নায়করাজ রাজ্জাক: আজকের বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের যে বিকাশ এটা বঙ্গবন্ধুরই অবদানের ফল

admin
Published : 21 August 2017, 04:27 PM
Updated : 21 August 2017, 04:27 PM

৯৬ সালে রাজ্জাকের এই সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলাম আমি এবং কবি ব্রাত্য রাইসু অধুনাবিলুপ্ত দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকার জন্য। ফোনে আগেই এপয়েন্টমেন্ট করে তার গুলশানের বাসায় আমরা দুজনে হাজির হয়েছিলাম। সকালের দিকে বোধহয় তিনি আমাদেরকে সময় দিয়েছিলেন। সাক্ষাৎকারটি প্রকাশের সময় তার পরিচিতি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিল "জন্ম ২৩ জানুয়ারি ১৯৪২। কলিকাতা চারুচন্দ্র কলেজে ইন্টারমিডিয়েট। ১৯৬২ তে বিয়ে করেন। এরপরে বাংলাদেশে আগমন ১৯৬৪ সালে। ৩ ছেলে ২ মেয়ে। অভিনীত ছবির সংখ্যা ২৮০।" — রাজু আলাউদ্দিন

রাজু আলাউদ্দিন: রাজ্জাক ভাই, আপনার বয়স কত হলো?
আবদুর রাজ্জাক: ফিফটি ফোর।
রাজু: সিনেমা থেকে আপনি তাহলে একরকম বিদায়ই নিলেন?
রাজ্জাক: না, তা নয়। সে রকম অর্থে তো বিদায় নেয়া যায় না। আমি যেটা করলাম, গত দু'বছর আমি একটু সিলেকটিভ ছবি করলাম। একটু 'আদারওয়েজ' ব্যস্ত ছিলাম, এদিকে গত দু'বছর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি একটু অগোছালো হয়ে গেছে। এ কারণে নিজেকে একটু সরিয়ে রাখলাম আর কি।
রাজু: ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি অগোছালো হয়ে গেল মানে?
রাজ্জাক: মানে হইচইটা একটু বেশি এসে গেল না গত দু'বছর? উত্তেজনাটা যেন একটু বেশি হয়ে গেছে। এটা নর্মালি আমার জন্যে একটু প্রোব্লেম।
রাইসু: নতুনদের আপনি নিতে পারেন না?
রাজ্জাক: না, নতুনদেরকে আমি সব সময় একসেপ্ট করেছি। টোটাল ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে হঠাৎ করে একটু চেঞ্জ হয় না? এতে করে হইচইটা একটু বেশিই হয়। এ জন্যে আমি একটু সরে থাকলাম ওদের কাছ থেকে।
রাজু : আপনার নিজের তৈরি ছবির সংখ্যা কত এখন?
রাজ্জাক: ১৪ টার মতো।
রাজু: একটু আগে আপনি যে সিলেকটিভ ছবির কথা বললেন, সেটা কোন কোন ছবি?
রাজ্জাক: আমি এবার যে ছবিটি করছি সেটা হলো 'জজ সাহেব' যমুনা ফিল্মস-এর। মাঝখানে গেস্ট আর্টিস্ট হিসেবে অভিনয় করেছি। পুরোনো লোকরা ধরলে তো আর না করতে পারি না।
রাইসু: এগুলোতে কি নায়কের রোলেই অভিনয় করলেন?
রাজ্জাক: এখনতো আর নায়কের রোলে অভিনয় করা যায় না। সেন্ট্রাল ক্যারেক্টারে অভিনয় করছি।

রাজু : আপনার বয়সী বোম্বের কোনো নায়ক কি আছে যিনি এখনো নায়কের রোলে অভিনয় করছেন?
রাজ্জাক: নায়কের রোল বলতে রোমান্টিক, বাট আমরা যেটা করছি এটা নয়, মানে গল্পের নায়ক সেন্ট্রাল ক্যারেক্টার । আমাদের দেশতো আর হলিউড নয়, হলিউডে আমাদের বয়সী হিরোরা এখনো অভিনয় করছে। যেমন জেমস বন্ডের নায়ক ফরটি ফাইভের আগে তারা হতে পারে না, শন কনোরীর বয়স যখন ফরটি ফাইভ তখন তিনি নায়ক হলেন, তারপর রজার মূর গেল।
রাইসু: ওদের গড় আয়ুর কারণে বোধহয় এটা হয়।
রাজ্জাক: গড় আয়ুর জন্যে নয়। দে ওয়ান্ট ম্যাচিওর। আমাদের দেশে যেটা হয়, রোমান্টিক হিরো বা হিরো বলতে আমাদের দেশে যে ইমেজ– একটু সুন্দর, ছিমছাম অল্পবয়স্ক লোক হবে।
রাজু ; রাজ্জাক ভাই এই পর্যন্ত মোট কতগুলো ছবিতে অভিনয় করলেন?
রাজ্জাক: প্রায় ২শ' ৮০ টার মত হবে।
রাজু ; এখন পর্যন্ত বোধহয় আপনিই সর্বাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন?
রাজ্জাক: এখনো পর্যন্ত।
রাজু : মানে ইদানিং ছবিতে অভিনয় না করেও?
