আট তরুণের সময়-দর্শনের সংযোগ প্রদর্শনী

অলাত এহ্সান
Published : 28 Nov 2015, 06:58 AM
Updated : 28 Nov 2015, 06:58 AM

বেঙ্গল ফাউন্ডেশনকে সঙ্গে নিয়ে ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টার 'অনলি কানেক্ট' শিরোনামে এক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী আটজনই স্বকীয়তার মধ্যদিয়ে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরেছেন তাদের ভাবনাকে। তারা যেমন ভেবেছেন, তেমনি দর্শকদেরও ভাবাচ্ছেন। চিত্রকলার বিভিন্ন মাধ্যমেই তারা এই কাজ করেছেন। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে আলোকচিত্র, পেইন্টিং, ভিডিওগ্রাফি, ইন্সটলেশন, পার্ফমেন্স আর্ট, টেক্সটাইল ইন্সটলেশন।
শিল্প এগিয়ে যাওয়ার প্রধান যে উপায়, পরীক্ষা-নিরীক্ষা, প্রত্যেকে তাদের কর্মে দুর্বীনিতভাবেই তা করছেন। শিল্প যাচ্ছে মানুষের কাছে আর মানুষের জীবন উঠে আসছে শিল্পকর্মে। এখানেই এই প্রদর্শনীর গুরুত্ব। প্রতিটি শিল্পকর্মে বর্তমান সময়ের যে প্রধান প্রবণতা—বৈচিত্র্য, বিক্ষোভ, অসহনীয় লঘুতা—তুলে ধরেছে। বোঝা যায়, প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া প্রত্যেক শিল্পী কেবল শিল্পের সাধনায়ই নয়, ভাবনায়ও ঋদ্ধ। প্রদর্শনীতে একটু খেয়াল করলে যেকারোরই চোখে পড়ে উপস্থাপিত বিষয় ও মাধ্যমের বৈচিত্র্য।

আবির সোম নিয়ে এসেছেন ডিজিটাল কোলাজ, ড্রয়িং ও ছাপচিত্র; আলি আসগার'র মাধ্যম ছাপচিত্র ও পার্ফর্মেন্স; দেবাশিস চক্রবর্তী'র আলোকচিত্র; মো. আতা ইসলাম খান'র কোলাজ, মেহেরুন আখতার'র টেক্সাইল ইন্সটলেশন, পলাশ ভট্টাচার্য'র ভিডিও ডকুমেন্ট, রফিকুল শুভ'র ভিডিও ও ফটোগ্রাফি এবং রাজীব দত্ত'র ডিজিটাল কোলাজ।
ইতোমধ্যে প্রত্যেক শিল্পীরই যৌথ প্রদর্শনীর সংখ্যা দুইয়ের ঘর ছাড়িয়েছে। অর্ধশত, শতও পূরণ করেছে কেউ কেউ। গত ২২ নভেম্বর গ্যালারির দোতলার বারান্দায় বসেছিল শিল্পীদের সঙ্গে দর্শনার্থী, সংবাদকর্মী, লেখক, শিল্প সমালোকদের উন্মুক্ত আড্ডা। সেখানে তারা শিল্পকর্ম নিয়ে তাদের ভাবনা প্রকাশের পাশাপাশি উপস্থিতদের সরাসরি প্রশ্নের উত্তর দেন।

রাজীব দত্ত

বেঙ্গল গ্যালারিতে যখন রাজীব দত্তসহ আট যুবকের যৌথ প্রদর্শনী চলছে, তখন মোহাম্মদপুরের আসাদগেটের এক গ্যালারিতে চলছে তার প্রথম একক চিত্র প্রদর্শনী। ইতোমধ্যে শতাধিক যৌথ প্রদর্শনীতে অংশ নেয়া রাজীব দত্ত বইয়ের প্রচ্ছদ, ইলাসট্রেশানের জন্য পরিচিত নাম। 'এ নন পলিটিক্যাল কোম্ব' শীর্ষক চারটি পেইন্টিং প্রদর্শিত হচ্ছে এখানে। মূলত একই শিরোমানের তলে চারটি ভিন্ন ইমেজকে যুক্ত করেছেন তিনি। প্রথম চিত্রে গোটাকয় পাতা জন্মবিরতিকরণ ওষুধের ওপর চিরুনি, তিন সারিতে ধ্যানমগ্ন বুদ্ধের আঠারোটি অবয়ব দ্বিতীয়টিতে, তৃতীয়টিতে পোল্ট্রি ফার্মে খাবার খাচ্ছে মুরগী এবং একটা ফসিল পড়ে আছে শেষটিতে। আর সবগুলো পেইন্টিংয়ের ওপরই একটা প্রামাণিক আকারের লাল চিরুনি। দৃশ্যত চারটি ভিন্ন ইমেজ চিরুনির মধ্যদিয়ে সংযুক্ত। কিন্তু আপাতভাবে একেবারেই ভিন্ন চার ইমেজকে সূত্রবন্ধ করার চেষ্টা কিংবা প্রতিটিতেই দু'টি ভিন্ন ইমেজকে যুক্ত করা। খুব স্বাভাবিকভাবেই দর্শকদের মনে প্রশ্নের উদয় হয়: এই চিত্রকর্মে বুদ্ধদর্শনের কোনো প্রভাব আছে কি না? 'এটা তেমন কিছু না,' রাজীব দত্ত বলেন, 'দুইটা কনট্রাস্ট ইমেজকে এক সঙ্গে মেনুপুলেট করা'।

