“৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে বনানী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সামনে আটকে আছি। আউলাঝাউলা অবস্থা। এটা কীভাবে সম্ভব।”
Published : 10 Mar 2025, 01:13 PM
বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় নারী পোশাকশ্রমিক নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধের পর সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে, তাতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চলতি পথের যাত্রীরা।
সোমবার সকাল ৬টার দিকে বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি ইউটার্নে দুর্ঘটনায় একজন নারী পোশাকশ্রমিক নিহত হন; আহত হন তার এক সহকর্মী।
এ ঘটনার প্রতিবাদে সহকর্মীরা বিমানবন্দর সড়ক অবরোধ করেন। এক্সপ্রেসওয়েতেও যান চলাচল আটকে দেন তারা। তাতে আশপাশের সব সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বেলা পৌনে ১১টার দিকে হোটেল র্যাডিসন ব্লুর সামনে আমিনুল ইসলাম নামে একজন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজ সকাল থেকেই জ্যাম। খিলক্ষেত থেকে র্যাডিসনের সামনে এসেছি এক ঘণ্টায়। আমি যাব মিরপুর।”
সরকারি এক কর্মকর্তার গাড়িচালক মাহাতাব আলী বলেন, সাড়ে ৯টার অফিস ধরার জন্য সাড়ে ৮টার মধ্যেই বসুন্ধরা থেকে বের হন। প্রতিদিন এক্সপ্রেসওয়ে ধরে তারা সচিবালয়ে যান। কিন্তু কুড়িল ফ্লাইওভার থেকেই যানজটে পড়তে হয়েছে। শেষমেষ আড়াই ঘণ্টা সময় নিয়ে হোটেল র্যাডিসনের সামনে এসে গাড়ি ঘুরিয়ে তারা আবার ফিরে গেছেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদক ওবায়দুর মাসুমও এই যানজটের ভুক্তভোগী।
তিনি বলেন, “বেলা ১০টা ৪৫ মিনিটে পূর্বাচল এক্সপ্রেসওয়ের কুড়িল প্রান্তে এসেছিলাম। ওখান কালশী ফ্লাইওভার হয়ে মিরপুর ১০ নম্বরে পৌঁছাতে ১ ঘণ্টার বেশি সময় লেগেছে। কুড়িল চৌরাস্তাসহ আশপাশে তীব্র যানজট।”
মহাখালী থেকে বনানীর দিকে হেঁটে অফিসে যাচ্ছিলেন শাহরিয়ার হাসান নামে একজন। তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মানুষ সচেতন হবে না। আর ভোগান্তি পোহাতে হবে আমাদের। হেঁটে-হেঁটে অফিসে যেতে হচ্ছে। তীব্র যানজট। বনানীতে ফুটব্রিজ থাকার পরেও কেন সড়কের মাঝখান দিয়ে পার হতে হবে।”
মহাখালীতে অফিসে আসার পথে সকাল ৯টায় নাবিস্কোর কাছে যানজটে পড়েন কবিরুল ইসলাম। তিনি জানালেন, নাবিস্কো থেকে মহাখালীর আমতলী পৌঁছাতে তার লেগেছে এক ঘণ্টা।
শাকিলা জিনাত নামে একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখেছেন, “৩ ঘণ্টা ৪০ মিনিট ধরে বনানী এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সামনে আটকে আছি। আউলাঝাউলা অবস্থা। এটা কীভাবে সম্ভব।”
দেবব্রত মুখপাধ্যায় নামের আরেকজন সামজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “৩ ঘণ্টা ২২ মিনিট। মোহাম্মদপুর টু বনানী। স্টিল গাড়িচাপায় মারা যাওয়া মেয়ে দুটির জন্য বেদনা। এটাও সত্যি যে, আমাদের গার্মেন্টস কর্মীদের যেভাবে দৌড়ে রাস্তা পার হতে হয়, তাতে হেভি গাড়ির ড্রাইভারদের কার্যত কিছু করার থাকে না। প্রতিটা এমন স্পটে ট্রাফিক সহকারী পোস্টেড করলে ভালো হয়। নাকি অক্সিলিয়ারি ট্রাফিক বলব?
“অনেকেই ফুটওভার ব্রিজের কথা বলছেন। প্রথম নীতিগতভাবে ফুটওভার ব্রিজ একটা অমানবিক সমাধান। আমাদের রাষ্ট্র চিরকাল অমানুষে ভর্তি বলে নাগরিকদের এই কষ্ট দেয়। আর সেটা মেনে নিলেও গার্মেন্টস কর্মীদের পক্ষে ফুটওভার ব্রিজ ব্যবহার করা প্রায় অসম্ভব। ওনারা একসাথে হাজার সংখ্যায় কাজে ঢোকেন, বের হন। এ সময় ফুটওভার ব্রিজে উঠতে সিরিয়াল দিলে টাইম ধরতে পারবেন না। ফলে উনাদের নিচ থেকেই পার হওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।”
ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের যান চলাচল, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা বিভাগের পরিচালক হাসিব হাসান খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শত-শত গার্মেন্টকর্মী এসে এক্সপ্রেসওয়ে আটকে দিয়েছিল। তারপরে আমরা নেগোসিয়েশন করে এক্সপ্রেসওয়ের মধ্যে আটকে যাওয়া গাড়িগুলো যাওয়ার ব্যবস্থা করেছি। আমরা বলেছি, তোমাদের দাবি পূরণ না হলে প্রয়োজনে আবার বন্ধ থাকবে। সকাল ৭টা থেকেই এক্সপ্রেসওয়ে বন্ধ ছিল।”
ট্রাফিক গুলশান বিভাগের ফেইসবুক পেজে জানানো হয়েছে, কোন গাড়ি ওই দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, তা জানা যায়নি।
ওই দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে পোশাক কর্মীরা রাস্তার দুই পাশ বন্ধ করে রাখেন। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতেও যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে।
মূল সড়ক বন্ধ থাকায় ওই সময় বনানী-কাকলী ক্রসিং ও মহাখালীর আমতলী ক্রসিং হয়ে গাড়িগুলোকে ঘুরিয়ে দেয় পুলিশ। ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সদস্যদের গলদঘর্ম হতে হয়।