রাজ্জাক: আমি তো দু'বছর অন্য কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম।
রাইসু: বাইরের দেশেও তো বোধহয় এত সংখ্যায় কেউ উঠতে পারেনি।
রাজ্জাক: মাদ্রাজে বোধহয় একজন আছেন।
রাজু : বয়সও কি আপনার মতই?
রাজ্জাক: নাহ। আমার চেয়ে একটু বেশি।
রাজু : আমাদের তো ছোট একটি দেশ। ছবিও বোধহয় ভারতের তুলনায় একটু পরে শুরু হয়েছে। তারপরেও এত ছবি তৈরি হলো কিভাবে?
রাজ্জাক: যেখানে আমাদের দেশে বাইরের ছবির প্রোটেকশনটা ছিলো তো। পাকিস্তান আমলে চলতো পাকিস্তানি ছবি আর বাংলাদেশী ছবি। প্র্যাকটিক্যালি আমি আসার আগে এখানে কিন্তু উর্দু ছবিই বেশি ছিলো। লোকাল প্রডিউসারও উর্দু ছবি করতো। প্লাস লাহোর, করাচির ছবিও আসতো। বাংলা ছবি তখন একটা দু'টা হতো। তখন একটা গ্রুপ ছিলো; ফতেহ লোহানী সাহেব ছিলেন, জহির রায়হান সাহেব ছিলেন। এরা বাংলা ছবি করতেন। ম্যাক্সিমাম যারা প্রতিষ্ঠিত প্রডিউসার ছিলো তারা কিন্তু উর্দু ছবিই বেশি করতেন। আমি আসার পর 'বেহুলা'পরে 'আগুন নিয়ে খেলা','আনোয়ারা', তারপরে এখানে বাংলা ছবি চলতে শুরু করলো। তার আগে'রূপবান'হয়েছে। কিছু ফোক ছবি হয়েছে, মাইথোলজি হয়েছে। কিন্তু বাংলা ছবির জোয়ারটা আমার দ্বারা হয়েছে। তারপরে দেখেন আস্তে আস্তে উর্দু ছবি কোণঠাসা হয়ে যাচ্ছে।
রাজু : মানে, বিদায় করে দিলেন আপনারা?
রাজ্জাক: হ্যাঁ, বিদায়।
রাইসু: এটা কি আপনারা উর্দু ছবির বিরুদ্ধে একটা আন্দোলন হিসেবে করলেন?
রাজ্জাক: না, আমি বাংলা ছবি করবো এটাই আমার লক্ষ্য ছিলো। তখনো আমার সুপারহিট ছবি হয়েছে। এখানকার বাঙালি আর্টিস্ট যারা হিট হয়েছিলো তারা লাহোর, করাচির ছবি করেছে,আমি করিনি।
রাজু : একটাও করেননি?
রাজ্জাক: ঐ দেশের একটা ছবিও করিনি। এখানে ডাবল ভার্সন দুটো ছবি করেছিরাম। যেহেতু বাংলা হয়েছে। তারা বললো ডাবল ভার্সন করেন, যদি বেশি পয়সা পেতে চান।
রাজু : কোন কোন ছবি?
রাজ্জাক: 'ময়নামতি' আর 'মধুমিলন'। তবে আমি উর্দু একটাই করেছিলাম, সেটা এখানকার লোকের করা 'পায়েল' ছবিটা। বাংলায়'নূপুর'। এখানে বাংলা ছবির জোয়ার যখন শুরু হলো তখন উর্দু ছবি একরকম বন্ধ হয়ে গেলো। তখন প্রেসারটা এলো আমার উপরে। যদিও তখন আমার আগের নায়করাও ছিলো। কিন্তু রোমান্টিক ছবির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় আমাকে ডে-নাইট কাজ করতে হলো। ভারতীয় ছবি তখন এখানে বন্ধ হলো। তো টোটাল প্রোটেকশনটা থাকায় বাংলা ছবির প্রোডাকশন বেড়ে গেছে।
রাইসু: মধ্যবিত্ত দর্শকরা বাংলা ছবি ছাড়লো কবে?
রাজ্জাক: বাংলা ছবি তো ছাড়েনি। ঘটনা হলো মিডিয়া চেঞ্জ হচ্ছে, হলের পরিবেশটা একটু খারাপ হচ্ছে। বাংলা ছবি কিন্তু রিজেক্টেড হয়নি। এখনো বাংলা ছবি ভালো ব্যবসা করছে। মানুষের টেস্ট চেঞ্জ হয়েছে। আফটার লিবারেশন আমরা অনেক ফার্স্ট হয়ে গেছি। আমাদের জীবন ফার্স্ট হয়ে গেছে। চলচ্চিত্র ফার্স্ট হয়ে গেছে। যারা এডজাস্ট করতে পারছে না তারা দেখছে না, হলের পরিবেশ ভালো নেই, হলে গিয়ে ব্লাকে টিকিট কাটতে হয়। আর এখন তো হাই এন্টারটেইনমেন্ট বেড়ে গেছে। আগে ভিসিপি ছিলো ভিসিআর ছিলো, সাথে এখন ক্যাবল লাইন যোগ হয়েছে-স্টার টিভি, ডিস এন্টেনা। সব মিলিয়ে যারা ভালো লোক তারা ভাবে ঠিক আছে ঘরে বসে দেখি। তবে ভালো ছবি হলে দর্শক হলে যায়।
রাজু : যেমন 'পদ্মা নদীর মাঝি'।
রাজ্জাক: প্রচুর লোক দেখেছে।
রাজু : কিন্তু রাজ্জাক ভাই, আপনি যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে তখন যে দর্শকরা ছিলো তারা কিন্তু এখন আর হলে গিয়ে ছবি দেখছে না।
রাজ্জাক: ছবি না দেখার প্রথম কারণ হচ্ছে আমাদের ছবির কোয়ালিটি নষ্ট হচ্ছে। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে ঢাকা শহরে বা বাংলাদেশে এমন কোনো সিনেমা হল নেই যেখানে কোনো একজন ভদ্রলোক তার পরিবার পরিজন নিয়ে সিনেমা দেখতে পারে। মেইন প্রবলেম হচ্ছে এটা। ম্যাক্সিমাম হলে এয়ারকন্ডিশন থাকা সত্ত্বেও এয়ারকন্ডিশন চলে না।

রাজু : আরো কিছু কারণও বোধহয় আছে।
রাজ্জাক: হ্যাঁ, ধরুন সোসাল ক্রাইসিস তো আছেই।
রাইসু: একটা সার্টেন লেবেলে প্রস্টিট্যুশন শুরু হয়েছে?