তবে,'বুদ্ধের একটা ইমপর্টেন্টস আছে, ফসিলের একটা ইমপর্টেন্টস আছে, প্রত্যেকটা ইমেজের আলাদা আলাদা ইমপর্টেন্স আছে, কিন্তু তার সঙ্গে টোটালই কনট্রাস্ট, টোটালই রিলেটেড না, এই রকম দুইটা ইমেজকে এক সঙ্গে মার্জ করলাম।' অর্থাৎ একটা ভিন্ন অনুভূতি তৈরি করে। 'যেমন ধরুন এই জায়গাই,' গ্যালারির মৃদু আলো-ছাওয়া পরিচ্ছন্ন করিডর দেখিয়ে বলেন রাজীব,'যদি একটা গরু দেখেন, তাহলে আপনার অন্য ধরনের একটা ফিলিংস হবে। কারণ এই জায়গায় গরু থাকার কথা না। আবার মাঠে থাকলে ওই ধরনের ফিলিংস হবে না। ওইটাই ক্রিয়েট করার জন্য।' তিনি আপাত-সম্পর্কহীন দুইটা ইমেজকে উপস্থাপনের মাধ্যমে দর্শকের যে অনুভূতি তা-ই তিনি তৈরি করেন। রোঁলা বার্ত-এর 'ডেথ অফ এন অথর'-এর মতো এখন শিল্পী কী বোঝাতে চেয়েছেন, তার চেয়ে দর্শক কি বুঝছে তার প্রতিই তিনি পক্ষপাতি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগে স্নাতকোত্তর পেরুনো রাজীব দত্ত এ মুহূর্তে ফটোকোলাজ করছে বেশি। এছাড়া ড্রয়িংয়ের সঙ্গে লেখার চর্চাও করছেন।

পলাশ ভট্টাচার্য

'সমসাময়িক শিল্পভাবনায় শিল্প আর অশিল্পের মধ্যে দূরত্ব আসলে কমে গেছে।' স্টিল ফ্রেমের চশমাটা একটু ওপরের দিকে ঠেলে দিয়ে বলেন পলাশ ভট্টাচার্য। 'আর প্রত্যেকটা জিনিস খুব কাছাকাছি।' চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে পাঁচ বছর আগেই শিক্ষা শেষ করেছে তিনি। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিন্ট মেকিং ও থিওরি প্রধান বিষয় হলেও এখন তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ ভিডিও, পাফরমেন্স, ইন্সটলেশন-এর মতো চিন্তাশীল ও কন্টেমপ্ররারি মাধ্যমগুলোতে। মূল বিষয়ের সঙ্গে কন্টেম্পরারি আর্ট ওয়ার্ল্ড নিয়ে পড়াশুনো, তার ফাঁকে ফাঁকে এক্সপেরিমেন্টাল কার্যক্রমের মাধ্যমেই তিনি মূল বিষয়ে বাইরের মাধ্যমগুলোতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। তারপর ক্রমাগত চর্চায় তাকে ভিডিওগ্রাফিতেও উন্নিত করেছেন পারদর্শিতার পারদ। চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী থাকাকালেই গ্রুপ এক্সিবিশনগুলোতে অংশগ্রহণ করছেন। চট্টগ্রামের 'বিশদ বাংলা'য় একটি এক্সপেরিমেন্টাল শো তার একমাত্র একক প্রদর্শনী। 'অনলি কানেকশন'-এ প্রদর্শিত হচ্ছে তার প্রায় পোনে একঘন্টার একটা ফিল্ম। ফিল্মে সেই অর্থে কোনো কথা নেই, নেই নির্দিষ্ট কোনো পাত্র-পাত্রী। একদিন ইমারতের জানালার ফাঁক দিয়ে এই শহরের দৃশ্য ধারণ করতে করতে তৈরি হয়েছে তার ভিডিও। কোনো কথাবার্তা না থাকলেও শহরের রাজপথ, অলিগলি, ঘরের দেয়াল ছাড়িয়ে যে শব্দ ভেসে বেড়ায় শহরের বাতাসে, তাই তার ভিডিও'র নৈঃশব্দ কথা হয়ে ধরা দিয়েছে। এটা যেন শহরের স্রেফ দিন যাপন, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনের শব্দের ছোড়াছোড়িতে তৈরি হওয়া তরঙ্গের বোকা কান্না, যা ভাষাহীন হওয়ায় চিৎকার করছে যেন বা।


