ঢালী আল মামুনের করোনাকালীন ভাবনা: তালপাতার সেপাই একটি মেটাফোর

জুবায়েদ দ্বীপ
Published : 24 March 2022, 10:32 AM
Updated : 24 March 2022, 10:32 AM


করোনা ভাইরাস যখন এলো তখন আর বলার অপেক্ষা রাখে না এটি একটি বিশ্ব-পরিস্থিতি। সাথে সাথে এও বোঝা গেলো সত্যিকার অর্থে করোনা ভাইরাস হচ্ছে বিশ্বায়নের অংশ-একটি গ্লোবাল ফেনোমেনা। এখন আমরা গ্লোব থেকেও নিজেদেরকে একটা গ্রহের বাসিন্দা হিসেবে ভাবতে শুরু করেছি। বর্তমান অতিমারির সমস্যাটি কি গ্রহের না কি মনুষ্য সৃষ্ট সভ্য পৃথিবীর বা মানুষের যা গ্রহের উপর নির্মিত কিন্তু গ্রহ থেকে বিচ্ছিন্নভাবে এক জগৎ। সেই অর্থে মানুষ অনেক আগেই জেনে গেছেন এমন কিছু আসতে পারে, কারণ বিজ্ঞানীরা আগে থেকে তার সংকেত দিয়ে আসছিলেন। এরকম একটি পরিস্থিতিতে হোমোসেপিয়েন্সদের মোকাবেলা করতে হবে যা তাদের অস্তিত্বকে সংকটের দিকে ঠেলে দেবে। এই করোনা ভাইরাস হয়তো তারই একটি ইঙ্গিত। ফলে এটি শুধুমাত্র একটা অঞ্চল বা ব্যক্তির সংকট নয় সমষ্টিগত ভাবে মানুষ্যকুলেরই সংকট। ধরিত্রী তার ভারসাম্য হারিয়েছে তাতে মানুষের দায় এড়াবার কোন উপায় নেই। ফলে সেই দিক থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসেবে নতুন করে, একেবারেই নতুন করে মানুষকে ভাবতে হবে।

আমাদের যে জীবন যাপন, প্রাত্যহিকভাবে যাপিত যে জীবন, সেটিতো নানা ভাবেই বিঘ্নিত এখন। অন্যান্য দেশে বা আমাদের দেশের বিভিন্ন শ্রেণীর ও পেশার যেসব মানুষ রয়েছে তাদের অবস্থা সব মিলিয়ে একটি ভয়ানক পরিস্থিতিতে আছে ।ব্যক্তিগত ভাবে আমার যে মানসিক অবস্থা তৈরী হচ্ছে বা হয়েছে, করোনার প্রথম প্রায় দেড় বছরে আমি খুব কম সময়ই ঘর থেকে বের হতে পেরেছি। নানা শংকায় আমার মধ্যে অদ্ভুদ রকম ভাবে ভয় ভীতি, অস্তিত্বের সংকট, মৃত্যুভয়–নানা ধরনের জিনিসের উপলব্ধি ভিতরে কাজ করে। যা মানুষ হিসেবে আমার সম্ভাবনা, আমার ভাবনা ও কর্মকান্ডকে ব্যাহত করেছে।

দ্বিতীয়ত, এখন এটাকে আমি প্রতিরোধ হিসেবে কিভাবে দেখি। সৃজনশীল মানুষের ক্ষেত্রে, তার সৃজনশীল কর্মকান্ড হচ্ছে একটা রেজিস্টেন্স, একটা প্রতিরোধ প্রক্রিয়া এবং একই সাথে এটি স্বাধীনতা লাভেরও উপায়। ফলে সারাক্ষণ নিজেকে সৃজনশীল কর্মকান্ডের মধ্যে নিয়োজিত রাখা। সেটি আমার মতে একটি উত্তম পন্থা কিংবা উপায় হয়ে উঠতে পারে যেকোন মানুষের জন্য যদি তাদের সেই ধরনের সুযোগ থাকে। সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে আমিও প্রতিনিয়ত নিয়োজিত রয়েছি নানাভাবে, সৃজনকর্মে, লেখাপড়ায়, ভবিষ্যৎ নানা পরিকল্পনার প্রস্তুতিতে।