রাজ্জাক: এ ব্যাপারে আমি ঠিক জানি না।
রাইসু: না, আপনার পক্ষে জানা সম্ভবও না। আপনি সেভাবে যেতে পারবেন না হলে।
রাজ্জাক: তবে এসব ছাড়া এক ধরনের দর্শক আছে যাদের অন্য কোনো এন্টারটেইনমেন্ট নেই। তারা পাগলের মত দেখছে।
রাইসু: আপনার দর্শকরা কিন্তু এখন আর ছবি দেখছে না।
রাজ্জাক: তারা এখন রিটায়ার্ড।
রাজু : আপনি প্রথম কিভাবে সিনেমায় এলেন, এর পিছনে কার উৎসাহ ও অবদান বেশি?
রাজ্জাক:আমি তো প্রথমে স্টেজে কাজ করতাম। আমি তো রেগুলার স্টেজ আর্টিস্ট ছিলাম। এবং তিন চারটে গ্রুপের সাথে কাজ করতাম।
রাজু : আপনি ব্যসিকালি মঞ্চ থেকে?
রাজ্জাক: অব্যশই মঞ্চ। তারপর চলচিত্রে। কোলকাতার দু'একটি ছবিতে কাজ করেছি।
রাজু : ছবিগুলোর নাম মনে আছে?
রাজ্জাক: মঙ্গল চক্রবর্তীর 'পঙ্কতিলক'। অভীক চ্যাটার্জীর 'এতটুকু আশা'। তারপর আমি ঢাকায় চলে আসি।
রাজু : কত সালে এলেন?
রাজ্জাক: ১৯৬৪ সালে। এসে এখানে বহু নাটক-টাটক করি। মঞ্চনাটক করি।
রাজু : মঞ্চনাটক করেছিলেন এখানে?
রাজ্জাক: অনেক নাটক করেছি। আলী ইমাম সাহেবের করেছি, জহিরুল হক সাহেবের নাটক করেছি, উনি আমার বিশিষ্ট বন্ধু। পরবর্তী পর্যায়ে চলচ্চিত্রের সাথে যোগাযোগ গড়ে ওঠায় কিছুদিন সহকারী হিসেবে কাজ করলাম। টেলিভিশনেও কিছুদিন কাজ করলাম। তারপর জহির রায়হানের সাথে যোগাযোগ হলো। উনি আমাকে প্রথম সুযোগ দিলো 'বেহুলা' তে তারপরতো আস্তে আস্তে একটার পর একটা ছবি করতে থাকি।
রাজু : জহির রায়হান সম্পর্কে আপনার কি কি মনে পড়ে?
রাজ্জাক: জহির রায়হান সম্পর্কে বলতে গেলে তো অনেক কিছু বলতে হয়। তাঁর স্নেহাশীষ ছাড়া, তাঁর ভালোবাসা ছাড়া আমার এখানে আসা সম্ভব ছিলো না। আমার জীবনে জহির রায়হানের যে অবদান, যে স্নেহ, ভালোবাসা ছিলো তা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। আমি শ্রদ্ধার সাথেই তা স্মরণ করি। একজন শিল্পীকে দাঁড় করানোর জন্যে, তাকে গাইড করার জন্যে যা যা করা দরকার তার সবই তিনি করেছেন আমার বেলায়। এরকম ব্যক্তিত্ব আর আসেনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। জহির রায়হানের অবদান বিশেষ করে আমার জীবনে বিরাট। এর পর আমার স্ত্রী।
রাইসু: আপনি ছবি শুরু করার আগেই বিয়ে করে ফেলেছেন?
রাজ্জাক: আমি খুব আর্লি বিয়ে করি।
রাজু : কত বছর বয়সে?
রাজ্জাক: ২০ বছর বয়সে।
রাইসু: তা না হলে তো ফিল্মের কাউকেই বিযে করতে হতো?
