পরাজয় মানে না মানুষ (তৃতীয় পর্ব)

হাবীবুল্লাহসিরাজী
Published : 6 June 2020, 08:56 AM
Updated : 6 June 2020, 08:56 AM

১৯.০৫.২০২০
মঙ্গলবার


দক্ষিণ থেকে উত্তরে আসতেই সম্পূর্ণ দৃশ্যপট বদলে গেলো। আকাশ আড়াল হ'লো নির্মিয়মাণ দালানকোঠায়। এখন চোখের সম্মুখে কেবল কংক্রিট-ইট-কাঠ-লোহার অখণ্ড অবসর। এ যেন তাদের করোনাকালের দিশাহীন আলস্য। ফাঁকফোঁকড়ে যেটুকু আলো ঘরে ঢুকছে, তাদের তোয়াজে রাখলে কোনোমতে কাজ চালিয়ে নেয়া যায়।
আজাদ রহমান ছিলেন বাংলা গানের এক উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব। বিশিষ্ট সংগীত-পরিচালক, গায়ক ও বাংলা খেয়ালের এই প্রাণপুরুষ ইহধাম ত্যাগ ক'রলেন গত মে ২০২০, ঢাকায়। ১৯৪৪ সালে বর্ধমানে জন্ম। তিনি সরকারি সঙ্গীত মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ছিলেন, ছিলেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীর মহাপরিচালক। তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করি।
দেশে ও বিদেশে করোনার দৈনন্দিন গতি-প্রকৃতির দিকে নজর রাখতে না রাখতেই হুট ক'রে হাজির হ'য়েছে ডেঙ্গু। মশার উপদ্রব বাড়তি ছিলো, তাই ব'লে এডিস যে এমন কাণ্ড বাঁধিয়ে দেবে– তা কোনোমতেই ভাবনায় আসেনি। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হ'য়ে বঙ্গোপসাগরে দাপাচ্ছে সুপার ঘূর্ণিঝড় আম্পান।


