পরাজয় মানে না মানুষ: মে দিবস, করোনা ও আনিসুজ্জামান

হাবীবুল্লাহসিরাজী
Published : 18 May 2020, 08:08 AM
Updated : 18 May 2020, 08:08 AM

০১.০৫.২০২০
শুক্রবার


মহান মে দিবস আজ। মেহনতি মানুষের সমর্থনে আমাদের লড়াই জারি থাকুক আমৃত্যু।
ন্যায়-অন্যায় কিংবা বিচার-অনাচারের বিষয়াদি এখন বড়ো বেশি টোকা দিচ্ছে। ব্যক্তিগত ক্ষোভ-আক্ষেপ চেপে রাখা তাই দুরূহ।
আমাদের তেল বেড়েছে। পরিমাণে এতো যে মাটির পাত্রে ভ'রেও কুল পাওয়া যাচ্ছে না। উপচিয়ে প'ড়ে আশেপাশের বানর-হনুমান যা পাচ্ছে তা নিয়েই ম'জে আছে। তেলময় মানবপ্রজাতি দেখতে মনোহর, তবে ধ'রতে গেলে বিপদ। কেবল পিছলিয়ে যায়। আর বানরের কথা কী বলবো! এরা কোন গাছের কলা খায় আর কোন গাছের নিচে ত্যাগ করে বোঝা দায়! ত্যাগের বিষয়টি বড়োই জটিল। বড়ো-ছোটো মিলিয়ে তারা স্থান-কাল নির্ণয় করে। হনুমান আবার আরেক কাঠি সরেস। যেই পাতে ভক্ষণ করে সেই পাতেই ত্যাগ করে। তারপরো মিলের অংশ ভাগেযোগে ঘরে তুলতে কিন্তু ভুল হয় না। এই বানর-হনুমানের সঙ্গে মানুষের তেল উপচানো গল্পে সামিল হওয়া যায় যখন-তখন। কেবল চোখ-কান খোলা রাখা চাই।
খাটো-পাতলা দেখে ভেবেছিলাম সরল-সোজাই হবে। তা বটে, কিন্ত বাঁশটি তার ছানাপোনা কঞ্চিসমূহ নিয়ে যখন ঝাঁপিয়ে প'ড়লো তখন উদ্ধারের পথ পেতে আরেক লম্বা-পাতলা গুবাকতরুর শরণাপন্ন হ'তে হ'লো। কঞ্চি বা'দিকে হেলে তো বানরগণ খুঁটি হ'য়ে তা সামলায়। পান-চুনের হিশেবের সঙ্গে পানীয় মিলে 'বাল্যশিক্ষা' তখন দুর্দান্ত দেনায় হাহাকার ক'রছে। অপরদিকে গুবাকতরু পাকা সুপারির ঝাড় নিয়ে ডানে কাৎ হ'লে নিচে অপেক্ষারত হনুমানেরা তামাকের কৌটা মেলে ধরে। চোখের জলে চুমুর দাগ ব'সে যায়। বা'-ডানের এই ফৈজত নিয়ে উভয়ের মনের চোখ দেখা একদমই অসম্ভব।
অতপর যে বিষয়ের আলোচনা হ'তে পারে তা হ'লো দু'জনের গতি-প্রকৃতি। একজন জলপথে তো অন্যজনের পছন্দ স্থলপথ। কিন্ত উভয়ের বন্দর অভিন্ন। ঘোর। ঘোর জিনিসটি বড়ো আকাঙ্ক্ষার, আবার ভীষণ অনীহারও। একাধারে মজার অন্যদিকে কুচুটে। দু' প্রান্তের বাল্যকাল না মিললেও যৌবন ঝাঁপ দেয় একই ঝিলে, অন্তত পদ্ম আহরণের কর্মসূচি পর্যন্ত। বর্ণনা ক'রতে গেলে একাধিক গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব। চেনাজানার ক্ষেত্রে কিংবা বিচারের বিষয়ে আমার ভ্রান্তির সীমা-পরিসীমা নেই। কেউ গ্লাশ উপচানো ফেনা ধারণে পারঙ্গম হ'লে তাকে জাদুকর ব'লে ভ্রম হয়। আবার অন্য ফলাফল কেবল বাক্যবিহারেই নির্ণীত হয় না, তার উপার্জনবিহীন জীবনযাত্রায় বিস্ময়ও জাগায়!
প্রায়-অবসরে এদের কথা কেন যে আজকের সকালটা উথলে দিলো বুঝতে পারছি না!
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান অসুস্থ হ'য়ে আবারো হাসপাতালে। এই করোনাকাল যে তাঁর সুচিকিৎসায় বিঘ্ন ঘটাচ্ছে তা সহজেই অনুমেয়।
সারা বিশ্বে কোভিড-১৯ এ আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় একুশ লক্ষ আর মৃত্যু হ'য়েছে আড়াই লক্ষের কাছাকাছি। বাংলাদেশের খতিয়ান নিলে দেখা যাবে সর্বমোট আক্রান্ত আট হাজার দু'শ আটত্রিশ জন এবং মৃত একশ সত্তুর জন। করোনার হাত থেকে কোনো জেলারই রেহাই মেলেনি।
পুরুষ পরিচয়ে তৃতীয় লিঙ্গের এক মানুষের জীবনচিত্র 'সমান্তরাল'। আর, চলচ্চিত্রে তৃতীয় লিঙ্গের এই পরিচয় উদঘাটন করা হয় একদম শেষে এসে। ফলে, নানা ঘটনা-প্রতিঘটনার মধ্য দিয়ে টানা নারী-পুরুষ দুটি রেখা সমান্তরাল এগিয়ে যায়। অসহায় তো একটি দীর্ঘশ্বাস পেতেই পারে!