'আমার আইডিয়াই আমাকে এনকারেজ করে কিছু করতে। তখনই আমি মাধ্যম বেছে নিই, বলেন ভট্টাচার্য। অর্থাৎ কিনা, মিডিয়াম কোনো বড় জিনিস না তার কাছে, বরং আইডিয়াই তাকে তাড়িত করে কোন মাধ্যমে তা সম্পাদন করবেন। নিজের ভিডিও ফুটেজ নিজেই এডিটিং করেন। তিনি আশা করেন চলচ্চিত্রে কাজ করলেও তিনি এই চিন্তার প্রতিফলন ঘটবে। শিল্প মাধ্যম হিসেবে ভিডিওগ্রাফি ব্যায় কোনোভাবে কমিয়ে আনা গেলেও, দারুন আত্মবিশ্বাসী এই শিল্পীর ভাষায় বরং 'এক্সিবিশন একটু কস্টলি, কিন্তু গ্যালারি যখন দায়িত্ব নিয়ে নেয় তখন সেটা ইজি হয়ে যায়।' দেশের অন্যান্য ছোটখাট ইন্সটিটিউশনগুলোও যদি ভিডিও চিত্র প্রদর্শনের সামগ্রিক আয়োজন সম্পন্ন করে তরুণদের সুযোগ দেয় তাহলে তরুণ প্রদর্শনীর সেন্সটাও উন্নত হতে থাকে। 'আর না হলে বিকল্প পন্থায় আমরা এক্সিবিশন করেছি পাবলিক স্পেসে। প্রজেক্টর ভাড়া, পুরনো মনিটর জোগাড় করে করেছি নিজের খরচে। সেগুলোও চালিয়ে নেয়া যায়।

আলী আসগার

দেয়ালের একপাশে নাক বরাবর ঝুলছে প্রায় একই ধরনের আটটি ছাপচিত্র। ফ্লোরে দেয়ালে ঠেস দিয়ে দাঁড় করানো একই ধরনের আরো সাতটি ছাপচিত্র। পাশের দেয়ালে ঝুলছে একটা পিংক রঙের ব্রা ও একটি ছাপচিত্র। আর দুই সারি ছাপচিত্রের মাঝে দেয়ালের শূণ্য স্থানে লিখা—"নয়ন, আমি তোমার মা, আমার একমাত্র ছেলে তুমি, তুমি এমন কেন হলে বাবা? তোমাকে নিয়ে আমার খুব লজ্জা"। কি ভয়াবহ কথা! আলী আসগার তার পার্ফর্মেন্স, চিত্র ও কথাটি থেকেই বর্তমান সময়ে শহরের অন্তঃসারশূণ্য প্রান্তে দাঁড়ানো জীবনের আর্তনাদ বোঝা যায়। একজন মা নৈতিক অবক্ষয়ের গহ্বরে তলিয়ে যাওয়া সন্তানকে উদ্দেশ্য করে বলছেন এই কথা। শিরোনাম 'আইডিনটিটি এন্ড বিলংগিং', অর্থাৎ পরিচয় ও তার স্বরূপ বা অবস্থান।
আলী আসগার মূলত ছাপচিত্র শিল্পী। ইন্সটলেশনও করেন তিনি। তবে পার্ফর্মেন্স আর্ট তার অন্যতম আগ্রহের জায়গা। এ পর্যন্ত পঁচিশটির অধিক গ্রুপ এক্সিবিশনে অংশ নিয়েছেন। আগামী ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হবে একক পার্ফর্মেন্স। 'অনলি কানেকশন' প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নিয়েছেন ছাপচিত্র ও পার্ফর্মেন্স দিয়ে।

গ্যালারিতে যা প্রদর্শিত হয় তা মূলত পার্ফর্মেন্স আর্ট, যা সুক্ষ্ণ রেখা দ্বারা পারফর্মিং আর্ট থেকে আলাদা হয়েছে। পার্ফর্মেন্স হচ্ছে একটা জীবন্ত প্রদর্শন। এর মধ্যে স্কাল্পচারের বিষয় থাকে। মুভমেন্ট দিয়ে, অনেক সময় শিল্পীর পার্সনালিটির জায়গাও রিফ্ল্যাক্ট হয়।


