মেট্রোরেলে ঘন ঘন বিভ্রাট নিয়ে নিয়মিত যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
Published : 27 May 2024, 11:05 PM
ঢাকার মেট্রোরেল যাদের জীবনকে অনেকখানি সহজ করে দিয়েছে, তাদের অন্য অভিজ্ঞতা হল ঘূর্ণিঝড় রেমালের দিনে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সোমবার সারাদিনই বৃষ্টি ঝরেছে ঢাকায়, তার সঙ্গে ঝড়ো হওয়ার দাপট। এর মধ্যে সকালে কর্মস্থলে পৌঁছাতে এবং বিকালে অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে দুই যাত্রাতে ভুগতে হয়েছে মেট্রোর যাত্রীদের।
বিরূপ আবহাওয়ার মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাটে সকালে আড়াই ঘণ্টা এবং ঝড়ে গাছ ভেঙে মেট্রোরেলের ওপর পড়ায় বিকালে আরো দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকে ট্রেন চলাচল। এর বাইরেও কিছু সময় ট্রেন চলে এক লাইনে।
ফলে স্টেশনে স্টেশনে যাত্রীদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষায় থাকতে হয়। ট্রেন না পেয়ে অনেকে বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই বিকল্প বাহনে গন্তব্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন।
দিনের শুরুতে সকাল ৭টায় উত্তরা স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেন মতিঝিলে যাওয়ার পরপরই ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সে সময় শেওড়াপাড়া এবং আগারগাঁও স্টেশনের মধ্যবর্তী স্থানে লাইনের একপাশে বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ওই সমস্যা হয়েছিল বলে মিরপুর-১০ নম্বর স্টেশনের একজন কর্মী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছিলেন।
প্রায় আড়াইঘণ্টা বন্ধ থাকার পর বেলা সাড়ে ১০টার দিকে মতিঝিল থেকে উত্তরা যাওয়ার লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। আর উত্তরা থেকে মতিঝিলগামী লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।
এক লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও কেবল এমআরটি পাসধারী যাত্রীরা যাতায়াত করতে পারছিলেন। সাধারণ যাত্রীদের কাউন্টার থেকে টিকেট দেওয়া হচ্ছিল না। ফলে বিভিন্ন স্টেশনে যাত্রীরা পড়েন ভোগান্তিতে।
বৈদ্যুতিক ত্রুটি সারিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার পর দুটি লাইনেই ট্রেন চলাচল শুরু হয়। অফিসযাত্রার সময় পেরিয়ে যাওয়ায় ততক্ষণে চাপও কিছুটা কমেছে।
এমআরটি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ খান সে সময় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "সকালে উত্তরা স্টেশন থেকে প্রথম ট্রেনটি যাওয়ার পর আর কোনো ট্রেন চলেনি। এর পরপরই বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
“সাড়ে ১০টার দিকে মতিঝিল থেকে উত্তরা যাওয়ার লাইনে ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। এখন ২০ মিনিট পরপর ট্রেন ছাড়বে। সমস্যা সমাধানে কাজ করছেন মেট্রোরেলের কর্মীরা।"
বৃষ্টির কারণে এদিন সড়কে গণপরিবহন ছিল কম, বিভিন্ন সড়কে পানি জমে ছিল। তার মধ্যে গাছ পড়ে কয়েকটি সড়কে বাঁধে যানজট। এ সব কিছুর মধ্যে মেট্রোরেল চলাচলে বিভ্রাট যাত্রীদের ভোগান্তি আরও বাড়ায়।
সকালের দুর্বিপাকের পর বিকালে আরেক দফা ভোগান্তি বাকি ছিল মেট্রো যাত্রীদের জন্য। ঝড়ে গাছ ভেঙে মেট্রোরেলের ওপর পড়লে কারওয়ানবাজার থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে প্রায় দুই ঘণ্টা।
ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ফেইসবুক পেইজে সন্ধ্যা পৌনে ৬টায় বলা হয়, মেট্রোরেল উত্তরা থেকে কারওয়ানবাজার পর্যন্ত চলাচল করছে। শাহবাগ-সচিবালয় মেট্রোরেল স্টেশনের মাঝামাঝি স্থানে ভায়াডাক্টের উপর ঝড়ে গাছের ডাল এবং মতিঝিল ষ্টেশন সংলগ্ন এলাকায় সোলার প্যানেল পড়ায় এই অংশে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ আছে। সহসাই চালুর চেষ্টা চলছে।
পরে সন্ধ্যা ৭টায় ওই পেইজে আরেকটি পোস্টে মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ জানায়, সন্ধ্যা ৭টা থেকে উত্তরা থেকে মতিঝিল পর্যন্ত ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে।
এর আগে শনিবারও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে প্রায় সোয়া এক ঘণ্টা বন্ধ থাকে মেট্রোরেল চলাচল। ঘন ঘন এই বিভ্রাট নিয়ে নিয়মিত যাত্রীরা ক্ষোভ জানিয়েছেন।
সোমবার মিরপুর-১০ নম্বর মেট্রো স্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় থাকা যাত্রী রাশেদুল আলম বলেন, “মেট্রোরেল হওয়ার পর আমাদের এই এলাকার মানুষের জন্য খুব উপকার হয়েছিল। যানজট এড়িয়ে নির্বিঘ্নে গন্তব্যে যাওয়া যায়। কিন্তু প্রায়ই বিদ্যুৎ বিভ্রাটসহ নানা কারণে মেট্রো চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে আমরা খুব সমস্যায় পড়ি।
“মেট্রোরেল সঠিক সময়ে যায়– এই হিসাব করে বাসা থেকে বের হই। মেট্রো না পেলে বাসে বা অন্য কোনো বাহনে যেতে হয়। এতে ঠিক সময়ে অফিসে পৌঁছানো যায় না। আর ভোগান্তি তো আছেই।”
প্রায়ই মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হচ্ছে, এটা স্বাভাবিক কি না-এমন প্রশ্নের উত্তর জানতে মেট্রোরেল পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ এন ছিদ্দিককে ফোন করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এমআরটি পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মাহমুদ খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এসব বিষয়ে তাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।
“আজকে দুইবার মেট্রো চলাচল বিঘ্নিত হয়েছে। এটা টেকনিক্যাল বিষয়, কারণ আমরা বলতে পারব না। এটা পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান বলতে পারবেন। আমরা জানতে চাইলে তারা আমাদের বিদ্যুৎ বিভ্রাট, সার্ভারের সমস্যার কথা বলেন।”