রাজ্জাক: না, নট দ্যাট। আমি খুব কনজারবেটিভ ফ্যামিলির ছেলে। আমাদের ফ্যামিলির কেউ এই লাইনে ছিলো না। আমি যখন কোলকাতায় প্রচুর নাটক করছি, বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি বাড়ির লোক চিন্তায় ছিলো কখন কোন ঘটনা ঘটিয়ে ফেলি। এই জন্যে তারা বললো যে বিয়ে করতে হবে। বিয়ে করলাম।
রাজু : আপনার পছন্দেই করলেন?
রাজ্জাক: না, পারিবারিক পছন্দ। প্রথম যে মেয়েকে দেখাতে নিযে গেছে তাকে আমার পছন্দ হলো না। দ্বিতীয় মেয়ে যে আমার স্ত্রী, তাকে দেখলাম, মত দিলাম বিয়ে হবে।
রাজু : ভাবীতো বোধহয় হিন্দু ছিলেন?
রাজ্জাক: মুসলিম। ওর ডাক নাম হচ্ছে লক্ষ্মী। ওর আসল নাম হচ্ছে খায়রুননেসা। আমি আদর করে ওকে লক্ষ্মী ডাকি।
রাজু : আপনি ভাবীকে আদর করে লক্ষ্মী ডাকেন, ভাবী আপনাকে এরকম আদর করে অন্য কোনো নামে ডাকে কিনা?
রাজ্জাক: ও আমাকে আদর করে সব সময় 'হিরো' বলে ডাকে। আগে থেকেই। যখন নাটক করতাম তখন থেকেই।
রাইসু: এখনো 'হিরো' বলে ডাকে?
রাজ্জাক: এখনো 'হিরো' ডাকে। ওর ডাকার কারণে আমার নাতনীরাও 'হিরো' বলে।
রাজু : আচ্ছা এই যে জহির রায়হান হঠাৎ করেই ডিজএপেয়ার্ড হয়ে গেলেন….
রাজ্জাক: কেন হলো, কিভাবে হলো–তলিয়ে দেখিনি, জানতেও পারবো না কখনো। একটি লোক হারিয়ে গেলো, তার কোনো খোঁজ হলো না–সে নিখোঁজ না মৃত। ইন্ডাস্ট্রির যে ক্ষতিটা হলো তা অপূরণীয়। আজকের চলচ্চিত্র অন্য রাস্তা, অন্য খাতে বইতো।
রাজু : কিন্তু রাজ্জাক ভাই, এখন ফিল্মে যে পলিটিক্স এবং পোলারাইজেশন রয়েছে তাতে করে অনেকেই ভালো ছবি করতে চাইলেও করতে পারে না। বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। এটা কি সত্যি?
রাজ্জাক: ষড়যন্ত্র বলবো না। এখন ফাইনান্স যারা করছে, বর্তমানে ফাইনান্স যারা করছে, তারা পুরোপুরি ব্যবসায়িক মনোবৃত্তিসম্পন্ন।
রাইসু: আরেকটা কথা শোনা গেল, এই যে হুমায়ূন আহমেদের ছবি ফ্লপ করলো, তারপর নাকি কারা কারা মিষ্টি বিলি করেছে?
রাজ্জাক: এগুলো একদম বাজে কথা।
রাইসু: কাজটা বাজে, নাকি কথাটা বাজে?
রাজ্জাক: কথাটা বাজে, কাজটাও। এটা ফালতু কথা। উনি পারসোনালি আমাকে দাওয়াত করেছিলেন। তার প্রিমিয়ার শোতে আমি গেছি। আমি ছবি দেখেছি। ফিল্মের কিছু এথিকস আছে। আজকে নাসিরুদ্দিন শাহ, শাবানা আজমী, দিপ্তী নাভালকে একশন ছবি করতে হচ্ছে। ভালো ছবির সাথে এখন কিছু সেন্টিমেন্ট, কিছু মশলা রাখতে হচ্ছে। যেমন রাজলক্ষ্মী প্রোডাকশনের যে ছবিগুলো। আমার ছবিগুলোতে কোনো ন্যাংটা দৃশ্য নেই। গল্প আছে।
রাজু : এগুলো কি ব্যবসা সফল হয়েছে?
রাজ্জাক: ব্যবসা সফল হয়েছে। আমার 'চাঁপাডাঙ্গার বউ' সুপারহিট হযেছে। আমার 'বদনাম' সুপারহিট হয়েছে। আমাকে চিন্তা করতে হবে দর্শক কি খাচ্ছে। একেবারে উলঙ্গ বানাবো না, কমপ্রোমাইজ করেই কিন্তু দর্শকদের কিছু খোরাক দিতে হবে। আর ফিল্ম মিডিয়াইতো আলাদা। এখন টোটাল আরেকটা মিডিয়ার লোক এসে ফিল্ম বানালে কিন্তু ফিল্ম চলবে না।
রাজু : ওনার ছবি ফ্লপ করার পিছনে এটাই কি একমাত্র কারণ?