শিল্পায়নের পরবর্তী ২০০/৩০০ বছরে মানুষের যে কর্মকান্ড, তারই ফলশ্রুতিতে এইসব জিনিস ঘটছে। ফলে সেইটার ভাবনা আমার মধ্যে আগে থেকেই হাজির ছিল, এবং তার সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইতিহাসেরও অনেক কিছুই সম্পৃক্ত। কিন্তু আমরা যা দেখি এই সময়েও মানুষের মধ্যে ভয়ানকভাবে লোভ এবং লাভের ইচ্ছা বহালতবিয়তে জাগ্রত আছে। এখন পৃথিবীতে যে সংকট, সামগ্রিক এক সংকট, সেই সমষ্টিগত সংকটকে আমরা লোভ ও লাভের কাছে পরাভূত হতে দিয়েছি, আমরা আত্মসমর্পন করছি, ফলে আমরা সম্মিলিতভাবে সেটিকে যে মোকাবেলা করবো সেরকম একটা পরিস্থিতির মধ্যে নেই। এরকম একটি উপলব্ধি আমার ভিতরে কাজ করে, আমি জানিনা, সেগুলি হয়তো ভবিষ্যতে আমার শিল্পকর্মে উপস্থিত হতে পারে।


বিগত কয়েক বছর ধরে উপনিবেশের ইতিহাস নিয়ে কিছু কাজ চলমান ছিল। সেটিরই একটি পরম্পরায় কিছু কাজ করছিলাম, তার মধ্যে একটি কাজ জার্মান কোলন শহরের ADKDW( Academie Der Kunste Der Welt)-এ প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। পৃথিবির বিভিন্ন দেশের শিল্পীদের সাথে আমিও সেখানে আমন্ত্রিত ছিলাম, সেটিতে অংশগ্রহন করেছি। আর তারপর আমার নিজের কিছু কাজ, যেগুলি আমি ক্রমাগত ভাবে করে আসার চেষ্টা করছি, সাথে পড়াশোনাও সমান্তরাল ভাবে চলছে, এভাবে নানা উপায়ে এঙ্গেইজ থেকে আমি চেষ্টা করছি বর্তমান পরিস্থিতিটিকে মোকাবিলা করার।

করোনার মধ্যে কাজ যা করেছি বৈশিষ্ট্যের দিক থেকে তাদেরকে একধরনের থ্রি ডাইমেনশনাল অবজেক্ট বলা যায়। গত বছরের মে মাসের দিকে শুরু করেছিলাম এবং সেই কাজগুলো প্রদর্শনীর জন্য কোলন শহরে পাঠিয়ে দিয়েছি, কাজগুলো প্রায় ৬ /৭ মাস ধরে করা হয়েছিল। আর এরইমধ্যে সমান্তরালে আমার অন্য কিছু কাজও চলছে, সেগুলি মূলত অবজেক্ট মেকিং এবং তা ছাড়া আমি এক ধরনের পেইন্টিং এবং সাথে এনিমেশন করার চেষ্ট্যা করছি যার বিষয় ভাবনা ঔপনিবেশিক ইতিহাসকে কেন্দ্র করে । কাজটি যদিও খানিকটা ধীর লয়ে চলছে। আর এর পাশাপাশি ওয়েবনিয়ার সেশন, নানা রকম আলোচনায় অংশগ্রহণ করে সময় কাটাচ্ছি।

