আর্টস বৈঠকমেহেরজান বিতর্ক (কিস্তি ৩)

admin
Published : 10 March 2011, 07:08 PM
Updated : 10 March 2011, 07:08 PM


নানাজান চরিত্রে তসবিহ হাতে ভিক্টর ব্যানার্জি/মেহেরজান

দ্বিতীয় কিস্তির পর থেকে

সলিমুল্লাহ খান: যদিও বা ইতিহাস রঞ্জন করা রবীন্দ্রনাথের উদ্দেশ্য নয়, সত্যজিৎ রায়েরও উদ্দেশ্য নয়। উদ্দেশ্য হচ্ছে—সন্দীপ, নিখিলেশ বা বিমলা চরিত্রের টাইপ ব্যাখ্যা করা বা তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-বিরোধ ব্যাখ্যা করা।

এদিকে আপনি বলতে পারেন–ওটা দ্বন্দ্বের ছবি। মানব চরিত্রের…সেক্সপিয়ারেরও নাটকগুলিকে কতগুলো কমেডি বলি, কতগুলো ট্রাজেডি বলি, কতগুলির নাম হচ্ছে—'দি হিস্টরিজ'। রিচার্ড দ্য…মানে হেনরি দ্য ফোর্থ—এইরকম ছবি আছে। এইগুলি হচ্ছে কনভেনশনাল ব্লিঙ্কার, আমরা…মানুষের চোখকে ধাঁধানোর জন্য এই কথাগুলা আমরা বলি। সেগুলো নিয়ে আমাদের লড়াই করার কিছু নাই।

ব্রাত্য রাইসু: সেগুলো নিয়ে আমরা যদি কোনো আপত্তি করি তখন কিন্তু সেইটা শুধু ব্লিঙ্কার হিসাবে থাকে না, সেইটা কিন্তু একটা অবস্থান…।


বৈঠকের অডিও/ভিডিও, কিস্তি-০৩

সলিমুল্লাহ খান: আচ্ছা, এখানে আপত্তি হচ্ছে কি—দুটো। একথাটা সত্য যে, বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত একটা আধিপত্যশীল শ্রেণীর ধারণা দাঁড়িয়ে গেছে—যেটা—যদিও ফাহমিদের লেখা আমি এখনও পড়ি নাই, যেটা ফরহাদ ভাই বললেন—এটা সত্য। কিন্তু এটাও সত্য যে, এই ছবিতেও মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত একটা পজিশন নেয়া হয়েছে। অর্থাৎ ছবিতে একটা মুক্তিযুদ্ধের ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে এবং আমরা—যাঁরা ডমিনেন্ট—যাঁরা ছবিটা বন্ধ করে দিতে চাইছে—তাদেরও একটা পজিশন আছে। তাহলে আমাদের এটা স্বীকার করা ভালো—দুইটা দুই ভিন্ন পজিশন। একটা শক্তিশালী আর একটা দুর্বল, একটা—বাইবেলের ভাষায় বললে—একটা ডেভিড আরেকটা গালাইয়াত, তাই না? একটা দুর্বল পক্ষ—একটা হাবিল, আরেকটা কাবিল পক্ষ, সেটা মেনে নেই; কিন্তু দ্বন্দ্বটা আছে। এখন প্রশ্নটা হচ্ছে, আমি বলি, যদি বলতে চাই—আমরা—দুটো প্রশ্নে আমাদের আলোচনা করতে হবে। একটা প্রশ্ন হচ্ছে—শিল্পের প্রশ্ন, এটা সিনেমা—তাঁর সিনেম্যাটিক ইমাজিনেশনটা সে ফুটাতে পেরেছে কিনা। সিনেমার একটা কল্পনা শক্তি আছে, সিনেমা হচ্ছে একটা মিডিয়াম যেটা ছবির মাধ্যমে কথা বলে এবং সে—আমরা যেমন কবিতা লিখলে শব্দ দিয়ে লিখি, সেখানে আমরা চিত্রকল্প ফুটিয়ে তুলি, ছবি অন্যভাবে চিত্রকল্প ফোটায়—সেটা সে সঠিকভাবে করতে পেরেছে কিনা। এটা প্রশ্ন।