ক্ষণস্থায়ি হলেও 'এটা যেহেতু লাইভ আর্ট তাই এটা অনেক বেশি কমিউনিকেটিভ। ভিউয়ারের পারসপেক্টিভ থেকে এটা অনেক বেশি এক্সপেরিয়ান্স। এটা ভিস্যুয়ালাইজ ও স্কালপচারালও।' পার্ফর্মেন্সের মতোই শরীরি ভাষায় হাত নাড়িরে বলেন আলী আসগার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে বের হওয়া এই শিল্পী পড়ালেখা করেছেন ছাপচিত্র ও ড্রয়িং নিয়ে। 'পার্ফর্মেন্স নিয়ে আমি ইউনিভার্সিটিতে পড়ালেখা করি নাই। কিন্তু ওয়ার্কশপ করে, অন্যান্য সিনিয়র আর্টিস্টদের সঙ্গে কাজ করে, নিজে প্রাকটিস করতে করতে নিজে পার্ফর্মেন্স করতে শিখে গেছি।' শিল্পমাধ্যম হিসেবে তিনি মাল্টিডিসিপ্লিনারি হওয়ার কারণ, তিনি মনে করেন, 'এখন গ্লোবাল আর্ট পার্সপেক্টিভে এমন একটি জায়গা, কোনো একটি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ' হওয়া যথার্থ নয়। ভাবনা প্রকাশের জন্য মানুষ যেমন অনিবার্যভাবেই মুখে বলে, লিখে, অভিনয় কিংবা মোবাইল ব্যবহার করতে বাধ্য হয় বা বেছে নেয়, তেমনি 'আর্ট যেহেতু কমিউনিকেশনের একটি মাধ্যম, তাই যখন যার জন্য যেটা জরুরি' তাকেই বেছে নেন তিনি। তার পার্ফর্মেন্সের ক্ষেত্রে শিল্পীর উপস্থিতি জরুরি বিধায় তার অনুপস্থিতিতেও দর্শনার্থীরা যেন তা দেখতে পারে এজন্য তার পার্ফর্মেন্সের দিনের একটা ভিডিও চিত্র চালিয়ে রেখেছেন গ্যালারিতে। তবে এই কথা অনস্বীকার্য, পার্ফর্মেন্স আর্ট শিল্পীর সঙ্গে দর্শনার্থীকেও শিল্পের অংশ করে তোলে। মজার বিষয় হলো, তার পার্ফর্মেন্সে প্রমাণিক এক আয়না ব্যবহার হওয়ায় দর্শনার্থী উপস্থিত মাত্রই এর সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করে ফেলে। আবার শিল্পীর পরবর্তীতে এটা একটা ইন্সটলেশনে পরিণত হয়েছে।

রফিকুল শুভ

মিডিয়ার কল্যাণে বা বাস্তবেও, বর্তমান বৈশ্বষিক সন্ত্রাস বলতে যা বোঝায়, ও যার দ্বারা সবচেয়ে পীড়িত, তা হচ্ছে জঙ্গিবাদ বা মৌলবাদ। তাছাড়া সাম্প্রদায়িকতার নজির ভারতীয় উপমহাদেশে নতুন করেন বলার কিছু নয়। এই সব ঠেকাতে যেমন বিশ্বজুড়েই যুদ্ধের সাজ সাজ বর, অন্যদিকে ভোগ আর উন্নত জীবন ব্যবস্থার জন্য আয়োজন যজ্ঞ। কিন্তু এতো সব আয়োজন, বিপুল উন্নয়ন সাম্রাজ্যের মধ্যে মানুষই যে মানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছে সে দিকে হয়তো চোখ দেয়া ফুসরত মেলে না কারোরই। রফিকুল শুভ'র ক্যামার ধরে পরে তা। তার প্রদর্শনীর বিষয় 'কমিউনাল এ্যালিনেশন' অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক বিছিন্নতা বা যৌথ একাকিত্ব। বিষয় নির্বাচনের গুণে আপাত সাধারণ দৃশ্যের ভেতরেই তৈরি হতে পারে দারুন ইমেজ ও গল্প। ধর্মীয় পোশাক পরিহত এক মাঝ বয়সী ব্যক্তি ও এক যুবকের মধ্যে পাইপ গোছানোর দৃশ্য লং শর্টে নেয়া পরস্পর সাদাকালে আলোকচিত্র একই সঙ্গে আমাদের সামনে নিগেটিভ-পজেটিভ চিন্তার মেনোফেস্টো তুলে ধরে। একই ভাবে বোরকা পরিহিতা নারী, আধো মেলে ধরা হাতে তালু, রাস্তায় জমা সামান্য পানি, গাছের কোটর, ঘুমন্ত শ্রমজীবী মানুষের পা' রফিকুল শুভ'র ছবির বিষয় বস্তু। প্রদর্শনীতে তার আলোচিত্র ছাড়া একটি ভিডিও প্রদর্শিত হচ্ছে। ভিডিও চিত্রটিতে একটা অনুন্নত শহরের গা ঘেঁসে থাকা গ্রাম, বৈপরিত্বে রেল লাইনের মতো সমান্তরাল দূরত্বে বহমান। তিনি ধরতে চেয়েছেন অপরিকল্পিত নগরায়নের মধ্যে তৈরি মানুষের উদ্বেগ, দৈনন্দিন জীবন যাপন, বেঁচে থাকার সংগ্রাম ও বিপন্নতাকে। চিত্রীর সঙ্গে সঙ্গে সংলাপ ওঠে এসেছে প্রামাণিক হিসেবে।


