“পানির মতো সহজ জিনিস জটিল করছে কারা। শিক্ষার্থীরা সহজ বিষয়টা কেন জটিল করছে বুঝে আসছে না।”
Published : 11 Jul 2024, 04:43 PM
বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি পুরোপুরি বাতিল না করে সংস্কার করা প্রয়োজন বলে মত এসেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের কাছ থেকে।
তবে সেজন্য তিনি নিজের `শিক্ষার্থীতুল্য’ আন্দোলনকারীকে রাস্তা অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের সঙ্গে চলমান আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন সাবেক শিক্ষক এই মন্ত্রী।
তিনি বলেন, "আমার মনে হয় কোটার সংস্কার থাকা দরকার। আলোচনার ভিত্তিতে যৌক্তিক সমাধান দরকার। কোটা কতটুকু থাকবে সেটা ঠিক করা দরকার। এই আলোচনা, যুক্তিতর্ক কোর্টে হওয়া দরকার। আগে একটা পক্ষের কথা আদালত শুনেছে, কারণ তখন অন্য পক্ষ ছিল না। এখন কোটা বিরোধীদের কথা আদালত শুনলে অবশ্যই সেটা বিবেচনায় নেবে এবং খুব সহজ সমাধান হওয়া সম্ভব।"
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে সব কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। এক রিট আবেদনের রায়ে গত ৫ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট।
এরপর থেকেই ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নতুন করে আন্দোলনে নামেন চাকরিপ্রত্যাশী তরুণরা। প্রথম কয়েক দিন মিছিল, মানববন্ধনের মত কর্মসূচি থাকলেও এ সপ্তাহের শুরু থেকে শুরু হয় তাদের অবরোধ কর্মসূচি, যার নাম তারা দিয়েছে ‘বাংলা ব্লকেড’।
‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে আন্দোলনকারীরা শুরুতে চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ করলেও এখন তারা মাঠে রয়েছে এক দফা নিয়ে।
তাদের দাবি হল- সকল গ্রেডে সকল প্রকার ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লেখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ‘ন্যূনতম পর্যায়ে’ এনে সংসদে আইন পাস করে কোটা পদ্ধতিকে সংশোধন করতে হবে৷
ওই ‘ন্যূনতম পর্যায়’ বলতে প্রতিবন্ধী ও ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ অনগ্রসর লোকদের জন্য ৫ শতাংশ পর্যন্ত কোটা ‘গ্রহণযোগ্য’ মনে করছে তারা।
আন্দোলনকারীরা গত রবি ও সোমবার বিকালে ঢাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড় অবরোধ করে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করেন। এরপর বুধবার সকাল-সন্ধ্যা সারা দেশে তাদের একই কর্মসূচি চলে। তাতে যানজট এবং পরিবহন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়ে মানুষ।
এই আন্দোলনের মধ্যেই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বুধবার কোটা নিয়ে স্থিতাবস্থা জারির আদেশ দেয়।
কিছু পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনা দিয়ে সর্বোচ্চ আদালত বলেছে, কোটা নিয়ে এখন কোনো কথা বলা যাবে না। হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হলে আপিল বিভাগ আবার বিষয়টি শুনবে।
আন্দোলন করে যে আদালতের রায় বদলানো যায় না, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরে যেতে বলেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান।
এর প্রতিক্রিয়ায় আন্দোলনকারীদের অন্যতম সমন্বয়ক আাসিফ মাহমুদ বুধবার সন্ধ্যার এক ব্রিফিংয়ে বলেন, “আমাদের দাবি স্পষ্ট, সরকারের নির্বাহী বিভাগ থেকে ঘোষণা আসতে হবে যে একটি কমিশন গঠন করে কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কার করা হবে। যতদিন না আমাদের এ দাবি মেনে নেওয়া না হচ্ছে, ততদিন শিক্ষার্থীরা রাজপথে থাকবে।”
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৩টায় আবার রাস্তায় নামার এবং সারা দেশে সড়ক অবরোধের কর্মসূচি দেওয়া হয় ওই ব্রিফিংয়ে।
শিক্ষার্থীদের ওই অবস্থান থেকে সরে আসার আহ্বান জানিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, “আমি একজন শিক্ষক, কোটা আন্দোলনে আমার অনেক শিক্ষার্থী আছে। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের একটা সিদ্ধান্ত ছিল যেটা আন্দোলনকারীদের পক্ষে গেছে। আমরা আদালতকে সম্মান করি, আদালতের বিষয় আদালতেই সমাধান করতে হবে। আমি একজন শিক্ষক হিসাবে বলব, রাস্তায় না থেকে আদালতের বিষয়টি আদালতেই সমাধান করতে হবে।
"আমরাও চাই, বিষয়টি খুব সহজেই নিষ্পত্তি হয়ে যাক। মহামান্য প্রধান বিচারপতিও আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধানের কথা বলেছেন।"
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “রাস্তায় জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করা খুবই অনুচিত। আদালতে গিয়ে যৌক্তিকভাবে বিষয়টি তুলে ধরলে খুব সহজেই সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। পানির মতো সহজ জিনিস জটিল করছে কারা। শিক্ষার্থীরা সহজ বিষয়টা কেন জটিল করছে বুঝে আসছে না।
“আপনারা কারও দ্বারা প্ররোচিত না হয়ে আদালতে বক্তব্য উপস্থাপন করবেন। শিক্ষার্থীদের বক্তব্যের সঙ্গে একমত হয়েই তো মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ২০১৮ সালে নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপনটা জারি করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের সাথে সহমত হয়েই তিনি এই উদ্যোগ নিয়েছিলেন।”
কিছু কোটা রাখার পক্ষে যুক্তি দিয়ে ফরহাদ হোসেন বলেন, ভারত, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, কানাডাসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে কোটা আছে। প্রতিটি গোষ্ঠী, প্রতিটি এলাকার মানুষ যেন সমানভাবে রাষ্ট্রের সুযোগ সুবিধা পায়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
“কোটা সিস্টেম উঠে যাওয়ার কারণে সরকারি চাকরিতে নারীদের অংশগ্রহণ অনেক কমে গেছে। যেমন ৪৩তম বিসিএসে মাত্র ১৭ শতাংশ নারী সুযোগ পেয়েছে। যেখানে ৩৮তম বিসিএসে নারীরা ছিলেন ২৬ শতাংশের ওপরে, সেখানে ৪০, ৪১, ৪২ ও ৪৩তম বিসিএসে কমে গিয়ে গড়ে ১৯ শতাংশে নেমেছে।”
তিনি বলেন, “এদেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী, সেখানে সমতার ভিত্তিতে দেশটা এগিয়ে নিতে হবে। ৪০তম বিসিএসে ৫৯টি জেলা থেকে পুলিশে একজন নারীও স্থান পাননি। ১৭টি জেলা থেকে নারী পুরুষ কেউ স্থান পায়নি। তাহলে কোটা না থাকলে এরকম একটা অসমতা সৃষ্টি হয়। সব কিছু বুঝেশুনে যদি তারা আইনজীবীদের দিয়ে কোর্টে বিষয়গুলো তুলে ধরে, তাহলে বিষয়টি সুন্দর সমাধান হবে।”