সঠিক কাকে বলে? তাহলে 'ঠিক'-এর একটা মাপকাঠি মনের মধ্যে থাকতে হয়। আমরা সকলেই—শেক্সপিয়ারের নাম একবার নিয়েছি আবার শেক্সপিয়ারকে প্রায়ই বলে ইংল্যান্ডের শ্রেষ্ঠ শিল্পী বা নাট্যকার। এমন কি অনেকে বলে দুনিয়ার মধ্যে শ্রেষ্ঠ পাঁচজনের মধ্যে পড়বে। আমি এই শ্রেষ্ঠত্বের ব্যবসায় যাবো না। ধরলাম, উনি একজন বেশ ভালো শিল্পী। কিন্তু আবার রাশিয়ার উপন্যাস লেখক টলস্টয় একজন শ্রেষ্ঠ শিল্পী অনেকে বলেন। আর টলস্টয় বলছেন, শেক্সপিয়ারের নাটক আমি একটাও অনুমোদন করি না, 'হোয়াট ইজ আর্ট'-এ। এগুলির মধ্যে অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দেওয়া হইছে। আমি খুব সংক্ষেপে যদি বলি। কিন্তু আমরা বলি যে টলস্টয়-এর এই সমালোচনা জগতের অধিকাংশ লোক গ্রাহ্য করে নাই। কিন্তু টলস্টয় তবু নিজের কথা বলে গেছেন, লক্ষ্য করার বিষয়। তাহলে শিল্পকে সমালোচনার বহু মাপকাঠি আছে—টলস্টয়েরটা হইলো, তথাকথিত নীতির মাপকাঠি। এটাও একটা মাপকাঠি বলে মেনে নিতে অসুবিধা নেই যেটা টলস্টয়ের মতো লোকে বলছেন। আর একটা হচ্ছে যে, সে ঠিকভাবে জিনিসটা করেছে—কিন্তু ঠিক মানে কি অর্থাৎ জীবনের যে ধারণাকে আমি ঠিক মনে করি বা আমরা সকলে ঠিক মনে করি সেটার মধ্যে মাপছে কিনা। তো সেই হিসেবে একটা মাপকাঠি হতে পারে—একটা শিল্পের। আর একটা হচ্ছে, আমরা বলি, আবারও ইতিহাসের কথা আসছে, শিল্পের প্রশ্ন ছাড়া আর একটা প্রশ্ন আছে—এটা হচ্ছে 'সত্যের প্রশ্ন'। এখন 'সত্য' কী—আমরা কেউ একমত হবো না। মুক্তিযুদ্ধের সত্যটা কী—যদি ন্যারেটিভ পঞ্চাশটা হয়, তাইলে পঞ্চশটাই কি সত্য? এটা আমাদের প্রশ্ন। আমি বলবো যে, প্রত্যেক শিল্পকেই আর একটা দায় মেটাতে হয়, সেটা হচ্ছে—সত্যের প্রতি তার দায়।

ব্রাত্য রাইসু: মানে এটা কি—এই ব্যাপারে কি সবাই একমত থাকবে কিনা। শিল্পের যে সত্যের প্রতি দায়…

সলিমুল্লাহ খান: সবাইর থাকার দরকার নাই। আমাদের ভিন্ন ভিন্ন মত আছে।

ব্রাত্য রাইসু: আপনি তো প্রস্তাব করতেছেন যে, শিল্পের সত্যের প্রতি দায় আছে—এই ব্যাপারে সবাই একমত।

সলিমুল্লাহ খান: নো আমি তা করছি না, আমি আমার কথা বলছি। আমার তো আমার কথা বলতে হবে। আমর একটা মত আছে, আমরা সবাই যদি একমত হতাম—সবাই আত্মহত্যা জন্য একমত হলে এখানে আর আসতে হতো না। আমরা দ্বিমত করছি বলেই….

ব্রাত্য রাইসু: না আমরা হয়তো এখানে আইসা আত্মহত্যা করার ব্যাপারে একমত হইতে পারি

সলিমুল্লাহ খান: আত্মহত্যাই যদি করতাম তাহলে তো আমরা আসতাম না, আমরা বাঁচতে চাই আমি একটা ভিন্ন কথা বলতেছি, আপনি একটা বলতেছেন।

ব্রাত্য রাইসু: আমি যেইটা বললাম যে—আপনি যেটা বললেন যে, শিল্পের দায় আছে সত্যের কাছে, এইটা হচ্ছে একটা ধ্রুব ব্যাপার, কিন্তু সত্যটা নানারকম হইতে পারে।


…………..
নীলার রূপ নিয়ে ঋতু এ সাত্তার/মেহেরজান পোস্টার
…………..

সলিমুল্লাহ খান: না না, আপনি আমার ফ্রেমটা বোঝেন নাই। আমি বলছি আমি দুটো প্রশ্ন আলোচনা করতে চাই। একটা হচ্ছে যে, শিল্পকে শিল্প হিসাবে আলোচনা করা যায়। আরেকটা—শিল্পের সাথে সত্যের সম্পর্ক লোকেট করা—সেগুলো নিয়ে আলোচনা করা য়ায়। দু'টা পয়েন্ট আছে, আলাদা করতে হবে।

তো প্রথমটা হচ্ছে যে, উনি বলেছেন, আমি সে বিষয়ে মন্তব্য করবো না, সময় অভাবের জন্য–যে এটা শিল্প হিসাবে দুর্বল। কেউ কেউ এর মধ্যে সবলতাও দেখতে পারেন। তবে আমি মোর অর লেস তাঁর সাথে একমত; ছবিটা খুব সবল শক্তি নয়। তো এইটার জন্য আমি একটা অ্যাপোলোজি করবো। সেটা হচ্ছে কী—যারা বানিয়েছে ছবি, তাঁরা বয়সে নবীন, অভিজ্ঞতা কম, মানুষের এক্সপেরিমেন্ট করার অধিকার আছে, ছবিতে দুর্বলতা থাকতেও পারে। জেনারেলি ছবি—মুক্তিযুদ্ধের ছবি বলেন, ঐতিহাসিক ছবি বলেন অথবা মানবের মনের যে দ্বন্দ্বের ছবি বলেন—কোনো দিক থেকে এটি খুব শক্তভাবে দ্বন্দ্বটা ফোটাতে পারেনি। আমরা ঐতিহাসিক উদাহরণ দিয়ে বলি, যেমন গ্রিক নাটককারদের মধ্যে সফোক্লিসের নাম সকলেই বলে—এটা হচ্ছে গ্রিক নাট্যের একটা নাটকের উদাহরণ। ঈদিপাস, এন্টিগনি এগুলো। ওখানে যে মানুষের দ্বন্দ্ব প্রবলভাবে ফুটেছে যেজন্য যেগুলিকে আমরা চিরকাল স্মরণ করি—সেইরকম কিছু ফোটাতে পারেনি। আমি অত কঠোর মাপকাঠি ব্যবহার করতে চাই না, সাধারণ যে দ্বন্দ্বের ছবি হিসাবেও খুব একটি… দ্বন্দ্বটা ফোটেনি। এখানে কোনো দ্বন্দ্ব নাই।

কতগুলি কাল্পনিক দ্বন্দ্ব করা হয়েছে—মেহের নামের একটা মেয়ের মনের মধ্যে—সে নিজেই বলছে, আমি কি দালাল? ডায়রির মধ্যে লিখছে। আঠারো বছরের মেয়ের মধ্যে হতে পারে। সে নিজেই বলতেছে—আমি কি, একজন পাকিস্তানির সাথে প্রেম করছি—আমি কি দালাল? সে একটা সেল্ফ কোয়েশ্চেন-এ গেছে।

বিশেষ করে, এখানে একটা কথা সকলে বাদ দিচ্ছি আমরা—এই… এটা শুরুতেই বলা উচিত ছিল। এই ছবিটা দেখার পর আমি এবাদুরের উপন্যাসটা পড়েছি, গুলমোহর রিপাবলিক। ছবিটা মোটামুটি এবাদুরের উপন্যাস অবলম্বনে বানানো হয়েছে। সেটা যদি বা… স্বীকৃতিটা প্রত্যক্ষ নাই, শুধু আছে—চিত্রনাট্যে: এবাদুর/রুবাইয়াত। কিন্তু এইটা বলা ঠিক হয় নাই। এটার মধ্যে প্রথমেই, আমি বলবো— চুরির ঘটনা ঘটেছে। এটা শতকরা নিরানব্বই ভাগই এবাদুরের উপন্যাস।

শুধু ডিটেলস্… এটা যদি সত্যজিৎ রায় নিজেও যদি নিজের চিত্রনাট্য নিয়ে ছবি তুলতে যান স্পটের মধ্যে চেইন্জ হয়ে যায়, শ্যুটিং-এর সময় চেইন্জ হয়ে যায়। সেই রকম হয়েছে—শ্যুটিং এবং চিত্রনাট্যের যে ব্যবধান মানে 'বিটুইন দ্যা কাপ এন্ড দ্যা লিপস্' এই রকম কিছু কিছু পরিবর্তন হয়েছে। এবাদুরের উপন্যাসটা পড়লে বোঝা যায় যে এই উপন্যাসের মর্মটা কী ছিল এবং ছবিটাকে কোথায় কোথায় আপোস করতে হয়েছে। আমি মনে করি ভবিষ্যৎ আলোচকদের দায় পড়বে এটাও দেখা—

ব্রাত্য রাইসু: এবাদুর রহমানের উপন্যাসটা?

সলিমুল্লাহ খান: উপন্যাসের সাথে মিলিয়ে দেখা। এবাদুর… মানে, উপন্যাসে যে কথাগুলো আছে সেগুলোতে মাঝে মাঝে এখানে আপোস করা হয়েছে। সেখানে সালমা চরিত্র আছে, সেখানে মেহের আছে, সেখানে ওয়াসিম খান আছে, সমস্ত… নানাজান আছে এবং মুক্তিযোদ্ধা সুমন আছে, শিমুল আছে, সবই আছে। এবাদুর সেইখানে, যেইখানে অনেকটা পরিষ্কার ভাবে দেখিয়েছে, এবাদুরের পজিশনটা হচ্ছে— পরিষ্কার করে দেখানো— এটা কোট-আনকোট মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, এটা পরিচ্ছন্ন। ছবিতে কিছু কিছু আপোস করে, মুক্তিযুদ্ধের সাথে আপোস করার চেষ্টা হইছে। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে মানে কী? মানে— এই ছবিটার ডিসকোর্সটা হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের যে ডমিনেন্ট ভার্সনটা আছে, সেটাকে আক্রমণ করা। সেই আক্রমণটা এবাদুর সফলভাবে করতে পারেনি। ছবিটা তার চেয়ে আরেকটু ভালোভাবে করেছে।