ইতিহাস নিয়ে কাজটিই বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা রয়েছে তবে এগুলোকে ঠিক পেইন্টিং না বলে ত্রিমাত্রিক অবজেক্ট বলা যেতে পারে, অনেকটাই মুভিং/কাইনেটিং অবজেক্ট-এর মতো। যেহেতু আমি ঔপনিবেশিক ইতিহাস নিয়ে কাজ করছি, এই কাজ করতে গিয়ে আমি দেখলাম আমাদের লোকায়ত শিল্পের মধ্যেও ঔপনিবেশিক ইতিহাস নিয়ে নানারকম কাজ আছে, সেগুলি যে খুব বেশি মানুষের দৃষ্টিগোচর হয়েছে, এমন নয়। আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক এবং অভিজাত সমাজে সেটা স্থান পায় না। সেটাকে খুবই ঠুনকো হালকা বা স্থুল জিনিস বলে মনে করে হয়। যেমন আমার কাছে অসাধারণ লাগে আমার ছোটবেলায় মেলাতে দেখা তাল পাতার সেপাই। আসলে এই তাল পাতার সেপাই কিন্তু ঔপনিবেশিক যুগের একটি পরিস্থিতির বহিঃপ্রকাশ। সেটি সাধারণ মানুষ এবং তখনকার শিল্পীরা এরকম একটি উপায় অবলম্বন করেছিলেন যার মধ্যে দিয়ে তারা সৈনিকদেরকে তিরস্কার করতেন, এখানে তালপাতার সেপাই একটি মেটাফোর, সেটি এইযে ক্ষমতাকে কিভাবে তিরষ্কার করা যায়, তা নিয়ে কিভাবে মজা করা যায় এবং এইটা একধরনের মানসিক প্রশান্তি এবং প্রতিরোধও ঔপনিবেশিক বাস্তবতার বিপক্ষে। সেইটাকেই আমি রেফারেন্স হিসেবে নিয়ে বর্তমানে নতুন করে পুনর্নিমাণ করছি।

করোনা আমার দৈনন্দিন রুটিনকেও প্রভাবিত করেছে, আমার রুটিন আসলে খুবই সিস্টেমেটিক। সকালে উঠে আমাকে মর্নিং ওয়াক করতে হয়। আমি আগে বাইরে মাঝেমধ্যে যাওয়ার সুযোগ পেতাম, এখন খুবই কম সুযোগ পাই বাইরে যাওয়ার। কিন্তু যদি কখনো সুযোগ মেলে তখন বাসা থেকে হাটার দূরত্বে কিছু জায়গা আছে সেগুলি খুবই চমৎকার, সেখানে হাটতে যাই। আর নাহয় আমি ঘরেই প্রায় এক ঘন্টা হাটি। তারপরে আমি গোসল করে আমার কাজের জায়গা স্টুডিওতে ঢুকে যাই, সেখানে হয়তো কখনো পড়াশোনা করি, হয়তো কখনো কাজ করি। লাঞ্চ পর্যন্ত একটানা এই ভাবেই চলতে থাকে । লাঞ্চের পরে আবার কিছুক্ষণ ব্রেক দিয়ে বিকালে স্টুডিওতে প্রবেশ এবং এক টানা সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করার চেষ্টা করি। সন্ধ্যার পরে একেবারেই রিল্যাক্স থাকি, আর কোন কাজ রাখি না। এই হলো আমার প্রাত্যহিক জীবন, এটাই মোটামুটি আমার প্রতিদিনের রুটিন করোনার সময়ে।