১০.০৫.২০২০
রবিবার

সৈন্ধবলবণ আর ফালি করা কাঁচা আম। সঙ্গে কাসুন্দি ও কাঁচামরিচ। সূর্য নেমে যেতেই জিহ্বায় টকাস ক'রে শব্দ তুলছে। কিন্তু ঘরে অন্য সবকিছু থাকলেও সৈন্ধবলবণ মানে বিটলবণ নেই। নেই তো নেই। এবং পাওয়ারও কোনো উপায় নেই। এই সন্ধ্যায় খা খা ক'রছে করোনা-খেয়াল। রাত বাড়তেই 'হালিমের' দিক মন গেলো। কিন্তু সেখানেও বিপত্তি। রেস্তোরাঁয় তা মেলার আশা এখন আর নেই, আর ঘরের আয়োজনও থৈ পাবে না। মোদ্দাকথা, ইচ্ছের সঙ্গে পরিস্থিতি মিলছে না।
আজ অর্চির জন্মদিন। ২৬শে বৈশাখ শনিবার অপরাহ্ণে ওর জন্ম। খুব বৃষ্টি হ'চ্ছিলো সেদিন। শান্তিনগর টি.এ. চৌধুরীর ক্লিনিকের এপাশওপাশ ক'রে ভিজে দই-বাতাসায় ডুবে ছিলাম। সকালে শুভেচ্ছা জানিয়েছি ম্যাসেঞ্জারে, ফোন করা হয়নি লন্ডন অন্টারিও। রাত বাড়লে ওর মা ক'রবে।
পৃথিবীময় আলোচনার বিষয় এখন একটিই, কোভিড-১৯ ভাইরাস। পরীক্ষা, আক্রান্ত, সুস্থ এবং মৃতের সংখ্যা নিয়ে নিত্যদিন জল্পনা-কল্পনার অন্ত নেই। মহামারীর হাহাকারের সঙ্গে ভেসে আসে ক্ষুধার্তের আহাজারি। শিশুর ক্রন্দন কি স্পর্শ করে প্রকৃতির লীলা?
বাংলাদেশে আজ অব্দি করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১৪৬৫৭ এবং মৃত্যু হ'য়েছে ২২৮ জনের। মোট ২৬টি কেন্দ্রে নমুনা পরীক্ষা হ'য়েছে ১২২৬৫৭ ব্যক্তির। মে মাসে যেন হু হু ক'রে বাড়ছে রোগের দাপট। বৈশ্বিক পরিস্থিতিরও কোনো উন্নতি পরিলক্ষিত হ'চ্ছে না। সারা পৃথিবী বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো অসহায় তাকিয়ে আছে।