রফিকুল শুভ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালেয়র চারুকলা থেকে পড়ালেখা সম্পন্ন করেছেন স্কাল্পচার বিষয়ে। এছাড়া পাকিস্তানের লাহোরে ভিডিও আর্টসের ওপর একবছর লেখাপড়া করেছেন। ইতোমধ্যে দেশে-বিদেশে অর্ধশতাধিক দলীয় প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। রফিকুল শুভ স্কাল্পচার থেকে আলোকচিত্র বা ভিডিও চিত্রে নিজেকে বিকশিত করলেও ভিডিও আর্টের ওপর এখনো প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে চারুকলায় শিক্ষা দেয়া হয় না। তাছাড়া অর্ধশত যৌথ প্রদর্শনীর পরও একক প্রদর্শনী না হওয়া এদেশে তরুণ শিল্পীদের পৃষ্ঠাপোষকতার অভাব দীনতারই প্রকাশ? 'মুটোমুটি এখন উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে' স্বল্পভাষায় উত্তর দেন রফিকুল শুভ। রফিকুল পেইন্টিং মাধ্যমেও কাজ করেন। এ সব মাধ্যমের মধ্যে কোনোটা নিয়ে কাজ করবেন, তা অবস্থার ওপর নির্ভর করে। এই মুহূর্তে তিনি ভিডিও এবং ফটোগ্রাফি নিয়ে কাজ করলেও তার ইচ্ছে অচিরেই তিনি পেইন্টিংস নিয়ে কাজ শুরু করবেন। বিদেশ বিভুঁয়ে পড়ালেখার অভিজ্ঞতায় তার চোখে, অন্যদেশের সঙ্গে আমাদের দেশের পার্থক্য বা মিল হলো প্রত্যেকে তার দেশের কনটেক্সে কাজ করছে। কিন্তু আমাদের দেশের চিত্রকর্ম বিশ্বের বর্তমান কন্টেম্প্রোরারি আর্ট প্যাটানকে ধরতে পারছে কি? রফিকুল ইসলামমের মৃদুভাষি উত্তর,'ধরতে পরছি কি না, এটা তো বিদেশের সঙ্গে কম্পেয়ার করার মতো না। এ নিয়ে আমাদের দেশে কাজ করতেছে বাইরেও কাজ করতেছে। একসাথে কাজ করতেছে।'

দেবাশিস চক্রবর্তী

পৃথিবীতে যে জাতি যত বেশি উন্নত হবে সে তত বেশি শক্তি আহরণ ও ব্যবহার করবে। যেহেতু সৌরকেন্দ্রিক এই মহাবিশ্ব সেহেতু সূর্য এর প্রধান শক্তি। আর সূর্যের শক্তির প্রকাশিত রূপ আলো ও তাপ। তাই আলো একটা বিশেষ অর্থ বহন করে দেবাশিস চক্রবর্তীর কাছে। 'অনলি কানেক্টিং' শীর্ষক প্রদর্শনীতে তার সব ফটোগ্রাফিই আলোর নড়াচড়া। আলো তার কাছে একটা প্রতীক। পৃথিবীতে মানুষ আছে, তার একটা বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে নিজের আলো না থাকা সত্ত্বেও রাতে এই গ্রহ উজ্জ্বল থাকে। এর সঙ্গে হয়তো যে কেউ সতেরশ শতকে 'এনলাইটনমেন্ট' ধারণারও সাদৃশ্য খুঁজে পাবে। অর্থৎ জ্ঞান সেখানে আলোরই প্রতীক। তিনি এই প্রতীকেরই বহুমুখী ব্যবহার করেছেন।
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএলএ সম্পন্ন করার পর আগ্রহের জায়গা থেকে ফটোগ্রাফির ওপর তিন বছরের প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন 'দ্য সাউথ এশিয়ান ইনস্টিটিউট অব ফটোগ্রাফি' তথা 'পাঠশালা' থেকে। এ বিষয়ে তিনি গ্রাজুয়েট।
এমএলএ ছেড়ে ফটোগ্রাফি? 'ওটা আমার বাবা-মা'র ইচ্ছেতে ছিল, ফটোগ্রাফি আমার প্যাশন, তাই সব ছেড়ে চলে এসেছি' হাস্যচ্ছলে বলেন দেবাশিস চক্রবর্তী। প্রদর্শনীতে তিনি অংশ নিয়েছেন 'স্টারডাস্ট'(নক্ষত্রজাত)শীর্ষক আলোকচিত্রের পসরা নিয়ে। পুরোটাই আলোর কারুকাজ। মূলত আলোকে নিয়েই তিনি কাজ করার চেষ্টা করেছেন। ফলে তার চিত্রগুলো আলোর রেখাচিত্রও বলা যাবে।


