মন্ত্রী, এমপিদের পত্রিকা চালু করেছে। আমরা মনে করি গত ১৫ বছরের সংবাদমাধ্যমের অবস্থা নিয়ে খুব শিগগিরই একটা ফ্যাক্ট ফাইন্ডিংস করা দরকার। আমাদের উদ্যোগ আছে, এটা মন্ত্রণালয় থেকেও হতে পারে, আরেকটা আলোচনা চলছে, এটা জাতিসংঘ থেকে হতে পারে।”
মাহফুজ আলম বলেন, বিগত সময়ে গণমাধ্যম কিভাবে রাজনীতিকরণ হয়েছে সেটাও জানা দরকার।
“সাংবাদিকরা কতটা প্রেশারে ছিল, কোন হাউজ কী নীতিমালা করেছে, এর কারণে দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া কীভাবে বাধাগ্রস্ত হয়েছে সেটা আমাদের জানা দরকার আছে, মানুষ যেটা জানতে চায়।”
ঢাকার ধানমন্ডিতে মাইডাস সেন্টারে আয়োজিত অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
সেখানে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুশান ভাইজ, সুইডিশ রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম এএফপির ব্যুরো প্রধান শেখ সাবিহা আলম, টাইমস মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান এ কে আজাদ বক্তব্য রাখেন।