রাজ্জাক: পাবলিককে তো আনতে হবে প্রথমে। পাবলিককে প্রথমে হলে ঢোকাতে হবে। তাকে আনতে হবে। তারপরে না আপনি বিচার করবেন আমার ড্রয়িং রুমটা রুটিসম্মত না একেবারে উলঙ্গ ছবি বাঁধানো রয়েছে। আজকে আপনি দেখেন গৌতম ঘোষের এই যে 'পদ্মা নদীর মাঝি', চলেছে তো, ভালো চলেছে। শুধু আমাদের দেশে না, সারা পৃথিবীতে কিন্তু। ঐ দিকে দেখেন হলিউডে কি হচ্ছে–হয় সাইন্সফিকশন, নয় একশন। আর নয়তো হরর। ক্লাসিক ছবি আর দেখতে পাচ্ছেন? হয় একশন, ভাল গল্প না হয় যাদুটোনা, উদ্ভট গল্প। আমাদের অনেক শিক্ষিত দর্শককে দেখেছি টেলিভিশনে ঐ হরর মুভি দেখছে।
রাইসু: রাজ্জাক ভাই, আমাদের এখানে তো বোধহয় সাইন্সফিকশন এখনো করা সম্ভব নয়। কারণ টেকনিক্যাল ডিজএডভান্টেজ আছে।

রাজ্জাক: না, এটা এখানে সম্ভব না। টেকনিক্যালি ডেভেলপ না আমরা।
রাইসু: আপনি ছবির কাহিনী বাছাই করেন কিভাবে?
রাজ্জাক: আমার নিজের ছবিগুলোতে কাহিনীকারকে ডাকি, তাকে মোটামুটি একটা আইডিয়া দেই। আর যেগুলো উপন্যাস দিয়ে করেছি–'চাঁপাডাঙ্গার বউ' করেছি, বৈকুন্ঠের উইল অবলম্বনে আমি 'সৎ ভাই' করেছি। উপন্যাস থেকেই করেছি। কিন্তু তার মধ্যে এডিশন হয়েছে, কিছু চেঞ্জ হয়েছে, তবে উপন্যাস থেকেই হয়েছে নরমালি। যখনই একটা ছবি আমরা বানাই একটা সাবজেক্ট হয়তো মাথার মধ্যে–জাস্ট আইডিয়াটা দিই যে গল্পটা এরকম হওয়া উচিত। মোটামুটি তারা দশ দিন পনেরো দিন একমাস সময় নিয়ে থাকেন।
রাজু : রাজ্জাক ভাই, অভিনয়ের ক্ষেত্রে নায়কের কোনো স্বাধীনতা থাকে?
রাজ্জাক: কনসেপশন চেঞ্জ করার অধিকার নায়কের নেই, সে যত বড় নায়কই হোক। আমি জীবনে করি নি। আপনি ডাইরেক্টর, আপনি আমাকে কনসেপশনটা দিচ্ছেন। আপনার এই ডায়ালগ, এই সিচুয়েশন-আমার যেটুকু ফ্রিডম থাকে সেটা আপনারটাকে মেনে নিয়ে। ক্যারেকটারের ইমেজ কি হবে সেটা এক বছর ধরে ঠিক করে রেখেছেন আপনি, সেটা আমি একদিনেই চেঞ্জ করতে পারি না। আপনি ডায়ালগ লিখেছেন বহু চিন্তাভাবনা করে এক বছর ধরে। ডাইরেক্টর হচ্ছে সুপ্রিম অথরিটি। আমি যেটা পারি আমার ডেলিভারির সময় যদি কোনো সংলাপ আটকায় তাহলে সেটা আমি বলতে পারি। তবে এটা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে হতে হবে। ডাইরেক্টর যেটা লিখে আনে সেটা আমার ম্যানারিজমের উপরেই থাকে।
রাজু : সেক্ষেত্রে কিন্তু আপনি আর অভিনয় করছেন না।
রাজ্জাক: আমিই করছি।
রাজু : না, আপনে অভিনয় করছেন না। এই অর্থে যে আপনার মতো করেই তো একটা চরিত্র তৈরি করেছে।
রাজ্জাক: তৈরি করেছে। এখন আমার কর্তব্য হবে ডাইরেক্টর যেটা করে এনেছে আমি সেটাকে ভেরিয়েশন দেবো। যাতে পাবলিক না বলে গত যে ছবিটি দেখেছি ঐ ছবিটার পারফমেন্স আর এই ছবিটার পারফমেন্স এক। এটা হচ্ছে আমার দায়িত্ব।
রাজু : ধরা যাক বৈকুন্ঠের উইল। আপনি অভিনয় করলেন, কিন্তু স্ক্রীপটা যদি হয় এই যে আপনার মতো করে একটা চরিত্র সে তৈরি করে নিলো?
রাজ্জাক: বৈকুন্ঠ তো বৈকুন্ঠের উইল-এ বৈকুন্ঠই থাকছে। কিন্তু ম্যানারিজমগুলো আমার ক্ষমতা কতটুকু, আমি কি স্টাইলে কাজ করি, আমি কতদূর যেতে পারি–এটার উপর তারা তৈরি করে। যে আর্টিস্টকে নিবেন ডাইরেক্টর সঙ্গে সঙ্গেই জেনে যান এই আর্টিস্ট এতটুকু যেতে পারে, এরপর সে যেতে পারে না। যে পারে তার ওপর সে বোঝাটা চাপানো যায়–আপনি এটা পারেন, কেন করবেন না। আর্টিস্টের ক্যাপাবিলিটির উপর নির্ভর করেন। কিন্তু ডাইরেক্টর ইজ দ্যা সুপ্রিম অথরিটি ইন এ সেট। এটা পিকচার এনি সিন–আর কারো কথা বলা যাবে না। রং যদি কম্পোজ হয় ক্যামেরাম্যান বলে দিবেন রং কম্পোজিশন হচ্ছে।
রাজু: আচ্ছা, কোন পরিচালকের সঙ্গে কাজ করে আপনি সবচেয়ে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেছেন?