আরেকটু বিষদ ভাবে বললে, দেবাশিস চক্রবর্তীর ভাষায়, 'পৃথিবী নামক গ্রহ, পদার্থের মৌলিক উপাদান, এসব পৃথিবীতে তৈরি হয়নি। কোটি বছর পূর্বে কোনো এক নক্ষত্রের বিস্ফোরণ হওয়ার পর বিবর্তনের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় এর সৃষ্টি। এবং এখানেই আমাদের জন্ম। এই অর্থেও পৃথিবীর সবকিছু নক্ষত্র থেকে তৈরি। এই কারণে আমার আলোচিত্র প্রদর্শনীর নাম 'স্টারডাস্ট'।'
'স্টারডাস্ট' আলোকচিত্র এটি বিশেষ ধরনের চিত্রকর্ম। অর্থাৎ আলো বা নক্ষত্রজাত। এই ধরনের আলোকচিত্র পশ্চিমা বিশ্বে পরিচিত হলেও বাংলাদেশে এটাই প্রথম। এই বিশেষ ধরনের আলোকচিত্র নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ-চীন, ফ্রান্স, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন চিত্রপ্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন তিনি। আলোর এই কারুকাজে তার কম্পিউটার-সায়েন্স নিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পাঠ অনেক ক্ষেত্রে সাহায্য করেছে বৈকি।
কেন? এর মানে কি? 'যেমন ধরুন আমাদের সূর্য তেমন বড় না, এটি কমলা রঙ্গের আলো দেয়। কিন্তু আরো বড় কোনো নক্ষত্র যদি সূর্যের চেয়েও উত্তপ্ত হয় তাহলে তা নীল রং ধারণ করে। কিন্তু সেই নক্ষত্রই যখন সুপারনোভায় পরিণত হয়, তা ধীরে ধীর লাল রং ধারণ করে এবং সব শেষে সাদা হয়ে যায়। এটা পরিবর্তনের কাল, এভাবেই নক্ষত্রের পরিবর্তন হচ্ছে। তাই স্বভাবজাত প্রণোচ্ছলতা নিয়ে দেবাশিষ চক্রবর্তী আলোকচিত্রের পাশে লিখে দেন, 'কী করে নীল হয়ে যায় লাল, আর কি করেই বা তা পরিণত হয়? তারা আর কি-ই-বা হতে পারে? আলোকবর্ষ চলে গেল অথচ তারা এখনও স্থিরই হতে পারলো না।' এছাড়া আলোকচিত্রর পাশে প্রখ্যাত কল্পলেখক কার্ল সাগানের যে দীর্ঘ উদ্বৃতি জুড়ে দিয়েছেন, সেখানে তার আলোকচিত্রের একটা গতি-মুখও খুঁজে পাওয়া সম্ভব। তার ভাষায়, 'মানুষ আসলে জানতে চায়। এক সময় জানার জন্য মানুষ পৃথিবী চষে বেড়িয়েছে। এখন তারা মহাকাশ যান পাঠায় নক্ষত্রের দিকে।'
ফ্রিল্যান্স ফটোগ্রাফি করেন দেবাশিস চক্রবর্তী। ফটোগ্রাফি নিয়ে তার বোঝাপড়া, প্রস্তুতি ও আগ্রহ সবচেয়ে বেশি। তবে আগ্রহ বোধ করেন অন্যান্য মাধ্যমেও। জলরংয়ে ছবি আঁকেন। ইচ্ছে আছে ভাব ও ভাবনার বহিঃপ্রকাশের জন্যই ভবিষ্যতে ফটোগ্রাফির সঙ্গে অন্য মাধ্যমের মিশ্রণ ঘটাতে চাইবেন।
'স্টারডাস্ট' আলোকচিত্র প্রদর্শনী এখন নিউইয়র্কের ব্রঙ্কস মিউজিয়ামে চলছে, চলবে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এর আগে প্যারিসে একবার হয়েছে। এখন বাংলাদেশে এবারই প্রথম। আক্ষরিকভাবে যদি ফটোগ্রাফি শব্দের বাংলা করা হয়, তার অর্থ করা যায়, আলো আঁকানো। দেবাশিস চক্রবর্তী সেই আলোকেই এঁকেছেন চিত্রে।