সত্যিকার অর্থে যখন এই করোনা শান্ত হবে বা বিশ্ব যখন করোনা থেকে মুক্ত হবে তখন আমরা নিঃসন্দেহে একটা মহা অনুপস্থিতি উপলব্ধি করবো। হয়তো অনুপস্থিতিটা এখনও আমরা অনুভব করছি না, কেননা আমাদের আগের মতো ইন্টারেকশনটা নেই, আমরা এখন যা ই করছি ভার্চুয়ালিই করছি, কিন্তু এরই মধ্যে আমাদের প্রচুর মানুষ চলে গেছেন, আমার মনে হয় যদি এভাবেই বলি যে বেশ কিছু মানুষ আমাদেরকে একা রেখে এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। পুরো বাংলাদেশ যদি ধরি বা একটি নির্দিষ্ট গন্ডি যদি ধরি, সেখানেও দেখা যাবে যে প্রায় একটা জেনারেশন আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। এই প্রয়াণ এক অপূরণীয় ক্ষতি, যা হয়তো এখন বোঝা যাবেনা। এটাই আমার খুব মনোবেদনার কারণ। কারণ অনেক অভিজ্ঞতা আমরা হারিয়ে ফেলেছি এরই মধ্যে। যে অভিজ্ঞতা থেকে আমরা আরও অনেক কিছু পেতে পারতাম। শুধুমাত্র আমাদের চারুকলা নয়, অনান্য যেসব ডিসিপ্লিন রয়েছে, যেসব পেশাজীবি রয়েছে কিংবা এমনকি সৃজনশীলতার অনেক জায়গা রয়েছে, সেখান থেকেও অনেক মানুষ আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছেন। যারা দেশ নির্মানের ক্ষেত্রে বিরাট অবদান ও ভূমিকা রেখেছিলেন, তাদের হারিয়ে যাওয়া সত্যি সত্যি আমার কাছে অনেক কষ্টের। আমার প্রিয়জনদের মধ্যে অনেকেই চলে গেছে, বন্ধুদের মধ্যে থেকেও, এমনকি আমার অনুজও কেউ কেউ চলে গেছে। যেকোন মৃত্যুই তো বেদনার। মৃত্যু মানেই অনুপস্থিতি এবং গত বছর এই করোনাকালে আমার দুই ঘনিষ্ট বন্ধুর মৃত্যুর দশ বছর হয়ে গেলো তারেক ও মিশুকের।

করোনা মহামারী আমার মনোকষ্টের কারন হয়েছে, কিন্তু এর দ্বারা আমি আমার আর্টকে প্রভাবিত করিনি। করোনার মধ্যেও আমি যে কাজ করেছি তা আমার আগের কাজেরই পরম্পরায় হয়েছে, কিন্তু আমি যেহেতু কখনোই শিল্পকে একটা নির্দিষ্ট স্টাইলে আবদ্ধ করতে উৎসাহী নই, আমি বরঞ্চ শিল্পভাবনাকে একটা ভাষা দিয়ে প্রকাশ করার পক্ষপাতী। তখন একটি ভাবনা কিভাবে তার ভাষা খুঁজে পাবে সেটি একটি স্ট্রাগলের বিষয়। যেমন ধরা যাক, একটা ভাবনার সাথে প্রকাশের উপায়টাকে কন্টেক্সটচুয়ালাইজ করা, প্রাসঙ্গিক করা, সেখানে অনেক কিছুই নির্ভর করে। আমি এখন যে পেইন্টিংগুলি করছি, সেগুলি এক বিশেষ মাধ্যমে করছি, আমি কোন ট্রাডিশনাল মিডিয়াতে কাজ করছি না, সেটি মূলতই ঔপনিবেশিক ইতিহাসের সাথে যুক্ত দেশিয় উপাদান– চা,ইন্ডিগো,স্পাইস, এগুলো আমি উপাদান বা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করছি এবং এইসব দিয়েই পেন্টিং করার চেষ্ট্যা করছি। এ উপাদানগুলো রেফারেন্স টু দ্য হিস্ট্রি এবং অর্থকারকও। আমাদের ইতিহাসের বাস্তবতায় কলোনিয়াল হিস্ট্রি এবং মর্ডানিজম–এই দুটোকে আলাদা করা যায় না, এবং কলোনাইজেশনের, এমনকি ইনড্রাস্ট্রালাইজেশনের সাথেও গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কারণ যারা কলোনি বিস্তার করেছিলেন তারা যেসব দেশে কলোনি বিস্তার করেছিলেন সেগুলিকে একটা যোগানদার দেশ হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছিলেন, এবং তাদের দেশে ইন্ড্রাস্ট্রির প্রসার ঘটিয়েছিলেন। সেটারই পরম্পরাগত সংকট হচ্ছে আজকের বাস্তবতা, আজকের পৃথিবী, আজকের ধরিত্রীর যে সংকট কিংবা মানুষের অস্তিত্ত্বের যে সংকট সেটার সাথে সম্পর্কিত।