বাংলাদেশে কোভিড-১৯-এর সংক্রমণ এখন মনে হয় শীর্ষে অবস্থান ক'রছে। পরীক্ষাকেন্দ্র যেমন দিনদিন বাড়ছে, তেমনি আক্রান্তের সংখ্যাও লাফিয়ে-লাফিয়ে চূড়ায় উঠছে। সঙ্গে সমানতালে পাল্লা দিচ্ছে মৃতের সংখ্যা। স্বাভাবিকভাবেই রাজধানী ঢাকা সবার মাথায়। দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি ধ'রতে গেলে রাজধানীকেন্দ্রিক, ফলে ঢাকামুখি মানুষের ঢল যে কোনো পরিস্থিতিতে নিয়ন্ত্রণ করা অসম্ভব ব্যাপার। আবার পালা-পার্বনে ছুটি প'ড়লে তো কথাই নেই। সবার যেন ঢাকা ছাড়ার একটি হিড়িক লেগে যায়। এই যেমন এখন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মানুষ স্বজনের কাছে ফিরতে চাইছে। আবার করোনার কারনে সড়ক, নৌ ও আকাশপথে যাতায়তের উপর রয়েছে নিষেধাজ্ঞা। জরুরি পরিবহনের অংশ হিশেবে পন্যবাহী ট্রাক এবং ফেরি চলাচল অব্যাহত রাখা হ'য়েছিলো। কিন্তু প্রতিটি ফেরিঘাটই এখন উপচে পড়া মানুষে করোনাকালের সকল সামাজিক বিধি-নিষেধ লঙ্ঘনে মেতেছে এবং সর্বনাশের বীজটি আনন্দযাত্রার মধ্যেই প্রোথিত হ'য়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি যখন এমন, তখন নৌপথে সকল ফেরি চলাচল বন্ধ করা হ'লো। কিন্তু সমস্যা থেকে কি পুরোপুরি রেহাই মিললো? না। দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে প্রয়োজনীয় মালামাল পরিবহনের জন্য তো ফেরি পারাপার চাই। যার-যার বর্তমান অবস্থানে থেকে এবারের ঈদটি পালিত হ'লে সকলের জন্য হ'তো মঙ্গল। ঈদ ফিরে-ফিরে আসবে, কিন্তু জীবন তো একবারই। আজ একদিনে বাংলাদেশে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২১ এবং এ পর্যন্ত সর্বমোট মৃত্যু ৩৭০।
বেশদিন ধ'রেই ডেঙ্গুতে প্রাণহানী ঘটছে অসতর্কতা এবং কর্তব্যে অবহেলার কারণে। গতবছর তো একদম বিপুল বিক্রমে ঝাঁপিয়ে প'ড়ে কেড়ে নিয়েছিলো অগুনতি প্রাণ। এবারও করোনার মধ্যেই ডেঙ্গু চোখ রাঙাচ্ছে। দীর্ঘদিনের ছুটি এবং দায়িত্বপালনে ঘাটতি অপরিচ্ছন্নতার লাল দাগটি ছুঁয়ে ফেলেছে। জলাবদ্ধতাও বেড়েছে কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে। বাসগৃহ ও আঙ্গিনার রক্ষণাবেক্ষণেও পরিলক্ষিত হ'চ্ছে অনীহা। আর সব মিলিয়েই বাড়ছে এডিস মশার প্রজননক্ষেত্র। যার-যার অবস্থান থেকে এই দুঃসময়ে প্রতিরোধ গ'ড়ে তোলা জরুরি।
মহা ঘূর্ণিঝড় আম্পান আসছে। বঙ্গোসাগর উত্তাল। কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে ৬ নম্বর, আর মোংলা ও পায়রা বন্দরে ৭ নম্বর বিপদসংকেত দেখাতে বলা হ'য়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রে বাতাসের গতি ২৩০ কিলোমিটার। আগামীকাল বুধবার সন্ধ্যা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলে আঘাত হানার সম্ভাবনার বার্তা আবহাওয়াবিদেরা দিয়েছেন। জলোচ্ছ্বাস ১০ ফুট পর্যন্ত হ'তে পারে। আশ্রয়কেন্দ্রে করোনার কারণে পরিলক্ষিত হ'চ্ছে নতুন সমস্যা। বিধিবদ্ধভাবে সামাজিক দূরত্ব মেনে অবস্থানের জন্য চাই পূর্বের চেয়ে তিনগুণ বেশি আশ্রয়।


জীবন থেমে নেই। নিত্যকর্মের মধ্যেও তাই আবশ্যিক হ'য়ে পড়ে কোনো-কোনো বিশেষ কর্তব্যপালন। জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের প্রয়াণে বিশেষ ফেসবুক লাইভের আয়োজন করে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান অন্যপ্রকাশ। রাত দশটার এ লাইভে আমিসহ আর যাঁরা অংশ নেন তাঁরা হ'লেন – আসাদ চৌধুরী, সেলিনা হোসেন, কামাল চৌধুরী, নাসরীন জাহান ও মোনালিসা দাশ। সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করেন আবদুল্লাহ নাসের এবং সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন মাজহারুল ইসলাম, দেলওয়ার এলাহী ও ফরহাদ হোসেন। বিশ শতকের অগ্রণীপুরুষ আনিসুজ্জামান একবিংশ শতাব্দীতে এসেও ছিলেন বাঙালিজীবনে সমান অপরিহার্য।