আবির সোম

'হাউ ক্যান উই ক্রিয়েট (সিনস ক্রিয়েশন ইজ লাইফ)', 'আর্ট এন্ড রেভ্যুলেশন : উই আর নাইদার আর্টিস্টস, নর এন্টি-আর্টিস্টস। উই আর …(এই অংশ কালোকালিতে ঢাকা)' কিংবা "উই আর নট 'গডস', উই আর ফ্লেস এন্ড ব্লাড ম্যান'। কোথাও কালোকালিতে ঢাকা, কোথাও হাইলাইট করা। এই ভাবে আবির সোম একটা টেক্সের কিছু মুছেটুছে বা হাইলাইট করে আমাদের কাছে তুলে ধরেন অজ¯্র লেখার লাইন যার প্রতিটিই আমাদের ভাবনায় ও কৌতুকে জারিত করে। এই কোলাজের নীচে লেখা, 'এগেইন আর্ট ইজ সেভ, ফ্রম দ্যা বিভোল্যুশন/ লং লিভ আর্ট, হ্যান্ড ইন হ্যান্ড উইথ ওজিসিজেএম আর্ট'। এভাবে আবির সোম শিল্পকে বিবর্তন, দাদা ইজম, দেব্রিস, একজন সংহতি জানানো ব্যক্তি, প্রকৃতি, বন্ধুত্ব, রক্ষাকারী, প্রগতি কিংবা কিছু না'র হাত থেকে রক্ষা কথা বলেন।
নিঃসন্দেহে বৈশ্বিক বাস্তবতায় আর্ট যেমন তার আধার-আধেয় ও ভাষার পরিবর্তন ঘটনায় তেমনি নিজেই আজ হুমিকির সম্মুখিন। নিছক পণ্য আর চিন্তার তাবেদার অনেক ক্ষেত্রে। যে কারণে খোদ আর্টকে বাঁচানোর মতো মধ্য দিয়েও হয়ে ওঠতে পারে এই বাস্তবতার প্রতিবাদ। কিন্তু তা সহজ নয় মোটেই। প্রতিবাদে বাধা ও ভাবান্তর আসতে পারে। আবির সোম তার চিত্রকর্মের মধ্যমেই সেই বার্তায়ই পৌঁছে দেয় আমাদের কাছে। একটা সু² ব্যঙ্গ ও জোরালো প্রতিবাদ করেন শিল্পরক্ষার নামে ভান-ভনিতার আন্দোলনকে। 'এ্যাক্টিভিজম, ওইটা লুক হিসেবে হইতে পারে, এ্যাজ এ আর্টিস্ট, আর্ট তো হচ্ছে সুপ্রিম এক্টিভিটি,' আবির সোম বলেন তার এলোমেলো চুলগুলো একটুও হাত না বুলিয়ে। 'তথাকথিত যে এ্যাক্টিভিস্ট, ব্যানার-ফেস্টুন লাগাইছিল, পছন্দ হয় নাই কারোর, ছিড়াফেলছে, মেনুফেস্টো ঢাইকা দিছে,…ধরেন, আমি একটা ড্রয়িং করছি ওইটাই আমার এক্টিভিজম, একজন গায়ক গানগাইলো ওইটাই আসলে তার এক্টিভিজম। কোনো কারেন্ট ইস্যু নিয়ে গান গাইলেই যে এক্টিভিজম হয়ে, তা নয়, প্রত্যেকটা জিনিসই এক্টিভিজম, যেহেতু আপনি ওই সময়ের মধ্যে আছেন। সো, যেমন অস্থির সময়ে থাকলে আপনার আর্টটা অস্থির হবেই।' তাহলে, অনুভূতি সম্পন্ন হলে শিল্পীর তুলিতে অস্থির সময়ের চিত্র আসবেই, এর জন্য পরিকল্পিত করার কিছু নেই? 'ধরুন অস্থির সময়ের মধ্যে আপনার একটা পেইন্টিং হয় নাই, আঁকতে গেছেন বাজে পেইন্টিং হইছে, ওইটাই রাইট মনে হয়' আবির সোমের কাছে। প্রদর্শিত ড্রয়িংয়ে দেখা যায়, মুখো পড়া মানুষের অবয়ব, মর্মকামী মানুষের আত্মহনন ইত্যাদি।


আবির সোম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা থেকে স্নাতক সম্পন্ন করার পর প্রথাগত বিদ্যার বাদ দিয়ে ও চর্চার ময়দানে হাজির হলেন। তার ভাষায়, 'একাডেমি আমাকে কি শিখাইছে না-শিখাইছে ওইটা নিয়া বইসা থাকলে তো আমার হইবো না, সবকিছু মিলাইশিখতাছি।' 'অনলি কানেক্ট' প্রদর্শনীতের ড্রয়িং, টিজিটাল কোলাস ও ছাপচিত্র মাধ্যমে স্থান নিয়েছে তার বেশ কয়েকটি চিত্রকর্মর। বিশ্ববিদ্যালয়ে তার বিষয় ছিল ড্রয়িং এন্ড পেইন্টেং। এও ঠিক, আবির সোম তার পিতা দেশের স্বনামধন্য চিত্রশিল্পী বিরেন সোম-এর সাহচার্য তাকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করে যাচ্ছে।
এছাড়া 'ওজিসিজেএম আর্ট'-নামক ১০-১২জনের একটি আর্ট গ্রুপ আছে তাদের। প্রথম সামিটের সময় তারা তেজগাঁও-এর এক পরিত্যাক্ত কোক ফ্যাকট্রির একটা ফ্লোর ভাড়া নিয়ে একটি করেছেন।