আমি দু'একটা উদাহরণ দিলে বুঝতে পারবেন আপনি। তো সেই জন্য এবাদুরকে প্রথমে কৃতিত্ব দেওয়া উচিৎ, এই ছবির মূলভাবের উদ্গাতা হিসাবে। এবং হুবহু, মোর অর লেস, তারই ইয়েটা ব্যবহার করা হয়েছে, শুধু ফ্রেমওয়ার্কটা ছাড়া। একটা যুদ্ধশিশু যে আসছে— এইটা ছাড়া বাকি সব ছবির ভিতরের কাহিনী একই। যুদ্ধের সময়ের যে কাহিনীটা ফ্ল্যাশব্যাকে দেখানো হয়েছে এটা সম্পূর্ণ এবাদুরের উপন্যাস থেকে। শুধু ফ্রেমটা বাইরে থেকে করেছে। যা হোক, আমি যেটাকে সত্যের প্রতি দায় বলছি, সেটা দিয়ে বলি আর কি— শিল্পের কথা, আপনারা শিল্পীরা আছেন, আলোচনা করবেন। আমি শিল্প খুব বেশি বুঝি না, সেইজন্য আমি একটু— ইতিহাসের ছাত্র হিসাবে আমি বলবো যে, দু'য়েকটা জিনিস আমি লক্ষ্য করেছি— সত্যের প্রতি দায়, যেভাবেই হোক, এই ছবিতে ভয়ানকভাবে বিঘ্নিত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের যতগুলি পসিবল ভার্সন আছে, যত সমালোচনা আছে— সবগুলি মিলিয়ে আমি বলবো, এটা হয়েছে– পাকিস্তানের তরফ থেকে যদি কেউ আজকে আপনি দায়িত্ব দিতেন অথবা আজকে যাদের যুদ্ধ অপরাধী বলে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাদেরকে আপনি যদি দায়িত্ব… সুযোগ দিতেন বাংলাদেশে, একটা ছবি বানান, তারা এর চেয়ে খারাপ ছবি বানাতে পারতো না, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, বানাতে পারতো না। মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে এটা একটা মেনিফেস্টোর মতো ছবি, কোথায় কোথায় আমি উদাহরণ দেই। ছবি যখন শুরু হয়— একটা মিথ্যা কথা দিয়ে শুরু হয়। ভয়েসওভার-এ বলে এবং ম্যাপের মধ্যে আসে, বলা হয়েছে কি—In 1947 colonialism in south Asia ended। এটা একটা পলিটিক্যাল স্টেটমেন্ট। পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। এটা কে দিচ্ছে? পরিচালক দিচ্ছে বা ছবির পক্ষ থেকে— মানে বলছে… এটা হচ্ছে 'Gaze', ছবির দৃষ্টি ঠিক করছে। তারপরে ম্যাপ থেকে দেখেন— East Pakistan and West Pakistan were curved out of British India and they drifted away from each-other। আমার স্মৃতি থেকে বলছি আমি, আমার কাছে চিত্রনাট্য নাই এখন। পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান পরস্পরের কাছ থেকে দূরে সরে যায়। আমি মনে করি এটা মিস-স্টেটমেন্ট ইতিহাস-এর। এটা সম্পূর্ণ ঢাহা মিথ্যা। কারণ পূর্ব পাকিস্তান, পশ্চিম পাকিস্তান পরস্পরের থেকে দূরে সরে যায় নাই। এই সম্পর্কটা ছিল— একটা অংশকে আরেকটা অংশ কর্তৃক ঔপনিবেশিক কায়দায় শোষণ করা। এইটা আমি মনে করি, আমার মন্তব্য। ছবির সাথে আমি দ্বিমত করি। আমার সাথে সবাই একমত হবে, আমি এইটা বিশ্বাস করি না। দুই নম্বর হলো— তার পরে ছবিটিতে যে মূল ন্যারেটিভটা দেখানো হয়, বার বার বলা হয় এটা যুদ্ধ, কোথাও মুক্তিযুদ্ধ কথাটা নাই। মনে হয় কি— যদি ফ্রান্স এবং জার্মানির মধ্যে গৃহযুদ্ধ হইছে ইউরোপে, একবার ফ্রান্স জার্মানি দখল করেছে, আবার জার্মানি ফ্রান্স দখল করেছে— এ রকম ঘটনা বার বার ঘটেছে তাদের মধ্যে যুদ্ধ বলা যায় এবং ফরাসী দেশের একটা মেয়ের সাথে জার্মানির একটা মেয়ের… সাথে হতে পারে। কিন্তু আমি বলবো যে, এখানে যে মূল সত্যটিকে অস্বীকার হয়েছে সেটা হচ্ছে গিয়ে পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান সম্পর্কটা পাশাপাশি দুই দেশের সম্পর্ক নয়। আজকে যদি ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হইত পশ্চিম সীমান্তে, ঐ রকম হতো। এইটা ছিল একটা ঔপনিবেশিক বা প্রভুশক্তি, যে অপর দেশ দখল করে, তার সাথে আর একজনের দেশ দখল করে যুদ্ধ করার শামিল। যদিও আমরা পলিটিক্যাল একটা রাষ্ট্র ছিলাম, এইটা একটা ফিকশন যে আমরা স্বাধীন ছিলাম।