২২.০৫.২০২০
শুক্রবার

সকাল হাসলো বেশ বিলম্বে। তার এই হাসির মধ্যে মিহিদানার মতো লেগে ছিলো গত ক'দিনের দুধ-চিনির গতরে লেবুর বড়ো-বড়ো ফোঁটা। ছানা কেটে বেরুনোর ফাঁকে একটা ভারি রকমের দলাই-মলাই হ'য়ে গেলো। বঙ্গোপসাগর উথলে উঠে ভাসিয়ে দিলো বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গ। জলের দাপট আর হাওয়ার তোড়ে তছনছ হ'লো প্রকৃতি ও স্থাপনা। বৃক্ষনিধন, ফসলের নাশ, বসতি উজাড় থেকে জীবনহানির মাত্রা ছিলো অপরিসীম। যা বিনষ্ট হয়, তা কোনোমতেই আর ফেরত মেলে না। তবুও সামাল দেবার জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিতেই হয়। গণমাধ্যমে পাওয়া পরিসংখ্যানে বাংলাদেশে হতের সংখ্যা ২০ ছুঁইছুঁই এবং আর্থিক ক্ষতি এগারোশ' কোটি টাকা অতিক্রম ক'রেছে। পশ্চিমবঙ্গে মৃতের সংখ্যা ৭০ ছাড়িয়ে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলের খবর পেতে আরো সপ্তাহখানেক লেগে যাবে। তখনই কেবল ক্ষয়ক্ষতির একটি সঠিক হিশেব মিলবে। কী বাংলাদেশ, কী পশ্চিমবঙ্গ–আম্পানের তাণ্ডব থেকে প্রাথমিকভাবে বুক আগলে সামাল দিয়েছে সুন্দরবন। উপকূলের বনরাজি জলোচ্ছ্বাস ও বাতাসের ধ্বংসলীলা প্রাথমিকভাবে প্রতিরোধ করায় মূল ভূখণ্ডে চাপ কিছুটা কম প'ড়েছে। এভাবেই অরণ্যই বারবার প্রাণিকূলের ত্রাতা হ'য়ে ফিরে আসে এবং সহ-অবস্থানের যথার্থতা বুঝিয়ে দেয়।

দু'মাস হ'তে চ'ললো বাংলা একাডেমির কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ। ফলে বছরের পরিকল্পিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে ছেদ প'ড়েছে। মুজিববর্ষের প্রকাশনার পাশাপাশি নিয়মিত প্রকাশনাগুলোরও কাজ বন্ধ। গবেষণা, পাঠাগার, জাদুঘর, বিক্রয়কেন্দ্র, ছাপাখানা…কোথাও কোনো কর্মচাঞ্চল্য নেই। নেই কোনো অনুষ্ঠানাদির আয়োজন। দেয়ালঘেরা প্রায় এক মৃত অঞ্চলের মধ্যে অবস্থান ক'রছে দালানকোঠা, বৃক্ষরাজি, জলাশয় ইত্যাদি।
কবে নাগাদ এবং কীভাবে সবকিছু ঠিক হবে তা বলা দুরূহ। করোনার ক্ষোভ তো কোনোমতেই হ্রাস পাচ্ছে না। বিশ্বে আজ পর্যন্ত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হ'য়ে মৃতের সংখ্যা ৩৩৫২১৮ জন। এতো যে বিধি-নিষেধের বেড়াজাল, এতো যে সতর্কতা –কোনোকিছুতেই তো কিছু হ'চ্ছে না। পৃথিবীর উন্নত পরীক্ষাগারগুলো দিবানিশি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে প্রতিষেধক আবিস্কারের। কল্যাণকামী মানুষের কোনো শ্রম তো বিফলে যেতে পারে না!
সাহিত্যিক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীবের সঙ্গে করোনা প্রসঙ্গে কথা হ'লো। কথা হ'লো দীর্ঘদিন গৃহবন্দি থাকার ভালো-মন্দ নিয়ে। দীর্ঘ ফোনালাপের একসময় করোনাকালে লেখা গল্পের বিষয়টি এলো। এ সময়ের লেখা সেরা গল্পগুলো নিয়ে 'উত্তরাধিকার' পত্রিকার বিশেষসংখ্যা করার প্রস্তাব দিলেন। বিষয়টি নিয়ে ভাবা যেতে পারে।
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। বন্ধ হ'চ্ছে উত্তরের জানালার কাচ, টানা হ'চ্ছে জানালার পর্দা। দক্ষিণের আলো এ প্রান্তে পৌঁছার কারসাজি শেষ হ'তে না হ'তেই লাল-চা আদা-লবঙ্গের ঝালে মিশে টেবিলে নামে। উষ্ণতা এবং সুঘ্রাণে পরখ ক'রে নিতে হয় আয়ুর খবর।
ভুল একবার হ'য়ে গেলে সংশোধনের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে বড়ো মাশুল দিতে হয়। মিথ্যার বেলায়ও তদ্রুপ। এক মিথ্যার জন্য হাজারো মিথ্যা জোট পাকায়। ভুল ও মিথ্যা তাই বিয়োগ ও ভাগ হ'য়ে দাবড়িয়ে বেড়ায় জীবন। এবং জীবনও তো এক কাঠি জ্বলা দিয়াশলাই। ফুঁ দিলেই শেষ।