রাজ্জাক: যাদের সঙ্গে আমি কাজ করেছি আমার সময়ে সবার একটা ঘরানা ছিলো, একটা স্কুল ছিলো, প্রত্যেকের সঙ্গে আমার অ্যাডজাস্টমেন্ট ছিলো। এদের মধ্যে সুভাষ দত্ত ভালো, কাজী জহির সাহেব আনডাউটলি সোশ্যাল ছবির ব্যাপারে হি ইজ এ নাইস লোক। মুস্তাফিজ সাহেবের সঙ্গে কাজ করেছি। তারও একটা স্কুল ছিলো। কামাল আহমেদ সাহেব ছিলেন। প্লাস জুনিয়র ছেলে যারা ছিলো মোটামুটি আমার সঙ্গে যারা কাজ করেছে তারা আমার সঙ্গে অত্যন্ত ভালো রিলেশন, খুব আনন্দদায়ক। সবার সঙ্গে। এর মধ্যে আমি কাজ করে আরাম পেয়েছি জহির রায়হান সাহেব এবং কাজী জহীর সাহেবের সঙ্গে। এরপর আছেন কামাল আহমেদ। এবং গাজী সাহেব, গাজী মাযহারুল আনোয়ার। ছবি বিষয়ে তার কনসেপশান খুব ভালো। যদিও উনি ডিক্লেয়ারই করেছেন যে, আমি কমার্শিয়াল ছবি ছাড়া বানাবো না। তার সঙ্গে কাজ করে ভালো লেগেছে।
রাজু: আচ্ছা, আমজাদ হোসেনের ছবিতে তো আপনি অভিনয় করেছেন?
রাজ্জাক: আমজাদ হোসেনের ছবিতে আমি অভিনয় করেছি। আমজাদ হোসেন আর আমি জহির রায়হানের গ্রুপে বহুদিন ছিলাম। উনি অভিনয় করেছেন, ডায়ালগ লিখেছেন। তার দুটো ছবিতে আমি অভিনয় করেছি। 'জুলেখা' তে অভিনয় করেছি, পরবর্তীতে 'দুই পয়সার আলতা'তে অভিনয় করেছি। আরেকটি করেছিলাম 'পিতাপুত্র'। হি ইজ এ গুড ডাইরেক্টর। কিন্তু ভীষণ কনফিউজড।
রাজু: কিসের কনফিউশন?
রাজ্জাক: কনফিউশন অনেক আছে, তার মধ্যে অ্যাজ এ আর্টিস্ট এন্ড রাইটার হি ইজ আনপ্যারালাল–আমজাদ হোসেন।
রাজু: ওনার কনফিউশান যেটা বললেন সেটা কোন জায়গাগুলোতে?
রাজ্জাক: না কমার্শিয়াল না আর্ট ফিল্ম–কোনটা করবে সে বুঝে উঠতে পারে না অ্যজ এ ডাইরেক্টর। কিন্তু অ্যজ এ রাইটার, অ্যজ এ অ্যাক্টর হি ইজ আনপ্যারালাল।
রাজু: অ্যাক্টর হিসেবে?
রাজ্জাক: অ্যাক্টর হিসেবে। সিরিও কমেডি, কমেডি যে কোনো সিরিয়াস রোল সে করতে পারে। আর তার ডায়ালগের জবাব নেই। খুব ভালো ডায়ালগ-সংলাপ।
রাজু: আপনি তো কমেডি ছবিতে খুব কম অভিনয় করেছেন?
রাজ্জাক: কমেডি মানে আমার যে কমেডি, সিরিও কমেডি। আমার ঐ সময়ের সব ছবিতে ফার্স্ট হাফে প্রচন্ড কমেডি থাকতো। সেকেন্ড হাফে গিয়ে সিরিয়াস হয়ে যেতো। একটা ইয়াং তরতাজা ছেলের যা হয় আর কি। সে সময় তো আর মারামারি ছিলো না। তখনকার একশনটা ছিলো আপনার কমেডি করা, টিজ করা গান গাওয়া।
রাজু: আপনি 'তেরো নং ফেকুওস্তাগার লেন'-এ তো ছিলেন?
রাজ্জাক: 'তোরো নং'-এ তো আমি এক্সটা আর্টিস্ট ছিলাম। যাই হোক, কমেডি ছবি বা সাসপেন্স মুভি এগুলো কিন্তু একবার দেখার পর আপনি আবার হলে যাবেন না। ইন্টারেস্ট শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু রোমান্টিক ছবি একবার দেখে ভালো লাগলে আবার ৭ দিন পর মনে হবে ছবিটা আবার দেখি। যেই রিপিট হয় তখনই ছবি হিট হয়। সব দেশেই ছবি রিপিট না হলে কিন্তু সুপারহিট হয় না। আমাদের দেশে কমেডি ছবি একবার দেখার পর আর কেউ দেখতে চায় না। আর সাসপেন্স মুভিও তাই, হরর মুভিও তাই। যার কারণে এই ছবিগুলো আমাদের এখানে হয় না।
রাজু: তাহলে কমেডি ছবির ভবিষ্যত তো খুব খারাপ বলে মনে হচ্ছে?