গত ক'দিনে বেশ ক'টি বাংলা ছায়াছবি দেখা হ'লো। ভারতীয় চলচ্চিত্রের শক্তিমান অভিনেতা ইরফান খান কর্কটরোগে মারা গেলেন। তাঁর অভিনীত ছবি একটু ভিন্ন আবেগ নিয়ে দেখা হ'চ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য থেকে কর্মহীন অবস্থায় ফেরত আসছে অসংখ্য বাংলাদেশের নাগরিক। আয়ের উৎস বন্ধ হওয়ায় এখন তারা প'ড়বে নতুন বিপত্তিতে।
আমাদের হারানোর বেদনাগুলো নানাপথে ভেতরমহলে ঢুকে আমাদের তছনছ ক'রে দিচ্ছে। উদ্ধারের পথ অজ্ঞাত !
অসুস্থ জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানকে ইউনিভার্সাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে স্থানান্তর করা হ'য়েছে। তাঁর শারীরিক অবস্থা এখনো সংকটহীন নয়।
অপরদিকে অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন করোনা-আক্রান্ত হ'য়ে মুগদা হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। তাঁকেও উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়া হ'য়েছে।
সংকটের সময়, আর ঠিক এ ধরনের ক্রান্তিকালে বোধে ও বিশ্বাসে চিড় ধরে। তবু এগুতে হয়। 'যাত্রাপুস্তক'-এর পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত হ'লো, যদিও এখনো চূড়ান্ত কিছু নয়।

১৪.০৫.২০২০
বৃহস্পতিবার

গলার থেকে ব্যথা কোনোমতেই দূর ক'রতে পারছি না। এপাশে-ওপাশে কাঁটা হ'য়ে আছে তা-ও মাস পেরুলো। দ''দফা এ্যান্টিবায়োটকেও কিছু ফল না পেয়ে এখন নিদারুণ শংকায় আছি। কখনো-কখনো মনে হয়, এ আমার মানসিক চাপের ফল।
কিছু নয়, শধু ভয়।
ভোরের আলো মন তাজা ক'রলেও আবহাওয়ার সংবাদে তা ম্লান হ'য়ে গেলো। সাগরে নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলে ঘূর্ণিঝড়ের আভাস। এ যেন মরার উপর খাঁড়ার ঘা। একে তো করোনা নিয়ে হিমসিম খেতে-খেতে দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে, তার উপর ঘূর্ণিঝড় এলে কাকে রেখে কাকে সামলানো–সে দায় বড়ো হ'য়ে দেখা দিবে। মরণের নানা অভিঘাতের মধ্যেও জীবন একটি আনন্দময় সংবাদ। সৃষ্টির জয় ধ্বংসে পায় নতুন-নতুন রূপ।
সরকারি ছুটি ৩০শে মে পর্যন্ত বেড়েছে। এর ভেতরই আছে ঈদ উদযাপন, আছে মহামারী প্রতিরোধে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। ডেঙ্গুরও একটি আওয়াজ কানে বাজছে। আবর্জনা, বৃষ্টি আর মশা মিলে যদি ভজঘট লেগেই যায়, তবে তো উদ্ধারের পথ খুঁজে পাওয়াই মুশকিল হবে।
নানাজনের কাছ থেকে ফোন পাই– করোনাকালে দুর্দশাগ্রস্থ সাহিত্য-শিল্পের ব্যক্তিদের জন্য কিছু করা যায় কীনা। যএ বিষয়ে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় একটি উদ্যোগ নিয়েছে। এবং অচিরাৎ তা কার্যকর হবে। কিন্তু এটা তো পূর্ণ কোনো সমাধান নয়। শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা সবসময়ই কিছুটা টানাটানিতে থাকেন। তাই তাঁদের আর্থিক চাহিদার নির্দিষ্ট একটি ভূগোল-ইতিহাস প্রণয়ন প্রয়োজন।
আজ বৈশাখের শেষ দিন। মধ্যাহ্নের রোদ-হাওয়া বারান্দার বেলীতে ঢ'লে প'ড়ছে। সম্মুখে নিস্তরঙ্গ সবুজ উতরিয়ে লাল-শাদা অট্টালিকার শীর্ষদেশ বড়ো মনোহর। একটি-দু'টি চিলের ওড়াওড়ি ভিন্ন কিছুটি ময়লা আকাশে অসহায় তাকিয়ে থাকে। হে প্রিয়, তুমি আমাদের অভয় দাও– দাও নির্ভরতার স্বচ্ছ বিস্তার।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিশেবমতো মার্চ মাসের ৮ তারিখ থেকে আজ পর্যন্ত বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১৮৮৮৩ এবং মৃতের সংখ্যা ২৮৩ জন। নমুনা পরীক্ষা বৃদ্ধির সঙ্গে-সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে আক্রান্তের সংখ্যাও। গত ২৪ ঘণ্টায় ৭৩৬২ জনের নমুনা পরীক্ষার ফলে ১০৪১ জন করোনায় আক্রান্ত ব'লে শনাক্ত হ'য়েছে।
পৃথিবীর করোনা-চিত্র লক্ষ্য ক'রলে ঠিক এই মুহূর্তে রাশিয়ার প্রসঙ্গ সম্মুখে চ'লে আসবে। সংক্রমনের সংখ্যার পেছনে ছুটছে মৃত্যু। ইউরোপে এটি এক নতুন খেয়াল। আর দেখতে-দেখতে জগতজুড়ে করোনায় মৃতের সংখ্যা তিন লক্ষ ছাড়িয়ে গেলো।
অপরাহ্ণের ছাদে খাদ্যের খোঁজে কাক-কবুতর-শালিখ-চড়ুই ঘুরছে। আকাশেরও মুণ্ডুমাথা গুলিয়ে যাচ্ছে। হৈচৈ ক'রে নামার সাহসও দেখাতে পারছে না।