মেহেরুন আক্তার

ধ্বংসলীলা সমাজের এতটাই গভীরে প্রবেশ করেছে যে নারীর সুঁচকর্মও তার আগ্রাসন থেকে মুক্ত না। তাই এমব্রয়ডারির ফুল তুলতে গিয়ে এঁকে ফেলছে আগ্নেয়াস্ত্র, অশ্রুসিক্ত চোখ, বিপন্ন মানুষের হাত ইত্যাদি। এমনকি তারা পারস্পরিকভাবে একটা চক্রে আবর্তিত হচ্ছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা থেকে উত্তীর্ণ মেহেরুন আক্তার সুমি টেক্সটাইল ইন্সটলেশনে সে দৃশ্যই ফুটিয়ে তুলেছেন। 'রেপিটেশন স্টরি'স সামারি' (গল্পের সারাংশের পুনরাবৃত্তি) শীর্ষক এই ইন্সটলেশন নিয়ে তিনি লিখেন, 'অনেক সময় প্রাকৃতিকভাবে আমরা আমাদের গল্প বলতে এবং আবেগ প্রকাশ করতে চাই, কিন্তু প্রায়শ জটিলভাবে।


এটা আমাদের সচেতন-অসচেতন মনে প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। যখন আমাদের বেশির ভাগ স্মৃতিই হারিয়ে যায়, তখন কিছু কিছু স্মৃতিই আবার রয়ে যায় অযতনে। আবার যখন সকল বিবেক ধ্বংস হয়ে যায় কিংবা হারিয়ে যায় জীবনের শুরু কিংবা শেষের সকল ঘটনা। কেইলই শক্তিশালী ক্ষমতাবান রয়ে যায়। এটা এমন এক শক্তিশালী আবর্তন যা কিনা নিজেই নিজের আবর্তে বারবার ফিরে আসে।'

মো. আতা ইসলাম খান মজলিশ

জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে বিশ্বজুড়েই পশু-প্রাণীরা অস্তিত্বের সংকটের সম্মুখীন। তার ওপর মানুষের নিরন্তর লালসায় ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে অনেক প্রাণি। বিপন্ন অনেক প্রজাতি। যে কারণে বিশ্বে পরিবেশবাদী ও প্রাণি অধিকার সংরক্ষণ সচেষ্ট সংগঠের বিপুল কর্মযজ্ঞ দেখা যায়। সম্প্রতি দেশের প্রধানমন্ত্রী পরিবেশ রক্ষায় 'চ্যাম্পিয়ন অফ দ্য আর্থ' পদক নিয়ে এলেও, মিরপুর চিড়িখানার জড়াজীর্ণ দশা দেখে মো. আতা ইসলাম খান মজলিশ তৈরি করেছেন তার ডিজিটাল আর্ট কোলাজ 'দেম'(তাদের)। আপাতদৃশ্যে কোলাজ দেখে সুকুমার রায়ের 'খিচুরি' মনে পড়লেও এর মধ্যে দারুন কৌতুকবোধ, প্রতিবাদ আর ভর্ৎসনাই ফুটে উঠেছে। 'অবাক হওয়রা মতো আরেকটা ব্যাপার চোখ এড়ালো না যে, অর্ধমৃত এসব পশুদের দেখতে আসা মানুষদের এই ব্যাপারে কিছুই যায় আসে না। তারা বিশ টাকার টিকিটে মরণাপন্ন হাতি, দুর্বল বাঘ, মনোরঞ্জনকারী বানরের দল আর মনোটোনাস সিংহ দেখতে পেয়েই খুশি। অথচ প্রাণীগুলোকে নামমাত্র বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে, হাড় জিরজিরে মৃতপ্রায় হয়ে তারা যে এখনো বেঁচে আছে সেটা দর্শনার্থীদের কাছে কোনো বিষয় না।'


সম্প্রতি সুন্দরবনের কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ, সুন্দরবন সংলগ্ন নদীতে ট্রলার চলাচল এবং তেল ও কয়লাবাহী ট্রলার ডুবিতে সেখানে জলজ ও বন্য প্রাণীরা যে হুমকির সম্মুখিন তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আতা খান'র ফটো-কোলাজে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা খুঁজে পাওয়া সম্ভব। 'ঘন বন-জঙ্গলের শ্বাপদসঙ্কুল জায়গা থেকে উঠিয়ে নিয়ে এসে, প্রাণীগুলোকে এমন একজায়গায় রাখা হয়েছে, যা মানুষের জন্য আনন্দদায়ক, কিন্তু প্রাণীর জন্য তা দোজখসম। …চিড়িয়ারখানায় প্রাণীরা যেমন বেমানান, আমার ছবিতে আমি প্রাণীদের সেরকম বেমানান দেখাতে চেয়েছি। এই রঙিন প্রাণীগুলোকে আমি সাদাকালোই দেখি, কাঙ্ক্ষিত ফিনিশিং দিয়ে মিথ্যামিথ্যি সুন্দর করে তুলতে চাই না।'

প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত। প্রতিদিন খোলা থাকে ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। প্রদর্শনী চলবে ডিসেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত।