দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার তল্লাশি শেষে দুপুরে যাত্রীরা ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিজেদের গন্তব্যে গেছেন।
Published : 22 Jan 2025, 04:53 PM
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের যে ফ্লাইট নিয়ে নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিয়েছিল, সেই উড়োজাহাজে বিস্ফোরক থাকার বার্তা পাকিস্তানি একটি নম্বর থেকে দেওয়া হয় বলে পুলিশের ভাষ্য।
ফেইসবুক পোস্টে ডিএমপি বলেছে, বুধবার ভোর ৪টা ৩৭ মিনিটে এয়ারপোর্ট এপিবিএনের ডিউটি অফিসারের হোয়াটসঅ্যাপে একটি পাকিস্তানি নম্বর থেকে ‘বোম্ব থ্রেট’র বার্তা আসে। ওই বার্তায় দাবি করা হয়, রোম থেকে ঢাকাগামী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-৫৩৬ ফ্লাইটে উচ্চমাত্রার ৩৪ কেজি বিস্ফোরক রয়েছে।
বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে ফ্লাইটটি ঢাকার শাহজালাল বিমানবন্দরে অবতরণের পর ২৫০ জন যাত্রী এবং ১৩ জন ক্রুকে নিরাপদে নামিয়ে আনা হয়।
শাহজালাল বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন কামরুল ইসলাম বলেন, “বিমানের রোম ফ্লাইটে বোমা আছে বলে অচেনা নম্বর থেকে আমরা একটা হুমকি পাই। এরপর আমরা যথাযথ প্রটোকল অনুসরণ করে ব্যবস্থা নিই।”
বিমান বাংলাদেশ এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছে, যে ফ্লাইট নিয়ে নিরাপত্তা হুমকি দেখা দিয়েছিল, সেই উড়োজাহাজ, যাত্রী ও লাগেজ তল্লাশি করে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো বস্তু মেলেনি।
দীর্ঘ ৩ ঘণ্টার এই তল্লাশি শেষে দুপুরে যাত্রীরা ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে নিজেদের গন্তব্যে চলে যান।
বিমান বাংলাদেশ জানিয়েছে, নিরাপত্তা কার্যপ্রণালী অনুযায়ী, উড়োজাহাজটি ঢাকায় অবতরণের পরপরই বিমানবন্দরে নিয়োজিত নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর সমন্বয়ে ফ্লাইটটিকে নিরাপত্তা বেষ্টনীতে নেওয়া হয়। যাত্রীদেরকে নিরাপদে নামানো হয় এবং সব যাত্রী ও ব্যাগেজসহ উড়োজাহাজটি তল্লাশি করা হয়।
“নিরাপত্তা তল্লাশিতে কোনো কিছু না পাওয়ায় ‘সিকিউরিটি থ্রেট ক্লিয়ার’ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়। যথাযথ নিরাপত্তা তল্লাশি শেষে দুপুর দেড়টার মধ্যে সব যাত্রী নিরাপদে বিমানবন্দর ত্যাগ করেন।”
ঢাকা মহানগর পুলিশের তরফে জানানো হয়েছে, খবর পাওয়া মাত্রই সিটিটিসির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট এবং ক্যানাইন ইউনিট যৌথ বাহিনীর সঙ্গে তল্লাশি অভিযানে যোগ দেয়।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক বোসরা ইসলাম বলেন, “আমাদের রোম ফ্লাইটে থ্রেট একটা ছিল। আমরা সবরকম ব্যবস্থা নিয়েছিলাম।
“বাট ফ্লাইটটা ৯টা ২০ মিনিটে সুন্দরভাবে ল্যান্ড করেছে। যাত্রী ও ক্রুরা সবাই নিরাপদেই আছেন। এখন মনে হচ্ছে ওটা ছিল একটা উড়োখবর।”
সন্দেহভাজন লাগেজের ছবিও দেয় 'তথ্যদাতা'
বোমা হুমকি নিয়ে এদিন বিকালে সংবাদ সম্মেলনে আসেন বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া।
তিনি বলেন, “বিমানবন্দরের এপিবিএন কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসারের সরকারি নম্বরে উড়োজাহাজে বোমা থাকার বার্তাটি আসে। পরবর্তীতে সেই নম্বরে তথ্যদাতার সঙ্গে কিছু চ্যাট হয়। তবে তিনি (বার্তাদাতা) ভয়েস কল রিসিভ করেননি।
ওই ব্যক্তি কি হুমকিদাতা না তথ্যদাতা, এ প্রশ্নের উত্তরে বেবিচক চেয়ারম্যান বলেন, “তিনি তো হুমকি দেননি, তথ্য দিয়েছেন। তবে যে কেউ বাংলাদেশে বসেও পাকিস্তানি হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর ব্যবহার করতে পারেন।
“ওই তথ্যদাতা একটি লাগেজের ছবিও পাঠিয়েছেন, যে ধরনের লাগেজে বোমাটি থাকতে পারে বলে তার ভাষ্য।”
এয়ার ভাইস মার্শাল মঞ্জুর কবীর বলেন, “পরে আমরা খবর পেয়ে আমাদের প্রটোকল অনুযায়ী ব্যবস্থা নিই। সকালে অনেকগুলো ফ্লাইট ল্যান্ড করার কথা ছিল। আমরা অন্য সবগুলো ফ্লাইট আগে নামিয়ে দিই।
“পরে এই এয়ারক্রাফটিকে ল্যান্ডিংয়ের পর একটু দূরে থার্ড টার্মিনালের সামনে নিয়ে যাওয়া হয়; যার কারণে এয়ারপোর্টের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো ছন্দপতন হয়নি।”
তিনি বলেন, “উড়োজাহাজ থেকে আগে যাত্রীদের নামিয়ে এনে স্ক্রিনিং করে গাড়িতে উঠিয়ে এয়ারপোর্ট টার্মিনালে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাদের প্রত্যেকটা লাগেজ একটা একটা করে এক্স-রে করে তল্লাশি করা হয়।
“দুটো সন্দেহভাজন লাগেজকে আলাদা করা হয়, সেগুলো খুলে পরীক্ষা করেও কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর এয়ারক্রাফটের কার্গো থেকে প্যালেটগুলো নামিয়ে একটা একটা করে তল্লাশি চালানো হয়।”
বেবিচক চেয়ারম্যান মঞ্জুর কবীর বলেন, “বিমান বাহিনী, পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ সবগুলো সংস্থার সদস্যরা এই কার্যক্রমে অংশ নেন। পুলিশের কুকুরগুলোকে কাজে লাগানো হয়।”
আরও পড়ুন