২৫.০৫.২০২০
সোমবার


আজ ঈদ।
আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মজয়ন্তী।
'ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ/তুই আপনাকে আজ বিলিয়ে দে, শোন আসমানী তাগিদ'। ঈদ এবং কাজী নজরুল ইসলামের এই গান বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের জন্য সমার্থক। ঈদের চাঁদ দেখার সঙ্গে-সঙ্গে বেজে ওঠে এই গান। যেন এ গানের মধ্য দিয়েই শুরু হ'লো ঈদোৎসব। বাংলাদেশ তথা সারা পৃথিবীর প্রেক্ষিতে এবারের ঈদ এক অন্যরকম ঈদ। তাৎপর্যময়ও বটে। কেউ কখনো এমন উৎসব পালন পূর্বে দেখেনি। বিষয়টিই এমন, মিলনের ক্ষেত্র এখন বিচ্ছিন্নতায় পরিণত হ'য়েছে। তারই অংশ হিশেবে ময়দানের ঔদার্য স্ব-স্ব গৃহে কিংবা হাসপাতালে অন্তরীণ। স্পর্শহীন উত্তাপের মধ্য দিয়ে একে-একে আমরা অতিক্রম ক'রছি আমাদের বোধ ও চেতনার খণ্ডগুলো। 'আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড় ঘুমায় ওই…'।
কাজী নজরুল ইসলামের জন্মদিন পালিত হ'চ্ছে করোনাবন্দি অবস্থানে থেকে। বেতার-টেলিভিশন সীমিত সাধ্যের মধ্যে কিছু অনুষ্ঠান প্রচার ক'রছে। 'খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে/বিরাট শিশু আনমনে। /প্রলয় সৃষ্টি তব পুতুল খেলা/নিরজনে প্রভু নিরজনে।। এমন কি হবার কথা ছিলো?
সতেরই মার্চ, ছাব্বিশে মার্চ, পহেলা বৈশাখ, পহেলা মে, পঁচিশে বৈশাখ, এগারোই জ্যৈষ্ঠ…ইত্যাদি দিনগুলোর সঙ্গে এবার পঁচিশে মে-ও আমাদের সম্মিলন থেকে বিরত রাখলো; শ্রদ্ধা ও মর্যাদার বিস্তারে ম্রিয়মাণ হ'য়ে রইলো। তাই ব'লে কি আমরা বঙ্গবন্ধু, স্বাধীনতা, নববর্ষ, মে দিবস, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল…কিংবা ঈদোৎসব থেকে স'রে গেলাম? না, তা কখনোই নয়। ব্যক্তিবর্গ কী বিষয়গুলো যে আমাদের অস্থিমজ্জায় ও এদেশের প্রতিটি ধূলিকণায় মিশে আছে। আকাশে-বাতাসে তাদের নিয়েই তো আমরা বেঁচে আছি।