রাজ্জাক: শুধু কমেডি করে ছবি করা মুশকিল।
রাজু: কমেডি নাটক তো আমাদের এখানে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে।
রাজ্জাক: নাটক আর মুভি তো আলাদা জিনিস। মিডিয়াই আলাদা। ওখানে যাচ্ছেন আপনি অন্য নজর নিয়ে। টিভি দেখছেন আপনি অন্য নজর দিয়ে। কিন্তু যখন আপনি ছবি দেখতে যাচ্ছেন, তখন আপনি অনেক কিছু চাচ্ছেন। অনেক কিছু আশা করে যাচ্ছেন। এই হবে, এই হবে, টেকনিক্যাল এই হবে।
রাজু: বাচ্চাদের জন্যে কোনো ছবি বানানোর পরিকল্পনা আপনার আছে কি?
রাজ্জাক: এখনো পর্যন্ত আছে। দেখি আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে তাহলে আগামী বছর একটা বাচ্চাদের ছবি করবো।

রাজু: নাম কি নির্ধারিত হয়েছে?
রাজ্জাক: গল্প আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি…
রাজু: বাচ্চাদের জন্যে গল্প?
রাজ্জাক: আমি কিছু গল্প পেয়েছি। কালকেই আমি একটা গল্প পড়ছিলাম। আমি যার বই পাই তার বই-ই পড়ি।
রাজু: আপনি গল্পের কথা বলতে যাচ্ছিলেন সেটা কোনটা?
রাজ্জাক:নামটা ভুলে গেলাম। কালকেই শেষ করলাম। ইমদাদুল হক মিলনের একটা গল্প আছে। বস্তির বাচ্চাদের নিয়ে। ছোট গল্প বড় করা যায়। গল্পটা আবার ট্র্যাজিক। দেখি আরেকবার পড়বো। যদি ভালো লেগে যায় তাহলে আমি ওনার সঙ্গে কথা বলবো।
রাজু: বাচ্চারা এই ছবির দর্শক হবে-এটা মাথায় রেখে করতে চাচ্ছেন নাকি বাচ্চাদের নিয়ে…..
রাজ্জাক: এবস্যুলুটলি তাই।
রাজু: মানে কোনটা চাচ্ছেন?
রাজ্জাক: বাচ্চাদের নিয়ে আমি একটা ফ্যান্টাসি ছবি করতে চাই। সাইন্সফিকশন নয়, ফ্যান্টাসি। বাচ্চাদের রূপকথার ওপর। এতে করে বাচ্চাদেরও পাবো, বাচ্চাদের মা-বাবাকেও পাবো। শুধু বাচ্চাদের নিয়ে আমাদের এখানে ছবি করা মুশকিল হবে।
রাজু: রাজ্জাক ভাই, বাচ্চাদের জন্যে সেই ছবিটা, ঐ যে 'নেভার এন্ডিং স্টোরি' ছবিটা কি আপনি দেখেছেন?
রাজ্জাক: হ্যাঁ, দেখেছি।
রাজু: এই ধরনের ফ্যান্টাসি ছবি আমাদের এখানে করা সম্ভব কিনা?
রাজ্জাক: আমাদের দেশে সম্ভব নয়।
রাজু: কারণ টেকনিক্যাল ডিজএডভান্টেজ রয়েছে।
রাজ্জাক: টেকনিক্যাল এডভান্টেজ আমরা পাবো না। আমাদের এখানে সম্ভব না।
রাজু: তাহলে ফ্যান্টাসিটা কোন পর্যায়ে থাকবে?
রাজ্জাক: আমাদের দেশীয় জিনিসের মধ্য দিয়ে..অর্থাৎ একটা কাল্পনিক গল্প হতে হবে। যেমন আপনার সত্যজিৎ রায়ের 'পিকু', তারপরে রবী ঘোষ অভিনীত যে ছবিটা..
রাইসু: 'হীরক রাজার দেশে'?
রাজ্জাক: 'হীরক রাজার দেশে'। আমি ওরকম একটা চিন্তা-ভাবনা করছি।
রাজু: বাচ্চাদের জন্যে আমাদের দেশে ছবি তো খুব কম।
রাজ্জাক: খুবই কম। অন্যান্য দেশে বাচ্চাদের ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকার সহায়তা করে।
রাজু: এটা কি সরকারের উদাসীনতার কারণেই হচ্ছে না, নাকি আমরা কোনো সঠিক প্রস্তাব হাজির করতে পারছি না?
রাজ্জাক: প্রস্তাব হাজির করা হয়। বহু চেষ্টা করা হয়। যেমন বাদল রহমান'এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী' নিয়ে কতো রিকোয়েস্ট করেছে… বলেছে আমাকে ট্যাক্স ফ্রি করে দিলে আমি অন্তত খরচের টাকাটা তুলে আনতে পারি।
রাজু: সরকারের কাছ থেকে কি কি সুবিধা পাওয়া উচিত ভালো চলচ্চিত্র তৈরি করার স্বার্থে?