কাজেই সেইখানে প্রভু এবং ভৃত্যের মধ্যে যে সম্পর্ক, যেটার কথা ফ্রান্জ ফানো আলোচনা করেছেন— যে একটা প্রভুর পুরুষের সাথে যদি দাসের মেয়ে, কালো আওরাত যখন সাদা প্রভুর প্রেমে পড়ে, যে ঘটনা হয় সেটা এখানে ঘটেছে। আমরা বলি না যে এ ধরনের ঘটনা ঘটে না। ফ্রান্জ ফানো এরকম দুটো উপন্যাস নিয়ে আলোচনা করেছেন তাঁর ব্লাক স্কিন, হোয়াইট মাস্ক বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে। দুইজনের উপরে— একটা মায়ো কাপেসো নামক একজন মার্কিনী উপন্যাসিকা মানে উপন্যাস আরেকটা সেনেগালের আবদুল্লাহ সাজি বলে একজন লোকের একটা উপন্যাস আছে, নিহি—দুইটার মধ্যে হয়েছে কী, কালো মেয়েরা বলে কী—আমি কোনোদিন আর কালো ছেলেকে বিয়ে করবো না; কারণ প্রভু দেশের ছেলে ছাড়া সে আর বিয়ে করবে না। এই যে শপথ করে এটাকেই ফ্রান্জ ফানো তুলোধুনো করে সমালোচনা করেছেন, আপনারা জানেন সেটা। তো আমি বলছি যে এইখানে প্রেমের যে চিত্রায়ন হইছে—একটা মেহেরের পক্ষে ওয়াসিম খানের প্রেমে পড়া অসম্ভব নয়, সত্য বটে। কিন্তু এই প্রেমের যে প্রতীকী তাৎপর্য দিতে চেয়েছে—আমি এখন শান্তির বাণী দেবো, আমরা আবার রি-ইউনাইট করবো— এগুলির… এর মূল কথা হচ্ছে কী—সম্পর্কটা—মূল অনুমানটা ছিল এই যে, পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সম্প্রীতি ও সমতাভিত্তিক, এটা দুই ভাইয়ের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি— they drifted from each other। এটা হচ্ছে ছবির মূল থিম সং…

ব্রাত্য রাইসু: এটা আপনি কীসের মধ্য দিয়া…?

সলিমুল্লাহ খান: ছবিতে দেখলাম… শুরু… এটা ছবির ভয়েস ওভারে বলছে এবং গোটা ছবিতে সেটাকে রিয়ালাইজ করেছে। রিলেশন হচ্ছে—যদিও বা ওখানে বালুচ সৈন্য হিসেবে রাখা হয়েছে, তাকে প্রতিনিধি করা হয়েছে গোটা… গোটা পাকিস্তানের প্রতিনিধি করা হয়েছে তাকে আর বাংলাদেশের প্রতিনিধি করা হয়েছে ধরেন সেই মেহেরকে। তার মধ্যে হয়েছে কী– মেহেরের সাথে ওয়াসিমের প্রেম হচ্ছে এই ছবির একটা… মানে করলে মনে হচ্ছে এটা একটা ফালক্রাম, এটা হলো তার মেইন এক্সিস, ছবি চতুর্দিকে আবর্তিত হয়। এবং ৩৮ বছর পর্যন্ত সে যে একা আছে, ঢাকা শহরে একা থাকে এই স্কাল্পটর যিনি— জয়া যে অভিনয়টা করেছেন এবং তার মনের মধ্যে এখনো সেই স্মৃতি, সেই দুঃসহ— সে ওয়াসিমকে ত্যাগ করেছে, নৌকায় তুলে দিয়েছে— সেটা যায় নি। ফলে এটাকে ছবির এক্সিস ধরা যায়। ঘটনাধারার এক্সিস। এই ইতিহাস বা প্রেমের কাহিনী— তাতে কিছু আসে যায় না। তাতে বোঝা যাচ্ছে— আমি বলছি, গোটা ছবিটা হচ্ছে— বেইজড্ অন দ্য মিস-রিপ্রেজেন্টেসন।

ব্রাত্য রাইসু: একটা সেকেন্ড, মাঝখানে বইলা নেই, পরে ভুইলা যাব— সেটা হলো যে, ফ্রান্জ ফানোর… যেমন আপনি বললেন যে— ওরা সাদা ছেলে ছাড়া বিয়ে করবেই না, মেহেরের কিন্তু এইরকম নাই যে— সে পাকিস্তানি ছেলে ছাড়া বিয়ে করবেই না।

সলিমুল্লাহ খান: কোনো দরকার নাই, আমরা বলছি যে ওর উপন্যাসের রিলেশনশিপটা হচ্ছে ঐরকম; এখানে রিলেশনশিপটা হচ্ছে—নিশ্চয়ই সে তাকে নকল করে নাই, এটা একটা নিউ ভার্সন, এই ভার্সনটা হচ্ছে— মেয়েটা একটু ক্ষ্যাপাটে ধরনের, শহর থেকে এসছে তার কিছুই… অর্থাৎ যুদ্ধ ভাল্লাগে না। কী সে দেখেছে? উপন্যাসে আছে এবাদুরের— পড়ে দেখেন— সে দেখেছে, মানুষের মাথা থেঁতলে ফেলেছে, কেটে ফেলেছে— এইগুলি সে ঢাকা থেকে দেখে গ্রামে নানাবাড়িতে গেছে। তার পরে সে বলছে— যুদ্ধ ভাল্লাগে না। মানুষের মাথা থেঁতলে ফেলাটা, মেরে ফেলাটা— সে কি পাকিস্তানিরা মেরেছে নাকি বাঙালিরা মেরেছে— এ বিষয়ে কোনো উল্লেখ নাই। কিন্তু এবাদের উপন্যাসে এটা পরিষ্কার ছিল, ওখানে ওটা পরিষ্কার নাই।

আমি এবাদের উপন্যাস থেকে আর তিনটা ঘটনা আপনাকে বলি, তাহলে ছবির পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন: নীলা, ফ্লাশব্যাকে দুবার দেখানো হয় যে নীলা বলছে— না, আমি এ সন্তান চাই না। এবাদের উপন্যাসে তার বিপরীতটা; ওখানে যখন বলা হয়— নীলাকে বলা হয়— আপনার…সামীর মা-রা তারে বলছে, মেহেরের মা-রা বলছে, তুমি অ্যাবরশন করাও, তিন মাসের যখন বাচ্চা। তখন সে বলে, না, আমি… আমি সন্তান চাই। উপন্যাসের সাথে ছবির পার্থক্যটা বলছি। তারপর বলছে কী, তখন নীলা… হয়তো কোনো একজনের মা, সামীর মা (আমার তো মুখস্থ নাই, বই খুললে ৭২ পৃষ্ঠায় আছে দেখতে পাবেন।) বলতেছে— এবাদুরের বইতে— সে বলছে যে তোমার পেটে ঐ যে হারামজাদা রক্তচোষা ওইটাকে ধ্বংস করতে হবে। কারণ, ওইটা পাকিস্তানিদের পয়দা। সে বলছে যে— নো, আমি এ সন্তান চাই। অথচ ছবিতে দেখাইছে ফ্লাশব্যাকে— না, আমি এ সন্তান চাই না। এই রকম একটা দৃশ্য দেখায়, মানে ৩০ সেকেন্ডের জন্য, আপনি লক্ষ্য করছেন।

এইরকম বিভিন্ন জায়গায় ছবি এবং উপন্যাসের মধ্যে পার্থক্য আছে। তাতে দেখা যাচ্ছে কী… এবং মেহের যখন ঢাকা শহর থেকে হত্যাকাণ্ড দেখে যায়, তারপরে গ্রামে গিয়ে সে বলে কী— আমার এ যুদ্ধ ভাল্লাগে না, লক্ষ্য করার বিষয়। এবং তার খালাতো বোনকে যে রেপ করা হয়েছে, সেটা সে ওখানে জানে, উপন্যাসে; ফিল্মে সেটারে অবলিটারেট করা হয়েছে, একটু হালকা করে দেওয়া হইছে এবং তাতে দেখানো হয়েছে সে মেয়ে ডিয়ার ডায়েরি লেখে। ধরেন, এটা একটা ন্যারেটিভ টেকনিক। সে যেভাবে যুদ্ধকে দেখছে সেটা হচ্ছে সম্পূর্ণ এ্যাপলিটিক্যাল, বর্তমান… প্রেজেন্ট যে মিডল ক্লাস ইন বাংলাদেশ, যাদের… আধিপত্যশীল শ্রেণীর ধারণা মুক্তিযুদ্ধকে… এটা নেগেট করতেছে, সে হচ্ছে সেই শ্রেণীরই মেয়ে।


…………..
ভাস্কর মেহের তাঁর ভাস্কর্যের সাথে, জয়া বচ্চন/মেহেরজান
…………..

