সরকারের পতনের পর থেকে সাবেক প্রতিমন্ত্রী আরাফাতকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি।
Published : 27 Aug 2024, 09:48 PM
সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাতকে গ্রেপ্তারের খবর চাউর হলে ঢাকার এক উপনির্বাচনে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিরো আলম মিষ্টি নিয়ে থানায় গেছেন; পথচারী ও যানবাহনের চালক-যাত্রীদের মিষ্টি খাইয়েছেন।
তবে মঙ্গলবার রাত ৯টা পর্যন্ত গুলশান-বনানী ও আশপাশের এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা ১৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আরাফাতের কোনো খোঁজ দিতে পারেনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। তাকে গ্রেপ্তার বা আটকের খবরও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কেউ এ সময় পর্যন্ত নিশ্চিত করেনি।
উল্টো ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলেছেন, পুলিশ তাকে খুঁজছে।
গত ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী আরাফাতকে আর জনসম্মুখে দেখা যায়নি।
এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুরে কলেজ ছাত্র মাহামুদুর রহমান সৈকতকে হত্যাসহ বেশ কয়েকটি অভিযোগে মামলা হয়েছে।
এদিন বিকাল থেকে প্রথমে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং পরে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যমসহ অনলাইন পোর্টালে খবর রটে সাবেক তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী আরাফাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির কয়েকটি ইউনিট ও র্যাবের সঙ্গে যোগাযোগ করলে কর্মকর্তারা গ্রেপ্তারের খবর নিশ্চিত করেননি। পুলিশের কর্মকর্তারা বলছেন, দুপুর থেকেই তারা নিজেরাও এরকম গুজব শুনছেন।
ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে সাবেক মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যের বেশির ভাগকেই গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। অন্য ইউনিট কিংবা বাহিনী গ্রেপ্তার করলেও তাদের ডিএমপির ডিবিতে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে আরাফাতের গ্রেপ্তারের বিষয়ে রাত পর্যন্ত ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে তথ্য না থাকার কথা বলেছেন যুগ্ম কমিশনার (উত্তর) মোহাম্মদ রবিউল হোসেন ভুঁইয়া।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, দুপুর থেকেই অনেকে ফোন করছেন আরাফাতের বিষয়ে খবর জানতে। সবাইকে বলা হচ্ছে তাকে তারা গ্রেপ্তার করেননি।
পরে সন্ধ্যায় আবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে খবর আসে সাবেক প্রতিমন্ত্রীর গুলশানের বাসায় অভিযান চালানো হলেও তাকে পায়নি পুলিশ।
এ বিষয়ে ডিবির যুগ্ম কমিশনার রবিউল হোসেন বলেন, তার বাসায় অভিযান চালায়নি গোয়েন্দা পুলিশ। অন্য কেউ অভিযান চালিয়েছে কি না সেটা তার জানা নেই।
“আমি দায়িত্ব নিয়েই সকলকে বলেছি আমরা তাকে ধরতে অভিযান চালাইনি বা গ্রেপ্তার করিনি।”
আরাফাতের গ্রেপ্তারের খবরের বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশের জনসংযোগ বিভাগের এডিসি ওবায়দুর রহমান বলেন, গুলশান থানা পুলিশ ও গুলশান অপরাধ বিভাগ থেকে তাকে জানানো হয়েছে কেউ সাবেক এই সংসদ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেনি।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লে. কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, তারাও আরাফাতকে গ্রেপ্তার করেননি।
মিষ্টি নিয়ে থানায় হিরো আলম
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ১৭ আসন থেকে নৌকা প্রতীকে ভোট করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন টিভি টক শো এর পরিচিত মুখ মোহাম্মদ এ আরাফাত। পরে শেখ হাসিনার সরকারে তথ্য প্রতিমন্ত্রী হন।
এর আগে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য চিত্রনায়ক আকবর হোসেন পাঠান ফারুকের মৃত্যুতে ঢাকা ১৭ আসনের উপ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী হন সুচিন্তা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ এ আরাফাত। তখন তার
প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে পরিচিতি মুখ হিরো আলম। ভোটের দিন হামলার শিকার হওয়া হিরো আলম ভোট চুরিসহ আরাফাতের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছিলেন।
মঙ্গলবার আরাফাতকে গ্রেপ্তারের খবর ছড়িয়ে পড়লে হিরো আলম মিষ্টি নিয়ে গুলশান থানায় যান। থানায় থেকে বের হয়ে তাকে চলতি পথে পথচারী ও যানবাহনের চালক-যাত্রীদের মাঝে মিষ্টি বিতরণ করতে দেখা যায়।
তখন গুলশান এলাকায় কয়েকটি সংবাদমাধ্যম ও ইউটিউবারদের সঙ্গে কথা বলেন হিরো আলম।
বুধবার তিনি আরাফাতের বিরুদ্ধে তাকে হত্যাচেষ্টা এবং ভোটে তার আসন ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগে মামলা করবেন বলে জানান।
হিরো আলম এমন শাস্তি চান যাতে ভবিষ্যেতে আরাফাতের মত কেউ ওভাবে সংসদ সদস্য-মন্ত্রী হওয়ার আগে চিন্তা করেন।
তিনি বলেন, “তাকে (আরাফাত) যেখানে পাব আগে গণধোলাই, মাইর দিব। কালকে কোর্টে যাব। যদি পাই মাইর হবে, পঁচা ডিম মারব। আপনারা দেখছেন
ওই নির্বাচনে আমার সঙ্গে জিততে না পেরে তার গুণ্ডা বাহিনী কীভাবে রাস্তায় ফেলে আমাকে মারধর করছে। জীবন বাঁচানোর জন্য আমি দৌড়ে পালিয়ে যায়। সে কিন্তু ভোটে পাস করতে পারেনি।
”কেন্দ্রে জালভোট দেওয়া হচ্ছিল দেখে যখন আমি যাই তখন তার গুণ্ডারা আমাকে মারধর করে।”
হিরো আলম বলেন, তখনকার মারের দাগ শরীরে এখনও রয়ে গেছে।
আরাফাতের বিরুদ্ধে মামলা
এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য আরাফাতকে কলেজছাত্র মাহামুদুর রহমান সৈকত হত্যা মামলার আসামি করা হয়েছে।
রাজধানীর নূরজাহান রোডে গত ১৯ জুলাই সৈকতকে হত্যার অভিযোগে তার বাবা মাহাবুবের রহমান রোববার রাতে মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করেন।
আরাফাত ছাড়াও এ মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, মোহাম্মদপুরের সাবেক সংসদ সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানকসহ ৯ আসামির নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদী মাহাবুবের মামলা করে তিনটি ফুটেজও জমা দেন। সৈকতকে গুলি করার জন্য রায়েরবাজার ফাঁড়ির এসআই শাহরিয়ার আলমকে দায়ী করা হয় মামলায়। শেখ হাসিনাসহ বাকিদেরকে বলা হয়েছে ‘নির্দেশদাতা’।
এর মধ্যে ১২ অগাস্ট আরাফাত, তার স্ত্রী ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
আরও পড়ুন