বিকেলে সোয়া পাঁচটা নাগাদ জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামানের মৃত্যু-সংবাদ এলো। অসুস্থ ছিলেন, হাসপাতালে ছিলেন, মানি– সব ঠিক ছিলো; কিন্তু এভাবে চ'লে যাবেন, তা ঠিক হ'লো না। সন্ধ্যায় তাঁর গুলশানের বাসভবনে গেলে স্ত্রী-পুত্র-কন্যা-ভ্রাতাসহ পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানানোর ভাষা খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হ'য়ে পড়ে। মরদেহ তখনো সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে, করোনা ভাইরাস পরীক্ষা হবে। আগের দিন গা কাঁপিয়ে ১০২ ডিগ্রি জ্বর এসেছিলো, তাই সন্দেহ থেকে এ পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। রাত নয়টার পর ফলাফল জানা যাবে। এর মধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে সর্বসম্মতিক্রমে তাঁর শেষ বিদায়ের একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। সেখানে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল ঋণাত্মক এলেই কেবলমাত্র তাঁর মরদেহ সীমিত সময়ের জন্য বাংলা একাডেমিতে নেয়া হবে শেষ শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা ১১ টায়। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিয় মসজিদে বাদ জুমআ জানাযা শেষে আজিমপুরে কবর।
দুঃখজনক হ'লেও সত্য, রাত দশটা নাগাদ সংবাদ এলো তাঁর কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল ধনাত্মক।
সব জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে সিদ্ধান্ত এলো করোনাকালে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় তাঁর শেষকৃত্য সমাধা হবে আগামীকাল সকাল ১০টায় আজিমপুর কবরস্থানে।
বাংলা একাডেমির সভাপতি এই জ্ঞানপুরুষকে জানাই অন্তিম অভিবাদন।