এবাদুরের সাথে আমার পরিচয় আছে বলে তার উপন্যাস আমি পড়েছি। এবাদুরের যে ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গি বা তার যে শ্রেণিচরিত্র এই ক্যারেক্টারটা সেই শ্রেণিচরিত্রেরই। সেখানে অনেক চরিত্রের নাম আছে উপন্যাসের মধ্যে— রেহনুমা আহমেদ, ব্রাত্য রাইসু, সাখাওয়াত টিপু, সলিমুল্লাহ খান— সব নাম আছে কিন্তু ঐ দরিয়ার মধ্যে… উপন্যাসের মধ্যে। এবং আহমদ ছফার নামও ব্যবহার করা হয়েছে। আমি বলছি যে, আরেকটা ছবির প্রতি আমার আপত্তি— ইট ইজ এ টোটাল মিস-রিপ্রেজেন্টেশন অব আহমদ ছফা'জ পজিশন। আহমদ ছফার মুক্তিযুদ্ধ সংক্রান্ত যে বক্তব্য, বিভিন্ন বইতে আছে— বেহাত বিপ্লব ১৯৭১ বইতে আছে, আহমদ ছফা মুক্তিযুদ্ধের বর্তমান যে আধিপত্যশীল ডিসকোর্স তার অত্যন্ত— আমি বলবো— গাঢ় এবং কড়া সমালোচক। সেটাকে সম্পূর্ণ ভুল কাজে ব্যবহার করেছে এবাদুর। তাঁর উপন্যাসের শুরুতে— আবার ছফা ভাইয়ের একটা কথা দিয়া শুরু করতেছি (এবাদুর রহমানের উপন্যাস সম্পর্কে।)— ফিল্মের মধ্যেও কিন্তু ছফা ভাইকে ক্রেডিট লাইনের মধ্যে ক্রেডিট দেয়া হইছে। আমি মনে করি, এগুলি ইনটলারেবল্। মিসইউজ অব সামওয়ান'স লিগেসি। কারণ সত্যের সাথে তার লেশমাত্র সম্পর্ক নাই। এই ছবির আইডিয়ার সাথে আহমেদ ছফার আইডিয়ার কোনো সম্পর্ক নাই। আহমদ ছফা বলছে, বাঙালি মুসলমান যাদেরকে, বাঙালিয়ানার একটা নতুন সংজ্ঞা তৈরি করতে হবে। আহমদ ছফার বাঙালিরা হচ্ছে— শরায়…শরাফতি মুসলমানরা নয়, আহমদ ছফার বাঙালিরা হচ্ছে— যারা দীর্ঘদিন ধরে নির্যাতিত হইছে— এ দেশের মাটির সন্তান। এখানে খাজা সাহেব বা খোনকার সাহেব তার প্রতিনিধিত্ব মোটেও করেন না। কিন্তু এই উপন্যাসে বাঙালী মুসলমান বলতে খাজা সাহেব আর খোনকার সাহেবকে বোঝানো হইছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ডিসকোর্সের মধ্যে একটা ক্লাশ ডিসকোর্স আছে। এই ছবি সম্পূর্ণই একটা সামন্তবাদী ডিসকোর্স থেকেই, আমি বলি এটা প্রো-আপার ক্লাশ, এটা মুসলিম লীগও না আওয়ামী লীগও নয়, এটা হচ্ছে আলীগড় ডিসকোর্স-লাহোর ডিসকোর্স-কলকাতা-ঢাকা ডিসকোর্স। এটা থেকে তৈরি করা হইছে। তো সেটি—আমি বলব যে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের যে সম্ভাব্য নানা পক্ষ আছে, মুক্তিযুদ্ধ নিরপেক্ষ ঘটনা নয়, এর পক্ষেও লোক ছিল এদেশে, বিপক্ষেও লোক ছিল। কিছু লোক রাজাকার হয়েছিল, পাকিস্তানের সমর্থক হয়েছিল, কিছু লোক যুদ্ধ করেছিল, এটা হচ্ছে সত্য কথা। কিন্তু আমরা বলি—মেজরিটি লোক ১৯৭০-এ আওয়ামী লীগকে ভোট দিয়েছিল সেটা নয়, মেজারিটি লোক যদি এই মুক্তিযুদ্ধে যোগ না দিত, সরকারি হিসাবে আড়াই লক্ষ লোক মুক্তিযোদ্ধার সার্টিফিকেট নিয়েছে বা ভারত গিয়ে ট্রেনিং করেছে। দেশে, আমি বলব যে, তার থেকে কমপক্ষে চারগুণ বেশি লোক ছিল—যাঁরা লড়াই করেছেন। সেই হিসাবে আমাদের দশ লক্ষ—বারো লক্ষ যদি কোনো লোক যদি লড়াই করে তাকে এই জনপদ থেকে— এটা জনপ্রিয় যুদ্ধ। আমরা বলব—এটা পিপল'স ওয়ার। এন্টি-কলোনিয়াল ওয়ার। পাকিস্তানিদের যুদ্ধটা ছিল কলোনিয়াল ইমপোজিশন, কলোনিয়াল ওয়ার; আর আমাদেরটা ছিল লিবারেশন ওয়ার। ফ্রম এনি পয়েন্ট অব ভিউ, আমি বলব। এনি মানে— বাংলাদেশে আপনি সার্ভে করলে এনি পয়েন্ট অব ভিউ থেকে আপনি (এটা) পাবেন, শুধু আওয়ামী লীগ পয়েন্ট অব ভিউ নয়। নন-আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধারাও বলবে ইট ওয়াজ এ পিপল'স ওয়ার।

ব্রাত্য রাইসু: এটার মধ্যে কি আপনি— সলিম ভাই, মনে করেন যে এই সিনেমা দিয়া সেই পিপল'স ওয়ারকে আসলে ইয়া করা হয়… বিরোধিতা করা হয় কিনা?

সলিমুল্লাহ খান: এই ছবির, এই ছবিটার অ্যাজাম্পশান— সেটা হচ্ছে, এই ছবিটার অ্যাজাম্পশান হচ্ছে— 'ইট ওয়াজ ওয়ার বিটুইন টু ইকোয়াল পিপল হু মিস-আন্ডারস্টুড ইচ আদার। ইট'স এ ওয়ার অব মিস-আন্ডারস্ট্যান্ডিং। ভাইয়ে ভাইয়ে, নাইলে শেষে যখন মিস-ইউজ করে ফয়েজ আহমেদ ফয়েজের গানটা গাওয়া হল, যেন মনে হয় আমরা গিয়ে লাহোরে রক্তপাত করে আসছি আর লাহোরের লোক ঢাকায় এসে রক্তপাত করে আসছে। বাট দ্যাট ইজ নট দ্য ফ্যাক্ট। আবার কবে সবুজ হবে, ঢাকা থেকে ফেরার পরে ১৯৭৪ সনে উনি এই গানটা লিখলেন— যেটা গজল আকারে দেয়া হল এখানে—ঢাকা সে ওয়াপাস ফের। এই গানের মধ্যে মনে হইতে পারে— যেন এটা দুই ভাইয়ের মধ্যে কোনো একটা রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ হইছে এখন আমরা আবার গলাগলি করি। আমার কথা হচ্ছে কী–এই ক্ষেত্রে আমরা দ্বিমত করতে পারি। আমি পরিষ্কার বলছি, আমার পজিশনটা বলছি— ১৯৭১ ওয়ার ইজ এ কলোনিয়াল ওয়ার। এ কলোনিয়াল ওয়ার অব ওয়েস্ট পাকিস্তান অর ওয়েস্ট পাকিস্তানি বুর্জোয়াজি অর পাঞ্জাবি, আমরা নাম করতে পারি। ইভেন ইট'স এ নিউ কলোনিয়াল ওয়ার, এই অর্থে যে— এর পিছনে অ্যামেরিকানরা ছিল। আর বাংলাদেশী লোকেরা ছিল তখন আক্রান্ত। বাংলাদেশের বুর্জোয়াদের নেতৃত্বে হইতে পারে এই যুদ্ধ, বাট নেভার-দি-লেস দিস ওয়াজ এ পিপলস' ওয়ার, ফ্রম বাংলাদেশ'স পয়েন্ট অব ভিউ। এই ছবিতে এই মূল জিনিসটাকে সম্পর্ণ ভুলভাবে রি-প্রেজেন্ট করে বলা হয়েছে— ইট ওয়াজ এ ওয়ার বিটুইন টু ইকোয়াল পিপলস্। এটা ঠিক নয়। দে ডিড নট ড্রিফট ফ্রম ইচ আদার। ওয়ান ওয়াজ ইমপোজড অন… অন দি আদার।

ব্রাত্য রাইসু: কিন্তু ভিতরে যে মুক্তিযুদ্ধের যে ব্যাপার ওরা দেখাচ্ছে, যেভাবেই হোক দেখাচ্ছে, সেখানে তো সেটা পিপল'স ওয়ার হিসেবেই আছে। মুক্তিযোদ্ধারা যে চেষ্টা করতেছে? সেটা কি না?

সলিমুল্লাহ খান: নো, মুক্তিযোদ্ধার যে তিন-চারটা যে চরিত্র দেখানো হইছে, দেখানো হইছে কি যে—ইট ওয়াজ এ কনফিউজড ওয়ার। মুক্তিযুদ্ধ হিসাবে দেখানো হয় নাই।

ভিডিও ধারণ ও অনুলিখন: প্রমা সঞ্চিতা অত্রি

ফেসবুক লিংক । আর্টস :: Arts