গৃহবন্দি দিনটি হঠাৎ কিছুক্ষণের জন্য ঝলমল ক'রে উঠলো। অর্থী এসেছিলো মীরপুর থেকে, তবে একা। করোনার কারণে স্বামী-সন্তানদের ঘরে রেখে এসেছে। তীর্থ এসেছিলো গ্রিনরোড থেকে, সপরিবারে। দূরত্বের স্বল্পতা ওকে স্ত্রী-কন্যা নিয়ে রিক্সায় আসতে বিঘ্ন ঘটায়নি। সকালে কানাডার লন্ডন-অন্টারিওতে অর্চি-সাবাবার সঙ্গে ফোনে কথা হ'য়েছে। প্রিয় কী অপ্রিয় ব'লে আজ আর বিভাজন নয়, সকলের জন্য ঈদের শুভেচ্ছা। ঈদ মুবারক।
গত কয়েকদিন লেখাপড়া তেমন একটা না হ'লেও নেটফ্লিক্সে ছবি দেখা হ'য়েছে প্রচুর। প্রচুর অর্থেই প্রচুর! দিনরাত মিলিয়ে তিন-চারটে ক'রে বাংলা-হিন্দি-ইংরেজি ছায়াছবি চোখ ঝাপসা ক'রে দিয়েছে। প্রায় বাদ-বিচারহীন এই ছবি-প্রদর্শনে একটা বিষয় অন্তত বুঝতে পারলাম, ছবির বিষয়ের পাশাপাশি ভাষাও দারুণরকম পাল্টে যাচ্ছে। তুচ্ছ আর কোনোমতেই তুচ্ছ থাকছে না। গৌণ তার অভিযানে আর মুখ্যকে তেমন গ্রাহ্যে নেবার প্রয়োজন দেখছে না। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তারকা-দাপটের চেয়ে অভিনয়ের মর্মবোধই প্রাধন্য পাচ্ছে। অন্যদিকে মারদাঙ্গা ছবিরও দৃশ্যরূপ চিত্রায়নে বেড়েছে কারিগরী নৈপুণ্য।
করোনার সঙ্গে সারা পৃথিবী যুদ্ধে মেতেছে। একটি ভাইরাসের বিপক্ষে সর্বশক্তি প্রয়োগ ক'রেও বিজ্ঞান হিমশিম খাচ্ছে। মানুষ তার অস্তিত্ব নিয়ে আছে পরম সংকটে। দোদুল্যমান এ অবস্থানে ক্ষুধা ও কোভিড-১৯ যেন মুখোমুখি সংঘর্ষে লিপ্ত। সারা পৃথিবীতে মৃতের সংখ্যা সাড়ে তিন লক্ষ ছুঁইছুই। আর এদিকে সরকারিভাবে আমাদের গৃহে অবস্থানের কালও দু'মাস পূর্ণ হ'লো। পরিস্থিতি ক্রমান্বয়েই অবনতির দিকে যাচ্ছে। মৃতের সংখ্যা আজ অব্দি পাঁচশ' ছাড়িয়ে গেছে।