১৫.০৫.২০২০
শুক্রবার

ভোর-সকালে তাড়া দিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রতিমন্ত্রী জনাব কে এম খালিদ এমপি। স্যারের, জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে যেতে হবে। নয়টা পার হ'তেই আজিমপুর কবরস্থানের দক্ষিণ দিকের ফটকে পৌঁছে গেলাম। মাননীয় প্রতিমন্ত্রী মহোদয়ও কিছুক্ষণের মধ্যেই এলেন। সরাসরি সম্মিলিত সামরিক হাসপাতাল থেকে মরদেহ এলো দশটা বাজার পরপরই। গার্ড অব অনার প্রদান, জানাযা, কবর- এ সবকিছুই বিধিবদ্ধভাবে শেষ হ'লো। চিরনিদ্রায় শায়িত হ'লেন জাতীয় অধ্যাপক ড. আনিসুজ্জামান।
মধ্যদিনে যে পক্ষীকুল চঞ্চুতে জীবন স্পর্শ করেছিলো, মধ্যরাতে যে চাঁদ ভেঙেছিলো তারাদের অভিমান– তিনি তো তাদেরই অবস্থান। তিনি তো মিলন ও বিরহের প্রেম ও ঘৃণার শুরু কিংবা কৃষ্ণের নবতর আহ্বান। অগ্রবর্তী সন্ধানের নিমিত্তে শিক্ষকতা, মৃক্তিযুদ্ধ, ন্যায়ধর্ম তাঁকে গৌরবের শীর্ষের চিহ্নিত ক'রলে– আমরা লাভ করি অনন্য এক মানবসন্তান। আমাদের আনিসুজ্জামান।
যে প্রান্ত নদীর শিরে
যে অন্ত শস্যের ভিড়ে
সম্ভাব্য সুস্থির
ছায়া পায়, গন্ধ পায়
ঋতু পায় স্বপ্নজাদু সোনালি শিশির!

প্রভাতের ইষ্টগুলি সায়াহ্নের তারে
যে ঘোরে ঝংকারে
বাজে, বাজে–সাজে
আরো এক সূর্যময় মান
আনিসুজ্জামান।

বড়ো বিষন্ন দিনযাপনে ভয় যেন বেড়েই চ'লেছে।
কীভাবে কখন এর থেকে মুক্তি তা দিশা ক'রতে পারি না। টেলিভিশন-সংবাদপত্র থেকে কিছু বলা বা লেখার জন্য অনুরোধ এলেও সেভাবে সাড়া দিতে মন টানে না। তারপরও দু'একজনের কথা কোনোমতেই এড়ানো অসম্ভব হয়।
সন্ধ্যারাতে লেখক-সাংবাদিক মাহমুদ হাফিজ ফেসবুকে সরাসরি এক ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান ক'রলো। ঘরে ব'সেই যুক্ত হ'লাম অধ্যাপক আনিসুজ্জামান সম্পর্কে কিছু বলার জন্য। আরো যাঁরা ছিলেন– মুহম্মদ নূরুল হুদা, জাহিদুল হক, মারুফুল ইসলাম, আমিনুর রহমান, অপর্ণা খান।
রাত বাড়ে আর ভেতরের তোলপাড় অবাধ্য হ'য়ে ওঠে।
Gertrude Bell অনূদিত হাফিজের কবিতা The Garden of Heaven পড়ার চেষ্টায় আছি ক'দিন ধ'রেই। এটি 'দিওয়ান-ই-হাফিজ'-এরই একটি নির্বাচিত পাঠ। গ্যেটে যখন বলেন, হাফিজের কোনো পীর ছিলো না– তখন হাফিজ-ভাবনায় নতুন একটি মাত্রা যোগ ক'রতেই হয়। তিনি রহস্যময় এক রহস্য। গভীরের বর্ণনায় তাঁর জিহ্বা আরো গহনে। এ যে আপনার অন্তরালে আপনাকেই স্থাপন–
"When Death comes to you,
All ye whose life-sand through the hour-glass slips,
He lays two fingers on your ears, and two.
Upon your eyes he lays, one on your lips,
Whispering : Silence!"

ও শেষ প্রহরের জ্যোৎস্না, মন যে কিছুতেই মানে না!