রাজ্জাক: ট্যাক্স ফ্রি করতে হবে। গভমেন্টের অনুদান আছে। আমি এগুলো আগেই চাচ্ছি না। গভমেন্ট আমাকে বলুক ঠিক আছে আপনি আগে ছবিটা বানান, তারপর দেখে আপনাকে টাকা দেবো। তাতেও রাজি আছি। কিন্তু তাও তো দেয় না। এখন ধরুন অনুদান দিচ্ছে ২৫ লাখ টাকা, বর্তমানে যে কোনো রকমের একটা ছবির কস্ট হচ্ছে ৬০ লাখ টাকা। নরমাল ছবি। কমার্শিয়াল ছবি করতে গেলে ১ কোটি টাকা পড়ছে। এটা কি করে সম্ভব। তখন বাধ্য হয়ে সে কমার্শিয়াল ছবি করে। এতে তার রিটার্নটা হয়ে যাচ্ছে।
রাজু: আচ্ছা, সুস্থ্য চলচ্চিত্রের একটি বিকল্প ধারা হিসেবে শর্ট ফিল্ম আন্দোলন হচ্ছে এদেশে। এ ধারাকে কতটা সুস্থ্য মনে করেন?
রাজ্জাক: এটা ভালো। যদি ব্যাপকভাবে করতে পারে তাহরে ইন্ডাস্ট্রির উপকার হবে।
রাজু: কোন ইন্ডাস্ট্রির?
রাজ্জাক: ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ।
রাজু: কিন্তু তারাতো আপনাদের ইন্ডাস্ট্রির বাইরে থেকে কাজ করছেন, তারা তো প্রতিষ্ঠান বিরোধী ভূমিকায় রয়েছেন?
রাজ্জাক: প্রতিষ্ঠানবিরোধী হলে তো হবে না। এর মধ্যে থেকেই কাজ করতে হবে। এগুলো হচ্ছে প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ।
রাজু: কিন্তু ওরা তো নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠানের অঙ্গ হিসেবে বিবেচনা করে না।
রাজ্জাক: মানতে হবে। এছাড়া বেশি দূর এগুতে পারবে না। একঘরে হয়ে থাকবে। নিজেদেরকে ব্রাক্ষণ ভাবলে তো হবে না। আলাদা হয়ে কোনো কিছু করা সম্ভব না। এটা হলো ঢেঁড়স বাগানে লাল শাক চাষ করার মত ব্যাপার। কিন্তু বাগানটাকে আপনি ঢেঁড়স বাগানই বলবেন।
রাজু: চিত্রালীর সম্পাদক আহমেদ জামান চৌধুরীকে আপনি একবার ঘুষি মেরে রক্ত বের করে দিয়েছিলেন। এটা কি ফিল্মেরই কোনো অংশ হিসেবে করলেন?
রাজ্জাক: না, না, এটা আসলে বলার মত কোনো ব্যাপার নয়। তিনি আমার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। এটা বন্ধুত্বের মধ্য দিয়ে ঘটেছে। ওনার সঙ্গে আমার খুব বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। এ সম্পর্কে আর কিছু না বলাই ভালো।
রাজু: বিয়ে করার পর অন্য কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছিলেন?
রাজ্জাক: না, ঠিক প্রেম নয়। তবে বন্ধুত্ব হয়েছে অনেকের সাথেই।
রাজু: শোনা যায় কবরীর সাথে আপনার প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। তার ঘরও নাকি ভাঙালো এই জন্যে।
রাজ্জাক: না না, এটা ঠিক নয়। তার সাথে আমার খুব ভালো সম্পর্ক ছিলো। আমরা যেহেতু খুব জনপ্রিয় জুটি ছিলাম, তাই লোকজন মনে করতো আমাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক রয়েছে। এটা আসলে একটা গুজব।
রাজু: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিকাশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কি কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন? কি ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
রাজ্জাক: বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের বিকাশে তাঁর বিরাট ভূমিকা ছিলো। তিনি দেশীয় চলচ্চিত্রের বিকাশে বিদেশী ছবির আমদানি এবং প্রদর্শনী প্রায় বন্ধই করে দিয়েছিলেন। ভারতীয় এবং পাকিস্তানি ছবি একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তারপর তিনি এফডিসি গড়ে তুললেন। আজকের বাংলাদেশী চরচ্চিত্রের যে বিকাশ এটা বঙ্গবন্ধুরই অবদানের ফল।
রাজু: বাংলাদেশে এখন নতুন সরকার। কেমন বোধ করছেন।
রাজ্জাক: ভালো লাগছে। তবে এখনো তো শিশু অবস্থায় আছে। এখনও বিশেষভাবে বলার মত সময় আসেনি। অপেক্ষা করতে হবে।
রাজু: শিশু বলছেন কেন? এর আগেতো তারা এক সময় ক্ষমতায় ছিলো।
রাজ্জাক: শিশু মানে, এবারতো মাত্র কয়েকদিন হলো। সেই অর্থে শিশু। আমার ধারণা তারা ভালো করবে।
রাজু: সিনেমার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক কতখানি?
রাজ্জাক: সিনেমার সঙ্গে রাজনীতির সম্পর্ক তো অবশ্যই আছে। বাংলা সিনেমায় তো গণতন্ত্রের শুরু হয়েছে 'পাগলা রাজা'য়।
রাজু: কিভাবে?
রাজ্জাক: 'পাগলা রাজা'য় রাজা বেশ অন্যরকম। সে চায় ডেমোক্রেসি। প্রজাদের সঙ্গে বসে খেতে চায় সে। এজন্যেই শেষ পর্যন্ত সে বিপদে পড়লো।