আমি মূলত আর্টওয়ার্ককে একটা নলেজ সিস্টেমের অংশ হিসেবে নিয়েছি। নিশ্চয়ই যেকোন আর্টে আবেগ একটা বড় উপাদান। কিন্তু এটিকে যখনই ভাষায় রূপান্তরিত করতে যাবো, তখনি আপনি তাকে নানাবিধ জ্ঞা্নকান্ডের সাথে যুক্ত করতে হবে। একটাতো আছে এর টেকনিক্যাল দিক, আরেকটা নলেজ আর স্পিরিচুয়ালিটির দিক, সেইক্ষেত্রে যখন কেউ নতুন একটি বা যেকোন বিষয়েই তার সময় ও স্থানের পেক্ষিতে নতুন উপায় খুঁজে নিতে চায় এবং নতুন সময় ও বাস্তবতার সাথে নতুন অভিব্যক্তির প্রকাশ করতে চায়, তাকে নতুনভাবে স্ট্রাগল করতে হবে চেলেঞ্জ গ্রহণ করতে হবে। সেজন্য আমি মনে করি এই প্রক্রিয়াটি নলেজ সিস্টেমের একটি অংশ। পুরো চিত্রকলা বা শিল্পকলার বিষয় ধারন থেকে একেবারে তার প্রকাশ অব্দি যে প্রক্রিয়াটা। সেখানে হয়তো ব্যাক্তির অভ্যন্তরীণ চালিকাশক্তি আবেগ কিংবা উপলব্ধির জগৎ থাকে, কিন্তু এর বাইরের যে পরিস্থিত, শিল্পের হয়ে উঠা এবং সত্তা নির্মাণের প্রক্রিয়া, তার সাথে নলেজের একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কখনো কখনও এদের ঠিক আলাদা করা যায় না।


সৃজনশীলতা বা সৃজনশীল মানুষ সমাজে কতটা গুরুত্ব বহন করে সেটা আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্রকাঠামো এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্যভাবে বিবেচনায় নেয় না। ১৯৩০ এর দশকে আমেরিকাতে অর্থনৈতিক মহামন্দা হয়েছিলো, তখন তাদের ফেডারেল গভমেন্টের একটা নির্দেশনা ছিলো যে আমাদের সৃজনশীল মানুষগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। তারা সরকারিভাবে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার সৃজনশীল মানুষকে সেইসময় চাকরি প্রদান করেছিলন, শুধুমাত্র তাদেরকে আর্থিক সহযোগিতা দেয়ার জন্য,বাঁচিয়ে রাখার জন্য। সেটিই পরবর্তীকালে মার্কিন সমাজ নির্মাণের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা পালন করেছিলো। অর্থাৎ একটা জাতির, একটি জনপদের সৃজনশীল প্রক্রিয়াকে আপনি যদি বিকশিত হতে না দেন , তাকে যদি যথাযথ মর্যাদার সাথে বিবেচনায় না নেন তাহলে কিন্তু আপনার জনপদের চিন্তার প্রবাহ এবং কর্মকান্ডের প্রবাহ বেশিদূর যাবে না। সেইদিক থেকে আমি মনেকরি অনেক মানুষ এখন খুবই সংকটের মধ্যে রয়েছে, বিশেষ করে সৃজনশীল মানুষজন। কারণ শুধুমাত্র তথাকথিত আরাম আয়েশ, ক্রয় বিক্রয় বা লাভ ক্ষতি দিয়ে একটি সমাজ বেশিদিন টিকতে পারেনা। সমাজে দুইটি জিনিস খুব গুরুত্বপূর্ণ, জ্ঞাননির্ভরতা এবং সংবেদনশীলতা। এই দুইটির মান যত উচ্চতর হবে ততই একটি সমাজ কিন্তু অগ্রসর হবে এবং তার উন্নয়নও দীর্ঘস্থায়ী হবে।
অনুলিখন: জুবায়েদ দ্বীপ