৩১.০৫.২০২০
রবিবার

বাংলাদেশে করোনাকালের প্রথম প্রহর শেষে আজ দ্বিতীয় পর্বের শুরু। এই যে কালনির্ণয় তা-ও তো পরিস্থিতি-বিবেচনারই ফল। বিশেষ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে সবকিছু সমাধা করার প্রচেষ্টা অতি দুরূহ। গত মার্চ-এপ্রিল-মে মাসের জনজীবন ও কর্মফল ছিলো সম্পূর্ণভাবে অচেনা এবং পৃথক।
মৃত্যু, ভয়, সচেতনতা, ক্ষুধা, কর্মহীনতা, গৃহবন্দিত্ব, সহায়হীনতা… আমাদের আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। আস্থা বিনষ্ট হ'চ্ছে, বিশ্বাসে শৈথিল্য দেখা দিচ্ছে, আর মর্চে ধ'রছে মগজে ও মননে। জানি না, বুঝিও না সবকিছু স্বাভাবিক করার এ প্রয়াস কতোটা সাফল্যের মুখ দেখবে! গত ২৪ ঘণ্টায় মৃতের সংখ্যা শীর্ষে পৌঁছেছে। আজকের ৪০ জন নিয়ে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আমরা হারালাম ৬৫০ জনকে। যে লক্ষণ পরিলক্ষিত হ'চ্ছে, তাতে ক'রে দু'একদিনের মধ্যে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৫০০০০ ছাড়িয়ে যাবে। তারপরও তো আছে পৃথিবীর বিভিন্নস্থানে বাংলাদেশের নাগরিকদের করোনায় প্রাণ হারানোর বিষাদময় চিত্র। দেশে এবং বিদেশে বিগত মাসগুলোয় বাংলাদেশ শুধু তার দেশপ্রেমিক নাগরিকদের হারায়নি, হারিয়েছে তার অর্থনৈতিক ভিত্তির অংশবিশেষ।
অফিস-দোকানপাট নির্ধারিত সময়সীমা মেনে শুরু হ'য়েছে। ব্যাংক চ'লছে, আগামীকাল থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সাধারণ পরিবহন চ'লবে।
কেমন একটা শান্ত-শীতল আজকের বাংলা একাডেমি। দ'মাসের অধিক সময় ধ'রে স্বাধীনভাবে বেড়ে ওঠা ঘাস-লতাদের শরীর-মন ছিলো চনমনে। হে মায়ামাখা বৃক্ষরাজি, প্রিয় জলাশয়, স্মৃতিময় অট্টালিকাসমূহ – আমরা যে নিরাপদ আশ্রয় চাই, চাই অঙ্গীকার পালনের সাহস। ভয় নয়, সচেতনতা ও দায়িত্ববোধ থেকে স্পর্শ ক'রতে চাই বিজয়চিহ্ন।
অবস্থানরূপ দ্বিচারিতায় ঋতু বৈশিষ্ট্যময়। কালের মধ্যে জুড়ে দেয়া ঘট, এক এবং দুইয়ে পূর্ণ কিংবা জট। প্রতিমাসে যুক্ত হ'য়ে জ্বালায়, আবার দ্বিমাসে মুক্তমনে আকাশ- বাতাসের সমাচার জ্ঞাপন করে। দ্বিতীয়টি একটি নিয়মনিগড়ে থাকলেও প্রথম ঋতুকাল একান্তই শরীরপক্ষীয়। লিঙ্গ-বয়স সেখানে আপনার প্রভাববিস্তারে সচেষ্ট থাকে। এক কথায় আরেক কথা আসে, কথায়-কথায় বোনা হয় জাল। ঋতু নামের যে মেয়েটি ১৯৭৩ সালে রোকেয়া হলে যোরার সহপাঠিনী ছিলো, আজ তার খবর মেলা ভার। অন্যপক্ষে, ঋতুপর্ণ ঘোষ, বাংলা চলচ্চিত্রের এক উজ্জ্বল নাম, তাঁকেও তো দেখা-বোঝার চালচিত্রটি একদম ভিন্ন। ঋতুসূত্রে গাঁথা যা সকল তার মধ্যে যেমন ষড়দর্শন আবার তেমনি প্রাণ-উন্মোচন।
ধুম হিন্দি ছবি দেখা হ'লো গত ক'দিন। তারকাবিহীন কাহিনিনির্ভর চলচ্চিত্রগুলো অভিনয়গুণে ভালো লাগলো। সঙ্গে সংগীতের চমৎকার আয়োজন। এবং সবকিছুই ঘটছে সমসাময়িক নির্মাণে।